বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৩

বাঘ্রদুগ্ধের সন্ধানে।

আমার মরহুম তালুই সাহেব লোকটা একটু অদ্ভুত টাইপের ছিলেন।উনি যেবারই বেড়াতে আসতেন আমি মহাচিন্তিত হয়ে পড়তাম।কারনটা হলো,উনি একবার বেড়াতে এসে আমার ১০ ব্যান্ডের রেডিও পছন্দ করে বসলেন।এবং তা আমার আব্বাকে জানাতে ভুল করলেন না।আমার আব্বা যেহেতু তিনি আমার একমাত্র বোনের শ্বশুর ও বয়োজেস্ট লোক তাই আমাকে বললেন-দাও বাবা এটা ওনাকে,উনি বয়স্ক লোক,কয়দিনই আর বাঁচবেন।তুমি তোমার ভাইয়াকে বলে আরেকটা আনিয়ে নেবে।কস্ট হলেও দাবিটা মেনে নিলাম।

আরেকবার উনি এসে আমার ব্যায়াম করার যে স্প্লেন্ডারটা(তিন স্প্রিং ওলা চেস্টের ব্যায়েমের জন্য কিনেছিলাম) ছিলো সেটা খুজে নিয়ে নিলো,আমি ভেবেই পেলাম না,উনি এটা দিয়ে কি করবেন?সর্বোপরি উনি ছিলেন এজমার রোগী।কিন্তু সমস্ত ব্যাপারগুলোকে উনি ফেইল দিলেন ৯৮ সালে বেড়াতে এসে।উনি আমার আব্বাকে বললেন-বেয়াই আমাদের গ্রামের একলোক বোলেছে চিটাগাং এ নাকি কোন জায়গায় বাঘের দুধ পাওয়া যায়।আমার কবিরাজ বলেছে এটা গরুর দুধে মিশিয়ে খেলে এজমার উপশম হবে।
আমি মারাত্বক শংকিত হয়ে উঠলাম,কারন উনি যাই চাইবেন তা আমাকেই যোগাড়ে যেতে হয়।আর চাওয়ার ওতো একটা লিমিট আছে।আমার আব্বা আমাকে বললেন-তুমি এটা আন্দরকিল্লাহ বক্সীর হাট পুলিশ বিটের ভেতরের দিকে গেলে দেখবে অনেকগুলো পাঁশারির দোকান আছে সেখানে গেলেই পাবে।যাবতীয় কবিরাজি বনাজি জিনিস সেখানেই মেলে।বিশেষ করে করে পীতাম্বর সাহার দোকানে যেও।

আমার বন্ধু মগু সুমনরে সাথে নিলাম।সে আবার এসব উঠকো ঝামেলা বেশ পছন্দ করে।সে ব্যাপক উৎসাহ দেখিয়ে জানালো-দুর ব্যাটা,তুই একটা পাগল পীতম বাদশার (সে এটাকে এভাবেই বললো,আরো দাবি করলো আমার উচ্চারন ভুল)দোকানে নাই এমন জিনিস দুনিয়ায় নাই।আর তুই এমন কাচুমাচু হয়ে আছিস কেনো,আমরা কাস্টমার ,বাঘের দুধ থাকলে তারা দিবে ,না থাকলে বলে দিবে কোথায় পাওয়া যায়।তারপরও আমি আবার তাকে বললাম-দেখ ভাই,আমরা বাঘের দুধ খুজলে তারা আবার হাসাহাসি শুরু করবে নাতো?সে বললো চল আগে।আর আমি ভাবছিলাম-কিভাবে দোকানদারকে বলি যে আমরা বাঘের দুধ চাই।

দোকানের সাইনবোর্ডে ঠিকই লেখা পীতাম্বর সাহা এন্ড কোং।এবার দোকানের সামনে গিয়ে দেখলাম,পুরো দোকান অদ্ভুত অদ্ভুত সব গাছ-গাছালি ও অন্যান্য দ্রব্যে ঠাসা।আমার বন্ধুও চুপ মেরে গেলো।দোকানের কর্মচারীরা কয়েকবার জিজ্ঞেসই করে ফেললো আমরা কি চাই?আমরা কিছু না,কিছু না বলে আমতা আমতা করছি।শেষে আমি কোনমতে একজন কর্মচারীকে বললাম-ভাই,আমার এক আত্নীয় গ্রাম থেকেএসেছে।সে হাঁপানির জন্য একটা অদ্ভুত জিনিস চায়,বলে কি সেটা নাকি আপনাদের এখানে পাওয়া
যেতে পারে,কিন্তু ভাই হয়তো বয়স্ক লোক ভুলে কি শুনতে কি শুনেছে।

কর্মচারীটি বললো-উনি কি বাঘের দুধ চান?আমরা দুজন সমস্বরে হ্যা হ্যা করে উঠলাম।আমাদের যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।সে বললো,আরে ভাই এটা কোন ব্যাপার ।ঐ যে বইয়াম গুলো দেখছেন ওগুলা ভর্তি সব বাঘের দুধ।সুন্দরবনের বাঘ বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পর কিছু দুধ বাট থেকে মাটিতে পড়ে যায়।মৌয়াল আর বাওয়ালিরা সেগুলো সংগ্রহ করে আমাদের দিয়ে যায়।প্রতি পুরিন্দা ৭৫ টাকা।আমি খুশি মনে চার পুরিন্দা কিনলাম।আরে দাম কোন ফ্যাক্টর না,টাকায় যে বাঘের দুধ মেলে কথাটা তো দেখি মিছে না।

অতঃপর বাসায় এলাম।উনি পুরিয়ার ভেতর একটু কালচেটে সাদা রঙ এর এই জমাট বাধা দুধ দেখে তেমন সন্তুষ্ট হলেন না।জিনিসটা ছিলো ডালডার মত জমাট বাধা।এতো কস্ট করে আনলাম,উনি গরম গরুর দুধে তা মিশিয়ে খেলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন।সকালে উঠেই উনি ঘোষনা দিলেন,জিনিসটা কাজ করেনি কেমন যেনো বোঁটকা গন্ধ আর তার চেয়ে বড় কথা সেটাতে নাকি ভেজাল আছে।যেনো ভাবটা এমন উনি ছোট বেলা থেকে ডেইলি এক গ্লাস করে অরিজিনাল বাঘের দুধ খেতেন।তার চেয়ে অসহ্য উনার চোখের দৃস্টি,উনি এমন ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছেন যেনো আমিই অরিজিনাল বাঘের দুধ খেয়ে এসে উনাকে নকলটা দিয়েছি।

রাগে দূঃখে আমার মুখে প্রায় এসে গিয়েছিলো-এতোই যখন অরিজিনাল বাঘের দুধ খাওয়ার শখ তখন চিড়িয়া খানায় গিয়ে ডাইরেক্ট বাঘিনীর ওলানে মুখ লাগিয়ে খেলেই পারেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...