বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৩

আমাদের সেহেরী পার্টি।

সবাই ইফতার পার্টি করে,কিন্তু ৯৮-৯৯ সালের দিকে আমরা বন্ধুরা করতাম সেহেরী পার্টি।রাত ১০টার পর ছাদে উঠে আমাদের তোড়জোড় শুরু হতো।বেশীর ভাগ সময়েই আমরা আখনি বিরিয়ানি রান্না করতাম।সাথে কোক-পেপ্সি আর সালাদ আইটেম।রান্নার কাজে আবদুল্লাহ ব্যস্ত থাকতো,সাথে সাহায্যকারী থাকতো।আর আমরা আড্ডার পার্টির দঙ্গলটা ছাদের উপর জলছাদ যেটা আছে তার উপর বিরাট জ্ঞান-গর্ভ আলাপে মশগুল থাকতাম।

আমাদের ইমরান(ওকে আমরা গুলাম বলি,ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার,তাই ক্ষুধারে বলে ভুক,কোক রে বলে কুক,ঢোল রে বলে ঢুল) আমাদেরে সুফীবাদ বুঝাইতে চাইতো।ওর আবার যেটাতেই ঝুকে,প্রথমদিকে ঝঁঝবা এসে যায়।খুব মারফতি গান গায়।তারপরই নেশা ছুটে গেলে আগের কাজকর্মের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ ভর করে।একবার সে তাবলিগে যেয়ে ঝঁঝবা এসে যাওয়ায় খুব চোখে সুরমা দেয়া শুরু করলো।এমন মোটা করে সুরমা দিতো,আমি প্রায় বলতাম -তোর চোখের কাছে কিন্তু ম্যাচ নিস না,বারুদে আগুন ধরে যাবে।তো আসল কথা বলি,সে তাবলিগে যেয়ে কোন এক মুরুব্বীর সাথে রাতে ঘুমায়।তারপর কি হয় জানি না,সে পরেরদিনই সেখান থেকে রেগেমেগে চলে আসে।ঐ মুরুব্বির নাম উঠলেই গালাগালি করে।

ওর প্রিয়গান ছিলো-দিন দুনিয়ার মালিক খোদা দিল কি দয়া হয়না।সে প্রচন্ড আবেগ নিয়ে যতবার আমাদের গানটা শোনাতে চায়।আমরা ততবার হেসে উঠি।গুলামের রক্তচক্ষু আমার এখনো মনে ভাসছে। মাঝরাতে মাবু "ডিল কি ডয়া হয়না" বলে অন্তরা ধরাতে গুলাম ইমরান ভয়ানক ক্ষেপে উঠেছিলো?

শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৩

বাবার কাছে ছোট্ট মেয়েটির অনুরোধ।

আরেফিন সাহেব আজকেও রাত ৪টা করে বাসায় আসলেন।ওনার স্ত্রী আর এখন ওনার জন্য অপেক্ষায় জেগে থাকেন না।ওনার কাছে অতিরিক্ত ১সেট চাবি থাকে,তাই তিনি প্রায় নিশব্দে বাসায় প্রবেশ করেন।বিয়ের পর এ নিয়ে প্রথম প্রথম বেশ সমস্যা হতো,কতো মনমালিন্য,কতো রাগ-অভিমান,এখন তার স্ত্রী মিলির কাছে এটা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।বলা যায় মানতে বাধ্য হয়েছেন।

বস্তুত পুলিশে চাকরীতে প্রবেশের পর থেকেই তিনি একরকম পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছেন।কোনখান দিয়ে ঈদ পার্বন গুলো আসে তিনি তা টেরই পান না,কেননা আজ বারো বছরের চাকুরীজীবনে তিনি খুব কমই ছুটি পেয়েছেন ঈদের দিনে।আমাদের দেশে ঈদের দিনেও প্রচুর হাঙ্গামা হয়,দেখা যায় সমগ্র দেশ যখন ঈদের আনন্দে মগ্ন তখন ও রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ।অথচ তাদেরও যে পরিবার পরিজন আছে কে তার খোঁজ রাখে।

আজকে সারাটা দিন তার অসম্ভব ব্যস্ততায় কেটেছে,রাতের ১০টায় বাসায় আসার পথে আবার কন্ট্রোল রুম থেকে মেসেজ।বাসায় ফিরার সময় ক্লান্তিতে তার শরীর ভেঙ্গে আসছিলো,বাইরে এর মধ্যেই হাল্কা বৃস্টি।তিনি আগত দিনটির চিন্তায় মগ্ন।তিনি নীরবে ঘরে প্রবেশ করে জামাকাপড় বদলালেন।টেবিলে খাবারগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে,প্রায় নিঃশব্দে আহারপর্ব সারলেন।এরপর তিনি টিভি দেখতে আসলেন,লো ভলিউমে তিনি খবর দেখতে লাগলেন।সব একি রকম সংবাদ খুন,ছিনতাই,নিরুদ্দেশ এগুলো ছাড়া যেনো আর কোন খবর নাই।

দেখতে দেখতে একটি খবরে উনি মননিবেশ করলেন,উনারই থানার খবর দেখাচ্ছে।এক ভদ্রমহিলা কান্নাকাটি করছে,তার মেয়ে দুদিন ধরে নিখোজ,তাই তিনি সাংবাদিকদের বলছেন এরা পর্যাপ্ত অনুসন্ধান চালাচ্ছেনা,বরং বলছেন দেখেন কোথায় কার সাথে ভেগেছে?

হঠাত পিছনে খুট করে শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখলেন তার ৬বছর বয়সি মেয়ে রুপন্তি চোখ কচলাতে কচলাতে এসে দাঁড়িয়ে আছে।একি আম্মু তুমি ঘুমাওনি?আব্বু তুমি কখন আসছো,আমার জন্য রংপেন্সিল আনছো?
না আম্মু আজকে আনবো।
আব্বু টিভিতে উনি কান্না করতেসে,ওনার মেয়ে কোথায় গেছে?
আমি জানিনা মা।
ওকি একেবারে হাড়িয়ে গেছে,আর পাওয়া যাবেনা?
না মা অবশ্যই পাওয়া যাবে।
আব্বু তুমি তাকে খুজে দাও?
না মা অন্যরা আছে,তাকে খুজছে?আমি মা খুব ক্লান্ত।
তার মুখটা ম্লান হয়ে গেল।
আব্বু আল্লাহ কি সব দেখতে পান?হ্যা মা।
আল্লাহ কি বাচ্ছাদের খুব ভালোবাসেন?হ্যা মা।
তা হলে আব্বু তিনি যাদের ভালোবাসেন তাদেরকে কি হারিয়ে যেতে দিতে পারেন,তিনি তো জানেন তারা কোথায় আছেন?

আব্বু আমি হারিয়ে গেলে তুমি কি আমাকে খুজবে না?

আরেফিন সাহেব প্রচন্ড ধাক্কা খেলেন,তাকিয়ে দেখলেন তার ছোট্ট মেয়েটি অসহায়ভাবে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।তুমি কোথাও হারাবেনা মামনি,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

আমি মা এখনই ঐ দুস্ট মেয়েটাকে তার মার কাছে খুজে দিয়ে আসবো।তুমি মা একটুও চিন্তা করো না।
তিনি দ্রুত প্রস্তুত হয়ে রওয়ানা হওয়ার সময় তার স্ত্রী এলেন।কোথায় যাচ্ছো,তোমার কি শরীর খারাপ?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

আমার আম্মু আজ আমাকে একটা ডিউটি দিয়েছে,কাজ টা আগে করে আসি,তারপর তোমাকে রিপোর্ট করবো।

তারপর সারাদিন অনেক খোজাখুজী,সোর্সের উপর কন্টিনিউ চাপ,হারানো মেয়েটির বন্ধুবান্ধব্দের খোজ,তারা কি করে,কোথায় যায়,মা বাবার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য, সন্ধ্যার মধ্যেই খোজ মিললো।ঘটনা গতানুগতিক মেয়েটি ব্রোকেন ফ্যামিলির,তার বাবা-মা ৫বছর হলো ডিভোর্সী,সে তার বখাটে বন্ধুবান্ধব্দের পাল্লায় পরে ড্রাগ এডিক্টেড।নেশাগ্রস্ত এক বন্ধুর সাথেই সে নেশাপল্লীর এক জঘন্য বস্তিতে ছিলো,ভাবতেই আরেফিন সাহেব ভীমড়ি খান,এই মেয়ে এখানে আসলো কি ভাবে?তার উপর মেয়ে কোনমতেই বাসায় ফেরত যাবে না।

হায় রে শহরটা কোন দিকে যাচ্ছে?
অনেক বুঝিয়ে তার বাবা মা যে তাকে কত ভালোবাসে,তাদেরকে হাজির করে তারপর তাকে পাঠানো হয়েছে।এইফাকে তার বাবা-মাকে তিনি এটাও বললেন,এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা।তারাই পারেন তাদের মেয়েকে একটি সুস্থ জীবন দিতে।

অতপর বাসায় ফিরা!

অদ্ভুত যে রুপন্তি তারই প্রতীক্ষায় ছিলো।তিনি যখন বললেন মা দুস্টটাকে তার বাবা মায়ের কাছে দিয়ে এসেছি।

রুপন্তি তাকে স্মিত হাসি উপহার দিলো।

আরেফিন সাহেব তার এইটুকু চাকুরীজীবনে আর কখনই এতো তৃপ্তি পান নি,যেটুকু আজ পেলেন।

ভালোবাসার রকমফের।

অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেল।বস্তুত পৃথিবীতে কতরকম ঘটনাই না ঘটে একিই সময়ে।প্রায়ই যেটা দেখা যায় হয় যুগলদ্বয় একে অন্যকে ভালবেসে বিয়ে করে,না হলে অভিভাবকেরা পছন্দ অনুযায়ী ফরম্যালি বিয়ে ঠিক করে।কিন্তু মাঝে মাঝে এর ব্যত্যয় ও ঘটে।পাত্রপাত্রী কেউ কাউকে ভালো না বেসেও এর শিকার হতে পারেন।

এমন হয় না যে,নায়ক সব সময় ভেবে এসেছে সে রাজকন্যা না হোক স্নিগ্ধ শ্যামলা বরন এক মেয়েকে বিয়ে করবে।এরপর গেলো সে কক্সবাজার কি বান্দরবনের পাহাড়ে, সুনিল সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে বা সুউচ্চ সবুজ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সে যখন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ,তখনি হয়তো সামনে দিয়ে হেটে গেলো কোন সাধারন চেহারার মেয়ে তার এলোকেশী চুলগুলো উড়িয়ে বা তার বড় বড় ডাগর চোখদুটো মেলে ।সাথে সাথে মনে ভয়ঙ্কর প্রেম এসে বাসা বাধলো।প্রকৃতির প্রভাবেই হোক বা নিজের দৃস্টিবিভ্রমেই হোক সম্পর্ক গড়িয়ে প্রেম হয়ে বিয়েতে গড়ালো।

কয়দিন পরেই মোহ কাটার পর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা,সাগর আর পাহাড়ের নাম শুনলে মা বাপ তুলে গালাগাল।এই দেখো আমি আসল কথা না বলে কিসব বলাবলি করছি।ইদানিং আমার যে কি হয়েছে অতিরিক্ত কথা বলি।

মাঝে মাঝে মানুষ বাধ্য হয়ে বিয়ের পিড়িতে বসে।এ গল্পের নায়ক নায়িকার তাই হয়েছিলো।নায়িকার ক্ষেত্রে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে,সম্প্রতি তার বড় বোন দুটি বাচ্চা রেখে অকালে মারা যায়।এখন তার ভগ্নিপতী নায়িকার বাবা মাকে প্রচুর মানসিক চাপ দেয় যে,যদি শ্যালিকাকে এসময় বিয়ে দেয়া হয় তার কাছে তা হলে বাচ্চারা আর সৎ মা পে্লোনা,খালাই তাদের নিজ সন্তানের মত মানূষ করতে পারবে।তার পরিবারের লোক এ ব্যাপারে নিয়মিত চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

নায়িকার বয়স হল ১৯,তার ভগ্নিপতির ৪৬।তদুপরি ভদ্রলোকের মাথায় টাঁক,দাড়ীতে মেহেদী।এ অবস্থায় পুরো পরিবার কিংকর্তব্যবিমূঢ়।কন্যার মৃতুয়শোক,বর্তমান পরিস্থিতি সব মিলিয়ে কঠিন অবস্থা।এবার নায়ক।

নায়ক আছে আরেক বিপদে।তার বর্তমান চাকুরীতে সে কঠিন অবস্থায় আছে।বাড়ীতে তার মা একাই থাকেন।সমস্ত আত্নীয়স্বজন তাকে চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য।কেউ কেউ তার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।যে আজকাল যেখানে রিক্সাওলাও ৩-৪টা বিয়ে করে সেখানে তার সমস্যা কি,যেখানে তারা আর্থিকভাবে মোটামোটি স্বচ্ছল।

নায়কের আবার একটি গুন হলো তিনি বেশ আড্ডাবাজ।পাড়াই যত মুরুব্বী আছে সবাই তার রাজনৈতিক বন্ধু।সমবয়স্কদের থেকে বরং এদের সাথেই তার সখ্যতা বেশি।ইদানিং তার মন খারাপ কারন কাকা এখন আড্ডায় অনিয়মিত,তার বড় মেয়ে অকালে মারা গেছে।কাকার দুঃখে সেও সমব্যথী।আজ সে ঠিক করল কাকাকে দেখতে যাবে।

বেল বাজার পর দরজা খুললো একটি স্নিগ্ধ চেহারার মেয়ে।

কাকা আছে?

হু।মেয়েটির চোখের নিচে শুকিয়ে যাওয়া কান্নার দাগ,বোনের শোকে সে মুহ্যমান।

স্লামালেকুম কাকা।আসো বাবা,আসো।

নিরবতা।নায়ক কি সান্তনা দিবে ভেবে পায় না।

কাকা আজ আসি,আবার আসবো।ঠিক আছে বাবা,তুমি বাবা কিছু চা-নাস্তা খাও।না কাকা আরেকদিন।

আড্ডাতে আরেক কাকা তাকে বললেন,কাকার বর্তমান সমস্যা নিয়ে।জামাতার চাপে উনি মানসিক চাপে আছেন।

নায়ক নায়িকার চেহারাটা কল্পনা করলো,না মেয়েটি তো বেশ।নায়ক নিজেও আছে বেজায় পারিবারিক চাপে।এক কাজ করলে কেমন হয়,কাকা কি তার কাছে মেয়েটিকে বিয়ে দিবে।এটাতো সতিয়্য কাকা তাকে বেশ পছন্দ করেন,কিন্তু কাকার মেয়েটি?

যথারীতি প্রস্তাব দেয়া হলো।কাকা ভীষন খুশী হলেন,তাকে তিনি নিজে অনেক দোয়া করলেন।এ ছোট্ট মেয়েটি তার ভীষন পছন্দের।বিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসলো।নায়ক যেমন পরিস্থিতির চাপে সুবিধাবাদীর মতো বিয়েতে রাজি হয়েছিলো,তেমনি নায়িকাও সুবিধাবাদীর মত রাজি হয়েছিলো ভগ্নিপতির প্রস্তাব থেকে বাচার জন্য।অতঃপর দুই সুবিধাবাদীর বিয়ে হয়ে গেলো।যারা একে অপরের প্রতি মোটেও প্রেমে পড়েনি।

দুই সুবিধাবাদীর মধ্যে বিয়ে হলে যা যা হয় তা একসময় ফুটে বেরোতে লাগলো।এরা একে অপরের খুব দোষ ধরতো।কিন্তু পৃথিবীটা বড়ই বিচিত্র।দেখা গেলো এরা যত মান অভিমানই করুক ,দুজন দুজনকে ছাড়া এরা বেশিদিন থাকতে পারতো না,আবার অনুভবের এই ব্যাপারটা কেউই কারো কাছে ফাঁস করতো না।একপক্ষ সন্দেহ করতো বিপরীত পক্ষ এটা বুঝতে পারলে অতিরিক্ত দাম দেখাবে।সুতরাং কোন দূর্বলতা নয়।

এভাবেই তাদের জীবন চলতে লাগলো।আর জীবন ও সম্ভবত সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে বাধ্য।আর মুরুব্বীরাও বলে দীর্ঘদিন একত্রে থাকলে নাকি স্বামী-স্ত্রীর চেহারাতেও একটা মিল মিল ভাব দেখা যায়।

পুনশচঃ নায়ক নায়িকাকে একটি বৈশাখি শাড়ি উপহার দিয়েছে,তারা নাকি আবার পহেলা বৈশাখে ঘুরতেও বের হবে।পৃথিবীটা কতই না বিচিত্র!

