পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের চেহারাটা কি কারো মনে আছে? প্রবলেম নাই, নেটে গেলেই দেখা যায়।উনি ছিলেন পাঞ্জাবের জলন্ধরের লোক।এই জলন্ধরের, অমৃতসর আর লুধিয়ানার শিখ বা মুসলিমদের চেহারাতে একটা মিল আছে।মানুষের মোঁচ যদি নিচের দিকে নামে তো তাদের মোঁচের দুই কোনা উপরের দিকে উঠানো থাকে, সিধুর মতো। দেখতে খারাপ লাগে না,ম্যানলি একটা ব্যাপার আছে।এদের চোখের লুকিং ও অন্যরকম ,যেনো সুরমা টানা।আশ্চর্য ঐখানের গরুগুলাও এমন সাইট টানা চোখের অধিকারী।মানুষগুলোর মতো বলিষ্ট সেখানের গরুগুলোও।
আসল ব্যাপারে আসি।ঐ জিয়াউল হক আশির দশকের গোড়াতে কট্টর শিখ দলগুলোকে হাত করে ফেলে।শিরোমনি আকালি দল, খালিস্তানপন্থীদের আলাদা শিখ রাজ্য গঠনের জন্য জঙ্গী শিখদের মদদ দিতে থাকে । এমনকি সরাসরি অস্ত্র সাহায্য দিতে থাকে।ইন্দিরার জন্য ১৯৭৭ সালের পরবর্তী সময়টা কঠিন। ৭৫ এর জরুরী অবস্থা জারীর পর ৭৭ এ মোড়ারজী দেশাইয়ের সরকারের হাতে তাকে আর সঞ্জয়কে যথেষ্ট নাকাল হতে হয়। ৮০ সালে নির্বাচনে ফেরার পর যদি সঞ্জয় মারা না যেতো, ইন্দিরা পরবর্তীতে মারাত্বক সব সিদ্ধান্ত নিতেন না।দমদম টাকশাল শিখনেতা জার্নেইল সিং ব্রিন্দালওয়ালে অমৃতসরের স্বর্নমন্দিরে অবস্থান নেয় ।ইন্দিরার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।ভারতীয় আর্মিতে শিখেরা অনেক ভালো ভালো পোষ্টে আছে।উনি তাই জেনারেল অরুন শ্রীধর বৈদ্যকে সর্বাত্বক অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন।অমৃতসরে বিপুল শিখ নরনারী শিশু নিহত হয়।শিখেরা শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়।
চারমাস কেটে যায়।অক্টোবর ৩১,১৯৮৪ সাল।এদিন ব্রিটিস সাংবাদিক পিটার উস্তিনভ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছেন সাক্ষাতকারের জন্য নির্ধারিত কক্ষে ।তিনি শুনলেন বাজির একটানা ফুটে যাওয়া।দিল্লীতে কয়দিন আগেই দেওয়ালির বাজি পুড়ানোর উৎসব গেছে |তিনি এই কয়েকমাসে এসব বাজি পুড়ানোর শব্দে অভ্যস্ত।তিনি ধারনাও করতে পারেননি যে, শিখ দেহরক্ষীরা ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করেছেন।
ইন্দিরা আরো অনেকের মতোই বেগুন ভাজি পছন্দ করতেন আর সাদা রুটি।কিন্তু সেদিন তিনি টোষ্ট আর মৌসুমী ফল দিয়ে নাস্তা করেছেন।সকালের শুরুতেই তিনি ব্রিটিস সাংবাদিকদের সাক্ষাতকার দিবেন।তিনি তার ঘর থেকে বের হলেন।সাক্ষাতকার রুমের অর্ধেক দূরত্বে এসে তিনি দেহরক্ষী এস আই বিয়ন্ত সিং এর দিকে চেয়ে হালকা স্মিত হাসি দিলেন।কিন্তু বিয়ন্ত সিং তার পিস্তল থেকে ইন্দিরার পেটে গুলি চালিয়ে দিলেন।সাথে সাথেই কনষ্টেবল সতব্রন্ত সিং তার স্টেনগান থেকে বৃষ্টির মতো গুলি চালালেন।অটোমেটিক স্টেনগানের ধাক্কায় ইন্দিরা দূরে ছিটকে গিয়ে পড়লেন, উনি খুব ভারী দেহের অধিকারী ছিলেন না।আততায়ী দুজন একেবারে শান্তভাবে আত্মসমর্পন করলেন।এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার যে, এই ধরনের প্রানঘাতী হামলায় বেশীরভাগ লোক ঘটনাস্থলেই নিহত হন।কিন্তু অসম্ভব প্রানশক্তির অধিকারী ইন্দিরা ৩১টি গুলি খেয়েও জীবিত ছিলেন। ১ নং সফদর জং রোডে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এমনিতে সবসময় একটা এম্বুলেন্স থাকে, জরুরী প্রয়োজনে। যেহেতু এটা উপমহাদেশ তাই সেই জরুরী মুহুর্তে এম্বুলেন্স ড্রাইভার রাস্তার পাশে চা খেতে ব্যস্ত ছিলো। পুত্রবধু সোনিয়া একটা এম্বেসেডার গাড়িতে করে ইন্দিরাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।উনি সেখানেই প্রানত্যাগ করেন।দুপুর ১ টার আগে তা ভারতবাসীকে জানানো হয়নি।
দুইজন শিখ ইন্দিরাকে হত্যা করেছে, এটা ছড়িয়ে পরার পর ভারতে স্মরনকালের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক শিখ হত্যাকান্ড শুরু হয় ১৮৪৯সালের এংলো-শিখ লড়াইয়ের পর ।চারদিন টানা এই হত্যাকান্ড চলে।অমিতাভের মতো সেলিব্রেটি দূরদর্শনে বলে,খুনকা বদলা খুন( তার বেশীরভাগ সিনেমায় সে এমন এংরিম্যান ইমেজ দেখায়), কংগ্রেসনেতা জগদীশ টাইটলার সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশ নেয়। রাজিব সাংবাদিকদের অনেক আহবান স্বত্তেও মায়ের মৃত্যুশোকে বলে, জাব কোই বাড়া দ্রাক্ষা গিড়তা হ্যায়, ধরতী হিলতা হ্যায়। বড় গাছটা উপড়ে পড়লে ধরতী কাঁপবেই। শিখ রাস্ট্রপতি জ্ঞানী জৈল সিং নিজের জাতের এই ভয়াবহ অসহায় অবস্থা দেখে পদত্যাগ করার জন্য খুশবন্ত সিং এর মতামত চায়। খুশবন্ত জানান, এতে এখন আর কিছু আসে যায় না।তিনি নিজে তার রাস্ট্রীয় খেতাব ফেরত দেন।
চতুর্থদিন রাজিব শোক ভুলে রাস্ট্রীয় টিভিতে জানান, আপনারা শান্ত হন, আর রক্তপাত নয়।বিশেষ বাহিনী দক্ষিন থেকে ডেপ্লোয় করা হয়।কারন কোন শিখ রেজিমেন্ট যেনো আবার এর মধ্যে ডেপ্লোয় না হয়, এতে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।কারন অত্যান্ত স্বাভাবিক, নিজের জাতের ভয়াবহ পরিস্থিতি তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রনে থাকার ব্যাপারটাকে অসম্ভব করে ফেলবে।
শেষকথা, স্বর্নমন্দিরে অভিযান চালানো জেনারেল বৈদ্যও ১৯৮৬ সালে পুনেতে আততায়ীর হাতে নিহত হন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন