বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৩

আমাদের সেই শহরে।

আমরা যখন ছোট ছিলাম,মানে ৮৩-৮৪ সালের কথা বলতেছি।তখনও পাঙ্কু টাইপ লোকজন ছিলো এখনের মত।তারা অন্যদের থেকে আলাদা থাকতো,একেবারে ফিটফাট আর কি।কাপড়-চোপরের স্টাইলটা সাধারনত দেখা যেতো এক এক বছর খুব চলে তারপর ক্ষ্যামা দিতো।যেমনঃ-সত্তরের দশকে বেলবটম প্যান্টের সাথে বড় কলার শার্টের সাথে তিন ডিগ্রী বাড়া একটা মোঁচ না হলে মর্দামি জিনিসটাই বোঝানো যেতো না।তাই দেখবেন সে আমলের সিনেমাগুলিতেও সেটা প্রতিফলিত হতো।

আচ্ছা মুল কথায় আসি।আমার বদ অভ্যাস আছে এক কথার থেকে আরেক কথায় যাওয়ার।৮৩-৮৪ এর দিকে বেলবটম বাদ হয়ে এখন যেটা স্কিনফিট বলে সেটা ফিরে আসে।সাথে করে নিয়ে আসে চেইন সিসেম বুটজুতা।সেবার ঈদে সেটাই ফ্যাশন।ঈদের দিন দেখা যেতো ঈদের নামাজ না পড়েই ধৈর্যহীন কিছু পোলাপাইন রাস্তাঘাটে আন্দাজি ঘুরে বেড়াচ্ছে।আপসোসের ব্যাপার আমার এক বন্ধুও সেই দলে যোগ দিয়ে ঘুরে বেড়াতো।তারপর নামাজ শেষ হলে দেখা যেতো আসল খেলা।শত শত পাঙ্কু চেইন ওলা বুটজুতা আর স্কিনফিট প্যান্ট পড়ে টিংটিঙ্গা পাছা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।সে এক দৃশ্য।এই শো ডাউন শেষে ঈদের মাইনের টাকা তুলে সবাই জামাতের সাথে সিনেমা হলের দিকে দৌড় দিবে।

আর একটা কথা ,সে আমলে মানুষ কিন্তু এমন দামড়া শরীরের অধিকারী হতো না।তখনকার বেশীর ভাগ ফটো দেখলে সত্যতা টের পাবেন।আমাদের বর্তমানের লাইফস্টাইল আর এডিবল ওয়েল আমাদের স্থুলতা বাড়িয়ে দিয়েছে।তখন সবাই এতোই টিংটিঙ্গা হতোযে,পেছনের প্যান্টের পকেটে এক্সট্রা কাগজ মানিব্যাগ রেখে স্কিনফিটে একটা ভাব আনতো।আমাদের রাব্বানি ভাই আর তার বন্ধু বাবুল এরা অফ হোয়াইটের স্কিনফিট জিন্স পড়তো আর সাথে সাদা লেদার সু সাথে হাফ হাতা কালারফুল শার্ট ইন করা।চিন্তা করেন,তাদের কেমন মারাত্বক লাগতো।দুজনেই পিছনের পকেটে গ্যাটিস ভরে পাছাটা টিংটিং করে নাড়তে নাড়তে যখন বনানি কমপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যেতো,তখনি আমরা বলতাম-টেডি রাব্বানি আর ডিফিলিং বাবুইল্যা যায় রে।খুবই ক্ষেপে যেতো।

এই টেডি রাব্বানি ভাইয়ের ঘরেই এলাকার একমাত্র ভিসিয়ার টা ছিলো।যার ফল হতো,টেডি রাব্বানি বললেই কয়েকদিন হিন্দি সিনেমা দেখা বন্ধ হয়ে যেতো।বহুত কিড়া-কসম কেটে সাক্ষী মেনে যে আর কোনদিন এসব বলবো না,তারপর আবার অনুমতি মেলতো।আমরা দল বেধে হিন্দি মুভি দেখতে যেতাম।আমি,রাজেস,আজাদ ,রিপন সবাই হিন্দি একশন মুভির চরম ভক্ত ছিলাম।রজনি কান্তের ছবি আর মারের আমরা মারাত্বক ফ্যান ছিলাম।আবার দূঃখের ছবি দেখে আমাদের লাইভ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতো।মর্দ ছবিতে অমিতাভ মার কোল থেকে পড়ে পাহাড় থেকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময় আমরা সজোরে কেদে ফেলি বলে রাব্বানি ভাই আমাদের বের করে দেয়।আমরা কাদতে কাদতেই একে অপরের দোষ দিতে থাকলাম।

আরেকটা ব্যাপার ছিলো,মুভি দেখতে বসলেই শান্তি মিলতো না।রাব্বানি ভাই প্রতি মুহুর্তে হিন্দির বঙ্গানুবাদ করে আমাদের জীবন ফানাফিল্লাহ বাকিবিল্লাহ বানিয়ে দিতো।এখনের সাব টাইটেল ব্যাপারটা উনি নিষ্ঠার সাথে পালন করতেন।ব্যাপারটা এভাবে ঘটতো,সিনেমা চলছে আর উনি বলতেন,উস নতিজা মানে বুঝছোস এই সিদ্ধান্ত আর কি।মাওয়ালি আওয়ারা মানে তোঁরা আর কি।পাল্কো কি ছাও মে মানে চোখের পলকের ছায়ায়।কিছুই আমরা বলতে পারতাম না,কারন মতের মিল না হলে উনি সাথে সাথে উঠে মেইন সুচ বন্ধ করে বলতো-এখনি বাইর হ।

আর আমরা যার অমতের জন্য সদলবলে বহিষ্কৃত হলাম তাকে পুনরায় আড্ডা থেকে বহিষ্কৃত করতাম।একবার আন্ধা-কানুন সিনেমায় রেপের দৃশ্য এসে পড়ায় উনি যখন গিয়ে ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে দিচ্ছিলেন তখনি আমাদের রিপন বলে উঠে-রাব্বানি ভাই আর একটু দেখি না।সাথে সাথে আমাদের ফুল টিম সাস্পেন্ড,একেবারে স্টান্ড রিলিজ।রিপনকে মেইন আসামি হিসেবে কানের লতি ধরে বের করার সময় উনি আরেক হাতে সশব্দে মেইন সুচ বন্ধ করলো।

আর আমরা সিনেমার এই শেষ ক্লাইমেক্সে এসে বহিষ্কৃত হওয়ায় রিপনকে লাঞ্চনা -গঞ্জনায় জর্জরিত করে ফেলি।এমনি ছিলো আমাদের সেই শহর,সেই সময়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...