বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭

সম্রাজ্ঞী নুরজাহান বনাম সুবাদার মহব্বত খান।

সম্রাট জাহাংগীর কার্যত সম্রাজ্ঞী নুরজাহানের হাতের মুঠোয় পরিচালিত হতেন।নিজে সম্রাজ্ঞী, ভাই আসফ খান প্রধানমন্ত্রী ,তার অন্যান্য ভাইয়েরাও সাম্রাজের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন পদে।তাই এই ইরানী পরিবারটি সাফল্য, ক্ষমতার দম্ভ সবকিছুর চূড়ায় অবস্থান করছিলেন।যুবরাজ খুররম ওরফে ভবিষ্যতের সম্রাট শাহজাহানের এই নিয়ে কস্টের কোন সীমা ছিলো না।
ক্ষমতায় সুবিধা হবে ভেবে সম্রাজ্ঞীর ভাইঝি মমতাজকে বিয়ে করেন।শ্বশুর প্রধানমন্ত্রী আসফ খাঁ।তাও কোন ভাও হলো না।সুন্দরী সৎ মা তার প্রবল ক্ষমতাবলে আর রুপের ছটায় সম্রাট বাবাকে "মা মরলে বাপ হয় তালুই" বানিয়ে ফেললেন।তালুই রুপী বাপ পুত্রের থেকে বৌ আর শালাদের বেশী মুল্য দিতেন।দূঃখে শাহজাহানের ব্লু হোয়েল গেম খেলতে মন চাইতো।এর মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক হলো, সম্রাজ্ঞীর অত্যান্ত আস্থাভাজন সেনাপতি সুবাদার মহব্বত খান।ওর মতো লোক যেকোন স্বাধীনচেতা যুবকের মনের ইচ্ছার মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম।যুবক খুররম শুধু তাকেই ভয় পায়, না হলে এমনিতে তো সে নিজেই বীরযোদ্ধা।
কিন্তু না, শাহজাহান বিদ্রোহ করলেন।তার বাবা আকবরের প্রিয় শেখু বাবা যুবরাজ সেলিম ওরফে সম্রাট জাহাংগীর নিজেও বিদ্রোহ করেছিলেন।বাবার প্রিয় বন্ধু আবুল ফজলকে হত্যা করেন।আবার জাহাংগীরের বড় পুত্র খসরুও তো বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।তাহলে সে নিজে কেনো মেনে নেবে।তবে অন্যরা যেটা কখনো করে নাই,শাহজাহান সেটা করেছেন।এই পর্যন্ত কোন যুবরাজ আগ্রা কেল্লার ভেতর কামান ছুড়ে নাই।জাহাংগীর এলাহাবাদে বিদ্রোহ করেন আর খসরু ফতেপুর সিক্রির পশ্চিমে রাজস্থানে আর লাহোরে বিদ্রোহ করেন।তাদের বিদ্রোহের আঁচ আগ্রা টের পায় নি। কিন্তু শাহজাহান আগ্রার কাছে বিলোচপুর সেনানিবাস দখলে আনার পর সেখান থেকে আগ্রা ফোর্টের দিকে কামান ছুড়েন।কিন্তু মহব্বত খানের নৈপুন্যতায় পরাজিত হন।সে জানে ধরা পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত।তাই পালালেন।পিছনে ফেউ এর মতো লেগে রইলো সুবাদার মহব্বত খান।সেই আমলে শাহজাহান যেই লং মার্চ করেছেন মহব্বত খানের হাত থেকে বাচার জন্য তা এই আমলেও বিরল।বিশ্বস্ত সেনাপতি, সৈন্য, হাতি-ঘোড়া সব হারিয়েছেন এই দীর্ঘ যাত্রাপথে।
কিন্তু ভাগ্যের ফেরে এই মহব্বত খানকে সম্রাজ্ঞী নুরজাহান সন্দেহ করা শুরু করেন।তার বদলে রাজপুত সেনাপতিদের হাতে অধিক করে ক্ষমতা দেয়া শুরু করেন।মহব্বত খান সুযোগটা নেন,যখন সম্রাট কাশ্মীরের রাজৌরিতে অবকাশে যান।নদীর উপর নৌকার সেতু পেরিয়ে মহব্বত খান সরাসরি সম্রাটের ডুরাসানা তাবুতে ঢুকে পড়েন।সম্রাট গোসলে ব্যস্ত ছিলেন।সম্রাটের জীবনীকার মুতামিদ খাঁ এর বর্ননা দিয়েছিলেন।সে আর করতলব খাঁ এসময় সম্রাটের সাথে ছিলেন।তারা এভাবে মহব্বত খানের মতো সেনাপতিকে খাস তাবুতে প্রবেশ করতে দেখে বিস্মিত হন।মুতামিদ খাঁ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মহব্বত খাঁ তাকে চুপ থাকতে বলেন।সাধারনত সম্রাট আদেশ না দিলে কোন সেনাপতির সম্রাটের কাছে এসে দাড়াবার অনুমতি নাই।আর সে সাক্ষাৎ অবশ্যই হয় দরবারে খাস এ।অবকাশকালীন তাবুতে নয়।আর এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিও নয়।সম্রাট জাহাংগীর গোসলখানা থেকে বেরিয়ে মহব্বত খাঁ কে দেখে একটুও অপ্রস্তুত ভাব দেখাননি।উনি জিজ্ঞাসুনেত্রে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।কিন্তু ভেতরে ভেতরে খুবই ক্ষুদ্ধ হলেন।তিনি এ পাশ ও পাশ তার খাস বডিগার্ডদের খুজলেন।এরা কেউ নাই।নতুন সব প্রহরী।এবার তিনি নুরজাহানের উপর ক্ষুদ্ধ হলেন।
মহব্বত খান যথাপোযুক্ত সন্মান জানিয়ে জানালেন,মহামান্য সম্রাট আপনার উপর আমার বিন্দুমাত্র ক্ষোভ নেই।সম্রাজ্ঞী নিজের ইচ্ছামতো যা ইচ্ছা তা করছে।আপনাকে আমি সর্বোচ্চ সন্মান দেবো।আপনি দয়া করে আমার সাথে চলুন।আর দয়া করে চেহারায় কোন অস্থিরতা আনবেন না।বাইরে সবাই আমাদের খেয়াল করছে।আমি নিজের জীবন দিয়ে আপনাকে রক্ষা করবো।আপনি কোন দূঃচিন্তা করবেন না।আপনি কেবল কিছু নির্দেশনা দেবেন।এখন দয়া করে আপনি এই ঘোড়াটিতে উঠুন।এতোক্ষনে সম্রাট কথা বললেন।তিনি বললেন, মহব্বত খাঁ কি এটাও জানে না যে সম্রাট নিজের হাতি ব্যতীত অন্যজনের কোন বাহন ব্যবহার করেন না।মহব্বত খান লজ্জিত হলেন।সম্রাটের হাতি আনা হলো।সম্রাট জাহাংগীর সুবাদার মহব্বত খানের হাতে বন্দী হলেন।
কিন্তু খেলাটা কুলিয়ে উঠতে পারলেন না।ইরানী রমনী নুরজাহানের বুদ্ধির কাছে মহব্বত খান হেরে গেলেন।খুবই সুকৌশলে নুরজাহান তার ব্যক্তিগত গার্ডদের এনে সংখ্যায় ভারি হয়ে গেলেন। মহব্বত খান শুধু নিজের জানটা নিয়ে পালাতে পারলেন।
অনেক পথ ঘুরে শাহজাহানের মতো শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়িয়ে একদিন শাহজাহানের কাছে এলেন।জানালেন ,যুবরাজ কি তাকে ক্ষমা করবেন? বাকি জীবন সে শাহজাহানের জন্য ব্যয় করবে।আর শাহজাহান তখন মরতে মরতে বেচে যান।এই যুগলের মিলিত আক্রমন নুরজাহানের শাসনের ভিত নেড়ে দেয়। ১৬২৮ সালে সম্রাট জাহাংগীর মারা যান। মহব্বত খান আর এবার শ্বশুর আসফ খান মেয়ে জামাইয়ের পক্ষ নিয়ে বিধবা বোনকে গৃহবন্দী করলেন।
সম্রাজ্ঞী নুরজাহান এর ১৮ বছরের শাসনের অবসান হলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...