ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন।
ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্রাট আকবরকে মনে করার কারন হলো,একটা মুসলমানীর দাওয়াত খাওয়া উপলক্ষে।বংগদেশে এই মুসলমানীর সিজন হলো,মাঘের শেষ বা ফাল্গুনের শুরুতে।আচ্ছা থাক, আসল কথাটা হলো,সম্রাট আকবরের মুসলমানী হয় নাই।মানে তিনি করার সময় পাননি। ১৫৪২ খ্রীঃ এ বর্তমানের পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মরুময় উমরকোট দূর্গে খুবই গরীবি হালে আকবরের জন্ম হয়।বাবা সম্রাট হুমায়নের তখন প্রকৃতই মহাবিপর্যয় চলছিলো।এদিকে শের শাহের কাছে হেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আর ওদিকে সৎ ভাই কামরানের অসহযোগিতায় মাথা খারাপ দশা!
তো এই ভীষম দূর্দিনে হামিদা বানু বেগমের কোলে আকবরের আগমন।খুব অল্পদিন হামিদা বানু তাকে কোলে রাখতে পেরেছিলো।হুমায়ুন কামরানের হাতে বন্দী হন।কামরান আকবরকে মুক্তিপণ হিসেবে বন্দী করে।শর্ত দেয় ,হুমায়ুন ইরানে নির্বাসনে চলে যাবে।আর কখনো দিল্লীর সিংহাসন দাবি করবে না।পরবর্তী ১২ বছর হুমায়ুন আর হামিদা বানু তাদের পুত্রের মুখ দর্শন করতে পারে নাই। ১৫৫৪ খ্রীঃ এ আবার দিল্লীর দখল হুমায়ুন নিলে পুত্রের সাথে পিতার দেখা হয়।এই বিগত বছরে আকবরের মুসলমানী করার সময় কামরানের হয় নাই।আর ১২ বছর মুসলমানী করানোর জন্য তখনকার দিনে বেশী বয়স।তাও সেটা নিয়ে ভাবার সময় করতে না করতে সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যু হয়।
এরপর আকবর সম্রাট হয়ে উঠেন।এখন সম্রাটকে মুসলমানির কথা কিভাবে বলা যায়?ধরেন, কেউ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কিভাবে বলতে পারে যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ,এতোদিন সময় পাননি।এবার সময় করে মুসলমানীটা করে নিন।দেখা যাবে, মাঝখান দিয়ে মুসলমানি তো হবেই না,উল্টো গর্দান যাবে।
এরপর আকবর রাজপুত রমনী বিয়ে করেন।এবং তার পরের প্রত্যেক সম্রাটের রাজপুত স্ত্রী ছিলো।সেই ধারায় সম্রাট আকবর হতে শুরু করে বাহাদুর শাহ জাফর পর্যন্ত আর কেউ মুসলমানী করাননি।
ভাবছেন,আমি বানিয়ে বলছি? না বন্ধু না।ইংরেজ ঐতিহাসিক জন উইলিয়াম কায়ে তার " দ্য হিস্ট্রি অভ সেপোয় ওয়ার ১৮৫৭" বইয়ে ভলিউম টু এর ৬৮৩-৮৬ পৃষ্টায় এটার বিবরন দিয়েছেন।কায়ে সাহেব এটা নিশ্চিত হবার জন্য নাকি মৌলবী আহম্মেদ সৈয়দ এর কাছ থেকেও তথ্য নেন।তিনিও জানান সত্যি সত্যিই আকবরের পর থেকে আজ পর্যন্ত আর কোন মুঘল সম্রাট খৎনা করেননি।
বিষয়টা নিয়ে প্রায় ২০০ বছর পর নাড়া পড়ে যখন ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সবচেয়ে সাম্রাজ্যবাদী গভর্ণর লর্ড ডালহৌসি তার ডক্ট্রিন অভ নেসেসিটির উছিলায় একের পর এক রাজ্য গ্রাস করা শুরু করেন।ডালহৌসি মুঘল সম্রাটকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সম্রাটকে জানান ,তিনি সম্রাটের জ্যৈষ্ঠ পুত্র ফকির উদ্দীনকে ওরফে দারা বখতকে ভাবি সম্রাট হিসেবে দেখতে আগ্রহী।সে কোম্পানীর প্রতি মিত্রভাবাপন্ন।কিন্তু এদিকে এ পুত্রই সম্রাটের সবচেয়ে অপ্রিয়।সম্রাটের প্রিয় পুত্র হলো, তার কনিষ্ঠ স্ত্রী জিন্নত মহলের গর্ভে জন্মানো জোয়ান বখত।তাই স্ত্রীর বুদ্ধিতে সম্রাট ডালহৌসিকে জানান, ফকির উদ্দীন সম্রাটের পদ পাবে না।কারন তার মুসলমানী হয়েছে।কিন্তু জোয়ান বখতের হয়নি।মুঘল বংশে এ ধরনের ত্বকচ্ছেদ আকবরের আমল থেকে নিষিদ্ধ।এমনকি সম্রাট বাহাদূর শাহ জাফরেরও হয়নি।চাইলে ডালহৌসি দেখতে পারে।
ডালহৌসি এ ধরনের অবাইজ্জা ১৪ লম্বর কথায় অবাক হয়। সে আপাত ক্ষান্ত দেয়।
বিঃদ্রঃ গত ১৪ জানুয়ারীও ইতিহাস নিয়েই একটা লেখা লিখছিলাম।এই ১৪ তারিখেও কাকতালীয়ভাবে লিখলাম সেই ইতিহাসই। ১৪ তারিখ এর ফেরে পড়লাম।ঠিক দুক্কুর বেলা ভুতে মারে ঢেলা।
পড়ে বিনোদন পাইলাম
উত্তরমুছুন