রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

পাবদা মাছ!

গতকাল মাছ বিক্রেতার প্রতিক্রিয়া আমাদের(আমি ও বন্ধু) চমকে দেয়।সে পাবদা মাছ ৬০০ টাকা কেজি জানায়।আমরা ৪৫০টাকা হবে কিনা বলতেই সে মহা হতাশ হয়ে বললো, কার জন্য এইসব ভালো ভালো মাছ আনি বলেন তো।আপনারা যদি এমন করেন কি লাভ এসব বিক্রি করে।দুইটা টাকা লাভের জন্যই তো বাজারে বসা।এখানে আপনেরা করেন এসব,ঘরে বউয়ে বলে গায়ে মাছের গন্ধ, মসজিদে মুসুল্লি বলে গায়ে গন্ধ।কোথায় যামু বলতে পারেন।
আমরা অপরাধবোধ, না কিনতে পারার অক্ষমতা সব মিলিয়ে মানে মানে কোনমতে কেটে পড়লাম।এমনকি ১৫-২০ মিনিট রিক্সায় কোন কথা বলতে পারি নাই।তারপর হঠাত করে দুজনের মুখ দিয়ে একসাথে কথা বের হলো, আর পাবদা মাছ খামু না(একিই সাথে)!

সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮

নিয়তি কেন বাধ্যতে!

স্বামীর সাথে আজ ভীষন ঝগড়ার পর স্ত্রী ভাবে তার জীবনটা যে আজ বরবাদ হয়ে গেছে তার জন্য দায়ী ১৮ বছর আগের সেই টেক্সীওলাটা।আল্লা তার উপর গজব নাজিল করুক।এতোদিনে সে নিশ্চয় মরে গেছে ,না হলে ঠেলাগাড়ী চালায় কিংবা না হলে ভিক্ষা করে।
কে এই ১৮ বছর আগের অজানা অচেনা সেই টেক্সীওলা?যার চেহারা ১৮ বছর আগেও খেয়াল করা হয়নি।আর এতোদিনতো তার কথা মনেও আসেনি।
১৮ বছর আগে আজকের স্ত্রীটি যখন তরুনী ছিলো তখন সে তার বোনকে নিয়ে টেক্সীতে করে বানিজ্যমেলাতে গিয়েছিলো।সেখানে গেটের সামনে নামার সময় স্বামীটি তাকে দেখে।এবং টেক্সীওলাকে জিজ্ঞেস করে এই তরুনী কোনখান থেকে এসেছে।ঠিকানাটি দাও,বিয়েসাদির ব্যাপার।তারপরেই সেই অভিশপ্ত টেক্সীওলা প্রায় খুশীমনে ঠিকানাটা দিয়ে দেয়।শুধু তাইই নয়,তাদেরকে আবার ফিরতি এসে বিল্ডিং চিনিয়ে দেয়।
তারপরই বরপক্ষের প্রস্তাব নিয়ে আগমন।উভয় পক্ষের পছন্দ হয়ে যাওয়া।তারপর ১৮ বছর পার।তারপর আজকের এই উপলদ্ধি।টেক্সিওলা ঠিকানা না দিলে এসব কিছুই ঘটতো না।হয়তো আরো ভালো কোন বর জুটতো।মানবজীবনে কোথা থেকে এসব টেক্সীওলা জুটে যায়?

রবিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৮

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ। ১৪ জানুয়ারী,১৭৬১ খ্রীঃ মকর সংক্রান্তি।

আজকের দিনে ১৪ জানুয়ারী,১৭৬১ খ্রীঃ মকর সংক্রান্তির দিন পানিপথের ৩য় যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়।
উপমহাদেশের রাজনৈতিক সমীকরনের হিসেবে দিনটির গুরুত্ব এই, এটি উপমহাদেশের জন্য একটা ইতিহাসের সন্ধিক্ষন।এর সুদুঢ়প্রসারী প্রভাব পরবর্তী শতাব্দি পর্যন্ত পড়েছিলো। ইংরেজরা এই যুদ্ধের পর নিরঙ্কুশ অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে।কারন এই যুদ্ধেই উপমহাদেশকে নিয়ন্ত্রন করার মতো শক্তিশালী মারাঠা সাম্রাজ্য আর আফগান দুররানী সাম্রাজ্যের কোমর ভেঙ্গে যায়।দুররানী সম্রাট আহমেদ শাহ আবদালী ডিসাইসিভ বিজয় অর্জন করে কিন্তু তা তাকে উপমহাদেশে থেকে শাসন ক্ষমতা অর্জন করার ইচ্ছা জাগায় না।পরষ্পরের হেডম টেস্ট করার যুদ্ধ দুই সাম্রাজ্যের বারোটা বাজিয়ে দেয়।ইংরেজ কূটনৈতিক লড়াইয়ে জিতে যায়।কোনরকম যুদ্ধে অংশগ্রহন করা ছাড়াই ।এটাই তাদের জন্য পরোৎকৃষ্ট লড়াই।
পানিপথের ৩য় যুদ্ধের বিবরনটাকে আমি যথেষ্টই সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করেছি।লম্বা লেখা পড়ার ধৈর্য্য কারোর নেই,আমারো নেই।তাই তখনকার বিবদমান পক্ষগুলোর একটা বর্ননা দেই।ইতিহাসবিদদের কাছে সে সময়টা ছিলো প্রকৃতই"গারদি কা ওয়াক্ত"।মুঘল সাম্রাজ্য অস্তমিত, মুঘল সম্রাট ২য় শাহ আলম টাইটূলার সম্রাট বা নামমাত্র সম্রাট।তিনি তখন কেবল খেলাত বা বিভিন্ন উপাধি দেয়ার সম্রাট।তাও মুঘল চাগতাই বংশের সম্রাট বিধায় যেসকল নব্য সেয়ানা শাসক চারদিকে গজিয়ে উঠছিলো,তাদের কাছে তার মুল্য এই,তিনি হিন্দু গজিয়ে উঠা জায়গীরদারদের রাজা উপাধি,মুসলমান গজিয়ে উঠা জায়গীরদারদের নবাব উপাধি দিয়ে যাচ্ছিলেন।এছাড়া নব্য নবাবেরা মুঘল রাজকন্যাদের বিবাহ করে অভিজাত হওয়ার একটা পন্থা ধরেছিলেন।
তাই মুঘল সম্রাট তখন তাদের উজিরের হাতে বন্দী।উজির গাজীউদ্দীণ ইমাদুল মুলক এর হাতে তখন পর্যন্ত অন্ধ হয়েছেন ১৭৫৩ সালে ভূতপুর্ব রঙ্গিলা সম্রাটের পুত্র আহমেদ শাহ বাহাদুর আর বন্দী হয়েছেন তার মা কুদসিয়া বেগম। ১৭৫৯ সালে সম্রাট ২য় আলমগীর নিহত হন এই উজিরের হাতে।এর মধ্যেই মারাঠা সেনাপতি অন্তাজি মানিকেশ্বর এসে সমগ্র দিল্লী অবরোধ করে।যাবার সময় লালকিল্লার দামী আসবাবপত্রসহ বিপুল মুল্যবান জিনিস লুটে নিয়ে যায়।মুঘলরা তাদের আগ্রার সমাধি পর্যন্ত রক্ষা করার সামর্থ হারায়।আগ্রার দখল যায় ভরতপুর বল্লভগড়ের দিগ রাজাদের বংশধর দূধর্ষ জাট দস্যু সুরযমলের হাতে।
দক্ষিনাত্য মোটের উপর নিজামের সাম্রাজ্য বাদ দিলে মারাঠাদের হাতে, গোয়ালিয়র হতে মধ্য ভারত সিন্ধিয়াদের হাতে, সৌরাষ্ট্র বা কাথিওয়ার গুজরাটের দক্ষিণদিক হোলকারের অধীণ।উত্তরের দোয়াব বা যমুনা আর গঙ্গার মধ্যবর্তী অঞ্চল আফগান রোহিলাদের হাতে, সাহরানপুর,মিরাট,গাজিয়াবাদ ও রোহিলা আফগান হাফিজ রহমত আর মুসাভী খানদের হাতে, ফররুকাবাদ আহমেদ শাহ বঙ্গাসদের হাতে।আর লখনৌ সুজাউদ্দৌলার হাতে।এই হলো অবস্থা।পাঞ্জাবে তখন দক্ষ সুবাদার মীর মান্নু মারা গেছেন।তাই শিখেরা সেখানে জেগে উঠছে।কিন্তু শেকিং দেয়ার পর্যায়ে নেই।মারাঠা মলহার লাল হোলকার এই শুন্যস্থান পুরন করে লাহোরের দিকে এগিয়ে যায়।
আহমেদ শাহ আবদালী ১৭৩৯ সালে নাদির শাহের দিল্লী শেকিং এর সময় এসেছিলো।সে তখন সামান্য এক দলের অধিনায়ক। ১৭৪৭ সালে নাদির আততায়ীর হাতে নিহত হলে সে বাকি সেনাবাহিনী নিয়ে দুররানী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ফেলে।পরের বছরই মধু খেতে দিল্লীর দিকে এসে যায়।কিন্তু তখনকার মুঘল ওয়াজির সফদর জং তাকে পাঞ্জাবের সিরহিন্দে ঠেকিয়া দেয়।প্রায় অপ্রস্তুত বাহিনী নিয়ে চোখের খিদায় ভারত আসার ফল হাতে নাতে পেয়ে আবদালিও বিদায় নেয় সত্য কিন্তু এরপর আরো ৩ বার আসে।সববারই একটা ওয়ার্ম আপ লড়াই,আর সৈনিকদের জন্য খোরাকি লুটে তাদের জন্য একটা স্টার্টার ডিস সার্ভ করে দেয়। তাই যখন ১৭৫৯ সালে আবদালী আগের চেয়ে দলবদ্ধ হয়ে আসে সেটা যে দিল্লী পর্যন্ত যাবে তা স্পষ্ট হয়।
আবদালী কারন দেখায়,২য় আলমগীরের নিহত হওয়া,মারাঠাদের দিল্লীর প্রতি অসন্মান এসবের একটা বিহিত হওয়া উচিত।আমি আজ আছি কাল নাই,কিন্তু তোমরা আমার জাত ভাইরা(রোহিলা আফগান, বঙ্গাসরা) যে বিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছো, তা দেখে বসে থাকা যায় না।মুঘল সম্রাটের মতো একজন সন্মানিত লোক দিল্লীতে সুস্থির হয়ে থাকতে পারেনা।সেটা দেখে কান্দাহার থেকে আমার কান্না পায়।আবদালী তখন রোহিলা আফগান আর লখনৌর সুজাউদ্দৌলার মধ্যে চলমান হিংস্র লড়াইগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেন।রোহিলারা আবদালীর কথায় সবার আগে লাইনে আসে,কারন আবদালী বলে গেছে যুদ্ধ যেটা হবে সেটা জিতে আমি কান্দাহার চলে যাবো।তোমরাই ভোগ করো দোয়াব অঞ্চল।আর সুজার সাথে মিত্রতা বাড়াও ।তার সেনাবাহিনী আমাদের দরকার নেই।কিন্তু পাশে থাকা একান্ত দরকার।কিন্তু সুজা কোনক্রমেই আফগানদের সাথে যেকোন মিত্রতার বিরোধী।তাই আবদালী সুজার চিরশত্রু রোহিলা চিফটেইন নাজিবোদ্দৌলাহ কে সুজার মায়ের কাছে পাঠান।মিত্রতার জন্য।নাজিব সুজার মাকে মা ডেকে সন্মোধন করেন।এবং কথা দেন সে আর কখনো সুজার বাহিনীর সাথে লড়বে না।সুজা যেনো তাদের পাশে থাকেন।তিনি জানান ,এমনকি মুঘল সম্রাটও আমাদের আশীর্বাদ করেছেন।সুজা মায়ের কথায় কোরান ছুয়ে নাজিবের সাথে কথা দেন।এই সাইড এবার রেডী।
এবার মারাঠা সাইড।মাত্রই বিশ বছরের কম সময় আগে মারাঠারা বর্গীর হাঙ্গামা করে পুরো পুর্বাঞ্চল ,নাগপুর,বিহার ,উড়িষ্যা আর বাংলাকে তামা তামা করে দিয়েছিলো।মারাঠা বর্গীদের হাতে হিন্দু-মুসলমান নির্বিচারে হত্যার শিকার হয়েছিলো।আর বর্গীর দলের একটা খারাপ জিনিস ছিলো ,লুটতে লুটতে আগুন দিয়ে পোড়াতে পোড়াতে রাস্তা দিয়ে আসতো এবং বিদায়ও নিতো একিই পন্থায়।তাই মারাঠারা একটা বিদ্বেষ কামিয়েছিলো তাদের জ্ঞাতি অনেক প্রজা কি রাজাদের তরফ থেকেই।আবদালীর বিরুদ্ধে একজোট হতে গিয়ে তাই মারাঠারা তাদের দখলকৃত অনেক জায়গার প্রজাদেরই সাহায্য পায়নি।এমনকি ভরতপুরের দূধর্ষ জাটদস্যু সুরযমল তাদের আশ্রয় দেবে জানালেও তাদের সাথে একজোট হয়ে আবদালীর মুখোমুখি হতে অস্বীকৃতি জানায়।একমাত্র সেই পারফেক্ট ভবিষ্যত বাণী করে যে, সে মারাঠাদের জানায় কোন খোলামেলা প্রান্তরে যুথবদ্ধ হয়ে আফগানদের সামনে না পড়তে।এদেরকে লম্বা সময় ধরে গেরিলা আক্রমনে ব্যাপৃত রাখায় শ্রেয়।সে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিস্তৃত রনাঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ার বুদ্ধি দেয়।তার যুক্তি হলো,আফগান দস্যুরা লম্বা সময় অবস্থান করে না।এরা বর্ষা আসার আগেই চলে যায়।কিন্তু মলহোর লাল হোলকার,মাহাদজি সিন্ধিয়া,দাত্তাজি সিন্ধিয়া,জাংকোজি সিন্ধিয়া আর সর্বোপরী মারাঠাদের বীর সেনাপতি সদাশিব রাও বাহু ও তার চাচাতো ভাই বিশ্বাস রাও সর্বাত্বক যুদ্ধের পক্ষে।আর একটা বড় ফ্যাক্টর হলো ,এ যুদ্ধে কোন রাজপুত গোষ্ঠীর অংশ না নেওয়া।অনেক অনুরোধ স্বত্তেও জয়পুরের মাধো সিং নির্লীপ্ত থাকে ।সে অংশ না নেয়ায় রাজপুতানার আর কোন বংশও পানিপথে যায়নি।এভাবে মারাঠারা তাদের কৃতকর্মের জন্য একটা সর্বভারতীয় বাহিনী হয়ে উঠতে পারেনি।
এটা আমার কাছে একটা কাকতালীয় ব্যাপার যে, ইতিহাসের পাতায় প্রায় হাজার বছর আগে যে হেপথেলাইট (এটার অপভ্রংশ হলো আবদালী) গোষ্ঠী থেকে আবদালীরা এসেছে, রাজপুতরাও সেই একিই গোষ্ঠী থেকে আগত।এই দুররানী আফগান আর রাজপুতানার রাজপুতদের মধ্যে অনেক ব্যাপারে বেজায় মিল।এরা দুই সম্প্রদায়ই যুদ্ধবাজ পেশাদার গোষ্ঠী।
এখন মুল ব্যাপারটা এসে দাঁড়ায় ১৭৬১ সাল নাগাদ এই, আবদালী দাবি করে মারাঠারা চম্বল নদীর উত্তর পাশে চলে যাক,সেটাই সীমারেখা হবে দুই সাম্রাজ্যের।আর মারাঠারা জানায়,আফগানরা পেশোয়ারের দক্ষিনে সিন্ধু নদের পাড়ে আটোক দূর্গে চলে যাক।সেটাই হবে দুই সাম্রাজ্যের সীমারেখা।এগুলো নিয়ে দুই দলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লড়াই ১৭৫৯ সাল থেকেই চলে আসছিলো।মারাঠারা এর মাঝেই পারস্য রাজ কাজারদের কাছে বার্তা দিয়েছিলো তারা যেনো আবদালিকে কান্দাহার কাবুলের মাঝেই চেপে রাখে।কিন্তু তাদেরও ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ ছিলো না।এসবের মাঝেই আবদালী তার বাহিনী নিয়ে লাহোর মুলতান হয়ে পাঞ্জাব পার হয়ে দিল্লীর উত্তরে যমুনা পার হয়ে শাহদরাবাগে অবস্থান নেন।মিত্রদের সাথে বোঝাপড়া করে নেন।মুঘল বাদশাহ তাকে শুভেচ্ছা পাঠান।রোহিলা নাজিব,সুজা আর বংগাসদের সাথে তার দেখা হয়।সুজা তার খুবই সুসজ্জিত অস্ত্রে প্রস্তুত সেনাবাহিনী নিয়ে আবদালীর সাথে যোগ দেয়।তার বাহিনীর প্রধান সেনাপতি তখন নাগা গোসাইন ।এ দিকে পেশোয়া নানাসাহেব পাঞ্জাব,দোয়াব রক্ষার জন্য তার ভাই রঘুনাথ রাও আর মলহার রাও হোলকারকে সরিয়ে দাত্তাজি সিন্ধিয়া আর জাংকোজি সিন্ধিয়াকে নিয়োগ করেন। আবদালীর সাথে প্রথম রাউন্ডের শুরুর লড়াইটা তাই এরাই লড়েন।যমুনা নগরের কাছে তারা আবদালীর ভ্যানগার্ড বাহিনীর দেখা পান।দাত্তাজি প্রবলভাবে লড়েও তাদের বিধবংস করতে পারেনি।তার মাথা আবদালীর নিকট প্রেরিত হয়।জাংকোজি গুলীতে আহত হয়ে পালাতে পারেন।
এ অবস্থায় মারাঠা বাহিনীর দায়িত্ব নেন ,সদাশিব রাও বাহু।সে এসে সবার আগে পানিপথে অবস্থান নেন।তার পিছনে রইলো পানিপথ দূর্গ আর আফগানিস্তান যাওয়ার গ্রান্ড ট্রাংক রোড।এ রাস্তা দিয়েই আবদালি দক্ষিনে দিল্লী গিয়েছে।সুতরাং এবার আবদালীর আবার উত্তরে আসার পালা।সে যমুনা পেরিয়ে পানিপথের দিকে যাওয়া শুরু করলো সেই পথ দিয়ে ,যেখান দিয়ে দক্ষিনে মারাঠাদের দেশ পুনেতে যাওয়া যায়।এটা একটা অদ্ভুত সিচুয়েশন যে, তারা বিবদমান দুই পক্ষই যার যার মাতৃভূমি যাওয়ার পথ আটকে অবস্থান নিয়েছে।আরো মিরাকুলাশ যে, কান্দাহার হতে ঠিক ততোটুকুই দূরত্ব পানিপথের যতোটুকু দূরত্ব মারাঠাদের পুনে হতে পানিপথ।আবদালী তাই সঙ্গত কারনেই দিল্লী হতে পানিপথ যাওয়ার লজিস্টিক সাপোর্ট লাইনটা বন্ধ করে দিলো সবার আগে।মারাঠারা খানা-খাদ্যের সংকটে পড়লো।এদিকে হোলকার দিল্লী আর ততসংলগ্ন এলাকা রেইড দেয়ার জন্য হন্যে হয়ে গেলো খানা-খাদ্যের সন্ধানে।সদাশিব বাহুর সহায়তায় কুঞ্জপুরার যুদ্ধে আফগানদের একটা বড় রসদ হাত করা গেলো।
অক্টোবর ১৭৬০ এর শেষ সপ্তাহে আবদালী তার বাহিনী নিয়ে দিল্লীর উত্তরে বাঘপেটের কাছে যমুনা পেরিয়ে শোনপেটের নিকট অনুপস্বরে অবস্থান নেন।এখান থেকে পানিপথ তার উত্তরে সামনের দিক।পানিপথের যুদ্ধের মুল গ্রাম কালা আম্ব এর কাছেই।
৮ডিসেম্বর ,১৭৬০ এদিন আবদালি আরেকটা কীলক চালালো।দিল্লীর উত্তরে সদাশিব বাহুকে রসদ যোগানো বলবন্ত রাও মেহেন্দেলে এদিন আবদালির রোহিলা মিত্রদের হাতে নিহত হন।ফলে দোয়াব ও রোহিলা খন্ড অংশে মারাঠা ক্রিয়াকলাপ চালানো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলো।বাহু তার গুরুত্বপুর্ন একজন যোদ্ধা ও মিত্র হারালো।বলতে কি , পানিপথের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এদিনই দুই পক্ষ সবচেয়ে বেশী সৈন্য খোয়ালো।
এভাবে পরস্পরের রসদ খোয়াখুয়ির লড়াই পুরো ডিসেম্বরে জুড়ে চলেছিলো।বুন্দেলারাজ গোবিন্দ পান্ট এবার দোয়াব গাজিয়াবাদ মিরাটের রোহিলাদের প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে এলেন।কারন রোহিলারা মৃত্যুফাসে পরিনত হয়েছে মারাঠাদের জন্য।২২ ডিসেম্বর নাজিব তার ১০ হাজার রোহিলা নিয়ে গোবিন্দ পান্টকে গাজিয়াবাদে আক্রমন করে।বুন্দেলারাজ গোবিন্দ পান্ট নিহত হয়।তার মাথা কর্তিত হয়ে আবদালীর নিকট প্রেরিত হয়।সদাশিব রাও বাহুর জন্য এবার আর দক্ষিনের কোন সাহায্য রইলো না।লড়াই কঠিন রুপ ধারন করলো।এ অবস্থায় সুজার দরবারের পন্ডিত কাশিরাজ দুই গ্রপের মধ্যে মিমাংসার একটা শেষচেষ্টা চালালেন সুজাকে নিয়ে ।আলোচনা ব্যর্থ হলো।এই কাশী পন্ডিতের বিবরন অতান্ত মুল্যবান একটি দলীল পানিপথের যুদ্ধের।এশিয়াটিক সোসাইটির ৩য় ভলিউমে এটির পুর্ন বিবরন আছে।
অবশেষে ১৪ জানুয়ারী ১৭৬১ খ্রীষ্টাব্দ।ফাইনাল বাউট।
সকাল থেকেই মারাঠা সেনাপতি ইব্রাহিম কারদির ফরাসী কামানগুলো পানিপথকে কাপিয়ে তুললো।আড়াই মাস ধরে এই জায়গায় বসে উভয় দল আশেপাশের গ্রামগুলোর লাইভস্টক জিরোতে নামিয়ে আনেন।তাদের জীবনকেও ফানাফিল্লাহ করে ছাড়েন।ইব্রাহিম কারদি বাহুকে বলেন বাহিনীর কেন্দ্রটা দূর্ভেদ্য করে গড়তে ,কারন সে আবদালীর বাহিনীর গুরুত্ব বুঝে যেকোন এক পাশ বিধংস করে ইউ টার্নে গিয়ে আবদালীর অবস্থানের পিছনটা বিপন্ন করে তুলবে ।এরপরই সদাশিব রাও বাহু তার সেন্টার বাহিনী দিয়ে আবদালীর সেন্টার গুড়িয়ে কারদির দিকে এগোবে।আর মলহোর রাও হোলকার,মাহাদজি সিন্ধিয়া,জাঙ্কোজি সিন্ধিয়া ,সামসের বাহাদুর (বাজিরাও আর মাস্তানির ঔরসজাত পুত্র) এরা থাকবে বাহুর বামদিকে।
এবার আবদালীর সাইডঃ
আবদালী আগেই কথা দিয়েছিলো সুজার বাহিনীকে কোন রক্তক্ষয়ী আঘাতে পড়তে দেবেন না।এরা শুধু রিজার্ভ বাহিনী হিসেবে কাজ করবে।যদি এদের দরকার পড়ে ততোক্ষনে তার কিজিলবাস অশ্বারোহী দলই ৮০% কাজ সম্পন্ন করে এগিয়ে রাখবে।তাই আবদালীর ফর্মেশন হলো এরকম,আবদালী তার ডান বাহুতে রাখলেন তার দূধর্ষ বিশ্বস্ত বারখুরদার খান, হাফিজ রহমত,দুন্দে খান ও তার বেরিলির রোহিলাদের ।এরা নিশ্চিহ্ন হলেও জায়গা ছাড়বে না।সেন্টার গ্রুপ রাখলেন তার উজির শাহ ওয়ালি খানকে ।যে ইষত ক্ষুদ্ধ যে, তার উপর প্রধান আঘাত হানার সব লক্ষন স্পষ্ট থাকার পরও কেনো কিজিলবাসী অশ্বারোহীরা আবদালীর রিজার্ভে রইলো।আর বামে রাখলেন রোহিলা চিফটেইন নাজিবুদ্দৌলা, শাহ পছন্দ খান,ফররুখাবাদের বঙ্গাস আর সর্ববামে কথানুযায়ী সেইফ লাইনে সুজাউদ্দৌলাহকে।নিজে আবদালী অবস্থান নিলেন ডানে ঘেসা সেন্টার বাহিনীর পিছনে একটা টিলামতো উচু জায়গায়।সেখান থেকে মোটামুটি পুরো আক্রমনের ছবিটা চোখে পড়ে।তার সামনে গভীর পরীখা করে এরপর গরুর গাড়ির চাকা কামানের চাকা দিয়ে বাধা তৈরী করে রাখা হয়েছে।কেউ চাইলেই তার উপর হামলে পড়তে পারবে না।
সকালে উজির শাহ ওয়ালি খানের সন্দেহ সত্যি প্রমানিত করে ইব্রাহিম কারদি তার গোলন্দাজ বাহিনী নিয়ে আবদালির ডানদিক খেয়ে ফেলা শুরু করে ।ঢেউ এর পর আক্রমনের ঢেউ চলতেই থাকে।আক্রমনের ধাক্কায় বারখুরদার খান তার বেরিলীর রোহিলাদের নিয়ে নিশ্চিহ্ন হওয়া ধরে।ইব্রাহিম কারদির প্রতি কামান আক্রমনের পর আশংকাজনক ভাবে আবদালীর ডান বাহু কমতে থাকে ।বামদিকের নাজিব এটি দেখে উত্তেজনায় ফুসতে থাকে যে,আবদালীই বা বসে কেনও দেখছে।তার কিজিলবাসিরা যদি এখন না নামে তো চুল ফালানোর জন্য কখন নামবে?আবদালী তাকে বলে পাঠালো,যুদ্ধের সেনাপতি আমি।নাজিব যেমন আছে তেমন থাক।পরবর্তী ৪ ঘন্টার উভয় পক্ষের ৬০-৭০হাজার  সৈন্য স্পটে নিহত হয়।লড়াই কঠোর চরিত্র ধারন করে।হাতে হাতে তরবারীতে তরবারীতে কুঠারে কুঠারে।এই দুই আড়াই লাখ সৈন্যসহ লক্ষাধিক প্রানীর চিৎকার চেচামেচি আর ধুলার সাগরে একে অন্যকে মাটিতে মিশিয়ে ফেলার যোগাড়।
এবার ২য় বাউটঃ
এই ফেজে দুপুর একটা নাগাদ সদাশিব রাও বাহু তার বহু কাংক্ষিত আক্রমনের কীলকটা তার সেন্টার বাহিনী নিয়ে আবদালীর বাহিনীর গভীরে ঢুকিয়ে দিলেন।স্যার যদুনাথ সরকার তার বইয়ে এটাকে এভাবে বলেছেন," যেনো ছুরি দিয়ে মাখন কাটা হচ্ছে"।
নাজিব উত্তেজনায় সিগনালের অপেক্ষায় রইলো,এটা হচ্ছে কি? আবদালী কি পাগল? আফগানদের ডানবাহুর সৈন্যরা ক্লান্তির চরমে পৌছেছে।তার আর সহ্য হচ্ছে না।সে আবদালীর কাছে গেলো।তাকে বাজপাখির মতো দৃস্টি নিয়ে সদাশিব বাহুর বাহিনীর একটিভিজ লক্ষ্য করতে দেখা গেলো।ঠান্ডা একটা শান্ত মেজাজে তাকে দেখে নাজিব আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি আমাকে নামতে দেবেন?আবদালি বললো, নাজিব ,তুমি দেখো সদাশিব কিভাবে বীরের মতো আমার বাহিনীর পিছনে যাচ্ছে।আমি তাকে সেখানে যেতে দিচ্ছি।আমি তাদের সেই জায়গায় তাদের তাপেই ভাত রান্না করবো।এটাকে আফগানীরা বলে দঁমপুখত।
দিনের এই ফেজে আবদালী তার ক্লান্ত হয়ে যাওয়া বাহিনীর দিকে নাজিবদের এগোতে দিলেন।তাকে বলে দিলেন ,এখন দেখাও তোমার শক্তি।আর নিজের রিজার্ভ কিজিলবাসী অশ্বারোহী নিয়ে বাকি বাহিনী নিয়ে সদাশিব বাহুর উপর ঝাপিয়ে পড়লেন।হঠাত করে মলহোর লাল হোলকার আর সিন্ধিয়ারা টের পেলো নব উদ্যমে আফগান বাহিনীর আক্রমন।এসময় একটা গুলি সদাশিব বাহুর ভাই বিশ্বাস রাও এর কপালে বিদ্ধ হলো।সে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়ে তার হাতি থেকে পড়ে গেলো।এটা দেখে সদাশিব রাও বাহু নিজের হাতির পিট থেকে নেমে ঘোড়ায় করে আবার সেন্টার বাহিনীর দিকে এগোতে থাকে কিন্তু সে টের পেলো তারা ঘেরাটোপে পড়ে গেছে।সদাশিব রাও বাহু বীরের মতো লড়াই করে।এ পর্যায়ে এসে আবদালী উঠের পিঠে বহনযোগ্য ছোট কামান জামবুরাক থেকে গোলা দাগা শুরু করে।তেমনি এক গোলার আঘাতে বাহুর মাথা উড়ে যায়।পরবর্তীতে মারাঠা পেশোয়া নানা ফাড়নবীশ যিনি এ সময়টা প্রত্যক্ষ করেছিলো।সে নিজে ১৫০ জনের মতো যোদ্ধা নিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছিলো।সে বলেছিলো,বাহু ঘেরাটোপ ভাঙ্গার জন্য মরিয়া হয়ে লড়ছিলো।
মলহোর লাল হোলকার আর মাহাদজি সিন্ধিয়া সবার আগে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে।ইব্রাহিম কারদি,জাংকোজি সিন্ধিয়া আর শামসের বাহাদুরকে আবদালীর সামনে আনা হয়।সেখানেই তাদের মাথা কর্তন করা হয়।রোহিলা আফগান সর্দার মুসাভি খান অন্তাজি মানিকেশ্বরের মাথা কর্তন করেন।বিপুল মারাঠা সেনাপতি তাদের প্রান হারান।নিজের সৈন্যদের বিপুল মৃতদেহ দেখে আবদালী যুদ্ধক্ষত্রে ধৃত প্রত্যকে বন্দীকে হত্যার আদেশ দেন।আফগানদের তাবুর বাইরে কর্তিত মস্তকের পিরামিড সাজানো হয়।তৃতীয় দিন সদাশিব রাও বাহু আর তার ভাই বিশ্বাস রাওয়ের দেহ মৃতদের মাঝে পাওয়া যায়।এদিন বাহুর মাথাও পাওয়া যায়।আবদালী সুজার বাহিনীর ব্রাহ্মণ সৈন্যদের আদেশ দেন,যথাযোগ্য মর্যাদায় সদাশিব বাহু আর তার ভাইয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যেনো করা হয়।
কিন্তু পলাতক মারাঠা সৈণ্য ও তাদের পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক ছিলো এই যে, তাদের চলতি পথে লুট করে সর্বশান্ত করে গুজ্জর দস্যু আর জাট দস্যুরা।
বিঃ দ্রঃ ডাফের হিস্ট্রি অভ মারাঠা, স্যার যদুনাথের ফল অভ মুঘল এম্পায়ার,উইলিয়াম আরভিং এর লেটার মুঘলস এগুলোতে মনের সুখ মিটিয়ে পানিপথের ৩য় যুদ্ধের বিবরন পাবেন।কারো লাগলে ইপাব আছে,দিবো।কাইন্ডলি জানাবেন।

শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৮

হোন্ডা নামা।

একটা সময়ে আমার মোটর সাইকেলের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিলো।কিন্তু সেটা এফোর্ড করার মতো সামর্থ ছিলো না।এখন যে সামর্থ একেবারে গা বেয়ে বেয়ে পড়ে তাও না,কিন্তু অদ্ভুত যে, আমার সে ইচ্ছাটা আর মোটেও নাই।কিভাবে যেনো ইচ্ছাটা নাই হয়ে গেছে।আমাদের চট্টগ্রামে মোটর সাইকেলকে আশ্চর্যজনকভাবে হোন্ডা বলা হয় প্রায়ওই ক্ষেত্রে।আক্ষরিক অর্থে বলা হয় হুন্ডা।সেটা যে ব্রান্ডেরই হোক না কেনো।সম্ভবত সত্তরের দশকে হোন্ডা সিডি আই এর ব্যাপক প্রচলন আর জনপ্রিয়তাই এর মুল কারন।এরপর ইয়ামাহা,সুজুকি এরাও জনপ্রিয়তা পেয়েছে, কিন্তু সবই চলতি মুখের লবজে হুন্ডা বলে ব্যাপক প্রচলিত।
তাই আমি বাকি লেখাটাতে মোটর সাইকেলকে হোন্ডা বলে অভিহিত করবো।আজকে দেখি কি ,দুইজন বয়স্ক লোক ৫০ সিসি হোন্ডাতে করে যাচ্ছে।সেই হোন্ডার ৫০ সিসি ,যা প্রায় অনেকটা প্লাস্টিকের গড়ন।রং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে লাল,অন্যান্য কালারের বেশ কম দেখা যায়।আমার ধারনা এটি তৈরীর পর কোটি কোটি পিস বিক্রি হয়েছে।তো, বয়স্ক চালক পুরোপুরি মোল্লা নাসিরুদ্দীন হোজ্জার মতো দেখতে।আমার হঠাত মনে এলো,কেনো এই মডেল কেবল আমি বয়স্কদেরই চালাতে দেখি।কেনো যুবকদের নয়?সাথে সাথেই সরল কারনটা বুঝতে পারলাম, আসলে সবকিছুর মুলে ফুয়েল কন্সাপশন ।কারন একটু বয়স্করা মিতব্যয়ী ,তারা ফুয়েল কন্সাপশন কমাতে চায়।আর তাদের এতো দ্রুত গতিও প্রয়োজন নেই।তাই তারা যে যার প্রয়োজন অনুযায়ী বাহন বেছে নিয়েছে।ম্যানুফেকচারার সেই অনুযায়ী পন্য তৈরী করেছে।
একটু আগের যুগের দিকে তাকালে বোঝা যায়,এই মোটর সাইকেল চালকের দলেরাই গত শতকের ঘোড়সওয়ারির দল।রুচি,সামর্থ,চালনাশক্তি সেই একই আছে,শুধু ট্রান্সপোর্টেশন পশু থেকে মোটরাইজড হয়েছে।গত শতকের তাগড়া শক্তিশালী যুবক সওয়ারীরা যেমন তাগড়া মদ্দা ঘোড়া বা স্টালিয়ন চালাতো ,কারন তারা এটা পছন্দ করতো।যদিও সেটা পালন করা ব্যয়বহুল ছিলো তাও।এই ধরনের সওয়ারীর ঘোড়ার খাই-খরচ বেশী,নিয়মিত দলাই মলাই করা লাগে।
এই ধরনের সওয়ারীরাই এখন বিভিন্ন রেসিং মোটর সাইকেল,পালসার,এফজেড ,রিগাল র‍্যাপ্টর ডেটোনা,রয়াল এনফিল্ড ,হার্লে ডেভিডসন চালায়।
আর গত শতকের যেসব সওয়ারীরা খরচের ভয়ে বা মিতব্যয়িতার জন্য ঘোড়ার বদলে গাধা,খচ্চর ব্যবহার করতো ,তারাই এ যুগে এসে ৫০ সিসি ,৮০-৯০ সিসি হোন্ডা ব্যবহার করে।কারন গাধা-খচ্চরের মতোই এগুলা সাশ্রয়ী।এই দলের লোকগুলাই হোজ্জার মতো মাঝবয়েসী।এজন্যই এরা ৫০ সিসির ভক্ত।
এবার তৃতীয় একশ্রেনীর সওয়ারীর ব্যাপারে বলি, এরা সেই যুগে বাহন হিসেবে মাদি ঘোড়াকে বেছে নিতো,বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের মাদি ঘোড়া বন্ধ্যা।এ ধরনের সওয়ারীরাই এ যুগে আমার হিসেবে ভেসপা চালায়।আমি জানি ,ভেসপাওলারা খুবই ক্ষুদ্ধ হবে এটা শুনে।কিন্তু আমার মনে হয়েছে।ভুলও হতে পারে।
মোটরাইজড যুগ শুরু হওয়ার আগে এই গত শতকের বিশের দশক পর্যন্ত ঘোড়া বা খচ্চর খুবই প্রচলিত বাহন ছিলো।যদিও মার্কিন মুল্লুকে ফোর্ড ও অন্যান্য মোটরসের ব্যাপক প্রচলন ক্রমে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ঘোড়া বা গাধা-খচ্চরকে কৃষিকাজের সহায়তার উপাদানে পরিনত করে ছাড়ে।তারপরও শুনে অবাক হবেন, এই ২০১৭ সালেও ঘোড়া ,গাধা,খচ্চর মধ্য এশিয়া উজবেকিস্তান,কিরগিজিস্তান ,কাজাকস্তান আর মঙ্গোলিয়ায় এখনো খুবই প্রচলিত বাহন।তারা এটায় চড়ে,এটাকে দিয়ে কৃষিকাজ করে আর জনপ্রিয় লাইভ স্টক হিসেবে এটাকে খেয়েও ফেলে।ঘোড়া তাদের খুবই প্রিয় একটি খাবার।
আমার স্ট্যাটাসের কোন আগা-মাথা নেই।সেই হোন্ডা দিয়ে শুরু আর ঘোড়া খাওয়া দিয়ে শেষ।

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

মধ্যরাতের আগন্তক।

ঐদিন রাত তিনটায় ঢাকার বাসে করে চিটাগাং এসে নামলাম।খুবই ঠান্ডা কুয়াসাচ্ছন্ন একটি রাত।নামার সাথে সাথেই সিনজি পেলাম।সিনজিতে উঠেই যেই হাফ লিটার পানি বাসে উঠে মুতে ধরবে বলে খাইনি,তা শেষ করে দিলাম।বাসায় বোতলটা বয়ে নিয়ে যাবার মানে কি?
তারপরই টের পেলাম,আমি কি ভয়ঙ্কর কাজ করেছি।এই ঠান্ডায় একে তো এমনিতেই হাত পা পেটে সেদিয়ে যাচ্ছে,তার উপর আমি এটা কি করলাম?আমার পানি খাবার পরই বেগ আসে বড়টা।চিন্তার সাথে সাথেই মিলিসেকেন্ড পিং গতিতে বেগ এলো।আমি মজলুমের মতো হাহাকার করে উঠলাম।হে আল্লাহ ,আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমাকে মানে-সন্মানে বাসায় যেতে দাও।মাজারে বিশ টাকা মানত।শীতের রাতে লেজে-গোবরে হয়ে আমার অন্তিম-যাত্রা আমি চাই না।
বাসার সামনে নেমেই দেখি কমসে কম আটটা কুত্তা-কুত্তি।ওদের মধ্যে শেষটাইমের বোঝাপড়া চলছে,কুত্তারা বুঝাচ্ছে কাকে কোন বিল্ডিং লিখে দেবে।এই সময় আমার আগমন।পাড়ার কুকুরগুলো নিয়ে আমি চিন্তা করি না,কিন্তু আজ বেপাড়ার কিছু কুকুর জুটেছে।আর কুকুরেরা হুবুহু পুলিশের মতো,একা থাকলে মিনমিন।কিন্ত দলবদ্ধ থাকলেই বেপরোয়া ,গায়ে পড়ে ঝামেলা পাকানোর মাস্টর।
আমাদের পাড়ার কুত্তিটাই প্রথম হাভে-ভাবে লাজুক চোখে বোঝালো, এই তোরা সবাই ঐ কোনায় চলে আয়,তুহিন ভাই দেখতেছে।কিন্তু বেপাড়ার গুলা ঘাউ করে উঠে বললো, কোন তুহিন ভাই, কোথাকার তুহিন ভাই! এই রাত তিনটা বাজে উনার এখানে কি কাম?আর উনি এরকম চোরের মতো পা চিপে চিপে হাটার মানে কি?দেখেই তো মনে হয়, সামথিং হ্যাপেন্ড?
এদিকে আমি সৌম্য ঠান্ডা বিনীত মেজাজ নিয়ে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে কুকুরদের বলে যাচ্ছি, আমি যেরকম বেগ চেপে আছি ,তোরাও চেপে থাক।আর যদি ঘেউ করিসও ,একজন কর, এভাবে একসাথে আটজন ঘেঊ করে উঠলে আমার পেন্টের ভেতর লেজে-গোবরে হয়ে যাবে।অলরেডি লেঞ্জা ইজ ডিফিক্যাল্ট টু হাইড হয়ে গেছে।তারপরই আম্মা গেইট খুলে ফেললো।আমি কোন কথা না বলে দৌড়ে ঘরে ঢুকে গেলাম। মানের মান রাব্বুল আলামিনই রাখেন।

মানিব্যাগ।

আব্বার একটা মানিব্যাগ ছিলো দুধ চায়ের কালারের।আব্বা তখনো রিটায়ার করে নাই।মানিব্যাগটা ফুলে থাকতো। আমি নিয়মিত টাকা সরাতাম, আব্বা অবশ্যই বুঝতো।কিছুই বলতো না।আর আমাদের মগু সুমন তো ঠিক বেতনের দিন ওর আব্বার অফিসে গিয়ে বাপের দিকে ল্যাপা বিলাইয়ের মতো তাকিয়ে থাকতো।
ওর বাপের মেজাজ বিগড়ে যেতো ওকে দেখে,দেখেই চিৎকার দিতো, "মাইজ্যা মঁ,কিল্লাই আইচ্ছোস(ওর বাবা ওকে কেন যেনো মাইজ্যা মঁ বা মেজো মামা ডাকতো,মেজো ছেলে ছিলো কিনা হয়তো তাই)।
তো একসময় আব্বা রিটায়ার করে ফেললো। আমার একটুও বিশ্বাস হলো না।টিভিতে বা সিনেমায় দেখতাম, বাবারা যখন রিটায়ার করতো তাদের চুল-দাড়ি সাদা থাকতো।আর আব্বা আক্ষরিক অর্থেই একেবারে ক্লিন শেভড কালো চুলে রিটায়ার করলেন।মনটা আব্বার থেকেও বেশী খারাপ হলো।এতোদিনের জন্মস্থান ছাড়তে হবে।তারপর আব্বার সেই দুধ চা রঙ এর মানিব্যাগের স্বাস্থ্য অনেক কমে গেলো। আমি আর টাকা সরাতাম না।ভীষণ মায়া লাগতো আব্বাকে দেখলে।আমি ভালো হয়ে গেলাম।
ভীষনরকম ভালো।আর আব্বার মানিব্যাগে হাত দিইনি।এরপর ভাইয়ার মানিব্যাগের দিকে মানুষখেকো বাঘের মতো নজর গেলো। ভালো হওয়া কতো কস্ট আপনারা জানেন না।

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...