নিজামী গঞ্জোভীঃআজারবাইজানের মহাকবি ও লাইলি-মজনু মহাকাব্যের রচয়িতা।

নিজামী ছিল এ মহাকবির ছদ্বনাম,তিনি নিজে এ নামে পরিচিত হতেন।আর প্রকৃত নামটি বড়ই জমকালো,পারস্য সাহিত্যের এই মহাকবির পুরো নাম ছিল নিজাম আদ দীন আবু মুহম্মদ ইলিয়াস ইবনে ইউসুফ ইবনে জাকী।তথাপি কবি বড়ই নিরঅহংকার ও সরল ছিলেন।

তিনি জন্মেছেন আজারবাইজানের গাঞ্জেচাই নদীর তীরে ঐতিহাসিক গাঞ্জে নগরীতে ১১৪১খ্রিঃ এবং মৃত্যুবরন করেন একই নগরীতে ১২০৯খ্রিঃ।যদিও জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন দক্ষিন ককেসাসে।তার মা ছিলো কুর্দী,নাম রাইসা আর বাবার নাম ছিলো ইউসুফ,আর দাদার নাম ছিল জাকী।ধারনা করা হয় তার পুর্বপুরুষ ইরানের কোম নগরী থেকে আগত।

পারসিক মহাকাব্যে তার কবির লড়াই বা কথোপকথনের কবিতার লড়াই ও বাস্তবধর্মী কবিতাগুলো আজারবাইজান,ইরান,আফগানিস্তান থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিদগ্ধ লোকদের মুখে মুখে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ছোট থাকতেই পিতৃহারা নিজামী মামার তথ্বাবধানে বড় হয়ে উঠেন,তার মামা তাকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেন।তিনি শুধু ফার্সিতেই নন আরবীতেও সমান দক্ষ ছিলেন।এছাড়া তার মেধায় উত্তরাধিকার সুত্রে তার বাবা ও দাদার জ্ঞানের বহিপ্রকাশ ঘটেছিলো।তাই তার কাব্যে গনিত,জৌতিবিদ্যা,রসায়ন,উদ্ভিত তথ্যের সন্মিলন দেখা যায়।

বড় অস্থির এক যুগে তার আগমন,রক্তান্ধ রাজারা তখন দেশের পর দেশ ধবংশ করছিলো।কিন্তু তারপরো কবিকে বিলাশিতার লোভ দেখিয়ে কেনা সম্ভব হয় নি।গালিচার বদলে ছেড়া কাথায় বসে থেকেছেন,রত্নরাজির বদলে তার ছিলো অগুনতি বই।এরপর কত রাজার গালিচা পোকায় কেটেছে,রাজপ্রাসাদ ভেঙ্গে পড়েছে কিন্তু তার কাব্য ছিলো অমর ও অজেয়।কবি জানতেন যে দুনিয়াকে এগিয়ে দেয় নিশংস জল্লাদেরা নয়,এগিয়ে দেয় ভালো লোকেরা।তাই তিনি ছিলেন মানবতার কবি,প্রেমের কবি।

তার গীতি কবিতায় তিনি বর্ননা দেন,সাসানিদের রাজা আনুশিরভান একবার শিকারের নেশায় অনুচরদের ফেলে অনেকটা এগিয়ে যান,সাথে থাকে শুধু তার এক উজির।দুজনে এসে পৌছলেন ছারখার হওয়া এক গ্রামে।চারোদিক খা খা করছে,সমস্ত বাড়িঘর বিধবংশ,কোথাও কোন জীবিত লোক নেই।কেবল ভাঙ্গা বাড়ির দেয়ালে দুই বিকট দর্শন পেঁচা কি যেনো বলাবলি করছে।পেঁচাদের এই উচ্চকন্ঠে এই ডাক শুনে ভীত রাজা উজিরকে বললেন ওরা কি বলছে?কারন উজির আবার পাখির ভাষা বুঝতেন।উজির শুনে বললেন,এক পেঁচা আরেক পেঁচার কাছে মেয়ের বিয়েতে যৌতুক হিসাবে এরকম নরকের ন্যায় আরেকটি গ্রাম চাচ্ছে।তখন অন্য পেঁচাটি বলছে,কোন চিন্তা নেই,আনুশিরভান যতদিন বেচে আছে ততদিন এরকম আরো হাজার হাজার নরকের ন্যায় গ্রাম ও পাওয়া যাবে আর লোকেরাও তার ফকির ও গোলাম হয়ে থাকবে।নিজামী সক্রোধে লিখেছিলেন,চুপ কর রে নিজামী,গল্প গেলো ছিড়ে,কলজে তোর অনেক দিনই রক্ত ঝরো ঝরো।

তেমনি লাইলী-মজনু গীতিকবিতায় তার প্রতিভার সেরা বিকাশ দেখা যায়।আরেক কবি সাদী এর সুন্দর বর্ননা দেন-লাইলীর রুপের বর্ননা শুনে রাজা আগ্রহী হোন তাকে দেখতে।কিন্তু দেখার পর রাজা মন্তব্য করেন,এই তার সৌন্দর্য,আমার হেরেমের সবচেয়ে খারাপ বাঁদীও তো এর চেয়ে সুন্দর।নিজামী এ ক্ষেত্রে বলেন,যে যায় বলুক লাইলীকে দেখতে হবে মজনুর প্রেমকাতর চোখ দিয়ে,তবেই না তার সৌন্দর্য বুঝা যাবে।
লিখতে গেলে আরো অনেক কথা লেখা হয়ে যাবে।তাই তার সেরা গীতিকাব্যগুলোর নাম দিলামঃসাসানিদের রাজা খসরু ও আর্মেনিয়ার রাজকন্যা শিরিনকে নিয়ে তার একটি কাব্যগ্রন্থ আছে খসরু ও শিরিন নামে।

এছাড়া লাইলী ও মজনু,এস্কান্দর নামা,হাফত পায়কর বা বাহরামনামা বা সপ্ত সৌন্দর্যও তার অনন্য কীর্তি।

তবে তার সবচেয়ে বিখ্যাত গীতিকাব্য হলো পাঞ্জ গাঞ্জ বা পঞ্চ রত্ন।

একাত্তরের মা।

সেই জুন মাসে মার সাথে মইনের শেষ দেখা হয়,তাদের দলটি আগরতলায় যাওয়ার আগে সবাই যার যার পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছিলো।মা মইনকে কোন বাধাই দেয়নি।কারন তিনি তো দেখেছেন,তিনি ছেলেকে আঁচলের তলে রাখলেই বাঁচাতে পারবেন না।

পাকসেনাদের কাছে যুবক ছেলে মানেই হল নির্ঘাত মুক্তিবাহিনী।তাই তিনি কোন বাধা দেননি।কিন্তু মার মন বলে কথা।তার দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে বাবু ভীষন ডাকাবুকো,বলতে গেলে সে তার বয়সীদের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক।কিন্তু মইন ছেলেবেলা থেকে ভীষন লাজুক,তার চোখে চশমা থাকার দরুন সে তার বন্ধুদের কাছে অবহেলার পাত্র।তার স্বাস্থ্য তেমন ভালো না।মা এটি নিয়েই বেশি চিন্তিত।মার মনে পড়ে বাইরে কোথাও অন্যদের কাছে নির্যাতিত হলে মইন ঘরে এসে নীরবে কাঁদত।

মনে পড়ে একবার মইন তার কোন এক বন্ধুকে রক্ত দেয় ১ ব্যাগ।বাড়ী ফিরে মাকে গর্বের সাথে এ কথা বলার সাথে সাথে মা কিরুপ আঘাত পায়।মা কান্নার মাঝে তাকে বলে,তোর নিজের শরীরেই তো কিছু নাই,তুই কেনো দিলি,তোর কি রক্ত বেশী হয়ে গেছে,তোর গা বেঁয়ে বেঁয়ে কি রক্ত পরে।এতো দূঃখের মাঝে ও মার আজ সে কথা মনে হয়ে হাসি পায়।

সেই ছেলে আজ ৪মাস ধরে ঘর ছাড়া।ইদানিং পাড়ার রাজাকাররা এসে প্রায় জিজ্ঞেস করে তার বড় ছেলেকে কেনো দেখা যায়না।তিনি বুঝতে পারেন তাকে অন্তত বাবুকে বাচাতে হলেও শহর ছাড়া দরকার।

অক্টোবরের এই শেষ দিকে এসে শীতটাও আগাম নেমে গেছে।মা আর ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না।তিনি শহরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর পেলেন মইন মেঘালয়ের দক্ষিনে নেত্রকোনা সীমান্তে পাকসেনাদের সাথে যুদ্ধ নিয়োজিত।যতটুকু খবর পাওয়া যায় সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বেশ জটিল।কেননা পাকবাহিনী মিত্রবাহিনীর চালটি ধরে ফেলেছে যে,মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনী নিয়ে নেত্রকোনা হয়ে ময়মন্সিং পার হয়ে ঢাকার উত্তর অঞ্চল বিশেষ করে গাজীপুরে পৌছতে চায় যাতে ভৈরববাজার হয়ে মুক্তিবাহিনীরা নরসিংদী পৌছে গেলে একটা শক্ত বেস্টনীর ভেতর ঢাকাকে ঘিরে ফেলা যায়।তাই যুদ্ধও একটা চুড়ান্ত অবস্থার দিকে যাচ্ছিলো।

নেত্রকোনায় ভারতীয় গুর্খা ডিভিসন যুদ্ধে নেমে পাকবাহিনীর হাতে বিপুল ক্ষতির সন্মুখিন হয়,ফলে তারা আর এগুতে পারেনি।ফলে মুক্তিবাহিনিকেই আবার গেরিলা আক্রমন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়,এবং দেখা যাচ্ছে বিপুল ক্ষতির বিনিময়ে হলেও মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ ভাংতে পারছে।

অনেক বাধাবিঘ্ন পেড়িয়ে মা নেত্রকোনা সীমান্তে ফ্রন্টলাইনে এসে উপস্থিত হলেন বাবুকে নিয়ে।চারোদিকে প্রচন্ড গোলাবর্ষন চলছে।সবাই দারুন ব্যস্ত,আহতরা ফেরত আসছে।একজন সৈনিককে মা জিজ্ঞেস করলেন,এখানে মইন বলে কেউ আছে?সে দারুন বিরক্ত হলো,আপনি এই গোলাগুলির মধ্যে কিভাবে আস্লেন,আপনার কি প্রানের মায়া নাই।মা একরোখাভাবে আবার জিজ্ঞেস করলো,আমি আমার ছেলের সাথে দেখা করবো,তাকে আমার অনেক দরকার।

দুরথেকে আরেক মুক্তিসেনা এগিয়ে আসলো,বললো আপনি কি চশমা পরা মইনকে খুজছেন,রোগা করে।মা ব্যাকুল হয়ে তাকে বললো,হ্যা বাবা।তুমি কি তাকে চেনো?
তাকে কে না চেনে?
বাবা তুমি আমাকে বলো,সে কেমন আছে?খালাম্মা সে ভালো আছে।ঐ দূরে যেখানে প্রচন্ড গোলাবর্ষন চলছে সে সেখানে যুদ্ধ করছে।

মা সেদিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলো অশ্রুসিত্ত চোখে,গভীর আবেগে জিজ্ঞেস করলো,আচ্ছা মইন কি যুদ্ধে ভয় পায়,সেকি গুলি করতে পারে?

সৈনিক ক্ষুদ্ধ কন্ঠে উত্তর দেয়,মইন আমাদের সেরা যোদ্ধা।সে যদি ভালো লড়াই করতে না পারতো,তাহলে সে এখানেই থাকত।আমাদের অধিনায়ক মইনকে ছাড়া কোন বড় লড়াইয়ে যায় না।গত সপ্তাহে মইন ও তার দল পুরো এক কোম্পানি পাকসেনাকে ধবংশ করে দেয়।

মা চোখের পানি মুছে,এবং সৈনিককে বলে মইন আসলে বলো,আমরা ভালো আছি।তিনি হাটতে থাকলেন,সৈনিক জিজ্ঞেস করলো,কি ব্যাপার মইনের সাথে দেখা করবেন না?
মইনকে বলো দেশ স্বাধীন হলে আমাদের মাঝে দেখা হবে।

বাবু মাকে বললো,মা ভাইয়ার সাথে দেখা করলে না কেনো?

নারে বাবা।এখন আর আমার কোন ভয় নাই।আমার খালি ভয় হতো,মইন দুর্বল,চোখে কম দেখে,ছেলেটা লড়াই করতে পারবেতো।মনে একটা দ্বিধা ছিলো,তাই যাচাই করতে আসছিলাম।আমার আর কোন দ্বিধা নাই,আমার মইন আর দশটা ছেলের মতোই লড়ছে।

এমন ছেলের মা কি কখনো কাঁদতে পারে?দেখিস আমরা জিতবোই।আমরা কখনো হারতে পারি না।

১৯৭৬ সালের ১৬ই মে ফারাক্কা লং মার্চের দিনটি রাজশাহী থেকে(সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের বর্ননা থেকে)

আজকের অনেক পাঠকের জানা নাই যে,১৯৭৬ সালের ১৬ই মে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানির নেতৃত্বে রাজশাহীর আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গন থেকে পদ্মা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবীতে ঐতিহাসিক লং মার্চ ফারাক্কা অভিমুখে রওয়ানা হয়।ন্যায্য পানি ও পরিবেশ রক্ষার জন্য এটিই সবচেয়ে মানবিক ও অহিংস গনমিছিল এখন পর্যন্ত।

প্রয়াত সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন যিনি বাংলাদেশের মফস্বল সাংবাদিক ও সরেজমিন সাংবাদিকতার পথিকৃত, তার একটি স্মৃতিকথা থেকে আমি সে দিনটির বিস্তারিত বিবরন পাই।তাই আমি বর্ননা করবো ওনার নিজের জবানীতে(ইষত সংক্ষেপিত,কারন কাহিনী ব্যাপক বড়)-

(মোনাজাত উদ্দিনের জবানী)-এ বছরটা আমি অনেকটা বেকার,কারন আজাদ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে।অবশ্য কয়েকটি পত্রিকার হয়ে ফ্রি ল্যান্সার হয়ে কাজ করছি উত্তর অঞ্চল প্রতিনিধি হয়ে।সে সময় ঢাকার সংবাদ পত্রিকা থেকে ফোন,কালকে ১৬ই মে ১৯৭৬ ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিল হবে,(না আমাকে তা কাভারেজ করতে বলা হয়নি),ঢাকা থেকে যে দুজন সাংবাদিক আসবে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।কি আর করা যেহেতু আমার স্থায়ী কোন চাকুরী নেই।।যথারিতি তারা এলো,তাদের সব আয়োজন সম্পন্ন করলাম।তাদের আর নাম বললাম না,কারন পরবর্তী কৃতকর্মের জন্য তারা লজ্জা পাবে।রাতে তাদের একজন ডেকে বললো,হাতে ইশারা করে(বোতলের সাইজ) এখানে রাজশাহীতে এটা পাওয়া যাবে,কি আর করা যেহেতু তারা সংবাদের লোক না এনে দিলে যদি নারাজ হয়,বস্তুত চাকুরীটা আমার খুবই দরকার,তাই এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম।দ্বিতীয়জন আমাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে দুই আঙ্গুল ফাক করে বললো এটির ব্যবস্থা করা যাবে,আমি রীতিমত স্তম্বিত,শেষ পর্যন্ত কি তারা আমাকে মাগীর দালাল ঠাওরালো।আমি তাকে কৌশলে এড়ালাম।

পরের দিন আমরা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে গেলাম,ভাসানি তার অগ্নিবর্ষন বক্তিতা দেওয়া শুরু করলো।স্টেজের ডানদিকে এই খান দিয়েই ভাসানি ব্যক্তিতা শেষ করে নামবে।তাই বিবিসি,ভয়েজ অব আমেরিকা,রয়টার ও সব ভালো ভালো নামিদামি সাংবাদিকরা সেখানে অবস্থান নিয়েছে।আমি ও অখ্যাত সাংবাদিকরা বাম পাশে অবস্থান নিলাম,সাথে আমার পুরোন মডেলের ক্যামেরা।

ভাষন শেষ,উত্তেজনার বশে মাওলানা ভাসানি হঠাত করে ডান দিক দিয়ে না নেমে বাম দিক দিয়ে নামা শুরু করলেন ফলে বিপুল জনতা তাকে অনুসরন করা শুরু করলো।আর পড়বি তো পড় একেবারে আমার সামনে ভাসানি নিজে ফলে আমিই প্রথম তার সেই ঐতিহাসিক ছবি তোলার সুযোগ পেলাম।ছবি তুলেই গেলাম রাজশাহী টিএন্ডটি অফিসে,ঢাকায় ফোন করতে।সেখানে গিয়েই জানলাম গতরাতে বাজ পড়ে টিএন্ডটি অফিস অচল,তাই ততক্ষনাত বুঝলাম অন্য কোন সাংবাদিক এ খবর বা ছবি এখান থেকে পাঠাতে পারবেনা।

সেখান থেকে সোজা বাস স্ট্যান্ড হয়ে ঢাকা।রাত ১১টায় ঢাকা নামলাম,সেখান থেকে বংশাল সংবাদ অফিস।গিয়ে দেখি বার্তা সম্পাদক হতাশ হয়ে বসে আছে,কারন শুধু সংবাদ নয় সকল পত্রিকা কোনো তাজা নিউজ পায়নি রাজশাহী থেকে।আমাকে দেখে বার্তা সম্পাদক লাফ দিয়ে উঠলেন,জিজ্ঞেস করলো মোনাজাত তুমি?কি এনেছো,ছবি রিপোর্ট সহ?এই সবাই মেশিন স্টার্ট দেও,এক্ষূনি।মোনাজাত তুমি কি খাবে আগে বলো।তোমাকে বিধংশ দেখাচ্ছে।সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে উঠলো।

সম্পাদক আহমেদুল কবির গভীর রাত পর্যন্ত প্রেসে ছিলেন,এটির জন্য।গভীর রাতে বার্তা সম্পাদক এসে আমাকে জানালো,সম্পাদক সাহেব তোমাকে ডাকছে।
আমি আস্তে করে ওনার রুমে ঢুকলাম,সালাম দিলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন,কিছুক্ষন পর বললেন,মোনাজাত আজকে তুমি আমার কাছে কিছু চাও?

আমি আস্তে করে বললাম,স্যার একটা চাকুরী?আমার স্যার একটা চাকুরী খুব দরকার।

এবার পাঠকদের জানাই,এই অসম্ভব দামী রিপোর্টের জন্য ওনার এই অতি ক্ষুদ্র অনুরোধ সম্পাদককে বিস্মিত করেছিলো।তিনি চাকুরীটি পেয়েছিলেন।

স্টালিন গ্রাদের যুদ্ধঃ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিরোধের লড়াই।

কয়দিন আগে আমি জানার চেস্টা করছিলাম মানব ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ লড়াই কোনটি ছিল?সবরকম তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী দেখা যায় স্টালিনগ্রাদের প্রতিরোধ লড়াই এক্ষেত্রে শীর্ষে।অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদি মিডিয়া ওপুজিবাদি বিশ্ব বরাবরই তা উপেক্ষা করে আসছে।কারন এরা কখনো মানবতা ও মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেনি।স্টালিনগ্রাদ যুদ্ধের তাতপর্য বুঝতে গেলে আধুনিক রাশিয়ান ফেডারেশনের ইতিহাস জানা জরুরী।যদিও আজ সোভিয়েত রাশিয়া পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত হয়ে রাশিয়ান ফেডারেশনে পরিনত হয়েছে।আজ অনেকেই জানেনা অগনিত সোভিয়েত বীর যোদ্ধার কথা,যারা ফ্যাসিবাদের কবল হতে শুধু রাশিয়াকেই নয়,সমগ্র পৃথিবীকে রক্ষা করেছে।

স্টালিনগ্রাদের অবস্হান বর্তমান রাশিয়ার ভল্গগ্রাদ নগরীতে।মস্কোর উপকন্ঠের লড়াইয়ে জার্মানীর সেন্টার গ্রুপের চুড়ান্ত পরাজয়ের পর রুশ-জার্মান রনাংগনে সাময়িক স্বস্তি নেমে আসে।কিন্তু অবকাশকালিন সময় দীর্ঘ হতে থাকে।সোভিয়েত সমরবিভাগ জানতো অবকাশকালিন সময় যত দীর্ঘ হবে শত্রুর আক্রমন ও লড়াই তত ভয়ন্কর হবে।তাদের আশন্কা সত্য হয়েছিলো।পশ্চিমদিক থেকে মস্কো অভিমুখে আক্রমন ব্যর্থ হওয়ায় জার্মান ফৌজ যে এবার দক্ষিনে কোন জায়গা থেকে মস্কো অভিমুখে আক্রমন শুরু করবে তা যেমন সোভিয়েত সেনামন্ডলী জানতো,তেমনি জার্মানী সেনাপতি মন্ডলী ও জানতো।ফলে শুরু হয় গোপনে ব্যাপক সেন্যযোজন।

কোন পক্ষই সরাসরি শহরের নাম উল্লেখ করতো না।সোভিয়েতরা বলতো দক্ষিনের সেই মহান শহর,যেখানে সংঘটিত হচ্ছিল তাদের সেরা সেরা সব পেশাদার লড়াকু ডিভিসন গুলো।সাথে সাথে সোভিয়েত ফৌজের সবচেয়ে শক্তিশালী রিজার্ভ ফ্রন্টগুলো জড়ো হচ্ছিল স্টালিনগ্রাদে।

লড়াই শুরু হয়েছিলো ১৭ জুলাই১৯৪২ এ,শেষ হয়েছিলো ২রা ফেব্রুয়ারীতে১৯৪৩।লড়াই চলছিলো ২টি পর্যায়ে।প্রথমটি হলো প্রতিরোধের যুদ্ধ,এটি চলে ১৭ জুলাই থেকে ১৮ নভেম্বর ১৯৪২ পর্যন্ত।২য় পর্যায়ের লড়াই চলে ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে সোভিয়েত বাহিনীর প্রচন্ড কাউন্টার আক্রমনের মাধ্যমে,যা জার্মান ফৌজের চুড়ান্ত পরাজয়ের মাধ্যমে শেষ হয় ২রা ফেব্রুয়ারী ১৯৪৩ এ।

১৯৪২ সালের জুলাই থেকেই নাৎসিবাহিনী স্টালিন গ্রাদের শহর অন্চল গুলোতে বিমান আক্রমন শুরু করে ।পযার্য়ক্রমে শহরের ভিতরের দিকে প্রবেশ করে রেলস্টেসন ও গুরুত্বপূর্ন অবকাঠামো দখল করে ফেলে।লড়াই এমন আকার ধারন করেছিলো যে একদিনে ১১ বার রেলস্টেশন পরস্পরের হাতছাড়া হয়েছিলো।

লড়াই কঠোর রাস্তার লড়াইয়ে পরিনত হয়,সোভিয়েত ফৌজ লড়ছিল প্রতিটি অক্ষত বাড়ির জন্য।প্রধান আক্রমনটি চালাচ্ছিলো নাৎসিবাহিনির ষস্ঠ আর্মি গ্রুপটি নেতৃত্বে ফিল্ডমার্সাল পাউলুস,এ বাহিনির ডান ও বাম বাহু রক্ষা করছিলো যথাক্রমে রোমানিয়ান ও ইটালিয়ান বাহিনিগুলো।মুলত নাৎসিবাহিনি স্টালিন গ্রাদ এ উপস্হিত হওয়ায় সোভিয়েত রাশিয়া শুধু দক্ষিন দিক হতে আক্রমনেরই সম্মুখিন হয়নি,বরং ককেশাসের সমগ্র তেলসমৃদ্ব এলাকা যেমন-দন নদী অঞ্চল,গ্রোজনি,আজারবাইজান হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।ফলে সোভিয়েত বাহিনী তার সবচেয়ে বাছাই করা রিজার্ভ ও পোড়খাওয়া বাহিনীগুলো নিয়ে রুখে দাড়ায়।শুরু হয়ে যায় ভল্গা পাড়ে ইতিহাসের সবচেয়ে রত্তক্ষয়ী এক মহাকাব্যিক লড়াই।

লড়াইয়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে সোভিয়েত ফৌজ থেকে অংশ নেয় ১১,৪৩,৫০০ জন ও নাৎসি পক্ষে ১০,১১,০০০জন।নাৎসিরা ভলগার পশ্চিম পাড়ে মামায়েভ টিলার অবস্হান বাদে সব দখলে নেয়।ঐ অবস্হান এর ভার দেয়া হয় জেনারেল ভাসিলি চুইকভের উপর।দায়িত্ব নেয়ার পুর্বে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়,এ দায়িত্বকে আপনি কিভাবে মুল্যায়ন করবেন।তার উত্তর ছিলো সংক্ষিপ্ত-আমরা শহরটিকে রক্ষা করবো অথবা মড়বো।নদী পাড় হয়ে এসে কমান্ড পোস্টে পৌছে তিনি সর্বপ্রথম আদেশ দেন নদী পাড় হওয়ার সমস্ত উপকরন ধবংশ করার।তিনি তার সেন্যদের বলেন,আমাদের জন্য ভলগার ওপাড়ে কোনো জায়গা নেই।আজ থেকে যে নদী পাড় হওয়ার চেস্টা করবে,কোটমার্সাল তৎক্ষনাৎ কার্যকরি হবে,তার পাশের সংগী তাকে গুলি করে মারবে।২৭জুলাই জারি করা হয় প্রতিরক্ষা বিষয়ক ২২৭ নং আদেশ(এক পা ও পিছু হঠা চলবেনা)।লড়াই চলাকালে তা খুব কাজে এসেছিল।

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সবচেয়ে প্রবল আঘাত হেনেছিলো নাৎসিবাহিনি।সেদিন এমন কঠিন পণ করা চূইকভ পর্যন্ত টিকতে না পেরে সর্বোচ্চ হাই কমান্ডের কাছে তার সেন্যদের বাচানোর জন্য নদী পার হবার আদেশ চান।কিন্তু হাইকমান্ড তার দাবী অগ্রাহ্য করে তাকে সেখানেই সেন্যদের সাথে থেকে প্রানত্যাগ করার জন্য আদেশ দেন।সমগ্র জার্মান ফৌজ সেদিন চুড়ান্ত শক্তি নিয়োগ করে চুইকভের ডিভিসনকে নদীতে ফেলে দেওয়ার জন্য।চুইকভের ডিভিসনকে রক্ষার্থে এগিয়ে আসে ভল্গা ফ্লোটিলার সোভিয়েত নৌসেনারা,তাদের সমর্থনে আরো এগিয়ে আসে সোভিয়েত বিমান বাহিনী। সোভিয়েত বিমান বাহিনী সেদিন চুইকভের ডিভিসনকে রক্ষা করতে তার সমগ্র রিজার্ভ বাহিনীকে নিয়োগ করে।ফলে আক্ষরিক অর্থেই লড়াই জল,স্থল ও আকাশে ছড়িয়ে পড়ে।চুইকভ সেদিন মন্তব্য করে ছিলো,এ রকম আরেকটা আঘাত এলে আমরা ভলগাতে গিয়ে পড়বো।পরে পরাজিত জেনারেল পাউলুশ স্বীকার করেছিলো,চুইকভের ডিভিসনের ঐদিন টিকে যাওয়া তার বাহিনীর আক্রমনাত্বক মনোভাবের দারুন ক্ষতি করেছিলো।

২রা ফেব্রুয়ারি,১৯৪৩ নাৎসিবাহিনি সাড়ে ছয় লাখ সেন্য নিয়ে ধবংশ হয়ে যায়,মাত্র ৯১০০০জন জীবিত থাকে।৯১ হাজারের মধ্যে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৬হাজার জন জীবিত থাকে।যুদ্ধ চলেছিল বরাবর ২০০ দিন,দুই সেনাপতির উপরেই ২০০ দিনের চাপের ফল দেখা দিয়েছিল,ভাসিলী চুইকভ তীব্র উত্তেজনার ফল অনুযায়ী কঠিন একজিমায় আক্রান্ত হয়েছিলেন আর পাউল্যুস মুখের পেশিতে পক্ষাগাত আক্রান্ত হয়েছিলেন।

চুইকভের ডিভিসনের প্রতিরোধের সেই স্থানটি যা মামায়েভ কুরগান টিলা নামে পরিচিত ১৯৬৭ সালে সেখানে লড়াইয়ের স্মৃতিতে ১টি ভার্স্কয নির্মিত হয়,যা ৮৫মিটার উচ্চতা নিয়ে পৃথিবীতে সেরা,এটির নাম দি মাদারলেন্ড কলিং।

মস্কোর জন্য লড়াইঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের বীররক্ষক ইভান পানফিলোভ ও তার অকুতোভয় সঙ্গী যোদ্ধাদের কথা।

এটা ছিলো ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জার্মান বাহিনীর দুর্বার গতিরোধের প্রথম বড় রকমের ধাক্কা,যার ফল অনেক সুদুরপ্রসারী হয়েছিলো।অপারেশান বার্বারোসা নামে পরিচিত জার্মান এ অভিযানের লক্ষ্য ছিল ডিসেম্বর১৯৪১ এর মধ্যে মস্কো দখল ও তার বাসিন্দাদের নিশ্চিহ্ন করা।কিন্তু তারা বিফল হন সোভিয়েত জাতির অদম্য সাহসিকতার কাছে।এই প্রথম জার্মান জেনারেল রুন্ডস্টেড ও হাইন্স গুডারিয়ানের মতো সেনানায়করা হিটলারের কাছে তীব্র ভতসনার শিকার হোন।চাকরীচ্যুত হোন অসংখ্য সৈনিক ও অফিসার।
সোভিয়েত রাজধানী রক্ষার যুদ্ধে সমগ্র জাতি একযোগে বিপুল শৌর্য ও বীর্যের পরিচয় দেন,বীরত্ব তাদের কাছে নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনায় পরিনত হয়।এমন সব ঘটনায় এমন কিছু ব্যক্তির কথা উল্লেখ করতে হয়,যারা যুদ্ধের সময় কিংবদন্তীর জন্ম দেন,তেমনি একজন হলো সোভিয়েত ৩১৬ তম ডিভিসনের অধিনায়ক ইভান পানফিলোভ।

ইভান পানফিলোভ(১৮৯২-১৯৪১) জন্মেছিলেন রাশিয়ার পেত্রভস্ক,সারাতভে।২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি ছিলেন সোভিয়েত কিরগিজস্থানের সামরিক কমিসার।
১৯৪১সালের ২২জুন জার্মান নাজী বাহিনী রাশিয়ার সমগ্র পশ্চিম সীমান্তজুড়ে একযোগে আক্রমন করে বসে।ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী নিয়ে তারা বিপুল বেগে সোভিয়েত রাজধানী মস্কোর দিকে ধাবিত হচ্ছিলো।তখন সর্বোচ্চ সোভিয়েত প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় শুধু চিন্তা করছিলো,মস্কোর পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষার জন্য ২০-২৫দিন সময় খুবই দরকার,আর শত্রুও ক্রমশ রাজধানীর নিকতবর্তী হচ্ছে।অথচ এখন পর্যন্ত ট্যাংকবিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা,পরিখা খনন ,বিভিন্ন বাধা সম্পন্ন হয়নি।

এইমুহুর্তে এমন এক পেশাদার বাহিনী দরকার যাদের কে দিয়ে নাজী আক্রমন কিছু সময়ের জন্য প্রলম্বিত করা যায়,এ মূহুর্তে দরকার একটি সম্পুর্ন পেশাদার বাহিনী,যারা ২০-২৫ দিনের জন্য সে আক্রমন ঠেকিয়ে রাখবে।সময় সে মুহুর্তে অসম্ভব মুল্যবান।
সমগ্র বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত বাহিনী খুব কমই ভূল করেছিলো,কারন যে অল্প কয়টি ভূল তারা করেছিলো তার ফলাফল হয়েছিলো ভয়াবহ।
তাই সোভিয়েত জেনারেল গেওর্গি জুকোভ এ গুরুত্বপুর্ন কাজের দায়িত্ব দিলেন কমান্ডার ইভান পানফিলোভ ও তার ৩১৬ রাইফেল ডিভিসনের উপর।জুকোভ দায়িত্ব নেয়ার পর পানফিলোভকে বলেছিলো দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে আমি নিজে তোমাকে গুলি করে মারবো।মনে রাখবে,তোমার ততপরতার উপরই রাজধানীর নিরাপত্তা নির্ভর করছে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানফিলোভ তার ৩১৬ রাইফেল ডিভিসনের অমিততেজী যোদ্ধাদের নিয়ে আক্রমন রুখতে গেলেন।বস্তুত কোন দেশের রাজধানীর পরাজয় মানে সে দেশের মানুষের মানসিকতার উপর ভীষন আঘাত।তাই তিনি তার সেন্যদের বললেন,তাদের কাজের গুরুত্ব কি ও কেনো তা জীবন দিয়ে হলেও পালন করতে হবে।তিনি তাদের বললেন,টাইম ইজ ব্লাড।সুতরাং বিপুল রক্তের বিনিময়ে হলেও আমাদের সময় কিনতে হবে।যত বেশীদিন আমরা শত্রুকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবো,ততবেশী দিন আমাদের ভাইয়েরা শত্রুকে প্রবল আঘাত হানার জন্য নিজেদের তৈরী করে নিতে পারবে।

পানফিলোভ তার ডিভিসনকে নিয়ে মস্কোর পশ্চিমে স্মোলেনেস্ক-মস্কো মহাসড়কের নিকট ভলকলানস্ক মজাইস্ক প্রতিরক্ষা লাইনে নাজি বাহিনির সবচেয়ে শক্তিশালী ফর্মাসন গুলোর সাথে অসম যুদ্ধে লিপ্ত হলেন।বাকিটা শুধুই ইতিহাস।
৩১৬ ডিভিসনের যোদ্ধারা রাজধানী রক্ষার জন্য বীরের ন্যায় মৃত্যুবরন করছিলো।রাজধানীবাসীর জন্য এটা ছিলো অত্যান্ত বেদনার মুহুর্ত যে,যখন তাদের প্রিয় সন্তানেরা তাদেরকেই রক্ষার জন্য অতি সন্নিকটে মারা যাচ্ছিল এবং তারা তা অনুভবও করছিলো।সময় গড়াচ্ছিলো দ্রুত,যারপরনাই কঠিন পরিস্থিতিতে।বীরত্ব সেদিন তাদের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা বলে মনে হচ্ছিলো।

আর জার্মান বাহিনীর জন্য এটা ছিলো এমন যে,এই প্রথম তারা যুদ্ধ শুরুর পর প্রবল বাধার সম্মুখিন হচ্ছিলো।যা তারা আশা করেনি।
রুশ সৈনিক সম্পর্কে তারা এই মন্তব্য করছিলো যে,এদেরকে পর্যাপ্ত গুলি করার পরও ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিতে হয়।
বাস্তবিকভাবে ৩১৬ ডিভিসন প্রবল বাধা দিয়ে জার্মান বাহিনী থেকে সময় কিনছিলো বিপুল রক্তের বিনিময়ে।
১৯৪১সালের ১৫নভেম্বর এ ডিভিসনের ২৮ জন যোদ্ধা নিজেদের জীবন দিয়ে মাত্র তিন ঘন্টার যুদ্ধে নাজী বাহিনীর অত্যাধুনিক ১৮টি ট্যাঙ্ক ধবংশ করে দিয়ে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমন ব্যর্থ করে দেয়।এদের কোম্পানি কমান্ডার ভাসিলি ক্লচকভ মারা যাওয়ার পুর্বে তার সঙ্গীদের শুধু এটাই বলে যান,ভাইয়েরা শুধু মনে রাখবেন রাশিয়া বিশাল,কিন্তু আমাদের পিছু হঠা চলবে না।কেননা পিছনে মস্কো।তার এ ভাবনাতেই প্রতিফলিত হচ্ছিলো সমগ্র রাশিয়ার জন্য তীব্র ভালোবাসা ও উতকন্ঠা।

সর্বত্র কঠোর লড়াই চলছিলো,আর স্বয়ং ইভান পানফিলোভ সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো।
কারন প্রবল গোলাবর্ষন ও ইস্পাতের ধারা বর্ষনে তার সেন্যরা টিকতে পারছিলো না।তার গোলন্দাজেরা কামানের পাশেই যুদ্ধরত অবস্থায় মারা যাচ্ছিলো।তিনি তাদের ছেড়ে না যেয়ে কামান গুলোর আবার দখল নিচ্ছিলেন,এটা দেখার পর তার সেন্যরা আর কেউ তাকে ছেড়ে যায় নি।
বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছিলো।তাদের এই তীব্র বাধাদানের ফলস্বরুপ মস্কো উপযুক্ত প্রতিরক্ষা নিতে সক্ষম হয়।

অবশেষে সোভিয়েত প্রতিরক্ষাবিষয়ক জনকমিসার সিদ্ধান্ত নেয় পানফিলোভকে পর্যাপ্ত যোদ্ধা দেয়া হবে এবং তাকে ও তার ডিভিসনকে সোভিয়েত ইউনিয়নের গার্ড মর্যাদা দেয়া হবে।কিন্তু অত্যান্ত দূঃখের বিষয় খবরটা তাকে দিতে যান মার্শাল রকসসভস্কি স্বয়ং,কিন্তু এর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে মর্টারের আঘাতে ইভান পানফিলোভ ও তার সহযোদ্ধারা ঘটনাস্থলেই শহীদ হন।তিনি সবসময়ই চাইতেন যেনো সঙ্গীদের মাঝে তার মৃত্যু হয়।তাই হয়েছিলো।তার মৃত্যুতে সমগ্র রাশিয়া শোকাহত হয়।এই যুদ্ধের মাঝেও তাকে তার স্মরনে মস্কো কামান দেগে এ মৃত্যুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।তিনি ‘”সোভিয়েত রাশিয়ার বীর”উপাধী পান।তার সন্মানে ৩১৬ রাইফেল ডিভিসনের নামকরন হয় পানফিলোভাইট।পরবর্তীতে যুদ্ধে তারা দারুন ভূমিকা পালন করে।এইসব অসংখ্য বীরদের নেতৃত্বেই রাশিয়া নাজী জার্মানকে চুড়ান্ত যুদ্ধে পরাজিত করেছিলো।

প্রান ও মান বাচানো সেইদিন।

৪/৫ বছর আগে আমি চট্টগ্রামের বহদ্দার হাট হতে আগ্রাবাদ যাওয়ার জন্য বাসে উঠি,সামনের সিটে জায়গা পাই।আমার পাশের সিটে একজন যুবক বসে,তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কারো সাথে মোবাইলে কথা বলছিলেন।বাস মুরাদপুর আসার পর এখানে ৭-৮জন ইউনিভার্সিটি যুবক বাসে উঠে,তারা বেশ তারাহুরা ও দাপটের সাথে উঠায় আমার পাসের লোকের পা তারা মারিয়ে দেয়।বলতে নাই দোষটা তাদেরই।কিন্তু লোকটা তাদের এ নিয়ে বলায় তারা বাহাসে লিপ্ত হয়।তারপর ২নং গেটে নামার সময় লোকটা যখন কেবল সিড়ি দিয়ে নামছে,এসময় যুবকদের একজন লোকটির পাছায় হাল্কা লাথি লাগায়।তাতে লোকটি স্লিপ করে।এবং বাসে পালটা উঠে দাবী করে যে কেনো লাথি মারা হলো।যে যুবক লাথি মেরেছে,সে দাবি করে লাথি নয় আমি পা নড়াচড়া করার সময় এটি ঘটেছে।উল্লেখ্য উভয় পক্ষ ফ্রি স্টাইল ছাপার অযোগ্য গালাগালি করছিলো।
এবার লোকটি সরাসরি আমাকে জিজ্ঞেস করল,আমি তো অন্তত দেখেছি লাথিটা,বাসের হেল্পার ও দেখেছে,তাই আমি বললাম-হ্যা সে আপনাকে লাথি মেরেছে।আশ্চর্য যে ,সে মুহুর্তে যুবকটির চুল চেপে ধরে এমন কিল আর ঘুসি লাগায় যে,আমরা হতবাক হয়ে যায় তার শারররিক শক্তি দেখে।এমনকি চুলের গোছা ছিড়ার আওয়াজ পর্যন্ত পাই।বাস ড্রাইভার বাস চালানো শুরু করলো ঝামেলা দেখে।কারন আরো দুইজন মারামারিতে অংশ নেয় লাথি খাওয়া লোকের পক্ষে।বাসের পিছ থেকে ভার্সিটি যুবকেরা সামনের যুবকের সাহায্যে এগিয়ে আসার আগেই পিটানো লোকগুলো নেমে পড়ে চলন্ত বাস থেকে।তারা দৌড়ে চলে যায়।
এবার সবগুলো যুবক বলে ,দাড়া অগুলোকে ধরতে পারি নাই তো কি হয়েছে?বাসে দালালী করেছে যে শালা তাকে তো পাইছি।তারা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছিলো,এর পর তারা সবগুলো মিলে যখন সামনে আসছিলো আর বলছিলো,চুদানির পুয়ারে ধর।আমি তখন জান ও প্রান বাচানোর জন্য হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলাম,খবরদার সারমেয় সন্তান ও বারবনিতার সন্তানেরা(ভাই ওরা আমাকে অনেক খারাপ গালি দিতেছিলো,তাই আমিও পালটা দিলাম না পারতে)গায়ে হাত দিবি তো রানে রান টেনে ছিরে ফেলবো,আমারে চিনস(আমার গলা শুনে আমিও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম)।তারা এক মুহুর্ত থমকালো।কিন্তু পরমুহুর্তে সকলে কুটিলভাবে হেসে উঠলো(আমি বুঝলাম শয়তান তাদের মাথায় ডিম পেরেছে)।কিন্তু ততক্ষনাত শয়তান যুগপত আমার মাথায় ও ডিম পেরেছে এবং টেনসনে তাদের আগে আমার মাথার ডিম ফুটে বাচ্চা আগে বেরিয়ে পড়ে।আমি তাদের বললাম দেখ,ঠিক এই জায়গায় লোকটি দাড়িয়ে ছিলো আর এই যুবকটি,যাকে আমি রান ছিড়ার হুমকি দিয়েছিলাম,ছিলো ---এইখানে বলেই আমি চলন্ত গাড়ি থেকে একলাফে নেমে আমার ঘোষনাকৃত ছিড়া রানটুকু তার পায়েই রেখে আমার নিজের রানগুলা নিয়ে প্রানপনে ১০০ মিঃ স্প্রিন্টার রান দেওয়া শুরু করলাম।কমপক্ষে ১ কিঃমিঃ এর আগে আর দাড়াই নাই।
ভাই এটা আমার আজকে মনে পড়লো।কাউকে কখনো লজ্জায় বলি নাই।আপনাদের ও বলি রাস্তাঘাটে খুব সাবধানে থাকবেন।কখন কার ঘাড়ে কোন বিপদ আসে বলা যায় না।

জন্মদিনের একাল সেকাল।

আজকাল অনেক বন্ধুর জন্মদিন ও তা সেলিব্রেশন দেখে আমার আগেকার দিনের কথা মনে পড়ে যায়।আজ থেকে ২০-২২ বছর আগে আমরা যখন থ্রি ফোরে পড়তাম,তখন একটু উচ্চবিত্তরা এটি বেশ জাকঝমকের সাথে পালন করতো।আমরা মধ্যবিত্তেরা তেমন একটা পালন করতাম না,কিন্তু অংশগ্রহন করতাম।আমার নিজের ছোট ভাইটি ৩-৪ বছর হওয়ার পর অনেকটা তার পীড়াপিড়িতে এটি আমরা পালন করা শুরু করি,কারন অন্যদের দেখে সেও তা পালন করতে আমাদের বাধ্য করে।তার জন্মদিন এগিয়ে আসার ১মাস আগে থেকে সে তার ফরমায়েস গুলা জানিয়ে রাখতো ,আমরাও সম্ভ্রাব্য ঝামেলা এড়াতে তা পালন করতাম।আর তখন আমার মত অভাবি লোক ও তার জন্য ১০টি টাকা রাখতাম।এবং অত্যান্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে ,তাকে এটি দিতে পেরে দারুন আনন্দ পেতাম।
তখনকার দিনে অনেকের জন্মদিন বাবা-মারা মনে রাখতে পারতো না।আমাদের আগের যুগের মা-বাবারা জীবনযুদ্ধে এতোই নিয়োজিত থাকতো যে,তারা কেবল জন্মের বাংলা মাস ও বাংলা বছরটা মনে রাখতো।সে আমলের অনেকের দেখবেন জন্মতারিখ স্কুলে রেজিস্ট্রেসনের সুবিধার্থে বিভিন্ন মাসের ১ তারিখে।না সে যুগের মা-বাবাদের হেয় করছি না,বরং হাজার বছর পরো এমন মা-বাবা আবার আল্লাহর কাছে চাইব।
তো ব্যাপারটা এমন হলো,আমি আমার আম্মাকে যদি জিজ্ঞেস করতাম,আম্মা আমি কবে হইছি?আম্মা বলত,তুই শাওন মাসের ১৩ তারিখ মঙ্গলবার বাংলা ১৩৮৫ সালে হয়ছোত।তারপর আমি তা ইংরেজীতে কনভার্ট করে বের করতাম,পরে ক্যালেন্ডার বের করে দেখতাম সত্যিই ইংরেজী সেদিনটায় মঙ্গলবার ছিলো।বুঝেন অবস্থা!এ নিয়ে আমি আম্মার সাথে এখনো মজা করি।আমার এক বড় ভাই তার মাকে জিজ্ঞেস করাতে তার মা জানালো,তুই গন্ডগোলের বছর(১৯৭১) যেইবার পাঞ্জাবীরা গ্রামে আইছে,তুই আছিলি পেডে,পাঞ্জাবি আইছে হেইডা হুইন্না আমরা পাটক্ষেতে গিয়া লুকাইছি আর তুই হেইসময় অইছত।এর লাইজ্ঞা তোর নাম বিপ্লব রাখছি।
আবার কোন মার জবাব ছিলো,হেইবার যখন আমরার কালা গাইডা ড্যাহা বিয়াইছে,তুই হেইসময় অয়ছত।আমরা দো খুব খুশী যে দুধের অভাব হইতো না।আহহারে এর দুইদিন পর ড্যাহাডা মইরা গেছে গা।কি বিপদ বাচ্চা মইরাছে গা দেইক্ষা গাই ত আর দুধ দেই না।শেষমেষ তোর নানায় খড় দিয়া নকল ড্যাহা বানাইয়া দুধ দোয়াইতো।
আবার কোন কোন খালাম্মা বলতো,যেইবার ঠ্যাডা পইড়া রাজ্যের মানুষ মরছে,হেই বছর আমরার ফজলুয়ে অয়ছে।এখন আপনারা খুজে বের করেন কোন বছর রাজ্যের ঠ্যাডা পড়ছে!
আবার কোন কোন খালাম্মা বলতো,যেইবার গ্রামো সার্কাসের দলের হাতি ছুইট্টা দুইটা মানুষ পাড়াইয়া মাইরা লাইছে,ইডা হুইন্না ডরে আমার ব্যথা উঠলো,হেইদিন রাইতে তুই অইছত। হারামজাদা কি বৃষ্টি চারোদিক,এর মধ্যে তোর দুনিয়াত আইবার লাইজ্ঞা ফালাফালি।যেমন তোর হাঙ্গা লাগছে,তোর লাইজ্ঞা তারাহুরা কইরা আইবার সময় হাজেরার মা(দাই মা) পিছলা খাইয়া কোমরডা বাংলো।হারামজাদা তুই এখনো পাড়াডারে জ্বালাইয়া কইলা বানাইলাছ।তরে লইয়া অক্করে খুলুবারি হইছে।
এমনি কত কি।না ,আমাদের সেই ৮০-৯০ এর দশক মোটেও খারাপ ছিলো না।আমরা জীবনের শ্রেস্ট সময় তখনই কাটিয়েছি।এমন স্নেহময়ী বাবা-মা আমরা কোন দিন হতে পারব না,এমন সহজ সরল মা-বাবা আর কখনো পাব না

কলেস্টরেল ফ্রি!(একটি অনুগল্প)।

নাবালক মিয়া আজ ভীষন ক্ষিপ্ত।দেশে হচ্ছেটা কি এসব! শেয়ার বাজারে ধরা,জিনিস-পত্রের দাম চড়া আর এসবের পর সে এতো মুর্খ হয়ে যায় নি যে,দোকানদার তাকে ঠকাবে। তাই সে দোকানে গেলো এবং সয়াবিন তেলের বোতলের সাথে প্রাপ্য ফ্রি শ্যাম্পুটি দাবি করে বসলো।তার এক কথা বোতলে স্পস্ট লেখা আছে,কলেস্টরেল ফ্রি ।তার মানে হয় কোন শ্যাম্পু না হয় কোন সাবান নিশ্চয় কোম্পানি দিয়েছে,কিন্তু লোভী দোকানদার তা মেরে দিয়েছে।যা অহরহ তারা করে থাকে।দোকানদার তাকে বলে,খবরদার মুখে যা আসে তা বলবেন না।আপনি খালি মুরুক্ষুই না,আস্তা একটা মুরুক্ষু চোদা গাউওর।বললাম না একবার যে কলেস্টরেল হলো তেলের ক্ষতিকর চর্বি।ঐটা এই তেলে নাই বিধায় তারা কলেস্টরেল ফ্রি লিখছে।নাবালক তাকে জানায়,এসব করেই তোঁরা বিল্ডিং বানাইছোস।

স্কুলের মাস্টার দোকানে আসলে দোকানদার তাকে বুঝায়,স্যার এটারে একটু বুঝান?স্যার নাবালককে বুঝাতে গেলে ,সে ক্ষেপে জবাব দেয়,আপনি ওর থেকে নিয়মিত বাকি পান বলে এভাবে ওর দালালি করবেন।এইজন্যই দেশের এই অবস্থা।অবশেষে দোকানদারের ধের্য্যচ্যুতি হয়,এই সামনে থেকে কেউ নাবালকের কাছে তেল বিক্রি করলে জুতা দিয়ে পিটিয়ে শহর ছাড়া করা হবে।আর এখন এই বিখাউজরে একটা সানসিল্ক ২ টাকার শ্যাম্পু দিয়ে বিদায় করা হোক।অতঃপর নাবালক তার প্রাপ্য শ্যাম্পু নিয়ে বিদায় হয়।

চিরকুমার ব্রত।(অনু গল্প)

আসলে আরেঞ্জ বিবাহে কত রকম যে ঝামেলা,দুই পক্ষ পরস্পরকে যেভাবে ক্রস এক্সাম করে।কেউ কাউকে এতোটুকু ছাড় দিতে নারাজ।যেনো বিয়ে নয় ব্যবসায়িক চুক্তি হচ্ছে।মেয়ে পক্ষ চায় ১৫-২০ ভরি স্বর্ন,বর্তমানে যা যোগার করা দূঃস্বপ্নের মতো।ছেলে পক্ষ চায় ২০০০ মানুষকে খাওয়াতে,যাতে কনের বাপের ভিটায় পরবর্তীতে ঘুঘু চড়ে।কারোর প্রতি কারো এতোটুকু মায়া নাই।

তেমনি এক কনে দেখায় বন্ধুদের নিয়ে গিয়েছিলাম।হায়,বন্ধু তো নয়,কতগুলো হাভাতে নিয়ে গিয়েছিলাম।তারা বুদ্ধি দিলো মেয়েকে পীটস্টপ এ দেখ,কারন কমদামী রেস্টোরেন্টে গেলে তোর ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।আমি কি জানতাম তারা আমাকে সেলাই করার বুদ্ধি করেছিলো।আমি তাদের বারবার বলেছি,তোরা ৫হাজারের মধ্যে খরচ করবি।যথারীতি মেয়ের সাথে কথা বলতে বসলাম।তারা বলল,তোরা দুইজন কথা বল।আমরা দূরে বসে অর্ডার দিই।এর পর তারা পিটস্টপকে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সম্পত্তি মনে করে যেটা করেছে,আমি এতিমের মত দূর হতে তাদের শুধু দেখেছি।আর বোবার মত তাদের বোঝাবার চেস্টা করেছি,এবার তোঁরা ক্ষান্ত দে।আল্লাহর গজব পড়বে তোদের উপর।আর এসব নালায়েকরা আমার দিকে মুখভর্তি খানা নিয়ে হাসিমুখে যেভাবে তাকিয়েছিলো,আমার ভিতরে তাদের জন্য ভয়ানক সব পরিনতি ভেসে আসছিলো।একজন তো হাঃ করছে আর আমি দেখলাম কি তার গলা পর্যন্ত খানা লোড করা।

এবার মেয়ের কথা বলি,সে আমাকে বলে দেখেন আমি খুব স্পস্টবাদী।এবার বলেন আপনারা কি ভাড়া বাড়ি না নিজের বাড়িতে থাকেন?আমি বললাম,কেনো ভাড়াটিয়া হলে কি কোন ক্ষতি আছে?সে বললো,আপনি কি মাইন্ড করছেন?আমি বলি,না।ব্যক্তিগত ভাবে আমার কোন বাড়ি নেই ।আমাদের বাড়ির মালিক আমার বাবা।আপনার বেতন কত?আমি বললাম,সেটা আমি বলতে চাই না।এবার বললো,আপনি কি এখানেই হয়েছেন?আমি বললাম,না না আমার আম্মা বলেছে আমি আন্দরকিল্লা রেডক্রিসেন্টে ম্যাটারনিটিতে হয়েছি।পিটস্টপে কেউ জন্মিয়েছে বলে আমি জানিনা।সে হাসলো।তারপর জানালো,বিয়ের পর সে কি কি স্বাধীনতা চায়।আমি শুনলাম এবং বললাম,ঠিকাছে,আমি আর আপনাকে বিরক্ত করবো না,আমি কি এখন যেতে পারি?

এভাবেই বিদায় নিলাম,হাভাতের দলের তীব্র আপত্তি ছিলো এভাবে বের হওয়াতে। তাদের নাকি আর কি কি আইটেম বাকি আছে। তারপর আর কি বিয়ের নাম শুনলেই আমার জ্বর উঠে।চিরকুমার থাকা ঢের ভালো।

ক্যারিয়ার বনাম বৃদ্ধাশ্রম।

ক্যারিয়ারিস্ট,সফল ধনী লোক ,সামরিক কর্মকর্তা ইত্যাদি হয়ে লাভ কি যদি আমার ঘরে আমার মা-বাবারই জায়গা না হয়।তাই আমি সবসময় চাই,সন্তান যেনো ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠে।তার মধ্যে যেনো মানবিকতার পরিপুর্ন বিকাশ হয়।সে যেনো তার পরিবারকে ভালোবাসে।আমার এমন শিক্ষিত সন্তান দরকার নাই, যে বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রাখে।আমার একটি মুর্খ ছেলে দরকার যে বাবা-মা কে তার বুক দিয়ে স্নেহ-মমতা দিয়ে আগলে রাখবে।

আজকে হিন্দি সিনেমা বাগবান দ্যাখে আমার মনে হলো,আমাদের দেশে এখন এমন ঘটনা হরদম ঘটছে।সারাজীবন বাবা-মা সন্তানের পিছনে তাদের জীবন শক্তি ব্যয় করার পর বৃদ্ধ বয়সে এসে তারা পুত্রের কাছে স্যানিটারি নেপকিন হয়ে যান।কত অবহেলা,কত অনাদর তারা পান তাদের স্নেহের ধন থেকে।আর শুক্কুর বার শুক্কুর বার আট দিন হয় নাই,আসছে এমন একটা মেয়ে হয়ে যায় পুত্রের প্রানের চেয়ে প্রিয়।আমি নিজে দেখেছি এমন এক দম্পতিকে যারা তাদের পুত্র সন্তানকে নিয়েই আজীবন ব্যস্ত ছিলো।পুত্রকে ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছে,তারা তাকে নিয়ে কি গর্বিতই না ছিলো।অথচ এই দম্পতির আরো দুইটি মেয়েও ছিলো।কিন্তু বাবা মা ছেলের ক্যারিয়ার নিয়ে এতো সময় দিয়েছিলো যে মেয়েরা তাদের নিজের উদ্যোগেই পড়ালেখা করেছিলো।তাদের ভাইয়ের প্রতি কোন ইর্ষা ছিলো না,তারাও গর্ববোধ করতো যে আমার ভাই সামরিক কর্মকর্তা।আমাদের সামরিক কর্মকর্তা অবশেষে তারই সহকর্মী আরেক সামরিক কর্মকর্ত্রীকে বিয়ে করেন।তারা দুজনই এতো শিক্ষিত যে তারা দুই উর্ধত্বন অফিসার মিলে মিটিং করে বুঝতে পারলো,বুড়ো-বুড়িকে মাসিক ভাড়া দিয়ে একটা ক্যারিয়ারবিহীন এরিয়ায় রাখাই অধিক যুক্তিযোক্ত হবে।তাছাড়া সামরিক এরিয়ায় এসব উঠকো ঝামেলা অনেকটা এমন যে,এইসব বুড়া-বুড়ি না থাকার চেয়ে তিন লাখ টাকা ঋন থাকা ঢের ভালো।এই হলো আমাদের দেশের বাগবান এর কাহিনী।

আরেকজন বউয়ের জন্য এসি কিনে কিভাবে আমাদের শোনাবে,এই চিন্তায় পেরেশান।অবশেষে বললো,কয়দিনের গরমটা খেয়াল করলি?স্রেফ মানুষ মারা গরম।বুঝলি আমি তো সারাদিন এসিতে থাকি।গরম তেমন টের পাই না।সেদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি কি,তোর ভাবির গায়ে ফোসকা পড়ার মত দাগ,বিশ্বাস কর আমি ডুকরে কেদে দিয়েছি।পরেরদিন কোন কথা না বলে এসি কিনলাম,৫২০০০ হাজার টাকা ২টনের স্প্লিট এসি।আর আমি বলি,ঠিকই তো করছো।তুমি থাকবা এসিমে,তুম হারা বিবি তেসিমে বাট এসে ক্যায়সে হো স্যাকতা হ্যায়।কিউ কি তুম হারা পাস বহুত পয়সা হ্যায়।

তার স্নেহময়ী মা কখনো এসিতে ছিলেন না,কি পরিশ্রমই না করতেন সমগ্র সংসারটির জন্য।আজকে বউকে এসিতে শীতল করার সময় জানি না কখনো তার জান্নাতবাসী মার কথা মনে পড়ে কি না।

থাক আজ আমার কি জানি হইছে,বেশী বকলে আবার আমার মুখ দিয়ে বহুত কথা বের হয়ে পড়বে।অতএব এবার ক্ষান্ত দি।

বিব্রত ও তীব্র নিন্দা।(অনু গল্প)

গ্রাম্য সহজ সরল মহিলা স্বামীকে জিজ্ঞেস করছে,আইচ্ছা এই যে টিভিতে দেখায় বীরবত হওয়া আর তীব্র নিন্দা ব্যাফারডা কি?স্বামী বললো,ব্যাফারডা অইলো এই তুই এখন ঘুমাবি?দুনিয়ার সব বালছাল আলাপ।সারাদিন কাম কইরা হোগা ফাডে,উনি আইছেন টিভির আলাপ চোদাইতে।স্ত্রী বলে, আইচ্ছা মানুষ তার বউয়ের লগে কত সুন্দর কইরা কথা কয়,তুমি এমুনকা। খালি আইয়া কয়ডা খাইয়াই ভইরা দেও। সিধা কইলেই হয়,কথাডার মানে।স্বামী বলে,তরে কমু কথার মানে,আরে তুই তো শুদ্ধু কইরা কইবারই পারোস না,শোন কথাডা বীরবত না হইবো বিব্রত মানে শরম লাগা।বিয়ার জামাইরে দেহস না শরমে মুখে রুমাল দিয়া রাখে,মানে হে বিব্রত হইছে।আর তীব্র নিন্দা,তোরে কেমনে বুঝায়,মনে কর এডাও একটা খারাপ গালি ।স্ত্রী বলে,এডা কি এই মাগির ঝি এর মত গালি।স্বামী বলে,আরে না।এই ধর তোরে তীব্র নিন্দা করি,মানে তোরে ঘৃন্না করি।মানে মনে কর, ঘৃন্নায় মুইত্যা দিবার মত অবস্থা।স্ত্রী বলে,আমার টিভির এই গালিডি ভাল্লাগছে।বারেক্কার বউরে এখন থেইক্কা মাগির ঝি না কইয়া কমু,তোরে তীব্র নিন্দা,তোর মুখ দেখতেও বিব্রত লাগে।অনেক সুন্দর হইছে।

নরানং মাতুলক্রম।

আমার মরহুম নানাজান বিরল কারনে কুকুর দুই চোক্ষে দেখতে পারতেন না,আর সেই অপত্য স্নেহের জায়গাটি দখল করে নিয়েছিলো তার ঘরের বেড়ালটি।আর কি আর বলবো ভাই,সেই শয়তানটি মোক্ষম বুঝতে পেরেছিলো যে এই ঘরে শুধু এই বূড়োকে মেনে চললেই চলবে।বাকীরা ফুঃ-

আমার মামা জানেরা যদিও কুকুর বেড়াল নিয়ে কারবার করেন না,তাই এসব নিয়ে তারা অনাগ্রহী।কিন্তু কেউ তাদের বাবার বিড়ালকে লাঞ্চনা-গঞ্জনা দেয়ার চেস্টা করলে তারা তা ব্যক্তিগত অপমান বলেই গ্রাহ্য করতো।সুতরাং যা হওয়ার কথা তাই ঘটতো,সেই মুর্তিমান শয়তান যে, ব্যাপক আশকারা আর নানাজানের গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রনালয় থেকে অবাধে সুযোগ পেয়ে বাওড়াল বিলাই বা মোয়াপ ওরফে রাক্ষসে পরিনত হয়েছিলো।

অতিরিক্ত আদরে সে শুধু ঘরেরই বারোটা বাজাতো না,ক্রমাম্বয়ে পাড়া-প্রতিবেশীর জন্য মুরগী,কবুতর খাওয়া একটা নিয়মিত ব্যাপারে পরিনত করে ছাড়লো।তারা বিচার নিয়ে আসার আগেই দেখতো,বিলাই মরহুম মমতাজ উদ্দিন প্রধান মানে আমার নানার কোলে মাথা গুজে বসে উ-উ-উ করে আদর খাচ্ছে।তারা বলতো-দেখেন আমাদের কি হাল করেছে?

আমার নানা বলতো-তোমরা একটা বোবা প্রানীকে কেনো এমন দোষারোপ করছো?গ্রামে কি আর কোন বিড়াল নেই।তখনি আমার নানী হুঙ্কার দিয়ে বলতো-এই লোক করবে বিচার?তোমরা নিজেরা একদিন এই শয়তান বিলাইয়ের কোন ব্যবস্থা করতে পারোনা?(নানিজান বিলাইটিকে সতীন জ্ঞানে ঘৃনা করতেন)।

নানা বলতেন-এই মহিলার দিলে আল্লাহ কোন রহম দেয় নাই,তারপর শুরু হতো ম্যারাথন এক শেষ না হওয়া কবির লড়াই,যার রেশ অনেকদিন থাকতো।নতুন কিছু না ঘটলে পুরাতনটা চাপা পড়তো না।আমার মা-খালা-মামারা মা-বাবার এই লড়াই দেখত অত্যান্ত দার্শনিক দৃস্টিভঙ্গি নিয়ে।

নানাজান তার ছেলেদের নাম যেমন কাঠিন্য নিয়ে রাখতেন,মেয়েদের নাম রাখতেন তেমনি মায়া ভরা দৃস্টি নিয়ে।যেমনঃ-মামাদের নাম বৈরাম খাঁ,সাদত খাঁ আর খালাদের নাম করুনা,অরুনা আর বাসনা।(অধম নিজে করুনাময়ীর সন্তান)।

দেখো কি কথা থেকে কি কথায় চলে গেলাম,মাতুল কাহিনী অন্য কোনদিন বলবো।
এবার আবার মেকুঁর কাহিনী।

তো হলো কি,গ্রামবাসী একটা অলিখিত মৃত্যুদন্ড জারী করে যে,মহামান্য বিলাইকে যেখানে যেই অবস্থায় পাওয়া যাবে সড়কি বা বল্লম দিয়ে বিদ্ধ করে ৩০২ ধারায় তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে।এবং লাশ অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে দাফন করা হবে।না হলে,সাদত খাঁ বৈরাম খাঁ নিবৃত্ত এই বিচারের দাবী নিরবে কাঁদে এই বাক্যকে অগ্রাহ্য করে দুনিয়াকে ফানাফিল্লাহ বাকিবিল্লাহ করে ছাড়বে।প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের এই খেলায় আমার নানীর সর্বসম্মতিক্রম সমর্থন গ্রামবাসীর পক্ষে রইলো।

কিন্তু ইংলিসে একটা কথা আছে না,ম্যান প্রপোজেস গড ডিস্পোজেস(এমনই তো নাকি,বয়স হইছে ভুল ভ্রান্তি ইদানিং বেশী হচ্ছে)।কুত্তামার্কা বিলাইটা সেদিন গ্রামেরই একজনের বাড়ীতে ঘটিতে মুখ দিয়ে মাথা বাজিয়ে ফেলে।তারা ঘটিতে সেদিন মাছ রেখেছিলো।সুতরাং গ্রামে যথাযোগ্য উৎসবমুখর পরিবেশে কে প্রথম সড়কি বা বল্লম মারবে তার জন্য তর্ক জমে উঠলো।সবাই মোটামোটি একমত রুইত মিয়া কাজটি করুক,কারন বল্লম মারামারিতে তিনিই এলাকার অলিম্পিক গোল্ড মেডেলিস্ট।তো শুভ কাজ দেরী করতে নেই রুইত মিয়া ইশারা ইঙ্গিতে তাই বুঝিয়ে একটা যথাযোগ্য ভাবগম্ভীর মুড নিলেন।প্রতিপক্ষের প্রতি বল্লম মারার ব্যাপারে উনি বরাবরই আপোষহীন,গ্রাম বাসীর মতামতকেও উনি যারপর নাই সন্মান করেন।তাছাড়া বল্লম এফোঁড় ওফোঁর করে ছুড়ে দেয়া তার তিন পুরুষের অহঙ্কার।আর এদিকে-

বিলাই প্রথমে হঠাত এভাবে ঘটি বা হেলমেট আটকে যাওয়ায় স্তব্দ হয়ে যায় মুহুর্ত খানেক।নিজেকে চন্দ্রবিজয়ী নীল আমস্ট্রং এর ন্যায় ভেবে বলে উঠে-ছোট এই বিড়ালের মাথার প্রবেশ বৃহত্তর মানবতার থুড়ি বিড়ালতার অনুপ্রবেশ।তারপরই তার নিয়তি সে বুঝে ফেলে।সমস্ত বাড়ী লন্ড ভন্ড করে সে মমতাজ উদ্দীন প্রধান আর তার নালায়েক পুত্রদের খুজতে থাকে।নানা নানা তুমি কোথায়(এই প্রথম আমার নানা তার নানায় পরিনত হলো)।

এই দাঁপাদাঁপিতে ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারি ঘটে গেলো,ব্রিটিস ও পাকিস্তান আমল এর কিংবদন্তী বল্লম নিক্ষেপক রুইত মিয়া তার ৬২ বছরের জীবনের দ্বিতীয় ভুল করে বসলেন।অর্থাত সড়কি নিক্ষেপ মিস হয়ে গেলো অল্পের জন্য।লজ্জায় তিনি ছাইবর্ন হয়ে গেলেন।গ্রামের মহিলারা এর মধ্যেই আলোচনা শুরু করে দিলেন-রুইত মিয়ার বয়স হয়েছে,চুলে ইদানিং বাটা পালিশ কলপ যতই মাখুক,যেই দিন বয়স্ক ভাতার খাতায় সে টিপসই মেরেছে সেদিনই সে শেষ।মহিলাদের অব্যাহত টিপ্পনীতে রুইত মিয়ার মনোযোগ নস্ট হচ্ছে,এই বলে সে কালুর মা আর বাবুইল্যার মাকে সেখান থেকে বের করে দেবার জোর দাবি জানালেন।দাবি গ্রান্টেট হলো।উক্ত দুই মহিলা যাবার আগে বলে গেলো-তাদের বের করে দিলেই রুইত মিয়ার হাতের টিপ ফিরে আসবে না।রুইত মিয়া ভাবলেন- না,এই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিছুতেই আর আগের মত মজা নেই,আইউবের আমলে সে কানা হয়ে সড়কি মারলেও তা লক্ষ্যভেদ হতো(রুইত মিয়া আইয়ুব খানের দালাল ছি্লো,যে সবকিছু্তেই আয়ুবের তুলনা করতো)।


এদিকে কে বা কারা আমার নানা্জানকে নিউজ পৌছাতে সক্ষম হয়েছেন যে,উনার কলিজার টুকরো্কে নিয়ে কি ঘৃন্য ষড়যন্ত্র চলছে।উনি সৈন্যসামন্ত বেস্টিত হয়ে সেই বাড়িতে গিয়ে দেখলেন,উনার কলিজা, গুর্দা আর ফেপ্রার উপর বৃস্টির মত বল্লম ্নিক্ষিপ্ত হচ্ছে।পিছে ্পিছে নানী্জান।উনি হুঙকার দিলেন -রুইত মিয়া!তোমার দুই রান টেনে ছিড়ে ফেলা হবে।এতেই রুইত মিয়া হয়ে গেলেন কাইত।উক্ত দুই বহিষ্কৃত মহিলা দাবী করলেন তারাই ঠিক।

আমার নানার গলার আওয়াজ পেয়ে তখনই দৌড়ে গিয়ে বিলাই তার কোলে আশ্রয় নিলেন।আর স্বস্তির ঘড়ঘড় আওয়াজ দিতে থাকলেন আর বলতে লাগলেন-নানা-নানাগো-আর একটু দেরী হলেই ওরা আমার -আয়রে আয় টিয়ে,পুক্কি দিয়ে দিয়ে -করে দিতো গো।

আর নানা খুবই স্নেহের সহীত বলতে লাগলেন-দেখো তো,মানুষ কেমন বিবেক নিয়ে থাকে।বোবা প্রানীটার কি সর্বনাশই না হতো,আমি না এলে।

সাথে সাথে আমার নানী ঝংকার দিলেন-ইশ!কি আমার দিনের নবী মোস্তফা আইছে,আমি তো আগেই কইছি-বিচার তাও আ্বার এই লোকের কাছে।আবার শুরু হয়ে গেলো ম্যারাথন কবির লড়াই।আমার মা-খালা-মামারা আ্বার দার্শনিক হয়ে গেলেন।রুইত মিয়া মামাদের কথা দিলেন,তাদের ঘুড়ির নাটাই আর মাছ ধরার চাঁই বানিয়ে দিবেন।

জার্নি বাই বাস।

বাসে করে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম আসছিলাম।আমার ডানের সিটে বসেছিলো দুই ছোকরা,যারা বাসে উঠে বসার পর থেকেই ক্ষনে চানাচুর চাবাচ্ছে তো ক্ষনে আমড়া খাচ্ছে।তাদেরই সামনে বসেছে বাচ্চা কোলে নিয়ে এক মহিলা।

তারপরই বিপত্তিটা বাধলো,বাস চলাকালে ছোকরাদ্বয়ের একজন ভক করে সামনে বমি করে দিলো। পড়বি তো পড় সামনের মহিলার ঘাড়ের উপর গিয়ে পড়লো।সাথে সাথে মাতঙ্গিনী তার শ্বাশত রুপে বহিঃপ্রকাশ করলেন।

ওই গোলামের পুত,কুত্তার বাচ
্চা তহন থেইক্যা দেখতাসি নাদানের মত খালি চাবাইতাছোত।পেডে যদি নাই রাখতি পারোস,গিলোস কিয়ের লাইগ্যা।অমাইন্সের বাইচ্চা আমার এখন কি অইবো।এই গন্ধ কাপড়ডি লইয়া আমি অহন কই যামু।

তারপরই কষিয়ে একটা থাপ্পড়!

এরপর নিজের বাচ্চাকে তুলে ধরে সবাইকে দেখিয়ে-আমার এই আঠারো মাসের বাচ্চার ওতো পেডের গ্যারান্টি আছে,তুই কুত্তার বাচ্চার কা নাই।এটা বলেই সেকেন্ড ফেসে এটাক।(বমনকারী উপুর্যপুরী বমি আর থাপ্পড়ে তখন পর্যুদস্ত)।

এরপরই মহিলা দেখলো,আমি হাসি দিয়ে ফেলছি।সাথে সাথে আমাকে-ভাইজান আপনের হাসি আইতাছে,আমার এই নাদানেরে ফাড়াইয়া মাইরা লাইতে মন চাইতাছে।নডির পুত তুই আমার গায়ে বমি না কইরা আইজ্ঞা(হেগে) দিতি,তারপরও আমি তোরে কিছু কইতাম না।

আমি বাপু সব দেখতারি,কিন্তু বমি দুইচোখে দেখতারি না।

আর আমি ঐদিনই প্রথম জানলাম,গুয়ের থেকে বমির সামাজিক মর্যাদা বলতে গেলে নাই।

শুধুই গল্প নয়।

আজ এই বিজয়ের রাতে আমার অনেক বেশী স্মরন হচ্ছে,সেইসব অজানা মুক্তিযোদ্ধাদের কথা যারা যুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের অজানা দূর্গম প্রান্তরে শহীদ হয়েছেন।যাদের সহযোদ্ধারা পরিস্থিতির জন্য ফেলে আসতে বাধ্য হোন।সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা কোনদিন জানলো না,কোথায় তাদের প্রানের টুকরো শুয়ে আছে?

আমি তাদের স্মরন করছি।আমি যখন "সব কটা জানালা খুলে দাওনা" গানটা শুনি ,সত্যি সত্যি আমার মনে হয় তারা যেনো আমাদের জানালার কাছে আসে।দেখতে চায়,শুনতে চায় সত্যিই কি তাদের কেউ মনে রেখেছে?

কিংবা ইপিআর এর হাবিলদার মনু মিয়ার মত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা যে সহযোদ্ধাদের বলে ,তোমরা নিরাপদে চলে যাও।আমি কাভারিং দিবো।মাঝ বয়েসী এই বীর চাননি এই তরুন যোদ্ধারা মৃত্যুবরন করুক।তিনি কাউকে বলেন নি,কোথায় তার বাড়ী ,তার পরিবারের কথা।এমনকি তার কোন শেষ কথাও ছিলোনা।কেবল ভেবেছেন,এই তরুনদের বাঁচাতে হবে,এরাই সামনে আরো প্রশিক্ষিত হয়ে দেশমাতৃকার হয়ে প্রতিশোধ নিবে।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেডিও অফিসের সামনে মনু মিয়ার নেতৃত্বে অজ্ঞাত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ২৭ জন পাক হানাদার মেরিন সেনা নিহত হয়।এমনকি পাক বাহিনী এপ্রিলের প্রথমদিকের এই লড়াইয়ে প্রথম দিন লাশ নেয়ার জন্য আসার সাহস করেনি।হানাদারেরা সারারাত কর্নফুলী নদীর তাদের জাহাজ থেকে সেল নিক্ষেপ করে অক্ষম আক্রোশে ।পরেরদিন অগনিত মানুষকে হত্যা করে,যাদেরকে দিয়ে মৃত হানাদারদের লাশ টানিয়েছে,তাদেরও হত্যা করেছে।

মনুমিয়া সহযোদ্ধাদের নিয়ে বীরের মত মৃত্যুকে বরন করেছে,হানাদারদের ভারী অস্ত্রের বিপরীতে তারা তাদের এই ক্ষীনবল নিয়ে মরন আঘাত হেনেছে।গুলি রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় মারাত্বক আহত হয়ে তাদের এই অমুল্য প্রান দেশের জন্য উতসর্গ করেছে।

তারা কোন সার্টিফিকেটের জন্য যেমন লড়েনি, তেমনি কোন শহীদ মিনার হবে তাদের স্মরনে সেটাও স্বপ্নে ভাবেন নাই।তিনি এ ভুমির মুল্য বুঝেছিলেন।তারপরও কৃতজ্ঞচিত্ত এলাকাবাসী একটি ক্ষুদ্র শহীদ মিনার বানিয়েছিলো।অনেক বছর পর রাস্তার পাশে এই মুল্যবান জমির মুল্য বুঝে কতিপয় ব্যবসায়ী বঙ্গসন্তান এপার্টমেন্ট নির্মান করে।না,প্রতিবাদ তেমন উঠেনি।সবাই মনু মিয়ার মত বেঁকুব না।যার যার ভাগ বুঝে পাওয়ার পর,তারাই বলে বেড়ায়-মনু মিয়া মনে হয় এখানে মরে নাই,রাস্তার পাশে খালটার কাছে খাস জমিটার ওখানেই মনে হয় মরেছে।

মনুমিয়া একটুও রাগ করে নাই,বলতে কি তিনি লজ্জাই পেয়েছেন।এভাবে পথের উপর মরার জন্য লজ্জা,সবাইকে অসুবিধায় ফেলার জন্য লজ্জা।ঠিকই তো আছে,একজন স্বল্পশিক্ষিত হাবিলদারের তো খাসের জমিতেই মরা সুবিধাজনক।

নাম নিয়ে যত কথা।

নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্টের নামটা আমার বেশ ভালো লাগে,তার নাম গুডলাক জোনাথন।কি সুন্দর! ভাগ্যবান জোনাথনের নামটা।এই নাম ব্যাপারটা নিয়ে এখন ভাবছি।একেকদেশের সংস্কৃতির সাথে তাদের নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।যেমনঃ-মুল রুশীরা ভ্লাদিমীর নভকভ,পাভলভ,মানে প্রায় কভ কভ,ব্যতিক্রম ও আছে।আবার ইউক্রেনীরা শেভচোঙ্কো,ইয়েরেমেঙ্কো,শতেমেঙ্কো,তিমোশেঙ্কো এমনি হয়।

আমাদের গ্রামের কথা বলি।একজনের বাপে শখ করে ছেলের নাম রাখছে জর্জ মিয়া,আরেকজনে রাখছে পেশকার।মানুষ ডাকে পেশকারের বাপ,শুনতেও ভালো লাগে।তেমনি এক স্ত্রী লোকের নামই রাখছে বেগম মহিলা আক্তার।এটা সত্যি,আমি নিজে ঐ মহিলাকে চিনি। তেমনি একজনের নাম লীল মিয়া।আমি জিজ্ঞেস করলাম,ভাই আপনার নাম মনে হয় নীল মিয়া রাখছিলো,মানুষ ভুলে ভুলে লীল মিয়া করে ফেলছে।সে বলে,না ভাইজান বাপে আদর করে লীল মিয়াই রাখছে।কোন ভুল নাই।

