কয়দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস গেলো।স্যাডলার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯২১ সালের পহেলা জুলাই ঢাকা ইউনিভার্সিটি তার কার্যক্রম শুরু করে,আরো আগেই হতো ১ম বিশ্বযুদ্ধ এই কার্যক্রমে বিলম্ব ঘটায়।আজকে আমি ব্রিটিশ ভাইসরয় ও গভর্নর এবং ১ম ভিসি হার্টগ এর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও গভীর শ্রদ্ধা অনুভব করি।বস্তুত বাংলাদেশের সকল নাগরিকের কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা তারা ডিজার্ভ করে ।কেনো করে তা এবার বলছি।
প্রতিষ্ঠালগ্নে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সমাজের এমন অনেক লোক এর বিরোধিতা করে যে,আজকে ৯৬ বছর পর সকলে ভাবতেই পারেন,আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলে বাঁধা দেয়ার ব্যাপারটা আসেই বা কোন চিন্তাধারা থেকে।ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার তার জীবনী" জীবনের স্মৃতিদ্বীপে" বইয়ে এই ব্যাপারটা জানিয়েছেন।তিনি ১৯৩৭-৪২ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন।উনি জানান, ব্রিটিস প্রশাসক সরাসরি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার আশুতোষ মুখার্জিকে জানিয়ে দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবেই,এর অন্যথা হবে না।আপনি বলুন কি হলে ,আপনি এর বিরোধিতা করবেন না। অতঃপর তিনি জানান,তিনি অতিরিক্ত ৪টি বিভাগ পেলে এর বিরোধিতা করবেন না।
অতঃপর অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করলো।হার্টগ এতে খুব বাছা বাছা বিদ্ধান লোকদের জড়ো করলেন।আরেকটা ব্যাপারও ছিলো,এর বেতন সেই আমলেই ১৮০০টাকা মাসিক স্থির হলো।যেখানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ৪০০-৬০০ টাকার মধ্যে ছিলো।পাশাপাশি শিক্ষকদের রমনার কৃষ্ণচুড়ার ছায়ায় ছায়ায় মনোরম বাসস্থান। ফলে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী,সত্যেন বসু, লেখক নিজে,স্যার এ এফ রহমান, ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর মতো অনেক বিদ্ধান লোক ঢাকা পায়। আর বাস্তবেই কারিকুলাম ও একাডেমিক দিক থেকে ঢাকা কলকাতাকে পিছে ফেলে দেয়।আর তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কাদের নিয়ে চলতো এর উদাহরন রমেশ মজুমদারে বইয়ের ৪৬ পৃষ্টা থেকে দিই।
যেসব শিক্ষকরা কলকাতা থেকে ঢাকা চলে যাচ্ছেন তাদের উপলক্ষ্য করে একটা বিদায় গোছের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।প্রধান অতিথী আশুতোষ মুখার্জি। সেই অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির কারমাইকেল অধ্যাপক দেবদত্ত রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকর বললেন, সম্প্রতি তিনি এক বৃহৎ শিলালিপি আবিষ্কার করেছেন,তাতে অনেক নতুন কথা আছে।আমার বক্তৃতার বিষয়ের সাথে সম্পর্ক না থাকলেও আমি এর উল্লেখ করতে চাই ।তিনি একটি লুপ্ত পুরানের ভবিষ্যত উক্তি উদ্ধৃত করেন।সেটা এই, কলিযুগে বৃদ্ধগঙ্গা(স্পষ্টই বুড়িগঙ্গা) নদীর তীরে হরতগ(স্পষ্টই ভিসি হার্টগ) নামে এক অসুর জন্মগ্রহন করবে।(আমি আধাঘন্টা হাসছি) সে মুল গঙ্গার তীরে এক আশ্রমের(কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) অনেক শিষ্যদের ভাগিয়ে নিয়ে গিয়ে নিজের আশ্রমে নিয়ে ঢুকাবে। আর অতি অবশ্যই সেসব শিষ্যও ক্রমে ক্রমে অসুরত্ব প্রাপ্ত হবে। (রমেশ বাবুরা আর কি, অসুরে রুপান্তরিত হবেন)।
একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারমাইকেল প্রফেসর এই উক্তি করেছেন।ভিসি আশুতোষ মুখার্জি এতে ক্ষুদ্ধ হন।কিন্তু ভবিষ্যতের অসুর রমেশ বাবু,সত্যেন বসু,শাস্ত্রী মহাশয়রা হরতগ নামে অসুরের কাছে তথাপিও গিয়েছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন