আরেফিন সাহেব আজকেও রাত ৪টা করে বাসায় আসলেন।ওনার স্ত্রী আর এখন ওনার জন্য
অপেক্ষায় জেগে থাকেন না।ওনার কাছে অতিরিক্ত ১সেট চাবি থাকে,তাই তিনি প্রায়
নিশব্দে বাসায় প্রবেশ করেন।বিয়ের পর এ নিয়ে প্রথম প্রথম বেশ সমস্যা হতো,কতো
মনমালিন্য,কতো রাগ-অভিমান,এখন তার স্ত্রী মিলির কাছে এটা গা সওয়া হয়ে
গিয়েছে।বলা যায় মানতে বাধ্য হয়েছেন।
বস্তুত পুলিশে চাকরীতে প্রবেশের পর থেকেই তিনি একরকম পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছেন।কোনখান দিয়ে ঈদ পার্বন গুলো আসে তিনি তা টেরই পান না,কেননা আজ বারো বছরের চাকুরীজীবনে তিনি খুব কমই ছুটি পেয়েছেন ঈদের দিনে।আমাদের দেশে ঈদের দিনেও প্রচুর হাঙ্গামা হয়,দেখা যায় সমগ্র দেশ যখন ঈদের আনন্দে মগ্ন তখন ও রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ।অথচ তাদেরও যে পরিবার পরিজন আছে কে তার খোঁজ রাখে।
আজকে সারাটা দিন তার অসম্ভব ব্যস্ততায় কেটেছে,রাতের ১০টায় বাসায় আসার পথে আবার কন্ট্রোল রুম থেকে মেসেজ।বাসায় ফিরার সময় ক্লান্তিতে তার শরীর ভেঙ্গে আসছিলো,বাইরে এর মধ্যেই হাল্কা বৃস্টি।তিনি আগত দিনটির চিন্তায় মগ্ন।তিনি নীরবে ঘরে প্রবেশ করে জামাকাপড় বদলালেন।টেবিলে খাবারগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে,প্রায় নিঃশব্দে আহারপর্ব সারলেন।এরপর তিনি টিভি দেখতে আসলেন,লো ভলিউমে তিনি খবর দেখতে লাগলেন।সব একি রকম সংবাদ খুন,ছিনতাই,নিরুদ্দেশ এগুলো ছাড়া যেনো আর কোন খবর নাই।
দেখতে দেখতে একটি খবরে উনি মননিবেশ করলেন,উনারই থানার খবর দেখাচ্ছে।এক ভদ্রমহিলা কান্নাকাটি করছে,তার মেয়ে দুদিন ধরে নিখোজ,তাই তিনি সাংবাদিকদের বলছেন এরা পর্যাপ্ত অনুসন্ধান চালাচ্ছেনা,বরং বলছেন দেখেন কোথায় কার সাথে ভেগেছে?
হঠাত পিছনে খুট করে শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখলেন তার ৬বছর বয়সি মেয়ে রুপন্তি চোখ কচলাতে কচলাতে এসে দাঁড়িয়ে আছে।একি আম্মু তুমি ঘুমাওনি?আব্বু তুমি কখন আসছো,আমার জন্য রংপেন্সিল আনছো?
না আম্মু আজকে আনবো।
আব্বু টিভিতে উনি কান্না করতেসে,ওনার মেয়ে কোথায় গেছে?
আমি জানিনা মা।
ওকি একেবারে হাড়িয়ে গেছে,আর পাওয়া যাবেনা?
না মা অবশ্যই পাওয়া যাবে।
আব্বু তুমি তাকে খুজে দাও?
না মা অন্যরা আছে,তাকে খুজছে?আমি মা খুব ক্লান্ত।
তার মুখটা ম্লান হয়ে গেল।
আব্বু আল্লাহ কি সব দেখতে পান?হ্যা মা।
আল্লাহ কি বাচ্ছাদের খুব ভালোবাসেন?হ্যা মা।
তা হলে আব্বু তিনি যাদের ভালোবাসেন তাদেরকে কি হারিয়ে যেতে দিতে পারেন,তিনি তো জানেন তারা কোথায় আছেন?
আব্বু আমি হারিয়ে গেলে তুমি কি আমাকে খুজবে না?
আরেফিন সাহেব প্রচন্ড ধাক্কা খেলেন,তাকিয়ে দেখলেন তার ছোট্ট মেয়েটি অসহায়ভাবে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।তুমি কোথাও হারাবেনা মামনি,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
আমি মা এখনই ঐ দুস্ট মেয়েটাকে তার মার কাছে খুজে দিয়ে আসবো।তুমি মা একটুও চিন্তা করো না।
তিনি দ্রুত প্রস্তুত হয়ে রওয়ানা হওয়ার সময় তার স্ত্রী এলেন।কোথায় যাচ্ছো,তোমার কি শরীর খারাপ?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
আমার আম্মু আজ আমাকে একটা ডিউটি দিয়েছে,কাজ টা আগে করে আসি,তারপর তোমাকে রিপোর্ট করবো।
তারপর সারাদিন অনেক খোজাখুজী,সোর্সের উপর কন্টিনিউ চাপ,হারানো মেয়েটির বন্ধুবান্ধব্দের খোজ,তারা কি করে,কোথায় যায়,মা বাবার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য, সন্ধ্যার মধ্যেই খোজ মিললো।ঘটনা গতানুগতিক মেয়েটি ব্রোকেন ফ্যামিলির,তার বাবা-মা ৫বছর হলো ডিভোর্সী,সে তার বখাটে বন্ধুবান্ধব্দের পাল্লায় পরে ড্রাগ এডিক্টেড।নেশাগ্রস্ত এক বন্ধুর সাথেই সে নেশাপল্লীর এক জঘন্য বস্তিতে ছিলো,ভাবতেই আরেফিন সাহেব ভীমড়ি খান,এই মেয়ে এখানে আসলো কি ভাবে?তার উপর মেয়ে কোনমতেই বাসায় ফেরত যাবে না।
হায় রে শহরটা কোন দিকে যাচ্ছে?
অনেক বুঝিয়ে তার বাবা মা যে তাকে কত ভালোবাসে,তাদেরকে হাজির করে তারপর তাকে পাঠানো হয়েছে।এইফাকে তার বাবা-মাকে তিনি এটাও বললেন,এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা।তারাই পারেন তাদের মেয়েকে একটি সুস্থ জীবন দিতে।
অতপর বাসায় ফিরা!
অদ্ভুত যে রুপন্তি তারই প্রতীক্ষায় ছিলো।তিনি যখন বললেন মা দুস্টটাকে তার বাবা মায়ের কাছে দিয়ে এসেছি।
রুপন্তি তাকে স্মিত হাসি উপহার দিলো।
আরেফিন সাহেব তার এইটুকু চাকুরীজীবনে আর কখনই এতো তৃপ্তি পান নি,যেটুকু আজ পেলেন।
বস্তুত পুলিশে চাকরীতে প্রবেশের পর থেকেই তিনি একরকম পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছেন।কোনখান দিয়ে ঈদ পার্বন গুলো আসে তিনি তা টেরই পান না,কেননা আজ বারো বছরের চাকুরীজীবনে তিনি খুব কমই ছুটি পেয়েছেন ঈদের দিনে।আমাদের দেশে ঈদের দিনেও প্রচুর হাঙ্গামা হয়,দেখা যায় সমগ্র দেশ যখন ঈদের আনন্দে মগ্ন তখন ও রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ।অথচ তাদেরও যে পরিবার পরিজন আছে কে তার খোঁজ রাখে।
আজকে সারাটা দিন তার অসম্ভব ব্যস্ততায় কেটেছে,রাতের ১০টায় বাসায় আসার পথে আবার কন্ট্রোল রুম থেকে মেসেজ।বাসায় ফিরার সময় ক্লান্তিতে তার শরীর ভেঙ্গে আসছিলো,বাইরে এর মধ্যেই হাল্কা বৃস্টি।তিনি আগত দিনটির চিন্তায় মগ্ন।তিনি নীরবে ঘরে প্রবেশ করে জামাকাপড় বদলালেন।টেবিলে খাবারগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে,প্রায় নিঃশব্দে আহারপর্ব সারলেন।এরপর তিনি টিভি দেখতে আসলেন,লো ভলিউমে তিনি খবর দেখতে লাগলেন।সব একি রকম সংবাদ খুন,ছিনতাই,নিরুদ্দেশ এগুলো ছাড়া যেনো আর কোন খবর নাই।
দেখতে দেখতে একটি খবরে উনি মননিবেশ করলেন,উনারই থানার খবর দেখাচ্ছে।এক ভদ্রমহিলা কান্নাকাটি করছে,তার মেয়ে দুদিন ধরে নিখোজ,তাই তিনি সাংবাদিকদের বলছেন এরা পর্যাপ্ত অনুসন্ধান চালাচ্ছেনা,বরং বলছেন দেখেন কোথায় কার সাথে ভেগেছে?
হঠাত পিছনে খুট করে শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখলেন তার ৬বছর বয়সি মেয়ে রুপন্তি চোখ কচলাতে কচলাতে এসে দাঁড়িয়ে আছে।একি আম্মু তুমি ঘুমাওনি?আব্বু তুমি কখন আসছো,আমার জন্য রংপেন্সিল আনছো?
না আম্মু আজকে আনবো।
আব্বু টিভিতে উনি কান্না করতেসে,ওনার মেয়ে কোথায় গেছে?
আমি জানিনা মা।
ওকি একেবারে হাড়িয়ে গেছে,আর পাওয়া যাবেনা?
না মা অবশ্যই পাওয়া যাবে।
আব্বু তুমি তাকে খুজে দাও?
না মা অন্যরা আছে,তাকে খুজছে?আমি মা খুব ক্লান্ত।
তার মুখটা ম্লান হয়ে গেল।
আব্বু আল্লাহ কি সব দেখতে পান?হ্যা মা।
আল্লাহ কি বাচ্ছাদের খুব ভালোবাসেন?হ্যা মা।
তা হলে আব্বু তিনি যাদের ভালোবাসেন তাদেরকে কি হারিয়ে যেতে দিতে পারেন,তিনি তো জানেন তারা কোথায় আছেন?
আব্বু আমি হারিয়ে গেলে তুমি কি আমাকে খুজবে না?
আরেফিন সাহেব প্রচন্ড ধাক্কা খেলেন,তাকিয়ে দেখলেন তার ছোট্ট মেয়েটি অসহায়ভাবে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।তুমি কোথাও হারাবেনা মামনি,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
আমি মা এখনই ঐ দুস্ট মেয়েটাকে তার মার কাছে খুজে দিয়ে আসবো।তুমি মা একটুও চিন্তা করো না।
তিনি দ্রুত প্রস্তুত হয়ে রওয়ানা হওয়ার সময় তার স্ত্রী এলেন।কোথায় যাচ্ছো,তোমার কি শরীর খারাপ?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
আমার আম্মু আজ আমাকে একটা ডিউটি দিয়েছে,কাজ টা আগে করে আসি,তারপর তোমাকে রিপোর্ট করবো।
তারপর সারাদিন অনেক খোজাখুজী,সোর্সের উপর কন্টিনিউ চাপ,হারানো মেয়েটির বন্ধুবান্ধব্দের খোজ,তারা কি করে,কোথায় যায়,মা বাবার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য, সন্ধ্যার মধ্যেই খোজ মিললো।ঘটনা গতানুগতিক মেয়েটি ব্রোকেন ফ্যামিলির,তার বাবা-মা ৫বছর হলো ডিভোর্সী,সে তার বখাটে বন্ধুবান্ধব্দের পাল্লায় পরে ড্রাগ এডিক্টেড।নেশাগ্রস্ত এক বন্ধুর সাথেই সে নেশাপল্লীর এক জঘন্য বস্তিতে ছিলো,ভাবতেই আরেফিন সাহেব ভীমড়ি খান,এই মেয়ে এখানে আসলো কি ভাবে?তার উপর মেয়ে কোনমতেই বাসায় ফেরত যাবে না।
হায় রে শহরটা কোন দিকে যাচ্ছে?
অনেক বুঝিয়ে তার বাবা মা যে তাকে কত ভালোবাসে,তাদেরকে হাজির করে তারপর তাকে পাঠানো হয়েছে।এইফাকে তার বাবা-মাকে তিনি এটাও বললেন,এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা।তারাই পারেন তাদের মেয়েকে একটি সুস্থ জীবন দিতে।
অতপর বাসায় ফিরা!
অদ্ভুত যে রুপন্তি তারই প্রতীক্ষায় ছিলো।তিনি যখন বললেন মা দুস্টটাকে তার বাবা মায়ের কাছে দিয়ে এসেছি।
রুপন্তি তাকে স্মিত হাসি উপহার দিলো।
আরেফিন সাহেব তার এইটুকু চাকুরীজীবনে আর কখনই এতো তৃপ্তি পান নি,যেটুকু আজ পেলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন