বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১১

জব্বারের বলীখেলা চট্টগ্রামে্র বৃহত্তম লোকজ মেলা।(ছবি ব্লগ)

আজ আমরা চট্টগ্রামের বৃহত্তম বৈশাখী মেলা জব্বারের বলীখেলায় যাই,কোন সন্দেহ নাই এটিই আমাদের দেশের সবচেয়ে বর্নিল ও ঐতিহ্যবাহী মেলা।শুনেছি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আর্কাইভে এর ভিডিও গ্রাফি আছে।আজ ছিল এই মেলার ২য় দিন,অতএব আমরা মেলার মুল আকর্ষন বলীখেলা মিস করলাম কেননা এটি প্রথম দিন অনুস্টিত হয়।তাই মন খারাপ।সেটি পুষিয়ে গেলো মেলার প্রানবন্ততা দেখে।মেলায় পকেটমার থেকে সাবধান করার জন্য অপরিচিত লোক থেকে পান বা অন্যান্য কিছু খেতে নিষেধ করা হচ্ছে এভাবে-মেলায় আগতরা মনে রাখবেন "পান খাবেন গুর গুরাই,টাকা যাবে শুর শুরাই"। কিংবা ইদুরের বিষ বিক্রেতা ক্যানভাসিং করছে-ইদুরের জ্বালায় ঘুমাইতে পারতেছেন না,ইদুর আপনাকে দিনে রাইতে মিস কল দেয়,আপনি মাত্র ৩ টাকায় আমার অষুধ নিয়ে ইদুরকে ডাইরেক্ট কল দিন,ইদুর লাইন ধইরা খাইবো,চিতকুর পাইরা মরবো।মেলা সম্পর্কে ইন্টারনেট ,দৈনিক কালের কন্ঠ(এরা বেশ সুন্দর তথ্য দিয়েছে)ও দৈনিক আজাদী সম্পাদিত হাজার বছরের চট্টগ্রাম থেকে তথ্য ধার করলাম।

জব্বারের বলীখেলা চট্টগ্রামের লাল দিঘী ময়দানে প্রতিবছরের ১২ই বৈশাখ তারিখে অনুষ্ঠিত কুস্তি প্রতিযোগিতা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কুস্তি বলিখেলা নামে পরিচিত। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এই প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘী ময়দানের আশে পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়। এটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার সবচেয়ে বৃহৎ বৈশাখী মেলা।
সাধারণ মানুষের কাছে জব্বারের বলীখেলা হিসেবে প্রসিদ্ধ এ খেলার আসল আকর্ষণ মেলা। খেলাকে কেন্দ্র করে তিন দিনের আনুষ্ঠানিক মেলা বসার কথা থাকলেও কার্যত পাঁচ-ছয় দিনের মেলা বসে লালদীঘির ময়দানের চারপাশের এলাকা ঘিরে। এই বলীখেলার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম নগরের বক্সিরহাট ওয়ার্ডের বদরপাতি এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রয়াত আবদুল জব্বার সওদাগর। প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছে জানা যায়, বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আবদুল জব্বার বলীখেলার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামী-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।
এখন পেশাদার বলির (কুস্তিগীর) অভাবে বলিখেলার তেমন আকর্ষণ না থাকলেও জব্বারের বলীখেলার মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে মেলা। তাই অনেকে বলীখেলার পরিবর্তে একে বৈশাখী মেলা হিসেবেই চিনে। জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অহংকারে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করা হয়।

এছাড়া ১০০ বছর আগে বাংলা ১৩২২ সনে "প্রবাসী "পত্রিকায় মোহিনীমহন দাস বর্নিত "কেমন ছিল তখনকার জব্বারের বলীখেলা"কালের কন্ঠে প্রকাশিত হয় যা খুবই তথ্যবহুল।তার জবানীতে-যেটির বর্ণনা করিব তাহা 'আবদুল জব্বরের বলীখেলা' বলিয়া প্রসিদ্ধ। এই খেলা গত ১৩ বৈশাখ (!) সোমবার হইয়া গিয়াছে। প্রতি বৎসরই বৈশাখ মাসের এমনি তারিখে এই খেলা হইয়া থাকে। চট্টগ্রাম শহরের ঠিক বক্ষঃস্থলে পুরাতন কাছারির (বর্তমান থানা ও মাদ্রাসা স্কুলের) ইমারতের নিম্নস্থ ময়দানে এই খেলার স্থান করা হইয়া থাকে। ময়দানের মধ্যস্থলে মল্লগণের জন্য নির্দিষ্ট রঙ্গস্থল বাদ রাখিয়া চারিদিকে লোহার কাঁটা-তার দিয়া দোহারা বেড়া দেওয়া হয়। তৎপর সেই রঙ্গস্থলের ঠিক মধ্য-স্থলে একটি উচ্চ সুপারীগাছের থাম পুঁতিয়া তাহার উপরিভাগে একটি 'বায়ু-চক্র' বসাইয়া দেওয়া হয়, বায়ুপ্রবাহের তাড়নায় তাহা অবিরাম গতিতে ঘুরিতে থাকে, এবং তন্মধ্যে বসান কয়েকটি ছবির তরঙ্গায়িত গতি দেখিতে পাওয়া যায়। সুপারীগাছের থামটি রঙিন কাগজ দিয়া মুড়িয়া দেওয়া হয় এবং তাহার অগ্রভাগ হইতে কয়েকটি রশিতে ঝুলান বিচিত্রবর্ণের পতাকাশ্রেণি চারিদিকে টানিয়া বাঁধা হয়। এবং চারিদিকে বংশদণ্ডের উপর নানাবর্ণের পতাকা-সকল উড়িতে থাকে। রঙ্গস্থলের এক পাশ্র্বে কয়েকটি সামিয়ানা খাটাইয়া নিমন্ত্রিত দর্শকগণের বসিবার বন্দোবস্ত করা হয়। রবাহূত ব্যক্তিগণ চারিদিকে দাঁড়াইয়া বসিয়া গাছে ছাদে চড়িয়া এই দৃশ্য দর্শন করে। পাহাড়ের ঢালুগাত্রে লোকগুলি কেমন গ্যালারীর ন্যায় উপবেশন করিয়াছে তাহা সহজে অনুমান করা যাইবে। এই ব্যাপারে উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী হইতে আরম্ভ করিয়া উকিল আমলা এবং সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণ সকলেই নিমন্ত্রিত থাকেন। এই উদ্দেশ্যে অনেক অফিস আদালতের অর্ধ কাছারি হয়।
ক্রমে দিন রাত্রি প্রভাতের পূর্ব হইতে চট্টগ্রামের স্থানীয় ডোম বাদ্যকরগণের ঢোল কাড়া সানাইয়ের মিশ্রিত একঘেয়ে আওয়াজে প্রাণ ওষ্ঠাগত হইয়া উঠিতে থাকে। এবং ঘন ঘন বোমের আওয়াজ হইতে থাকে। নানা স্থান হইতে দোকানীরা আসিয়া মেলার উপযোগী দোকান সাজাইতে আরম্ভ করে। মেলায় 'নাগরদোলা' 'রাধাচক্র', এমন কি ছোটখাট ভুঁয়ে-গেঁয়ে সার্কাসের দলও আগমন করিয়া থাকে।
ক্রমে বলীগণ আসিয়া উপস্থিত হয়। এক একজন বলীর সহিত তাহার সহচর সাথী প্রায় ১০০/১৫০ লোক দলবদ্ধ হইয়া আগমন করে। রঙ্গস্থল হইতে ঢোল বাজাইতে বাজাইতে যাইয়া তাহাদিগকে 'থলার' মধ্যে আগবাড়াইয়া আনিতে হয়। একে দুয়ে, দশেবিশে, দলে দলে প্রায় ৫০০০ দর্শক ক্রীড়াস্থলে সমবেত হয়। মোটর গাড়ি, মোটর বাস, গাড়ি ঘোড়ার অবিরামগতিতে শহর তোলপাড় হইতে থাকে। উত্তেজিত জনসঙ্ঘকে পথে আসিতে আসিতে বলীখেলার কথা ভিন্ন অন্য কথা বড় একটা বলিতে শোনা যায় না। কোন্ বলী বড়, কাহার 'তাকত' বেশি, কাহার সঙ্গে কাহার কুস্তি হইবার সম্ভাবনা, কে কাহাকে হারাইবে, ইত্যাকার কোলাহলে শহর মুখরিত হইয়া উঠে। কেহ কাহাকে জিজ্ঞাসা করিতেছে 'সালামমাউ, কুঁড়ে যাওর?' অন্য-উত্তর দিতেছে 'এককানা বলীখেলা চাইতাম যাইর।' ইত্যাদি দেখিতে দেখিতে স্থানটি লোকারণ্যে পরিণত হয়। বেলা দশটার পর মল্লগণ আসরে অবতীর্ণ হইতে থাকে। তখন সজোরে ঢোলে লাঠি পড়িতে থাকে এবং আরো ঘন ঘন বোম ফুটিতে থাকে। শিক্ষিত ব্যক্তিগণের মধ্যে কেহ কেহ উপস্থিত থাকিয়া মধ্যস্থতা করিয়া থাকেন। বেলা দশটার পর হইতে জনতার ভিড় এত বাড়িতে থাকে যেন তখন রাস্তা দিয়া গাড়ি ঘোড়া চলাচলও প্রায় বন্ধ হইয়া যায়। খেলা আরম্ভ হইলে মল্লগণ রঙ্গস্থলে অবতীর্ণ হইয়া বাদ্যের তালে তালে নৃত্য করিতে থাকে এবং মালসাটে প্রতিপক্ষকে ক্রীড়ার আহ্বানসূচক সঙ্কেত করিতে থাকে। এখানকার খেলার নিয়ম এই যে ৮/১০ জোড়া বলী বা পালোয়ান একসঙ্গে কুস্তী আরম্ভ করে।
মল্লগণের মধ্যে একজন আরেকজনকে 'চিৎপট্কান' দিতে পারিলেই তাহার জিত হইল। কোন বলী কাহাকেও হারাইতে পারিলে উপস্থিত জনতার মধ্য হইতে যে গভীর আনন্দধ্বনি উত্থিত হয় তাহাতে গগন বিদীর্ণ হইবার উপক্রম হয়। যে বলী জয়লাভ করে সে খেলাদাতার নিকট হইতে যথোপযুক্তরূপে বস্ত্র ও অর্থাদি পুরস্কার লাভ করিয়া থাকে। এরূপে অনেক জোড়া বলী যার যার কেরামৎ দেখাইয়া পুরস্কার লইয়া যায়।
দুঃখের বিষয়ে ঢাকার, কলিকাতার ও পশ্চিমী পালোয়ানগণের খেলার প্রতিযোগিতায় প্রতিপক্ষগণ একে অন্যকে হারাইবার জন্য যে-সকল অপূর্ব কৌশল (প্যাঁচ) দেখাইয়া থাকে, এক এক জোড়া মল্লের খেলায় যেরূপ ২/৪ ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হয়, এখানকার মল্লগণের খেলায় তাহার অনুরূপ বড় বেশী কিছু-দেখিতে পাওয়া যায় না_এক এক জোড়ার খেলায় ১০/১৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। ইহার কারণ স্থানীয় বলীগণ অধিকাংশই 'ভুঁইফোঁড়', এখানে কুস্তী কসরত শিক্ষার তেমন কোন নির্দিষ্ট 'আখড়া' নাই। নিজে নিজে যে যত দেহের শক্তি সঞ্চয় করিতে পারে সেই তত বড় বলী বলিয়া পরিগণিত হয়। এখানে বলী খেলার যেরূপ একাগ্রতা আছে, যেরূপ উন্মাদনা আছে, তাহাতে যদি কসরৎ ও কৌশলাদি শিক্ষার তেমন কোন ব্যবস্থা থাকিত তবে সোনায় সোহাগা হইত সন্দেহ নাই। আশা করি খেলার অনুষ্ঠানকারীগণ এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী হইবেন। এবং সময় সময় ঢাকা প্রভৃতি স্থান হইতে নামজাদা পালোয়ানদিগকে আনাইয়া বলীখেলার প্রকরণ শিক্ষার ব্যবস্থা করিয়া ইহার উন্নতিসাধনে যত্নবান হইবেন।
সন্ধ্যার প্রাক্কালে খেলা ভাঙিয়া যায়। তখন রুদ্ধ জল স্রোত হঠাৎ মুক্ত হাওয়ার ন্যায় জনসঙ্ঘ গৃহাভিমুখে প্রস্থান করে। বহুদূর হইতে আগত বলীগণ তাহাদের পাথেয় ও খোরাকী ইত্যাদি পায়। এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠাতার ৪০০/৫০০ টাকা ব্যয় হইয়া থাকে। চট্টগ্রাম মুসলমান প্রধান স্থান বলিয়া দর্শকগণের প্রায় পনর আনাই মুসলমান।
চট্টগ্রামের বলীখেলার ভিতর যে চেতনাটুকু এখনও ক্ষীণ দীপালোকের মত জ্বলিতেছে তাহাতে কিঞ্চিৎ উৎসাহের তৈলসেক করিয়া যদি ইহাকে সর্বত্র এইরূপ সচেতন করা যায় এবং পূর্বকালের ব্যায়াম কৌশলপূর্ণ ক্রীড়াদি পুনরায় নিঃসঙ্কোচ গ্রহণ করিয়া আমাদের ভাবী বংশধরগণের ব্যায়ামের ব্যবস্থা করা যায়, তবে এই পোড়া বাংলায় আবার স্বাস্থ্যের উজ্জ্বলতেজ প্রদীপ্ত হইয়া উঠিতে পারে।

এবার প্রতিযোগী বলী ও মল্ল সম্পর্কে কিছু তথ্য(সুত্র-কালের কন্ঠ)।
মল্ল পরিবার ও আনিক্যা বলি সম্প্রদায়ঃ

কর্ণফুলী ও শঙ্খ নদীর মধ্যবর্তী স্থানের উনিশটি গ্রামে মল্ল উপাধিধারী মানুষের বসবাসের কথা রয়েছে পূর্ণচন্দ্র চৌধুরীর চট্টগ্রামের ইতিহাস বইয়ে। মল্লরা ছিলেন শক্তিশালী ও সুঠামদেহী। শারীরিক কসরৎ প্রদর্শনই ছিল তাদের পেশা। এই মল্লবীরেরাই ছিলেন বলীখেলার প্রধান আকর্ষণ ও বলীখেলা আয়োজনের মূল প্রেরণা।
চট্টগ্রামের ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ২২টি মল্ল পরিবারের কথা পাওয়া যায় ইতিহাসবিদ আবদুল হক চৌধুরীর 'বন্দর শহর চট্টগ্রাম' (পৃ. ২৪৪) বইয়ে। যেমন_আশিয়া গ্রামের আমান শাহ মল্ল, চাতরির চিকন মল্ল, কাতারিয়ার চান্দ মল্ল, জিরির ঈদ মল্ল ও নওয়াব মল্ল, পারির হরি মল্ল, পেরলার নানু মল্ল, পটিয়ার হিলাল মল্ল ও গোরাহিত মল্ল, হাইদগাঁওয়ের অলি মল্ল ও মোজাহিদ মল্ল, শোভনদণ্ডীর তোরপাচ মল্ল, কাঞ্চননগরের আদম মল্ল, ঈশ্বরখাইনের গনি মল্ল, সৈয়দপুরের কাসিম মল্ল, পোপাদিয়ার যুগী মল্ল, খিতাপচরের খিতাপ মল্ল, ইমামচরের ইমাম মল্ল, নাইখাইনের বোতাত মল্ল, মাহাতার এয়াছিন মল্ল, হুলাইনের হিম মল্ল, গৈরলার চুয়ান মল্ল। তবে পূর্বপুরুষের পেশা থেকে সরে গেছেন অনেক মল্ল।
আনিক্যা বলী নামে একটি সম্প্রদায় আছে চট্টগ্রামে। একসময় বলী হিসেবে তাদের খুব নাম-ডাক ছিল। কুস্তির প্যাঁচে আনিক্যারা ছিল ওস্তাদ। এ সম্প্রদায়ের দু-একজনকে এখনও লালদীঘির বলী খেলায় দেখা যায়। আনিক্যা বলীরা সাধারণত আসেন চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া, রামু, টেকনাফ থেকে।

সুত্রঃ-ইন্টারনেট,দৈনিক কালের কন্ঠ,দৈনিক আজাদী।























































রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১

ইভান পানফিলোভঃসোভিয়েত ইউনিয়নের বীররক্ষক।

ইভান পানফিলোভ(১৮৯২-১৯৪১) জন্মেছিলেন রাশিয়ার পেত্রভস্ক,সারাতভে।২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি ছিলেন সোভিয়েত কিরগিজস্থানের সামরিক কমিসার।
১৯৪১সালের ২২জুন জার্মান নাজী বাহিনী রাশিয়ার সমগ্র পশ্চিম সীমান্তজুড়ে আক্রমন করে বসে।ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী নিয়ে তারা বিপুল বেগে সোভিয়েত রাজধানী মস্কোর দিকে ধাবিত হচ্ছিলো।তখন সর্বোচ্চ সোভিয়েত প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় শুধু চিন্তা করছিলো,মস্কোর পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষার জন্য ২০-২৫দিন সময় খুবই দরকার,শত্রু ক্রমশ রাজধানীর নিকতবর্তী হচ্ছে।এখনও ট্যাংকবিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা,পরিখা খনন ,বিভিন্ন বাধা সম্পন্ন হয়নি।
কাদেরকে দিয়ে নাজী আক্রমন প্রলম্বিত করা যায়,এ মূহুর্তে দরকার একটি সম্পুর্ন পেশাদার বাহিনী,যারা ২০-২৫ দিনের জন্য সে আক্রমন ঠেকিয়ে রাখবে।
সমগ্র বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত বাহিনী খুব কমই ভূল করেছিলো,কারন যে অল্প কয়টি ভূল তারা করেছিলো তার ফলাফল হয়েছিলো ভয়াবহ।
সোভিয়েত জেনারেল গেওর্গি জুকোভ এ গুরুত্বপুর্ন কাজের দায়িত্ব দিলেন কমান্ডার ইভান পানফিলোভ ও তার ৩১৬ রাইফেল ডিভিসনের উপর।জুকোভ দায়িত্ব নেয়ার পর পানফিলোভকে বলেছিলো দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে আমি নিজে তোমাকে গুলি করে মারবো।মনে রাখবে,তোমার ততপরতার উপরই রাজধানীর নিরাপত্তা নির্ভর করছে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানফিলোভ তার ৩১৬ রাইফেল ডিভিসনের অমিততেজী যোদ্ধাদের নিয়ে আক্রমন রুখতে গেলেন।বস্তুত কোন দেশের রাজধানীর পরাজয় মানে সে দেশের মানুষের মানসিকতার উপর ভীষন আঘাত।

পানফিলোভ তার ডিভিসনকে নিয়ে মস্কোর পশ্চিমে স্মোলেনেস্ক-মস্কো মহাসড়কের নিকট ভলকলানস্ক মজাইস্ক প্রতিরক্ষা লাইনে নাজি বাহিনির সবচেয়ে শক্তিশালী ফর্মাসন গুলোর সাথে অসম যুদ্ধে লিপ্ত হলেন।বাকিটা শুধুই ইতিহাস।
৩১৬ ডিভিসনের যোদ্ধারা রাজধানী রক্ষার জন্য বীরের ন্যায় মৃতুবরন করছিলো।রাজধানীবাসীর জন্য এটা ছিলো অত্যান্ত বেদনার মুহুর্ত যে,যখন তাদের প্রিয় সন্তানেরা তাদেরকেই রক্ষার জন্য অতি সন্নিকটে মারা যাচ্ছিল।সময় গড়াচ্ছিলো দ্রুত,যারপরনাই কঠিন পরিস্থিতিতে।বীরত্ব সেদিন তাদের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা বলে মনে হচ্ছিলো।

আর জার্মান  বাহিনীর জন্য এটা ছিলো এমন যে,এই প্রথম তারা যুদ্ধ শুরুর পর প্রবল বাধার সম্মুখিন হচ্ছিলো।যা তারা আশা করেনি।
রুশ সৈনিক সম্পর্কে তারা এই মন্তব্য করছিলো যে,এদেরকে পর্যাপ্ত গুলি করার পরও ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিতে হয়।
বাস্তবিকভাবে ৩১৬ ডিভিসন প্রবল বাধা দিয়ে জার্মান বাহিনী থেকে সময় কিনছিলো বিপুল রক্তের বিনিময়ে।
১৯৪১সালের ১৫নভেম্বর এ ডিভিসনের ২৮ জন যোদ্ধা নিজেদের জীবন দিয়ে মাত্র তিন ঘন্টার যুদ্ধে নাজী বাহিনীর অত্যাধুনিক ১৮টি ট্যাঙ্ক ধবংশ করে দিয়ে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমন ব্যর্থ করে দেয়।এদের কোম্পানি কমান্ডার ভাসিলি ক্লচকভ মারা যাওয়ার পুর্বে তার সঙ্গীদের শুধু এটাই বলে যান,ভাইয়েরা শুধু মনে রাখবেন রাশিয়া বিশাল,কিন্তু আমাদের পিছু হঠা চলবে না।কেননা পিছনে মস্কো।তার এ ভাবনাতেই প্রতিফলিত হচ্ছিলো সমগ্র রাশিয়ার জন্য তীব্র ভালোবাসা ও উতকন্ঠা।

সর্বত্র কঠোর লড়াই চলছিলো,আর স্বয়ং ইভান পানফিলোভ সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো।
কারন প্রবল গোলাবর্ষন ও ইস্পাতের ধারা বর্ষনে তার সেন্যরা টিকতে পারছিলো না।তার গোলন্দাজেরা কামানের পাশেই যুদ্ধরত অবস্থায় মারা যাচ্ছিলো।তিনি তাদের ছেড়ে না যেয়ে কামান গুলোর আবার দখল নিচ্ছিলেন,এটা দেখার পর তার সেন্যরা আর কেউ তাকে ছেড়ে যায় নি।
বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছিলো।তাদের এই তীব্র বাধাদানের ফলস্বরুপ মস্কো উপযুক্ত প্রতিরক্ষা নিতে সক্ষম হয়।

অবশেষে সোভিয়েত প্রতিরক্ষাবিষয়ক জনকমিসার সিদ্ধান্ত নেয় পানফিলোভকে পর্যাপ্ত যোদ্ধা দেয়া হবে এবং তাকে ও তার ডিভিসনকে সোভিয়েত ইউনিয়নের গার্ড মর্যাদা দেয়া হবে।কিন্তু অত্যান্ত দূঃখের বিষয় খবরটা তাকে দিতে যান মার্শাল রকসসভস্কি স্বয়ং,কিন্তু এর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে মর্টারের আঘাতে ইভান পানফিলোভ ও তার সহযোদ্ধারা ঘটনাস্থলেই শহীদ হন।তিনি সবসময়ই চাইতেন যেনো সঙ্গীদের মাঝে তার মৃতুয় হয়।তার মৃতুয়তে সমগ্র রাশিয়া শোকাহত হয়।তিনি ‘”সোভিয়েত রাশিয়ার বীর”উপাধী পান।তার সন্মানে ৩১৬ রাইফেল ডিভিসনের নামকরন হয় পানফিলোভাইট।পরবর্তীতে যুদ্ধে তারা দারুন ভূমিকা পালন করে।এইসব অসংখ্য বীরদের নেতৃত্বেই রাশিয়া নাজী জার্মানকে চুড়ান্ত যুদ্ধে পরাজিত করেছিলো।

             ইভান পানফিলোভ

      অকুতোভয় যোদ্ধা পানফিলোভ 

         পানফিলোভের সমাধি

  কিরগিজস্থানের বিসকেকে পানফিলোভ স্মারক স্তম্ভ্য


নতুন পিকনিক স্পটঃমহামায়া সেচ প্রকল্প মীরসরাই।

আমরা গত শুক্রবার(০১,এপ্রিল,২০১১) এই স্পটটিতে যায়।এটি উদ্বোদন হয়েছে মাত্র মাস খানিক আগে।তাই এখনও বিউটিফিকেসনের কাজ চলছে,কিন্তু এখনই বলা যায় এটি হবে একটি দারুন পিকনিক স্পট।নীল হ্রদ,পাহাড় ঘেরা পরিবেশ,সুউচ্চ অবস্থান ,গাড়ী পার্কিং এর ভালো সুবিধা সবমিলে এ স্পটটি অবশ্যই জনপ্রিয় হবে।

এর অবস্থান হলো চট্টগ্রামের মীরসরাই অন্তর্গত ঠাকুর দিঘীর পুবে।কাউকে যেতে হলে প্রথম মীরসরাইয়ের মিঠাছরা বাজার পেড়িয়ে ঠাকুরদিঘী আসতে হবে,এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পড়ে।এখান থেকে রাস্তার পুবদিকে দেড় কিঃমিঃ গেলেই প্রকল্প।কিছু ছবি দিলামঃ





































শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০১১

ঘুরে এলাম বান্দরবান,চিম্বুক ও নীলগিরি।

গত ২১শে জানুয়ারী আমরা মানে আমাদের বন্ধু কায়সার ভাই,মনিরভাই,বিটুভাই,মহসীনভাই,সাইফুলভাই বান্দরবান-চিম্বুক-নীলগিরি ভ্রমনে যায়।লেজিবয় বিটুভাইয়ের জন্য যাত্রা যথারীতি বিলম্ব।আমরা সকাল ৭-৩০মিঃ এ একটি ফোরহুইল ড্রাইভ গাড়ী নিয়ে বের হই,কারন আগেই খবর পেয়েছি বান্দরবান থেকে নীলগিরি রাস্তা পুরোতাই চড়াই।এজন্য শক্তিশালী গাড়ি অত্যাবশ্যক।আমাদের ড্রাইভার আজিজ ঐ লাইনে একজন অভিজ্ঞ লোক,পরে আমরা এর সত্যতা পেয়েছি।যেহেতু বিটুভাই বিলম্ব ঘটিয়েছে,তাই আমরা তাকে শাস্তিস্বরুপ সে রাস্তায় যে হোটেলেই ব্রেকফাস্টের জন্য নামতে চেয়েছে,আমরা কেউ নামিনি।২ঘন্টা পর নাস্তা করেছি কেরানির হাটে,যখন দেখলাম বিটুভাই সতিয্যই গাড়ি থেকে নামার হুমকি দিতে থাকে।১০-৩০মিঃ এ আমরা বান্দরবান পৌছি।এখান থেকে চিম্বুক ৩০ কিঃমিঃ,আর নীলগিরি ৪৮কিঃমিঃ।এরপর শুরু হয় আমাদের অপুর্ব নীলগিরি যাত্রা।পাহাড়ের উপর থেকে সাঙ্গু নদীর দৃশ্য কতোই না সুন্দর,তা না দেখলে বোঝা যায় না।চিম্বুকের আগে পরে শৈলপ্রপাত,এখানে একটি ঝর্না আছে।তারপর চিম্বুক পাহাড়।এ পাহাড়ে সরাসরি গাড়ি নিয়ে উঠা যায়।সেখানে মোবাইলের টাওয়ার দেখলাম,জিপিএস রিডারে উচ্চতা দেখলাম সমুদ্রপৃস্ট থেকে ১৮৫০ ফুটের বেশী।চিম্বুক পাহাড়ে সড়ক ও জনপথের একটি ডাকবাংলো আছে,পুলিশ ফাড়িঁও আছে।তারা বেশ হেল্পফুল।চিম্বুক থেকে নীলগিরি ১৮ কিঃমিঃ।শীতকাল ছিল বিধায় চারদিক কুয়াশায় ঢাকা ছিলো।তারপরো আমরা প্রকৃতির বিপুল সৌন্দয্য উপভোগ করেছিলাম।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি রেজিমেন্ট নীলগিরিতে থাকে।তারা জানালো আবহাওয়া পরিস্কার থাকলে নীলগিরি থেকে বঙ্গোপসাগর ও চট্টগ্রাম বন্দরের লাইট দেখা যায়।অনেক ফটো তুললাম,এবার ফিরতি।উল্লেখ্য চট্টগ্রাম থেকে সকাল সকাল রওয়ানা দিতে পারলে দিনে দিনেই ফিরা যায়।ঐদিন রাজপুন্যাহ ছিল,আমরা সেখানেও যায়।



















বিলুপ্তপ্রায় তুষারচিতা এখন ভয়ানক হুমকির মুখে!

তুষারচিতা বা স্নো-লেপার্ড পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম বিড়ালজাতীয় প্রানি।এবং সম্ভবত একিই কারনে তা দূলর্ভ ও হুমকির সম্মুখিন।এ প্রানিটি মধ্য এশিয়া ও দক্ষিন এশিয়ার সুউচ্চ পবর্তমালা থেকে শুরু করে ১২৩০০০০বর্গ কি:মি; এলাকাজুড়ে বিচরন করে।এটিকে দেখতে পাওয়া যায় পশ্চিমে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পবর্তমালা হয়ে ওয়াখান কড়িডোর ছাড়িয়ে সমগ্র পামির মালভুমিতে,নর্থ ওয়েস্ট পাকিস্তান,কাশ্মির,নেপাল,ভুটান,কাজাখস্তান,কিরগিজস্তান,সির দরিয়া,ককেশাস অন্চল,উত্তরের লেক বৈকাল ও গোবি মরুভুমিতে।এছাড়া তিব্বতের আলটিন টাগের উত্তরেও এর দেখা মেলে।নিচে কিছু ছবি দিলাম।








                                                                     বিচরনস্থল।

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...