শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৩

একাত্তরের মা।

সেই জুন মাসে মার সাথে মইনের শেষ দেখা হয়,তাদের দলটি আগরতলায় যাওয়ার আগে সবাই যার যার পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছিলো।মা মইনকে কোন বাধাই দেয়নি।কারন তিনি তো দেখেছেন,তিনি ছেলেকে আঁচলের তলে রাখলেই বাঁচাতে পারবেন না।

পাকসেনাদের কাছে যুবক ছেলে মানেই হল নির্ঘাত মুক্তিবাহিনী।তাই তিনি কোন বাধা দেননি।কিন্তু মার মন বলে কথা।তার দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে বাবু ভীষন ডাকাবুকো,বলতে গেলে সে তার বয়সীদের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক।কিন্তু মইন ছেলেবেলা থেকে ভীষন লাজুক,তার চোখে চশমা থাকার দরুন সে তার বন্ধুদের কাছে অবহেলার পাত্র।তার স্বাস্থ্য তেমন ভালো না।মা এটি নিয়েই বেশি চিন্তিত।মার মনে পড়ে বাইরে কোথাও অন্যদের কাছে নির্যাতিত হলে মইন ঘরে এসে নীরবে কাঁদত।

মনে পড়ে একবার মইন তার কোন এক বন্ধুকে রক্ত দেয় ১ ব্যাগ।বাড়ী ফিরে মাকে গর্বের সাথে এ কথা বলার সাথে সাথে মা কিরুপ আঘাত পায়।মা কান্নার মাঝে তাকে বলে,তোর নিজের শরীরেই তো কিছু নাই,তুই কেনো দিলি,তোর কি রক্ত বেশী হয়ে গেছে,তোর গা বেঁয়ে বেঁয়ে কি রক্ত পরে।এতো দূঃখের মাঝে ও মার আজ সে কথা মনে হয়ে হাসি পায়।

সেই ছেলে আজ ৪মাস ধরে ঘর ছাড়া।ইদানিং পাড়ার রাজাকাররা এসে প্রায় জিজ্ঞেস করে তার বড় ছেলেকে কেনো দেখা যায়না।তিনি বুঝতে পারেন তাকে অন্তত বাবুকে বাচাতে হলেও শহর ছাড়া দরকার।

অক্টোবরের এই শেষ দিকে এসে শীতটাও আগাম নেমে গেছে।মা আর ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না।তিনি শহরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর পেলেন মইন মেঘালয়ের দক্ষিনে নেত্রকোনা সীমান্তে পাকসেনাদের সাথে যুদ্ধ নিয়োজিত।যতটুকু খবর পাওয়া যায় সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বেশ জটিল।কেননা পাকবাহিনী মিত্রবাহিনীর চালটি ধরে ফেলেছে যে,মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনী নিয়ে নেত্রকোনা হয়ে ময়মন্সিং পার হয়ে ঢাকার উত্তর অঞ্চল বিশেষ করে গাজীপুরে পৌছতে চায় যাতে ভৈরববাজার হয়ে মুক্তিবাহিনীরা নরসিংদী পৌছে গেলে একটা শক্ত বেস্টনীর ভেতর ঢাকাকে ঘিরে ফেলা যায়।তাই যুদ্ধও একটা চুড়ান্ত অবস্থার দিকে যাচ্ছিলো।

নেত্রকোনায় ভারতীয় গুর্খা ডিভিসন যুদ্ধে নেমে পাকবাহিনীর হাতে বিপুল ক্ষতির সন্মুখিন হয়,ফলে তারা আর এগুতে পারেনি।ফলে মুক্তিবাহিনিকেই আবার গেরিলা আক্রমন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়,এবং দেখা যাচ্ছে বিপুল ক্ষতির বিনিময়ে হলেও মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ ভাংতে পারছে।

অনেক বাধাবিঘ্ন পেড়িয়ে মা নেত্রকোনা সীমান্তে ফ্রন্টলাইনে এসে উপস্থিত হলেন বাবুকে নিয়ে।চারোদিকে প্রচন্ড গোলাবর্ষন চলছে।সবাই দারুন ব্যস্ত,আহতরা ফেরত আসছে।একজন সৈনিককে মা জিজ্ঞেস করলেন,এখানে মইন বলে কেউ আছে?সে দারুন বিরক্ত হলো,আপনি এই গোলাগুলির মধ্যে কিভাবে আস্লেন,আপনার কি প্রানের মায়া নাই।মা একরোখাভাবে আবার জিজ্ঞেস করলো,আমি আমার ছেলের সাথে দেখা করবো,তাকে আমার অনেক দরকার।

দুরথেকে আরেক মুক্তিসেনা এগিয়ে আসলো,বললো আপনি কি চশমা পরা মইনকে খুজছেন,রোগা করে।মা ব্যাকুল হয়ে তাকে বললো,হ্যা বাবা।তুমি কি তাকে চেনো?
তাকে কে না চেনে?
বাবা তুমি আমাকে বলো,সে কেমন আছে?খালাম্মা সে ভালো আছে।ঐ দূরে যেখানে প্রচন্ড গোলাবর্ষন চলছে সে সেখানে যুদ্ধ করছে।

মা সেদিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলো অশ্রুসিত্ত চোখে,গভীর আবেগে জিজ্ঞেস করলো,আচ্ছা মইন কি যুদ্ধে ভয় পায়,সেকি গুলি করতে পারে?

সৈনিক ক্ষুদ্ধ কন্ঠে উত্তর দেয়,মইন আমাদের সেরা যোদ্ধা।সে যদি ভালো লড়াই করতে না পারতো,তাহলে সে এখানেই থাকত।আমাদের অধিনায়ক মইনকে ছাড়া কোন বড় লড়াইয়ে যায় না।গত সপ্তাহে মইন ও তার দল পুরো এক কোম্পানি পাকসেনাকে ধবংশ করে দেয়।

মা চোখের পানি মুছে,এবং সৈনিককে বলে মইন আসলে বলো,আমরা ভালো আছি।তিনি হাটতে থাকলেন,সৈনিক জিজ্ঞেস করলো,কি ব্যাপার মইনের সাথে দেখা করবেন না?
মইনকে বলো দেশ স্বাধীন হলে আমাদের মাঝে দেখা হবে।

বাবু মাকে বললো,মা ভাইয়ার সাথে দেখা করলে না কেনো?

নারে বাবা।এখন আর আমার কোন ভয় নাই।আমার খালি ভয় হতো,মইন দুর্বল,চোখে কম দেখে,ছেলেটা লড়াই করতে পারবেতো।মনে একটা দ্বিধা ছিলো,তাই যাচাই করতে আসছিলাম।আমার আর কোন দ্বিধা নাই,আমার মইন আর দশটা ছেলের মতোই লড়ছে।

এমন ছেলের মা কি কখনো কাঁদতে পারে?দেখিস আমরা জিতবোই।আমরা কখনো হারতে পারি না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...