একজনের নাম আবার নাবালক মিয়া।অদ্ভুত যে,সে মোটেই এতিম না।ঘর ভর্তি তার ছেলেমেয়ে।আরো আছে কম্পনি বেগম।উনি ভীষন দজ্জাল টাইপের ছিলেন ছোটবেলাই।কারো সাথে ঝগড়া হলে তার প্রতিপক্ষের অসহায় প্রানীটিকে চুলটুল ছিড়ে তারাখাড়া বানিয়ে ছাড়তেন।তাই এই উপাধি।

আর মোগলরা ছিলেন নামের ব্যাপারে বেশ সৌখিন।নামেই ছিলো তাদের সমস্ত গুনাবলীর বিবরন।নকীবরা সম্রাট দরবারে আসার আগে বেশ কেতাদুরস্ত ভাবে ঘোষনা করতো। বাবুরের পুরো নাম জহির উদ্দীন মুহম্মদ বাবুর আল সুলতানু ই আজম ওয়াল হাকান আল মুকাররাম পাতশায়ে গাজী।মোটামুটি দাঁত পড়ে যাওয়ার দশা। সেইসুত্র মতাবেক নাসির-উদ্দীন মোহাম্মদ হুমায়ুন,জালাল-উদ্দীন মুহম্মদ আকবর,নুর উদ্দীন মুহম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর,সাহাবুদ্দীন মুহম্মদ শাহজাহান এবং আলমগীর মুহম্মদ আওরঙ্গজেব এই সব মুল নামের সাথে যুক্ত হতো আল সুলতানু ই আজম ওয়াল হাকান আল মুকাররাম পাতশায়ে গাজী এই রাজকীয় পদবী।

না,আর লম্বা করবো না।যথেস্ট বকে ফেলেছি।কি কথা থেকে কোথায় এসে পড়েছি।আমার কোন দোষ নাই।স্টাটাসের এখানে চোখ পড়তে দেখি লেখা-আপনি এখন কি ভাবছেন?তাতেই গোল বেধে গেলো।

হাইড্রসিল বা একশিরা ব্যামো।

মানিকের প্রাগৈতিহাসিক গল্পে পাঁচী বলে এক ভিখারিনী আছে ,যে তার পায়ের বিশ্রী একজিমাটা ভালো হতে দিতো না।কারন তাহলে যে তার ভিক্ষাবৃত্তির মারাত্বক অসুবিধা ঘটে যাবে।তাই সে এর সদব্যবহার করেই যেতো।

আবার বাজারে প্রায়শই দেখা যেতো,হাইড্রসিল বা একশিরা আক্রান্ত এক ভিক্ষুককে,যে কিনা ঐ পাঁচীর মতোই।অপারেশন করতো না,সহানুভূতিশীল মানুষকে হালকা করে আলগোছে লুঙ্গি ওপর করে দেখিয়ে দিতো বিকট অন্ডকোষটিকে।পাবলিক আঁতকে উঠে যা দেয়ার দিয়ে দিতো। এভাবেই সে আর চিকিৎসা করায় না।কি দরকার চলুক না,যতদিন পাবলিক এর সহানুভুতি পাওয়া যায়।ততদিনই লাভ।

তারপর এলাকাবাসী একদিন ক্ষেপে গিয়ে বেদম পিটিয়ে হাইড্রসিলের অপারেশন করিয়ে দেয়।পাবলিকের কথা হলো-আরে ভাই বইলেন না,অসভ্যটা সেই পাকিস্তান আমল থেকে এই লুঙ্গি উঠিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে ভিক্ষা করছে।তারপরও চিকিৎসা করায় না।এতোদিনের তার ভিক্ষার টাকায় একটা ৪ তলা বিল্ডিং দাঁড়িয়ে যেতো।আর এই শালায় এই ফুটবলটার কোন অপারেশন করায় না।

ধুত্তরি! আমি এইসব কি আজাইরা প্যাচাল পাড়তেছি।কাজের কথাটা বলি,আমরাও মনে প্রানে চাই আওয়ামি লীগ এই রাজাকার হাইড্রসিলের একটা অপারেশন করুক।ভোট আসলেই এইসব লুঙ্গি-ফুঙ্গি উঠিয়ে দেখানো আর কতদিন?আফটার অল ,পাবলিকের ওতো এইসব দেখতে ভালো লাগে না। আর পাবলিককেই আর কি দোষ দিমু,এই গরীবের দেশে ফকিরের একশিরা আন্ডা দেখাও একপ্রকার বিনোদন।

মঙ্গলি।

আজকে ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে পড়লো।সেবার আমাদের এলাকায় একটা কুকুরের জলাতঙ্ক দেখা দিলো।পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো।আমাদের প্রতিবেশী ইয়াজদানীদের গরুকে কুকুরটি কয়দিন আগে কাঁমড়ে দিয়েছিলো।ফলে সেই গরুটি সবার আগে আক্রান্ত হলো ,গরুটি হঠাত করে উম্মুত্তের মতো হিংস্র আচরন শুরু করতো,দড়ি ছিরে ফেলার উপায় করতো,তারপর হঠাত চার-পা ছড়িয়ে মাঠে শুয়ে পড়তো।

আমার আব্বা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লো আমাদের এবং আমাদের দুইটা গরু
নিয়ে।আমাদের কালো গাভীটার নাম ছিলো মংগলি।সে অত্যান্ত ক্ষিপ্ত মেজাজের এক গাভী ছিলো,আমাদের যে ছেলেটা গরু গুলো রক্ষনাবেক্ষন করতো তার নাম ছিলো ইউসুফ।আমি নিজে দেখছি আমার আব্বা অফিস থেকে আসলে আব্ববার গলা শোনা মাত্রই মঙ্গলির হাঁকডাক বেড়ে যেতো।আমার আব্বা তার গলায় হাত বুলিয়ে না দিলে সে কোনমতেই শান্ত হতো না।

সেই মঙ্গলিকে যেদিন কুকুরটা কাঁমড়াতে এলো সেদিনটার কথা বলি।সাধারনত জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুর থেকে সুস্থ কুকুর নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে।আর কারো পালা কুকুর এ রোগে আক্রান্ত হলে কেবল রোগের চুড়ান্ত আক্রমনের সময়েই সে মালিককে চিনতে পারে না,ফলে মালিককেও কামড়াতে আসে।কারন এ রোগ কুকুরের মস্তিস্কতে ছড়িয়ে পড়ে।

আমার আব্বা কুকুরটা আসছে খবর পেয়েই গরুর রশিটা খাটো করে বেধেছিলো,কারন গরু এই অবস্থায় মারাত্বক ভীত হয়ে অহেতুক ছোটাছুটি করতে চায়,এতে কামড়ের থেকে সে বাঁচতে পারে না।কারন কুকুরের সাথে
দৌড়ে পারা যায় না,উপরন্ত এটি পাগলা কুকুর।আমার আব্বা মঙ্গলিকে গলায় হাত বুলিয়ে খুব ধীর গলায় র-র-র বলে তার পাশে মোটা একটা মুগুর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।সাথে ইউসুফ,এই এক পোলা আছিলো দুর্দান্ত সাহসী।সে আমার আব্বাকে মারাত্বক বিশ্বাস করত।মঙ্গলি দাঁড়িয়ে থেকে থরথর করে কাঁপছিলো।আমার আব্বা পায়ের দিকটায় মুগুর নিয়ে আর ইউসুফ লাঠি নিয়ে মাথার কাছে।

এইসময়ই কুকুরটা আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো,সেটার মুখ দিয়ে লালা গড়াচ্ছিলো।আমার আব্বা অত্যান্ত ঠান্ডা মাথায় চরম ধৈর্য্যের সাথে কুকুরটির দিকে লক্ষ্য রাখছিলো,কোনরকম তাড়াহুড়া দেখাচ্ছিলো না।কুকুরটা যখন কেবলি গরুর পিছনের পায়ের দিকে এগোতে লাগলো।আমার আব্বা বিদ্যুৎ বেগে সেটার মাথায় মুগুর দিয়ে আঘাত হানলো।কুকুরটা ছিটকে গিয়ে দূরে পরা মাত্রই ইউসুফ আর আমার আব্বা ক্রমাগত মাথায় আঘাত হেনে গুড়িয়ে দিলো।

এই মঙ্গলিকে নিয়ে গল্পটা শেষ করি।এর চার-পাঁচ বছর পর রাস্তা পেরোতে গিয়ে মঙ্গলিকে ট্রাক মাঝায় আঘাত করে পালিয়ে যায়।আমার আব্বা যখন অফিস থেকে ছুটে আসে তখনও মঙ্গলি প্রান হারায় নি।আমার আব্বা তার কাছে যায়,মঙ্গলির চোখে পানি কিন্তু সে আমার আব্বার হাত চেটে দেয়।আমি কখনো আমার আব্বাকে এর আগে চিৎকার করে কাঁদতে দেখি নাই।আমার আব্বা এই একটা চিতকারই দেয়।এরপর সারারাত ধরে নীরবে কেঁদে যায়।এরপর বাকী দুইটা গরুকে বাড়িতে কাকার কাছে পাঠিয়ে দেয়।আর জীবনে কখনো গরু পালেন নাই।

নাম নিয়ে যত কথা-২

বাংলাদেশের গ্রামের নামগুলো বেশ আকর্ষক।প্রায়গুলোতেই আছে নামের শেষে পুর,খালি,কান্দি,গঞ্জ কিংবা নগর যেমনঃ-মুরাদনগর তেমন আর কি।দেশের বাইরে পুর দেখলাম খালি সিঙ্গাপুর আর কুয়ালালামপুর। দেশের ভেতর আছে লাখখানেক পুর,ততোধিক খালি ,কান্দি আর গঞ্জ।

কক্সবাজার ও পার্বত্য জেলায় হলো গ্রামের নামের সাথে ছড়ার আধিক্য।যেমনঃ-রুমালিয়ার ছড়া,তারাবনিয়ার ছড়া কিংবা ছড়ি যেমনঃ-হিমছড়ি।আর চৌদ্দগ্রামে দেখি কেবল কড়া যেমন ঃ-নানকরা,আলকরা,বশকরা,ফাল্গুনকরা খালি মশকরা রাখা বাকি আছে।কিন্তু চৌদ্দগ্রাম থানার আগের গ্রামটির নামই বেশ সুন্দর,গ্রামটির নাম বসন্তপুর।

আবার চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড বাড়বকুন্ডের পরই আছে এক গ্রাম নাম তার হাতিলোটা।আমি বন্ধুদের মজা করে বলি নিশ্চয় এই গ্রামের আশেপাশে কোন মাদী হাতির ইজ্জত লুটা হইছিলো,তাই এ নাম।এর পরেই আছে পন্থিশীলা এর পরই টেরিয়াইল।আবার কোন এলাকার নাম শুনলে মনে হয় ব্যক্তির নাম,যেমনঃ-জামাল খান,আবু তোরাব ইত্যাদি।

আবার কুমিল্লা হোমনা এলাকার একটা গ্রামের নাম হলো মাথাভাঙ্গা,এবং তার অনতি দুরেই আরেক গ্রামের নাম ঘাড়মোরা।মুরাদনগরের এক গ্রামের নাম হলো হাড়পাকনা তার কাছের আরেকটির নাম হলো মোচাগারা।আবার নোয়াখালি লক্ষীপুরে আছে আধুনিক নামের চর আলেকজান্ডার, চর ফেলকন,চর বাটা।

তবে সুন্দর লাগছে কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের কাছে গ্রামটির নাম নিশ্চিন্ত পুর,যেনো সেনানিবাস আছে বলেই কাছে একেবারে এলাকাবাসী নিশ্চিন্ত।তেমনি চান্দিনা মাধাইয়ার পরের গ্রামটির নাম কুটুম্বপুর,নিশ্চয় তারা দারুন অতিথীপরায়ন।

বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৩

চলমান জীবনের টুকরো কাহিনী।

সেদিন বাসে করে গ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিলাম।সিটটা সামনের দিকে জানালার পাশে হওয়াতে বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করছিলাম।মাঘের শীতের এ সময়ে সকালের দিকে বাতাসটা দারুন উপভোগ্য,যেনো এসির সামনে বসেছি।গলায় একটা কাপড় পেঁচিয়ে বেশ যুত করে বসলাম।

বাসে গান বাজতেছে হৈমন্তী শুক্লার চোখেতে অনেক রঙ ভালো লাগে- - -তবুও ভালোবাসা ভালো লাগা এক নয়।এটা বেশ অদ্ভুত যে,নিয়মিত শোনা হয় না এমন অনেক গান বাসে শুনতে ভালোই লাগে।

এর মাঝেই হঠাত করে নজরে এলো,ড্রাইভারের পাশে গিয়ারের দন্ডের পিছনে একটা পানীয়ের কেইসের উপর ফোম বসিয়ে তাতে ৪-৫ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে বসে আছে।সে অনর্গল বকে যাচ্ছে চালকের সাথে।কৌতুহলী হয়ে উঠলাম,চালককে জিজ্ঞাস করলাম-তোমার মেয়ে?সে বললো-হুম।কোথায় নিয়ে যাচ্ছো,ঢাকায়?বললো-না,আমার সাথেই যাচ্ছে।

বাচ্চার মা কোথায়?সে কিছু বলে না,নিশ্চুপ।আবার বললাম-এতোটুকু মেয়ে নিয়ে তুমি তো ফিরতি ট্রিপে আবার আসবে।ব্যাপার কি ভাই?কোনো সমস্যা?সে বললো-ভাই ,এর মার সাথে আমার ছাড়াছাড়ির কথা চলছে।এর মামারা চায়,তাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিতে।কিন্তু আমি আমার মেয়েকে ছাড়া কিভাবে থাকবো?সে আমার দূচোখের মনি।

ভালো করে এবার তাকে লক্ষ্য করলাম।চেহারায় একটু ইন্দ্রিয়পরায়নতার ভাব আছে,আর দৃস্টি কিছুটা উগ্র।বললাম,তোমার তো ইনকাম খারাপ থাকার কথা না,তুমি কি অন্য কোন খারাপ অভ্যাস বা নারীঘটিত ব্যাপারে ঝামেলায় পড়েছ।সে বললো-সে যদিও একসময় জড়িত ছিলো,কিন্তু এখন সে এসব থেকে দুরে।সে বাচ্চার মাকে চায়,কিন্তু তারা আর আগ্রহী নয়।

আমি বললাম-তুমি নিশ্চয় ব্যাপারটাকে চূড়ান্ত অবস্থায় নিয়ে গিয়েছ?আসলে সবকিছু বরবাদ করার পরই মানুষের ভালো হবার ইচ্ছা জাগে।জীবন তো আর নাটক সিনেমা না যে,শেষ দিকে মিল হয়ে যাবে?

সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো-ভাই,বলেন তো আমি এখন কি করবো?মেয়েটাকে তারা আমার থেকে নিয়ে নিতে চায়।আর মেয়েটা আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে চায় না।আমিও তাকে ছাড়া বাঁচা চিন্তাও করি না।

আর আমি কি জবাব দেবো।আমি দেখলাম একটা ইন্দ্রীয় পরায়ন,লোভী হালকা চরিত্রের লোককে,যার চোখের দৃস্টিতে সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নীচ কাজগুলো ছাপিয়ে তার সন্তানের প্রতি অকৃত্রিম আর নির্লোভ ভালোবাসা ফুটে উঠেছে।

ভাগ্নে কথন।

হঠাত করেই খেয়াল করলাম গৃহশিক্ষক আমার যমজ ভাগ্নেদের ব্যাপারে অনেকদিন বিচার বা নালিশ করেনা। এটা অত্যান্ত অস্বাভাবিক ব্যাপার,অন্তত আমার কাছে।আমি এদের দুইভাইকে হাড়ে হাড়ে চিনি।এরা কেবল আমার আর তাদের ছোট মামাকে যমের মত ভয় খায়।

আড়াল থেকে লক্ষ্য করলাম,উলটো স্যার যেনো তাদের সামনে অপ্রস্তুত থাকে,আর দুভাই দারুন সাবলীল।ধরলাম স্যারকে কি ব্যাপার,ছাত্ররা কেমন?সে আমায় কি যেনো বলতে চায়,কিন্তু বলে উঠার সাহস পাচ্ছেনা।আমিই সাহস দিলাম,বলে ফেলুন কোন সংশয় নয়।আমি জানি আপনি বিপদে আছেন,আমাকে বলুন।কোন ভয় নেই।আমি দুই শয়তানকে চিনি। এরা কি করেছে আমাকে বলুন।

সে বলে ভাইয়া,এরা আমাকে একদিনও পড়া ঠিকমত দেয় না।আমি চাপ দেয়াতে আমাকে বলে,আমি যদি পড়া নিয়ে এমন করি,তাহলে তারা নাকি জোরে চিৎকার দিয়ে এদের বাবা-মার সামনে বলবে-আমি নাকি খালি পড়াতে বসে পাদ দিই।ভাইয়া আমি লজ্জায় ভয়ে তাদের কিছু বলতেই পারি না।

তাদের দুইজনের এখন ডিটেন্সন চলছে।মাইর একচোট দিছি।লাঠিম,ঘুড়ির নাটাই সব বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।ছাদে উঠার উপর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।দুলাভাই তাদের সাইকেল দুইটার স্পোক সব নস্ট করেছে।দুই আসামিকেই আমার বাসায় নির্বাসন দেয়া হয়েছে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যাবে।

বাঘ্রদুগ্ধের সন্ধানে।

আমার মরহুম তালুই সাহেব লোকটা একটু অদ্ভুত টাইপের ছিলেন।উনি যেবারই বেড়াতে আসতেন আমি মহাচিন্তিত হয়ে পড়তাম।কারনটা হলো,উনি একবার বেড়াতে এসে আমার ১০ ব্যান্ডের রেডিও পছন্দ করে বসলেন।এবং তা আমার আব্বাকে জানাতে ভুল করলেন না।আমার আব্বা যেহেতু তিনি আমার একমাত্র বোনের শ্বশুর ও বয়োজেস্ট লোক তাই আমাকে বললেন-দাও বাবা এটা ওনাকে,উনি বয়স্ক লোক,কয়দিনই আর বাঁচবেন।তুমি তোমার ভাইয়াকে বলে আরেকটা আনিয়ে নেবে।কস্ট হলেও দাবিটা মেনে নিলাম।

আরেকবার উনি এসে আমার ব্যায়াম করার যে স্প্লেন্ডারটা(তিন স্প্রিং ওলা চেস্টের ব্যায়েমের জন্য কিনেছিলাম) ছিলো সেটা খুজে নিয়ে নিলো,আমি ভেবেই পেলাম না,উনি এটা দিয়ে কি করবেন?সর্বোপরি উনি ছিলেন এজমার রোগী।কিন্তু সমস্ত ব্যাপারগুলোকে উনি ফেইল দিলেন ৯৮ সালে বেড়াতে এসে।উনি আমার আব্বাকে বললেন-বেয়াই আমাদের গ্রামের একলোক বোলেছে চিটাগাং এ নাকি কোন জায়গায় বাঘের দুধ পাওয়া যায়।আমার কবিরাজ বলেছে এটা গরুর দুধে মিশিয়ে খেলে এজমার উপশম হবে।
আমি মারাত্বক শংকিত হয়ে উঠলাম,কারন উনি যাই চাইবেন তা আমাকেই যোগাড়ে যেতে হয়।আর চাওয়ার ওতো একটা লিমিট আছে।আমার আব্বা আমাকে বললেন-তুমি এটা আন্দরকিল্লাহ বক্সীর হাট পুলিশ বিটের ভেতরের দিকে গেলে দেখবে অনেকগুলো পাঁশারির দোকান আছে সেখানে গেলেই পাবে।যাবতীয় কবিরাজি বনাজি জিনিস সেখানেই মেলে।বিশেষ করে করে পীতাম্বর সাহার দোকানে যেও।

আমার বন্ধু মগু সুমনরে সাথে নিলাম।সে আবার এসব উঠকো ঝামেলা বেশ পছন্দ করে।সে ব্যাপক উৎসাহ দেখিয়ে জানালো-দুর ব্যাটা,তুই একটা পাগল পীতম বাদশার (সে এটাকে এভাবেই বললো,আরো দাবি করলো আমার উচ্চারন ভুল)দোকানে নাই এমন জিনিস দুনিয়ায় নাই।আর তুই এমন কাচুমাচু হয়ে আছিস কেনো,আমরা কাস্টমার ,বাঘের দুধ থাকলে তারা দিবে ,না থাকলে বলে দিবে কোথায় পাওয়া যায়।তারপরও আমি আবার তাকে বললাম-দেখ ভাই,আমরা বাঘের দুধ খুজলে তারা আবার হাসাহাসি শুরু করবে নাতো?সে বললো চল আগে।আর আমি ভাবছিলাম-কিভাবে দোকানদারকে বলি যে আমরা বাঘের দুধ চাই।

দোকানের সাইনবোর্ডে ঠিকই লেখা পীতাম্বর সাহা এন্ড কোং।এবার দোকানের সামনে গিয়ে দেখলাম,পুরো দোকান অদ্ভুত অদ্ভুত সব গাছ-গাছালি ও অন্যান্য দ্রব্যে ঠাসা।আমার বন্ধুও চুপ মেরে গেলো।দোকানের কর্মচারীরা কয়েকবার জিজ্ঞেসই করে ফেললো আমরা কি চাই?আমরা কিছু না,কিছু না বলে আমতা আমতা করছি।শেষে আমি কোনমতে একজন কর্মচারীকে বললাম-ভাই,আমার এক আত্নীয় গ্রাম থেকেএসেছে।সে হাঁপানির জন্য একটা অদ্ভুত জিনিস চায়,বলে কি সেটা নাকি আপনাদের এখানে পাওয়া
যেতে পারে,কিন্তু ভাই হয়তো বয়স্ক লোক ভুলে কি শুনতে কি শুনেছে।

কর্মচারীটি বললো-উনি কি বাঘের দুধ চান?আমরা দুজন সমস্বরে হ্যা হ্যা করে উঠলাম।আমাদের যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।সে বললো,আরে ভাই এটা কোন ব্যাপার ।ঐ যে বইয়াম গুলো দেখছেন ওগুলা ভর্তি সব বাঘের দুধ।সুন্দরবনের বাঘ বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পর কিছু দুধ বাট থেকে মাটিতে পড়ে যায়।মৌয়াল আর বাওয়ালিরা সেগুলো সংগ্রহ করে আমাদের দিয়ে যায়।প্রতি পুরিন্দা ৭৫ টাকা।আমি খুশি মনে চার পুরিন্দা কিনলাম।আরে দাম কোন ফ্যাক্টর না,টাকায় যে বাঘের দুধ মেলে কথাটা তো দেখি মিছে না।

অতঃপর বাসায় এলাম।উনি পুরিয়ার ভেতর একটু কালচেটে সাদা রঙ এর এই জমাট বাধা দুধ দেখে তেমন সন্তুষ্ট হলেন না।জিনিসটা ছিলো ডালডার মত জমাট বাধা।এতো কস্ট করে আনলাম,উনি গরম গরুর দুধে তা মিশিয়ে খেলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন।সকালে উঠেই উনি ঘোষনা দিলেন,জিনিসটা কাজ করেনি কেমন যেনো বোঁটকা গন্ধ আর তার চেয়ে বড় কথা সেটাতে নাকি ভেজাল আছে।যেনো ভাবটা এমন উনি ছোট বেলা থেকে ডেইলি এক গ্লাস করে অরিজিনাল বাঘের দুধ খেতেন।তার চেয়ে অসহ্য উনার চোখের দৃস্টি,উনি এমন ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছেন যেনো আমিই অরিজিনাল বাঘের দুধ খেয়ে এসে উনাকে নকলটা দিয়েছি।

রাগে দূঃখে আমার মুখে প্রায় এসে গিয়েছিলো-এতোই যখন অরিজিনাল বাঘের দুধ খাওয়ার শখ তখন চিড়িয়া খানায় গিয়ে ডাইরেক্ট বাঘিনীর ওলানে মুখ লাগিয়ে খেলেই পারেন।

চলমান জীবনের টুকরো কাহিনী-২

বিটিভিতে দেখলাম,ভ্রাম্যমান আদালত এজতেমার সময় সেখানে যেসব জরি বুটি সালসা হাকিমি দাওয়াখানার দোকান দিয়েছে তাদের ধরলো।প্রচারের সময় তারা ছোট হ্যান্ডমাইকে বলছিলো,তাদের হর্স পাওয়ার বটিয়া খেলে নিচ তলায় ভূমিকম্প হয়ে যাবে।র‍্যাব সহ অনুস্টানের উপস্থাপক জিজ্ঞেস করতেছে-আপনি নিচতলায় ভূমিকম্প বলতে কি বুঝাচ্ছেন?সে বলে-মানে উত্তেজনা আর কি।

উপস্থাপক-উত্তেজনা আর কি মানে কি নিচ তলায় ভূমিকম্প?সে বলে-মানে স্নায়ুর তাড়না।আপনি কি আসলে সেক্সের ঔষধ বিক্রি করছেন?জ্বি জ্বি ঠিক।
আপনি এখানে এস্তেমাতে কেনো সেক্সের ঔষধ বিক্রি করতেছেন?এখানে হাজার হাজার মুসল্লি কি করতে আসে বলে আপনার মনে হয়?জ্বি স্যার ইবাদত করতে।
তাহলে আপনি সেক্সের ঔষধ কেনো নিয়ে আসলেন?এটা কি অন্যায়?জ্বি স্যার অন্যায়,আমার এ ঔষধ স্যার ক্ষতি নাই,বলবৃদ্ধিকারক,স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।

অতঃপর ভ্রাম্যমান আদালত কোনরূপ হর্স পাওয়ার বা বলবৃদ্ধিকারক ঔষধ ছাড়াই তাদের জরিমানাসহ কারাবাসে দন্ডিত করে।

মামা কাহিনী।

ঘটনাটা আমার মামাকে নিয়ে।স্বপন মামা আমার অত্যান্ত প্রিয় একজন মানুষ,শুধু মামাই নয় সে আমাদের ভাগ্নেদের বন্ধু।কারন উনি বয়সেও আমাদের থেকে অল্পকিছু বড়।জীবনে উনার যতটাকা আমরা নস্ট করছি,সে বলার মত না।একটুও বাড়িয়ে বলছি না,উনি আমাদের কখনো না বলেননি কোন কিছু কেনার ব্যাপারে।সেই মামা শেষপর্যন্ত প্রেমে পড়লো,উনাদেরই এলাকার আমার বর্তমান মামীর সাথে।আল্লাহর অসীম রহমত মামীও মামার মতই আমাদের বন্ধু।

ঘটনাটাই বলি,মামা এলাকায় যুবকদের নেতা,রাজনীতি করেন, বলতে কি এলাকার সকল ব্যাপারে উনি আর উনার দল এতোই অগ্রগামী যে এলাকার চেয়ারম্যান ,মেম্বার উনার শত্রু হয়ে গেলো স্বার্থের দ্বন্দে।এলাকার বিচার-আচার পর্যন্ত তারা নিয়ন্ত্রন করতো।ফলে চেয়ারম্যান ও মেম্বার এ ব্যাপারটায় বিশেষ ক্ষুদ্ধ।তার উপর রিলিফ আসলে মামার দল এতো বেশী হিসাব রাখতো যে,চেয়ারম্যান পদটার প্রতি চেয়ারম্যানের বিরক্তি এসে গেছে।উনি ঢাকায় উনার ব্যবসা প্রতিস্টানে বেশী সময় দেয়া শুরু করলো।

যেই মামা এতো নীতিবান,সমস্ত অসামাজিক ব্যাপার গুলো নিয়ন্ত্রনে সিদ্ধহস্ত তিনি প্রেমে পড়লেন।এক সন্ধ্যায় উনি মামীকে নিয়ে যখন একটু আবেগঘন মুহুর্তে ব্যস্ত,উনারা তখন রাগ-অনুরাগ পর্ব চালাচ্ছিলেন।এই অসতর্ক মুহুর্তে হঠাত কে যেনো টর্চের আলো তাদের গায়ে নিক্ষিপ্ত করলো।মামা ক্ষুদ্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করলো-কে রে? মেম্বার বললো-জ্বি আমি।

আমার মামা যা বোঝার বুঝে নিলেন।সর্বনাশের চুড়ান্ত হয়েছে।এখন শুধু আল্লাহ ভরসা।মেম্বার এখন ব্যাপারটা নিয়ে কি ঘটাবেন,তা আমার মামা সেকেন্ডের চার ভাগের এক ভাগ সময়ে বুঝে গেলেন।বাকী ঘটনাটা আমি মামার জবানিতে বলি,-
বুঝলি ভাইগ্না আমার তো যা সর্বনাশ হইছে তা হইছে,আমি তখন চিন্তা করতেছি তোর মামীর ভাইদের ব্যাপারে আর চেয়ারম্যানের ব্যাপারে।তোর মামীর সমুহ বিপদ।সাথে সাথে আমার মাথায় রাগ আর একটা কুবুদ্ধি একিই সাথে চাঁপলো,যেটা সচরাচর ঘটেনা।আল্লাহর রহমত আর কি।যেখানে দুইজন দাঁড়িয়েছিলাম,তার পাশেই ছিলো একজনের রান্নাঘর।সেখান থেকে দাঁও একটা নিয়ে হুঙ্কার দিয়ে মেম্বারকে দৌড়ানো শুরু করলাম।চেয়ারম্যানও ঐদিন গ্রামে।মেম্বার প্রান বাঁচাতে সেদিকে দৌড়াতে থাকলো।চেয়ারম্যান অফিসে আগে মেম্বারই দৌড়িয়ে ঢুকলো,তার পিছে দাঁ নিয়ে আমি।দুজনই মারাত্বক হাফাচ্ছি।অফিসে সেসময় কি একটা গ্রাম্য সালিস চলছিলো।মেম্বার কিছু বলার আগেই আমি বললাম -শুনেন আপনারা এই মেম্বার অনেকদিন আমার চরিত্র হানিকর কথা বলে বেড়াচ্ছিলো,আজ হাতেনাতে তাকে পাইছি।আমি তাকে খুন করে জেলে যাবো।দরকার নাই এই জীবনের।

চেয়ারম্যান মেম্বারকে জিজ্ঞেস করলো,কি ব্যাপার?অত্যান্ত আশ্চর্যের ব্যাপার যে আমার মামাকেও সে অবাক করে দিয়ে বললো-স্বপন ভাই,আমি ভুল করছি।আমারে ক্ষমা করে দিয়েন।আসলে এমন নাটকীয় সমাপ্তি মামা নিজেও আশা করেনি।

নটে শাঁকটি মুড়োলো,আমার গল্প ফুরোলো।

মামা কাহিনী-২

আমি যে কিঞ্চিৎ বই পড়তে ভালোবাসি এবং আরামপ্রিয় এটা সম্ভবত আমার বড় মামার থেকে আমি পেয়েছি,না ভুল বললাম আমার নানাও বেজায় পড়ুয়া লোক ছিলেন।ঐ যে কথা আছে না নরানং মাতুলক্রম,তেমনি আর কি।আমার মামা এমনিতে খাটি কুমিল্লাইয়া ভাষায়ই কথা বলেন ,কিন্তু কেউ যখন কোন প্রশ্ন উনার কাছে জানতে আসেন,তখনি উনার মাঝে একটা ব্যাপক জ্ঞানী ভাব এসে যায়(এটা আমারও আছে,কি করবো রক্তের তাছির)উনি হঠাত করে শুদ্ধ ভাষার সাথে ইংরেজীর একটা প্রবল মিক্স দেন।

উদাহরন স্বরুপ কেউ উনাকে প্রশ্ন করলেই উনি যথাবিহিত ভাব-গাম্ভীর্য সহকারে বলতো- না, আসল সেরকম না,প্লাস ঘটনাকে অন্যভাবে দেখলে,মানে ইন দ্য মিন টাইম এমনি আরো অনেক জিনিস আসতো।আমি খুবই বিরক্ত হতাম,কিন্তু মামা আমাকে আসলে খুবই ভালোবাসতো।মাঝে মাঝে উনি কিছু কথা বলতো,সেটা ঠিক গ্রামের মানুষের কাছ থেকে আমি কখনো শুনিনি।উনি প্রায় বিরক্ত বোধ করলে বলতো,এই তোঁরা এখন যা,আমাকে একা থাকতে দে। তখন দু-একজন ঠাঠ্যা করে বলতো,আয় আয় উনি এখন একা থাকবেন।

একদিনের কথা মনে আছে নানার বাড়ির পাশে একটা পুরাতন ব্রীজ আছে,সেটার রেলিং এর একপাশ সম্পুর্ন ধসে গেছে,শুধু মাঝের লোহায় এক খন্ড কংক্রিটের টুকরো কিভাবে যেনো ঝুলে আছে।আমার মামার সঙ্গী একজন বললো-বৈরাম খাঁ ভাই(আমার মামার নাম)দেখছেন পুরা রেলিং ধইস্যা গেছে কিন্তু এই হালার টুকরাডা কেমনে জানি একা একা ঝুইল্লা আছে।হেই বেডাই ও আমনের লাহান একা থাকতে চায়।আমি সাথে থাকায় মামা প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলেন,কারন আমি হাসি দিয়ে ফেলছিলাম।

উনি যে খুব আলসে ব্যাপারটা আসলে তা না।উনার জমি-জিরাত থেকে ভালোই উনি পেতেন।কিন্তু কোন উচ্চাশা ছিলো না।গোয়ালঘর এ সবসময় আমি গরু-ছাগল দেখেছি,কিন্তু কোন বানিজ্যিক উদ্দেশ্য ছিলো না।পশু-পাখি গুলো অনেকদিন ধরে দেখতাম একিই থাকতো,পরিবারের সদস্যের মতো।বছরের পর বছর একিই গুলাকে দেখতাম।বাজারে দোকান যেটা ছিলো সেটাও দায়সারা গোছে চলতো।খুব বেশি মালামাল তাতে থাকতো না।উনি মন চাইলে বসতেন নয়লে নয়।

কিন্তু যেহেতু রাজার ভাণ্ডারও অসীম নয়, আর উনিও নানার কাছ থেকে যা পেয়েছেন তাতে উনার মোটামুটি চলে যেতো।কিন্তু উনি কখনো দুরবস্থায় পড়েননি কারন উনার দুই ছেলেই প্রবাসী।আর তারাই পরিবারকে একটা স্বচ্ছল অবস্থায় নিয়ে আসে।

আর মেজোমামা,উনার নাম সাঁদত খাঁ।উনি চিরকালই বেশ সৌখিন ছিলেন।বেশ কেতাদুরস্তভাবে চলতেন।উনার সবচেয়ে আকর্ষনীয় জিনিস ছিলো উনার শিখদের মত পাকানো গোঁফ।আর উনার রাঁগী চোখগুলো। অনেকটা পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের মত ছিলো উনার লুকিং।আমার মামাতো ভাইয়েরা উনাকে যমের মতো ভয় খেতো।কিন্তু উনি আমাদের অত্যান্ত স্নেহ করতেন।আমার মনে আছে আমরা যদি বেড়াতে যেতাম উনি নৌকা ভর্তি বাজার নিয়ে আসতেন।আপ্যায়ন করতে উনি খুবই ভালোবাসতেন।আমরা বাধ্যতামুলকভাবে তার এখানে থাকতে এবং খেতে হতো।উনি আমাদের কোথাও এমনকি বড় মামার ঘরে থাকাও মেনে নিতেন না।

আমার মামাতো ভাইয়েরা বলতো,জানেন তুহিন ভাই,চোর উঠছিলো আমাদের নারকেল গাছে।আব্বা টের পেয়ে গাছের তলায় গিয়ে রেগে চুরমার হয়ে চোরের দিকে এক ঠায় তাকিয়ে ছিলেন চোখ পাঁকিয়ে আর মোঁচে তা দিচ্ছিলেন ক্ষনে ক্ষনে।চোর যখন চোখাচুখি হলো তখন সে শুধু পাকানো চোখ দেখেই তিনতলা সমান উচু গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙ্গে ফেলেছে।

এই আমার বড় দুই মামা।আরো কিছু যদি মনে আসে লিখে রাখবো।না হলে সব একদিন ভুলে যাবো।

আমাদের সেই শহরে।

আমরা যখন ছোট ছিলাম,মানে ৮৩-৮৪ সালের কথা বলতেছি।তখনও পাঙ্কু টাইপ লোকজন ছিলো এখনের মত।তারা অন্যদের থেকে আলাদা থাকতো,একেবারে ফিটফাট আর কি।কাপড়-চোপরের স্টাইলটা সাধারনত দেখা যেতো এক এক বছর খুব চলে তারপর ক্ষ্যামা দিতো।যেমনঃ-সত্তরের দশকে বেলবটম প্যান্টের সাথে বড় কলার শার্টের সাথে তিন ডিগ্রী বাড়া একটা মোঁচ না হলে মর্দামি জিনিসটাই বোঝানো যেতো না।তাই দেখবেন সে আমলের সিনেমাগুলিতেও সেটা প্রতিফলিত হতো।

আচ্ছা মুল কথায় আসি।আমার বদ অভ্যাস আছে এক কথার থেকে আরেক কথায় যাওয়ার।৮৩-৮৪ এর দিকে বেলবটম বাদ হয়ে এখন যেটা স্কিনফিট বলে সেটা ফিরে আসে।সাথে করে নিয়ে আসে চেইন সিসেম বুটজুতা।সেবার ঈদে সেটাই ফ্যাশন।ঈদের দিন দেখা যেতো ঈদের নামাজ না পড়েই ধৈর্যহীন কিছু পোলাপাইন রাস্তাঘাটে আন্দাজি ঘুরে বেড়াচ্ছে।আপসোসের ব্যাপার আমার এক বন্ধুও সেই দলে যোগ দিয়ে ঘুরে বেড়াতো।তারপর নামাজ শেষ হলে দেখা যেতো আসল খেলা।শত শত পাঙ্কু চেইন ওলা বুটজুতা আর স্কিনফিট প্যান্ট পড়ে টিংটিঙ্গা পাছা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।সে এক দৃশ্য।এই শো ডাউন শেষে ঈদের মাইনের টাকা তুলে সবাই জামাতের সাথে সিনেমা হলের দিকে দৌড় দিবে।

আর একটা কথা ,সে আমলে মানুষ কিন্তু এমন দামড়া শরীরের অধিকারী হতো না।তখনকার বেশীর ভাগ ফটো দেখলে সত্যতা টের পাবেন।আমাদের বর্তমানের লাইফস্টাইল আর এডিবল ওয়েল আমাদের স্থুলতা বাড়িয়ে দিয়েছে।তখন সবাই এতোই টিংটিঙ্গা হতোযে,পেছনের প্যান্টের পকেটে এক্সট্রা কাগজ মানিব্যাগ রেখে স্কিনফিটে একটা ভাব আনতো।আমাদের রাব্বানি ভাই আর তার বন্ধু বাবুল এরা অফ হোয়াইটের স্কিনফিট জিন্স পড়তো আর সাথে সাদা লেদার সু সাথে হাফ হাতা কালারফুল শার্ট ইন করা।চিন্তা করেন,তাদের কেমন মারাত্বক লাগতো।দুজনেই পিছনের পকেটে গ্যাটিস ভরে পাছাটা টিংটিং করে নাড়তে নাড়তে যখন বনানি কমপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যেতো,তখনি আমরা বলতাম-টেডি রাব্বানি আর ডিফিলিং বাবুইল্যা যায় রে।খুবই ক্ষেপে যেতো।

এই টেডি রাব্বানি ভাইয়ের ঘরেই এলাকার একমাত্র ভিসিয়ার টা ছিলো।যার ফল হতো,টেডি রাব্বানি বললেই কয়েকদিন হিন্দি সিনেমা দেখা বন্ধ হয়ে যেতো।বহুত কিড়া-কসম কেটে সাক্ষী মেনে যে আর কোনদিন এসব বলবো না,তারপর আবার অনুমতি মেলতো।আমরা দল বেধে হিন্দি মুভি দেখতে যেতাম।আমি,রাজেস,আজাদ ,রিপন সবাই হিন্দি একশন মুভির চরম ভক্ত ছিলাম।রজনি কান্তের ছবি আর মারের আমরা মারাত্বক ফ্যান ছিলাম।আবার দূঃখের ছবি দেখে আমাদের লাইভ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতো।মর্দ ছবিতে অমিতাভ মার কোল থেকে পড়ে পাহাড় থেকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময় আমরা সজোরে কেদে ফেলি বলে রাব্বানি ভাই আমাদের বের করে দেয়।আমরা কাদতে কাদতেই একে অপরের দোষ দিতে থাকলাম।

আরেকটা ব্যাপার ছিলো,মুভি দেখতে বসলেই শান্তি মিলতো না।রাব্বানি ভাই প্রতি মুহুর্তে হিন্দির বঙ্গানুবাদ করে আমাদের জীবন ফানাফিল্লাহ বাকিবিল্লাহ বানিয়ে দিতো।এখনের সাব টাইটেল ব্যাপারটা উনি নিষ্ঠার সাথে পালন করতেন।ব্যাপারটা এভাবে ঘটতো,সিনেমা চলছে আর উনি বলতেন,উস নতিজা মানে বুঝছোস এই সিদ্ধান্ত আর কি।মাওয়ালি আওয়ারা মানে তোঁরা আর কি।পাল্কো কি ছাও মে মানে চোখের পলকের ছায়ায়।কিছুই আমরা বলতে পারতাম না,কারন মতের মিল না হলে উনি সাথে সাথে উঠে মেইন সুচ বন্ধ করে বলতো-এখনি বাইর হ।

আর আমরা যার অমতের জন্য সদলবলে বহিষ্কৃত হলাম তাকে পুনরায় আড্ডা থেকে বহিষ্কৃত করতাম।একবার আন্ধা-কানুন সিনেমায় রেপের দৃশ্য এসে পড়ায় উনি যখন গিয়ে ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে দিচ্ছিলেন তখনি আমাদের রিপন বলে উঠে-রাব্বানি ভাই আর একটু দেখি না।সাথে সাথে আমাদের ফুল টিম সাস্পেন্ড,একেবারে স্টান্ড রিলিজ।রিপনকে মেইন আসামি হিসেবে কানের লতি ধরে বের করার সময় উনি আরেক হাতে সশব্দে মেইন সুচ বন্ধ করলো।

আর আমরা সিনেমার এই শেষ ক্লাইমেক্সে এসে বহিষ্কৃত হওয়ায় রিপনকে লাঞ্চনা -গঞ্জনায় জর্জরিত করে ফেলি।এমনি ছিলো আমাদের সেই শহর,সেই সময়।

মুসলমানী সমাচার।

আমাদের ছোটবেলায় দেখা যেতো জানুয়ারী ফেব্রুয়ারি মাসেই মুসলমানী বা খত্নার ধুম পড়ে যেতো।আমি জানিনা কারন কি ছিলো।শীতকালে না হয়ে গরমকালে হলেই ব্যাপারটা ভালো হতো।কারন ভুক্তভোগী মাত্রই জানে,শীতে কাঁটাছেড়া দেরীতে শুকায়।তো ব্যাপারটা হলো, দেখা যেতো সেই সময়ে বিহারী হাজেমের দল এলাকাতে এসে যেতো।বগলের নীচে সার্জিক্যাল ইকুইয়েপমেন্ট নিয়ে ছেলেপুলেদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অভিভাবকদের খোঁজ করতো।

আমার ও বন্ধু রাজেশের একিই দিন মুসলমানী হয়।রাজেশের মামা ডাক্তার ,উনিই চট্টগ্রাম মেডিকেল এ এক শুক্রবার সকালে আমাদের খত্নাকরন প্রক্রিয়া শেষ করেন।সে বছর আমরা ৫ম থেকে ৬স্ট শ্রেনীতে উঠবো।আব্বা আমাকে একটা ৫০০ টাকার নোট দিলেন।কান্নাজড়িত কন্ঠে বেদনার্ত পরিবেশের মাঝে ভাবগাম্ভীর্য অবস্থায় টাকাটা নিলাম।এটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার,জ্ঞান হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত একমাত্র টাকা দেখলে আমি রাগ করিনা।টেক্সীতে আসার সময় ক্রন্দনরত অবস্থায় ভাবতে ভাবতে এলাম ভালো হবার পর এ টাকা দিয়ে কি কি করবো।

৪-৫ দিন পর আমার বন্ধুরা হঠাত করে ঠিক করলো,নায়ক রুবেলের কি জানি একটা মারাত্বক ক্যারাডির মুভি আসছে,আরে মনে আসছে।মুভিটির নাম বজ্রমুস্টি,কারন আমাদের সুমন অলরেডি এটা দেখে আসছে যে কিভাবে রুবেল শেষ পর্যন্ত ভিলেনের অন্ডকোষ এ লেম্বুচিপা দিয়ে তাকে মেরে ফেলে।এ কাজটা করার সময় নাকি ইনসেটে একটা কমলা লেবু থাকে,সেখানে দেখায় কিভাবে লেবুটাকে চিপে বরবাদ করে দেয়া হয়।সুমনের প্রানঘাতি বিবরণ শুনে আমরা তা দেখার জন্য বিহবল হয়ে পড়ি।সে সময় রুবেলের ছবি মানেই হিট।কিন্তু গোল বাধালাম আমি।আমি একেবারে চিতকুর মেরে কেঁদে উঠি।তাদের বলি-তোরা আমাকে ছাড়া যেতে পারবি না।আমি ভালো হলে এক সপ্তাহ পর যাবো।কেউ একমত হলো না।সবার কথা হলো,তখন আরেকবার যাওয়া যাবে।আর তুই এখন যে অবস্থায় আছোত,তোর আরো ২ সপ্তাহ লাগবে।

কি আর করা,শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম আমি যাবোই যাবো।তারা বন্ধুর মরনপন ইচছা দেখে রাজি হলো।কিন্তু তারা বললো-তুই লুঙগি পড়ে কিভাবে যাবি?আমি বললাম,আমি যেভাবেই যাই তোদের তো সমস্যা নাই।তোরা আমাকে ঘিরে থাকবি,তাহলেই আমি ব্যথা পাবোনা।আমি লুঙ্গি পড়ে ঐজায়গাতে লুঙগীটা ধরে উপুর করে রাখবো।তোরা খালি খেয়াল রাখবি আমার গায়ে যেনো কোন মানুষ এসে না পড়ে।

সিনেমা হলে গেলাম। দৃশ্যটা শুধু কল্পনা করেন,আমি মাঝে লুঙ্গি আলগি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর আমাকে ঘিরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের মতো বন্ধুরা। এর মাঝেও একটা ব্যাপার আছে আমাদের বাইট্টা মামুন তখন এতোই ছোট ছিলো যে,আমাদের মায়ন বুদ্ধি দিলো মামুন তুই আমার কোলে লাফ দিয়ে উঠে ঘুমিয়ে থাক।হলে ঢূকলে তোকে নামিয়ে দিবো।তাহলে আমাদের একটা টিকেট কম কিনতে হবে।যথারীতি তাই হলো,দারোয়ান শুধু একবার বললো-এতোবড় বুইড়া পোলা কোলে নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো? সিনেমা দেখলাম,কমলা চিপাও দেখলাম।এবার শো ভাংলো,বের হবার পালা।

আমি আবার লুঙগি হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি,আমাকে ঘিরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট।তখনই গোল বাধলো।অতিরিক্ত জনতার চাপে আমার বাহিনী সইতে না পেরে আমারই গায়ে এসে চাপাচাপি করতে লাগলো।আমি উনার নিরাপত্তায় শংকিত হয়ে চিৎকার শুরু করি-ভাই আমারে বাঁচান,আমার মুসলমানী হইছে।আমার সঙ্গীরা চিৎকার করছে-ভাই আপনারা এভাবে চাইপেন না,ওর মুসলমানি হইছে।সবার কথা তোদের যদি মুসলমানীই হয়,সিনেমায় আসলি কেনো ফাজিলের দল। এখন মর।কিভাবে বেচে ফিরলাম সে আরেক ইতিহাস।

চলমান জীবনের টুকরো কাহিনী-৩

এলাকার ছোট্ট মুদীর দোকান।প্রায় সবই পাওয়া যায়।বাড়তি হিসাবে ছোটদের লাঠিম,ঘুড়ি আর নাটাই ও পাওয়া যায়।সেখানের এক মুহুর্তের একটা বিকিকিনির গল্প এটা।

কতই বা বয়স হবে ছেলেটির,এই ফোর বা ফাইভে হয়তো পড়ে।সে বিক্রেতাকে বললো-একটা ঘুড়ি দেন।বিক্রেতা মোসলেম সেটা দিলেন।ছেলেটা ভালো করে কিউসি করে জানালো,ঘুড়ির কাইম(মাঝের কাঠি) মোটা মোটা লাগে।ঠিকমতো উড়বে তো?মোসলেম জানালো-আংকেল এটা তুমি কি বললা?ঠিকমতো উড়াতে জানলে দুইটা মাইয়া তোমার প্রেমে পড়বে।

ছেলেটির একিই সাথে ধৈর্যচ্যুতি ও উৎকট মশকারা পছন্দ হলো না।সে বললো-দুরু কুত্তার বাচ্চা।মোসলেম তার অসীম ধৈর্য নিয়ে একটা মিচকে হাসি দিলো।
মোসলেম একজন জাত প্রেমিক।শুধু দোকানদারীই তার একমাত্র লক্ষ্য নয়।সে আমাদের নেত্রীদ্বয় থেকেও বেশী আশাবাদী।তার অসংখ্য প্রেমিকাদের সে ভিন্ন ভিন্ন গ্রহে নিয়ে গিয়ে বাসা বাঁধার স্বপ্ন দেখায়।কিভাবে যেনো প্রত্যেককে সে আলাদা আলাদা টাইমে ম্যানেজ করে।এক্ষেত্রে পরিকল্পনামন্ত্রীও তার কাছে ফেল মারবে।

তার হৃদয়ের ব্যাপ্তি নিয়ে কোন ধারনা করা কারো পক্ষে সম্ভব না।আমি আগে বিজ্ঞানীদের সেই কথাটা বিশ্বাস করতাম না।ঐ যে বিজ্ঞানীরা বলেন-আমাদের এই সৌর জগত ছাড়াও মহাবিশ্বে অসংখ্য সৌর জগত আছে।কিন্তু মোসলেমকে দেখার পর এখন আমি উপলদ্ধি করেছি,আছে অসংখ্য সৌর জগতের অস্থিত্ব আছে এই মহাবিশ্বে।

খুচরো আড্ডা।

আমাদের বন্ধু শাহীন ও সুমন দুজনেরই বাড়ি মীরসরাই হওয়ার পরও তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র মিল-মহব্বত নেই।এরা একজন আরেকজনকে নাম বিকৃত করে ডাকে।যেমনঃ- সুমনের বাড়ি করের হাট মীরসরাইয়ের পুবদিকে,তাই শাহীন বলে বেড়ায় -আমাদের পুবদিকে পাহাড় সেখানে কোন ভদ্রলোক থাকে না।একমাত্র ওবায়েদ বলী বলে এক লোক সেদিকে থাকতো সেই যা কিছু পরিচিত।তাও আবার খালী বলী খেলতো।তাই সুমনকে সে বলতো,হুব কুইল্লা মাগির হুত(পুবদিকের _ _ _ পুত)।

আর শাহীন কালো হওয়াতে সুমন বলতো,ওদের দেশে কাজ করার লোকগুলো বা মুনীষ গুলো অনেকটা এই শাহীনের মতোই দেখতে।কালো বলিস্ট এই কুলীদের তারা নাকি কাদিরা বলে(এদের কোন আলাদা নামে ডাকতে মুখ খরচ করতে নাকি সময় বাঁচে,তাই কাদিরা নাম,এটা ডাকাও সহজ।

তাই আড্ডায় আসলেই শাহীন বলে,হুব কুইল্লা মাগির হুত কোনাই?(সে কোথায়)

আর সুমন আসলে বলে,কাদিরা এবো আইয়ে নো?(কাদিরা এখনো আসেনি)

আর সুমনের নামের সাথে চৌধুরী শাহীন কোনমতে মানতে নারাজ,তার কথা পুবদিকে কেমনে চৌধুরী নাম থাকে?এগুলা তো শুধু আমাদের নিজামপুর এলাকায় আছে।আমরা মোঘলদের আমলের লোক।শাহ সুজা আমাদের এখানে দিয়ে বার্মা গেছে।নিজামপুর পরগনা ঐতিহাসিক জায়গা।আমাদের এদিকে আছে পরাগল খাঁ দিঘী,ছুটি খাঁ দিঘী,ছদর মা দিঘী।এগুলো সব ঐতিহাসিক এলাকা।পাহাড়ি গুলা এগুলার কি মুল্য
বুঝবে?ওবায়েদ বলীর দেশের লোক বলী খেলা ছাড়া আর কি বাল বুঝবে?

তো সেইদিন শাহীনের খালি ঘরে আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম।আম,কাঠাল,জাম,লিচু কেনা নিয়ে কথা হচ্ছিলো।শাহীন একটু গাল-গপ্প বেশীই মারে,সে বলছে আরে আমি তোরার মতো ২কেজি ৫কেজি আম কিনিনা।আমি কিনলে এক পেটী আম কিনি।কে বার বার বাজারে যায়।

সাথে সাথে সুমন বসা থেকে লাফ দিয়ে উঠে শাহীনের রান্নাঘরের জানালা দিয়ে নিচের দিকে ভালো করে কি জানি দেখলো।আবার সেখান থেকে ফিরে সামনের বারান্দার গ্রিলের নিচে সানসেট দেখে এসে বললো-এরে চু-----র পুত।গালের পর গাল যে হিডোর,ফেডি ফেডি আম বলে খাই হালাছ,কই আই তো তোর রান্দাঘর আর বারান্দার সামনের নিচে সানসেটে অউজ্ঞা আমের ছোলকা আর বড়াও হড়ি থাইকতে দেইকলাম না।হেতে আর বালের হুরুট(ফ্রুট) খায়।

ভয়ানক মারপিট হয়েছিলো।থামাতে বেশ পরিশ্রম হয়েছে।

একটি নিস্পাপ ভুতের গল্প।

আমরা যখন টু বা থ্রি তে পড়ি,আমাদেরও ভুতের গল্প দারুন প্রিয় ছিলো।সন্ধ্যের পর মাঠের এককোনে ধুনি জ্বালিয়ে ঘাপটি মেরে বসে শুরু
হতো ভুতের গল্প।আমাদের ভুতের গল্পগুলো স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বয়স উপযোগী ছিলো(পরে আমরা বড় হয়ে দেখলাম,হলিউডের অনেক হরর মুভিতে যৌনদৃশ্য ছিলো)।আমাদের প্রায় গল্পেই থাকতো,কার ছাদে রাতে কি শোনা যায় বা কে ভরদুপুরে ছাদে উঠে কি দেখেছে,এসব।

কিন্তু আমাদের এই নির্ঝঞ্জাট নিস্পাপ ভুতের গল্পে যৌনতা নিয়ে এলো আমাদের বন্ধু কখগ(ছদ্মনাম,আসল নাম দিলে সমস্যা আছে)।তার প্রায় ভুতের গল্পেই দেখা যেত,পরী এসে কিভাবে সুন্দর ছেলে তুলে নিয়ে পড়ে ফেরত দেয়।তার আলিফ লায়লা বয়ান।তারপর সে একদিন বললো,তার বাড়ির পাশে পাহাড় থেকে কিভাবে এক ভুত এসে তাদের গ্রামের এক মহিলাকে তুলে নিয়ে যায়।পরে ফেরত দেয়।কিন্তু পরে এই মহিলার বাচ্চা হলে দেখা গেলো সেগুলোর রঙ নীল।আমরা যখন অবিশ্বাস করলাম,কখগ তার কয়েকজন আত্নীয়ের নাম করে বললো,ওরা আমাদের এখানে বেড়াতে এলে জিজ্ঞেস করিস।

তার প্রায় গল্পই ছিলো তুলে নিয়ে যাওয়া।ভুত তুলে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর একটি গল্পই সে বলেছে,কিন্তু সেটাও দেখা গেলো তুলে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত।সেটা হলো-কবে নাকি অঞ্জু ঘোষ রাঙ্গামাটিতে শুটিং এ গিয়েছিলো,কিন্তু শান্তিবাহিনী তাকে তুলে নিয়ে যায়।অবশ্য পড়ে নাকি ফেরতও দেয়।কখগ বলেছিলো-বুঝস তো পড়ে ফেরত দেয়া মানে কি?আমরা বুঝেও না বুঝার ভান করে বলতাম-ভাই,বুঝি নাই,একটু বুঝিয়ে বল।

তো হলো কি,তার অনেকদিন পর যখন কখগ বড় হলো,একরাতে সে শরীরের জ্বালায় টিঁকতে না পেরে কদমতলী রেললাইনের কাছে যায়।কিন্তু অবুঝ পুলিশ তাকে সেখান থেকে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তুলে নিয়ে যায়।

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...