ব্যাপারটা সম্পর্কে আগেও পড়ছি কিন্তু আমরা সাধারনত নিজের ঘাড়ে এসে বিপদ না পড়া পর্যন্ত এলার্ট হওয়ার চিন্তাও করি না।বিষয়টা যথেচ্ছ এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারে জীবানুর রেসিটেন্স বেড়ে যাওয়া নিয়ে।অন্যরে কি উপদেশ দিবো,নিজেই তো মাস্টারি করে কম ঔষধ গিলি না।তো এসবের ফলে কিছু ট্রপিক্যাল অঞ্চলের আবাসিক জীবানু সুপার বাগে পরিনত হচ্ছে।যেমনঃ যক্ষ্মার জীবানু, ম্যালেরিয়েল প্যারাসাইট ,কিছু ভাইরাল জ্বরের জীবানু।দেখেন নাই, এই ১০-১৫ বছর আগেও চিকুনগুনিয়া বা জিকা ভাইরাসের নাম শুনি নাই।ইবোলার নাম শুনি নাই।এখন এগুলা আছে।হয়তো আগেও ছিলো,কিন্তু মিউটেন্ট হয়ে উঠে নাই তখন।
ইউরোপ আমেরিকার মতো উন্নত দেশে যক্ষ্মা ,ম্যালেরিয়ার মতো জীবানু বা প্যারাসাইট এই সেদিনও নিয়ন্ত্রনের মধ্যে ছিলো।কিন্তু ড্র্যাগ এডিক্ট ও এইচ আই ভি পজিটিভের মতো রোগীদের দেহে এটা প্রবেশ করার পর তাদের চিকিৎসার অবহেলা বা সঠিক সময়ে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা বা অর্ধেক পথে এন্টীবায়োটিক ছেড়ে দেয়ার জন্য এগুলা এখন প্রায় সুপার বাগে রুপান্তরিত হয়ে পড়েছে।এখন এরাই এটার জন্য বিশেষ চিন্তিত হয়ে পড়েছে।কয়দিন আগেই পড়েছিলাম,সুপার গনোরিয়ার সুপার বাগ নিয়ে।
আশ্চর্য যে, একদিন এই ইউরোপ থেকেই পর্তুগীজ ,ডাচ,ইংরেজ আর দিনেমারদের জাহাজে করে জাহাজীদের শরীরে করেই এই সিফিলিস,বিউবোনিক প্লেগ ,গুটিবসন্ত আর গনোরিয়ার মতো গনমান্য রোগের জীবানু এই এশিয়া,আফ্রিকা,পলেনেসিয়ান দ্বীপের মতো দূর দ্বীপে পৌছে গিয়েছিলো।এর আগে এসব অঞ্চলের লোক এসবে আক্রান্ত হন নাই।উদাহরনঃ ১৭৮৫ সালে ক্যাপ্টেন কুক এর জাহাজের মাধ্যমে সিফিলিস ,গনোরিয়া ,প্লেগ আর গুটি বসন্ত তাহিতি দ্বীপ সহ সমগ্র মেলানেশিয়া ,মাইক্রোনেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।এই জাহাজীরা যেখানে গিয়ে লাগাইছে সেখানেই এটা ছড়িয়ে পড়েছে।অন্যদিকে সলোমন দ্বীপ,পাপুয়া নিউগিনির মতো নরখাদক প্রায় অঞ্চলেই আদিবাসীরা যারা আগে কখনো সাদা লোক দেখে নাই ,তারা বিধাতার অমোঘ নির্দেশে সাদাদের নামতেই দিতো না, এমন না কেউ তাদের এসে বুঝিয়ে গিয়েছে ,খবরদার সাদাদের সাথে মিশিশ না,ওরা রোগের জীবানু এনেছে।প্রকৃতিই তাদের বায়ো হ্যাজার্ডের ব্যাপারে আগাম সতর্কতা যেনো শিখিয়েছিলো।তারা কিন্তু এই তাহিতির সাদাদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন আদিবাসীদের থেকে অনেকদিন বেচেছিলো।তাহিতির আদিবাসীরা মাত্র পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে একেবারে ঝাড়ে-বংশে নির্মুল হওয়ার পর্যায়ে এসে যায়।যেহেতু তারাই সাদাদের সাথে আগে মিশেছিলো,তাই মুল্যটা তারাই সবার আগে দেয়।আগে কখনো এসব রোগ তাহিতিতে না থাকার ফলে এসবের বিরুদ্ধে তাদের কোন রেসিস্টেন্স ছিলো না,ফলে এসব রোগ তাদের প্রায় ধবংশ করে ছাড়ে।আদিবাসী লোকসংখ্যা আশংকাজনক হারে হ্রাস পায়।
ক্যাপ্টেন কুকের পর এইচএমএস বাউন্টির বিদ্রোহী জাহাজীদের সাথে একদল তাহিতিয়ান পিটকেয়ার্ন দ্বীপে গিয়ে আস্তানা বাধে। ১৮০৮ এর আগে তাদের কেউ খুজে পায়নি। ১৮০৮ সালে সিল শিকারী জাহাজ টোপাযের ক্যাপ্টেন মেহিউ ফলগার এই মেরুনাইজড দলকে খুজে পায়।এরা তখন নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি করে নিজেদেরই সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছিলো।ফলগারই ব্রিটিস এডমিরিল্টিকে এই খুজে পাওয়া দলটির কথা জানায়।ব্রিটিসরা এই বাকি বেচে যাওয়া সদস্যদের অস্ট্রেলিয়ার কাছে নরফোক আইল্যান্ডে নিয়ে আসে।এই দলটি পিটকেয়ার্ন দ্বীপে বেশ সুস্থ সবল ছিলেন,কিন্তু নরফোক দ্বীপ ছিলো ব্রিটিস পেনাল আইল্যান্ড।এখানে জেলকয়েদীদের সংস্পর্শে এসে পিটকেয়ার্নবাসী আবার সিফিলিস,গনোরিয়া আর গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়।বেচে যাওয়া বাকিরা ব্রিটিসদের কাছে অনুরোধ জানায় তাদের যেনো আবার পিটকেয়ার্ন আইল্যান্ডে নেয়া হয়।তাদের দাবি মেনে নেয়া হয়।পিটকেয়ার্নের এখনের বাসিন্দারা সেসব বেচে যাওয়াদের বংশধর।
উপরের উদাহরনটা একটা ছোট দ্বীপের ক্ষেত্রে যারা বায়ো হ্যাজার্ডের শিকার হন, তথাকথিত সভ্যদের স্পর্শে এসে।আমাদের এই ১৯ কোটি মানুষ যদি কখনো এমন কোন সুপার বাগের বা সুপার রেসিস্টেন্স জীবানুর কবলে পড়ে আর তা মহামারীতে রুপ নেয় ,তাহলে সেটা হয়তো অকল্পনীয় বিপর্যয় ডেকে আনবে।আগে এইসব সুপার বাগ,গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিশ্বাস করতাম না।মনে হতো ,অনেক পরে এসব হবে।আমরা কি তখন থাকবো? কিন্তু গ্লোবাল ওয়ার্মিং সত্যিই আমরাই দেখে যাইতেছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন