রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৭

জুলফিকার আলী ভুট্টো ও রাজনৈতিক অভিশাপ।

উপমহাদেশে রাজনৈতিক পরিবারগুলোর ভেতর একটা ট্রাজেডি আছে।আমি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এখানে টানবো না।গান্ধী পরিবার বা ভুট্টো পরিবার সবাই এই ট্রাজেডির ভেতর পড়েছে।কেউওই ক্ষমতাকে ভোগ করতে যেয়ে স্বাভাবিক পরিণতি পায়নি।অথচ নিয়তির পরিহাস,এরা প্রত্যেকেই গনতান্ত্রিক নির্বাচনেই ক্ষমতায় এসেছিলো,কিন্তু কি এক অমোঘ আকর্ষনে এরা সেই জনগনের দেয়া মতামতকে একপর্যায়ে অগ্রাহ্য করেছে।এভাবে ইন্দিরা জরুরী অবস্থা জারি করেছে,ভুট্টো প্রতিপক্ষের হত্যা গুমে জড়িয়ে গেছে।পরিণতি শুভ হয়নি কারোর জন্য।
জুলফিকার আলি ভুট্টো প্রয়াত স্যার শাহনেওয়াজ ভুট্টোর ছেলে।ব্রিটিসদের ধামাধরা শাহনেওয়াজ ভগত সিং মামলায় সরকার পক্ষের কৌশলি ছিলেন।সিন্ধের লারকানায় তার আড়াই লাখ একর জমি ছিলো,যেটা বিশ্বের কোন কোন দেশের আয়তনের সমান।জুলফিকার সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মান।সমসাময়িক ভবিষ্যত রাজনৈতিকদের মধ্যে তুলনামুলক মেধাবি ভুট্টোর টাকা-পয়সা যশ কিছুর অভাব ছিলো না।অক্সফোর্ডের স্কলার, লিংকন ইন ব্যারিষ্টার ,অতি অল্প বয়সে পাকিস্তানের মন্ত্রী হয়ে যাওয়া সবকিছু সম্ভাবনাময় এক জীবনের কথা জানাচ্ছিলো।বাল্যকালে বিয়ে করা ভুট্টো আবার বিয়ে করেন ১৯৫১ সালে ইরানী কুর্দিশ অভিজাত ইস্পাহানী পরিবারে।এই ঘরেই জন্মান বেনজির,মর্তুজা, শাহনেওয়াজ আর সনম ভুট্টো।পুরো একটা সুখী পরিবার।
কারো সময় হলে ওরিয়ানা ফালাচির সাথে ভুট্টোর সাক্ষাতকারটি ধৈর্য ধরে পড়তে পারেন।ভুট্টো অপছন্দনীয় লোক সন্দেহ নাই,কিন্তু আপনি তার ক্ষুরধার মেধার পরিচয় এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যত বানীর দূরদৃষ্টিটা দেখে অবাক হয়ে যাবেন।দেখবেন তার বেশীরভাগ রাজনৈতিক ভবিষ্যত বানী পরবর্তীতে মিলে গেছে।শুধু সে নিজে যে বেঘোরে মারা পড়বে সেটা সে আন্দাজ করে যেতে পারেনি।
ভুট্টোর সবচেয়ে বড় পাপ ছিলো বাংলাদেশের জনগনের প্রতি। ২৫ মার্চের কালোরাতের গনহত্যার অন্যতম হোতা ভুট্টো, সাথে অন্য কুশীলব যখন ইয়াহিয়া আর টিক্কা খান।একটা গনতান্ত্রিক সুষ্ঠ নির্বাচন মেনে না নেয়ার গোয়ার্তুমি, ক্ষমতা সুষ্ঠভাবে না বুঝিয়ে দিয়ে টালবাহানা, নিরীহ মানুষ মারার ঠান্ডা মাথার প্ল্যান, এগুলো ভুট্টোর নিয়তিকে স্থির করে দিয়েছে।অতি চালাকি ক্ষমতালোভীর মনমানসিকতার দাম তাকে কিস্তিতে কিস্তিতে মেটাতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পরাজয়,ইয়াহিয়ার পতন,ভুট্টোর প্রেসিডেন্ট হওয়া এগুলো খুব দ্রুত ঘটে গেলো। ৬টা বছর কেটে গেলো।ভুট্টোর প্রতি বেসামরিক ,সামরিক প্রশাসনের প্রতিহিংসা এগুলো মেলার সুযোগ হচ্ছিলো না।পাকিস্তান ভাঙ্গার অন্যতম হোতা বলে সামরিক প্রশাসন তাকে সবসময়ই ভেতরে ভেতরে দায়ী করে আসছিলো।সুযোগটা আসে নিয়তির পরিহাস হয়ে,যখন ভুট্টোর পছন্দের সেটা করা সেনাপ্রধান জিয়াউল হক একটা রক্তপাতহীন ক্যু এর মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্ষমতা হাতে নিয়ে নেয়।ভুট্টো বন্দী হয়ে পড়ে।লারকানার সামন্তপুত্র শেষ কয়টা দিন এমন লাঞ্চনায় কাটায় যেটা ভাষায় অবর্ননীয় হয়ে উঠে।কারাগারে তার বিন্দুমাত্র বিলাসিতার সুযোগ মেলে নাই।পরিবার পরিজন রাজনৈতিক সহকর্মী কারো দেখা সে তার মনমতো পায়নি।দাতের মাড়ির ইনফেকশনের জন্য নিয়মিত লিস্টারিন ইউজ সে করতো।জেল কতৃপক্ষ তাকে এই সামান্য বিলাসিতাও দিতে অপারগতা জানায়।আসে শেষের সেদিন, ভুট্টো কোনমতেই ফাসিকাষ্ঠের দিকে যাচ্ছিলো না।তার এক কথা আমি আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নবাব মুহম্মদ কাসুরীকে হত্যা করি নাই(এটার অভিযোগে তার ফাসি হয়)। তাকে এই আধা অজ্ঞান অসুস্থ অবস্থায় টেনে হিচড়ে ফাসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সালটা হলো ১৯৭৯খ্রীঃ।
ছেলেমেয়েরা সবাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। মর্তুজা ভুট্টো শোকে ক্ষোভে জুলফিকার নামে এক সন্ত্রাসী সংগঠন খুলে।এরা ৮০ দশকে বিমান ছিনতাই করে বিশ্বের নজরে পড়ে।এর পর ভুট্টো পরিবারের উপর যেনো অভিশাপ নেমে আসে।আক্ষরিক অর্থেই ৭০ এর দশকের শেষপ্রান্তে জুলফিকার ভুট্টো নিহত হওয়ার পর থেকে প্রতি এক দশকে ভুট্টো পরিবার একজন করে সদস্য অপঘাতে হারিয়াছে। ৮০ এর দশকে মধ্যভাগে ১৯৮৫ সালে শাহনেওয়াজ ভুট্টো প্যারিসের হোটেলে মৃত অবস্থায় পড়েছিলো।ভাই-বোনেরা এর জন্য শাহনেওয়াজের পশতু স্ত্রীকে বিষ প্রয়োগের দায়ে দায়ী করেন।এলো নব্বইয়ের দশক ,এটা ভুট্টো পরিবারের ভিত্তিমুল নেড়ে দেয়।বেনজিরের মা নুসরাত স্বামীর মৃত্যুর পর বহু ঝড়-ঝাপ্টা সামলে পিপিপিকে নেতৃত্ব দেয়, পাকিস্তানে কিন্তু তাকে গনতন্ত্রের মা আখ্যায়িত করা হয়,তিনি জিয়াউল হক রেজিমের সাথে কঠিন সব লড়াই একাই লড়ে গিয়েছেন।কিন্তু বেনজির দ্বিতীয় মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হলে পিপিপির ক্ষমতার ভাগ নিয়ে মা আর ভাই মর্তুজার সাথে দ্বন্দে জড়িয়ে পড়েন। এলো অভিশাপের দশকের করাল ছোবল। ১৯৯৬ সালে বেনজির প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মর্তুজাকে তার করাচীর বাসভবনের অনতিদূরে আইন-শৃংখলাবাহিনীর হাতে ৬ জন বিশ্বস্ত সঙ্গীসহ ক্রশফায়ারে মরতে হয়।নুসরাত শোকে পারকিনসন ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে একেবারে জনসমুক্ষের আড়ালে চলে যান।শুধু ২০১১ সালে তার মৃত্যুর পর সবাই জানেন যে তিনি মারা গেছেন। এলো ২০০০-২০১০ এর দশক ,এবার বলি বেনজির স্বয়ং। এভাবে ভুট্টো পরিবার প্রতি দশকে একজন হারিয়েছে।
ক্ষমতা ভীষম জিনিস।জনগনের সাথে বেইমানীর ফল কোন রাজনীতিকের জন্য শুভ ফল বয়ে আনে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...