৩১ অক্টোবর,১৯৮৪ । ৩১ টি বুলেটে ইন্দিরা গান্ধী নিস্তব্দ হয়ে যান।তার সর্ষে রঙের শাড়ী রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে। মাত্র তিনদিন আগে উনি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের তার দেহরক্ষী বিয়ন্ত সিং কে দেখিয়ে বলেছিলেন , ও থাকতে আমার কাছে মৃত্যু আসতে পারবে না।কি নির্মম রসিকতা! বিয়ন্ত সিং এই তাকে দুই হাত জোর করে নমস্কার জানানোর মুহুর্তে প্রথম গুলিটা ছোড়ে। এর পর সতবন্ত সিং যোগ দেয়।
৫ জুন,১৯৮৪ সাল, এ দিন স্বর্ন মন্দিরে অভিযান চালানোর পরই ইন্দিরার ব্যক্তিগত সহাকারী আর কে ধাওয়ান জানান, ইন্দিরা অত্যান্ত মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছেন।তিনি কয়েকদিন পর তার কাছের মানুষদের জানান, তার ভেতরে যেনো পচন ধরা শুরু হয়েছে। এই প্রথম তিনি সবাইকে জানান ,তার উপর হামলা হতে পারে।তিনি আশংকা করতেন ,সেটা বেশী করে হতে পারে রাহুল-প্রিয়াংকাকে স্কুল থেকে অপহরনের মাধ্যমে। এর মধ্যেই তার নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা তাকে শিখ দেহরক্ষী বদলানোর পরামর্শ দেন।তিনি সেটা প্রত্যাখ্যান করেন।তিনি জানান ,তিনি সারাজীবন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছেন।শিখেদের সরালে সেটা তাদের প্রতি অপমানকর বলে গন্য হবে।
প্রথম গুলীর পরই ধাওয়ান চীৎকার করে সরে যান।সোনিয়া একা রান্নাঘরে ছিলেন।আজ সকালে রাহুল আর প্রিয়াঙ্কাকে স্কুলে যাওয়ার সময় ইন্দিরা অন্যান্য দিনের থেকে অনেকটা বেশীক্ষন বুকে চেপে ধরে রাখেন।এরপর তারা স্কুলে চলে যায়। এভাবে একটানা স্টেন গানের আওয়াজ শুনে প্রথমেই সোনিয়ার মনে দেওয়ালি উতসবের বাজির কথা মনে পড়ে।হঠাত আবার মনে আসে দেওয়ালি তো কয়দিন আগেই চলে গেছে। সোনিয়া হঠাত করে সব বুঝে যান। মা মা করে চীৎকার করে তিনি ইন্দিরার কাছে যান।সোনিয়াই নিজে এম্বেসেডার গাড়িতে করে শাশুড়িকে অল ইন্ডিয়া মেডিকেল ইন্সটিটিউটে নিয়ে যান।তিনি সেখানেই মারা যান।চেস্টা করা হয় আপাতত জরুরী কিছু সিদ্ধান্ত না নেয়া পর্যন্ত মৃত্যু সংবাদ গোপন থাক। রাজিব কাছে নেই।তিনি পশ্চিম বঙ্গের কোলাঘাটে আজকের রাস্ট্রপতি প্রনব মুখার্জি আর সিধার্থ শংকর রায়ের সাথে আছেন।তাকে দ্রুত প্রয়োজন।
প্রনব মুখার্জি অত্যান্ত ভেঙ্গে পড়েছেন।তাকে রাজিবের সন্মুখীন করালে উদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্ট হওয়ার থেকে না করানোই ভালো। কারন সিধার্থ শংকর রায় জানিয়েছেন রাজিবকে, তার মা গুরুতর আহত হয়ে মেডিকেলে আছেন। তাকে এখনি দিল্লী যেতে হবে। সেই ফ্লাইট রাজিব নিজে চালিয়ে দিল্লী আসেন।কিন্তু রেডিও চালু করার সাথে সাথে রাজিব জেনে যান তার মা নিহত হয়েছেন।একিই ফ্লাইটে প্রনব বাবু আর সিধার্থ রায়ও আসেন। রাজিব সোনিয়াকে দেখে কেদে ফেলেন। ঐ অবস্থাতেই সোনিয়া রাজিবকে জানান, সে যেনো কোনমতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব না নেন। রাজিব জানতে চায়, রাহুল প্রিয়াঙ্কা কোথায়?নিরাপত্তারক্ষীরা গিয়ে দেখে যাদের চিন্তায় ইন্দিরা গান্ধী সর্বক্ষম অস্থির থাকতেন,তারা সম্পুর্ন নিরাপত্তাহীন অবস্থায় স্কুলে দাঁড়িয়ে আছে।কোন নিরাপত্তারক্ষী আশে পাশে নেই।স্কুলের সহপাঠীরা এই দুই শোকে শোকাহত হতবুদ্ধ ভাই-বোনকে জানাচ্ছে ,তাদের দাদীমা আর নেই। সেখান থেকেই তাদের অমিতাভের মা তেজি বচ্চনের বাসায় নিরাপত্তা সহকারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।সেটাই ছিলো রাহুল আর প্রিয়াঙ্কার শেষ স্কুলের দিন।এরা এর পর বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের অধীনে চলে যান।
আর দিল্লীতে দুপুরে ইন্দিরার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পরার পর শুরু হলো ব্যাপক শিখ নিধন ।প্রথম দিনেই ২৫০০ শিখ শুধু দিল্লীতে নিহত হয়।পরবর্তী তিনদিনে সে সংখ্যা ভয়ংকর অবস্থায় পৌছে যায়। পারস্যের আফ্রাসিয়াব সম্রাট নাদিরের ভয়াবহ দিল্লী শেকিং এর পর এটাই সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হত্যাকান্ড।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন