শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মগ ,বর্মী ও শায়েস্তা খাঁ

মধ্যযুগ থেকেই মগ আর বর্মীদের প্রতি বাংগালীর একধরনের ভীতি কাজ করতো।এরা পর্তুগীজ হার্মাদদের সাথে মিলে সমগ্র বাংলার দক্ষিন উপকুলে প্রচন্ড তান্ডব চালিয়েছে।হাটবারে বা কোন বিবাহ উতসব বা কোন অন্য উতসবের দিন এরা সারং(মগদের ব্যবহৃত একপ্রকার নৌযান) নিয়ে আলগোছে গ্রামে ভিড়ে যেতো।তারপর শিশু,মহিলা,যুবক এদের পাইকারী হারে নিয়ে যেতো।বৃদ্ধরা দাস হিসেবে মুল্যহীন বিধায় রেহাই পেতো।এরপর এদের বন্দী করে চট্টগ্রামের পটিয়ার এখনের কেইপিজেড যেখানে সেই দেয়াং পাহাড়ের দূর্গে নিয়ে আসতো,তাদের ভাষায় ডিয়াঙ্গা।সেখান থেকে বেচে যাওয়া বন্দীদের শ্রীলংকা,এডেন সহ আফ্রিকার মোম্বাসা বা জাঞ্জিবারের দাস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হতো।
এভাবে মগেরা আজকের মতোই প্রচন্ড হিংস্রতা দেখাতো যাতে কেউ তাদের দেশের দিকে হাত না বাড়ায় তার জন্য।অনেকটা প্রিএম্পটিভ এটাক।তারাও বাঙ্গালীকে ভয় পেতো।দাস ব্যবসাও হলো,ডর দেখানোও হলো।এভাবে তারা নিজেরা তাদের সীমানা বিপদমুক্ত রেখেছিলো।কিন্তু ব্রিটিসরা বার্মা জয় করার পর আমাদের এই অঞ্চলের লোক জীবিকার টানে বার্মা যাওয়া শুরু করে।আগে মগেরা যেই ভয়ে বহিরাগতদের আসা বন্ধ রেখেছিলো,ব্রিটিসদের শাসনের সুবাদে উপমহাদেশের লোক সেখানে যেয়ে ভীড় করে।মগ আর বর্মীরা উপমহাদেশের লোকদের আরেকটি কারনে চরম ঘৃনা করতো,সেটা এই উপমহাদেশের লোকদের উচ্চ ফলনশীল জন্মহার আর হাতে টাকা।বর্মী মহিলারা এই আকর্ষন এড়াতে পারতো না।কি এক অদ্ভুত কারনে, মগ বা বর্মী পুরুষেরা মহিলাদের থেকে বেশ অলস।তার পরে যেটুকু সময় কাজ করে তার বেশীর ভাগ সময় আবার মদ বা অন্যান্য মাদকে আছন্ন থাকতো ।ফলে তাদের জন্মহার কম ছিলো।বাংগালীর সাথে থেকে মগ বা বর্মী মহিলারাও অনেক হেলদি একটা যৌনসম্পর্ক বজায় রাখা শিখেছিলো।বাংগালী তাদের বর্মী মহিলাদের গালে মাটি মেখে রাখা, পান খেয়ে দাত চেদেরভেদের করে রাখা এগুলা থেকে দূরে রেখেছিলো।এভাবে বাংগালীর পেন্ড্রাইভের সফল ব্যবহার,যেখানে সেখানে সফটওয়ার বিতরন এগুলা বরং মগ বা বর্মীদের থেকে তাদের শ্রেষ্টতায় এগিয়ে রেখেছিলো। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার আগপর্যন্ত এটা নিয়ে ঝামেলা হয় নাই।এরপর এই ঝামেলা শুরু।
ইতিহাসে দেখা যায় ,একবারই উপমহাদেশের লোকেরা মগ বা রাখাইনের দস্যুদের সেরকম চিকিতসা দিয়েছিলো।সেটাই শেষ।১৬৬৪ সালে শিবাজি দক্ষিনাত্য সহ কয়েকটি জায়গায় মোঘলদের হারিয়ে দেন।সেবছরের জানুয়ারীতেই শিবাজি মুঘলদের প্রধান বন্দর সুরাট একসপ্তাহ ধরে লুট করে।ফলে সম্রাট আওরংজেব দক্ষিনাত্যের সুবাদার শায়েস্তা খাঁ কে বরখাস্ত করেন এবং শাস্তি স্বরুপ তাকে বাংলার সুবাদার করে পাঠান।শায়েস্তা খাঁ ছিলেন সম্রাটের আপন মামা, মমতাজ মহলের ভাই।মামা বাংলা যাবার আগে ভাগ্নের সাথে একবার দেখা করে যাবার অনুমতি চান।এতে ভাগ্নে আরো ক্ষিপ্ত হয়।জানানো হয়, মামা যেনো তার বাহিনী নিয়ে আগ্রার অনেক দক্ষিন দিয়ে অতিক্রম করেন।দেখা করার প্রয়োজন নাই।শায়েস্তা খাঁ বিশেষ অপমানিত হন।অপমানের পুরো ঝাল মিটান চট্টগ্রামে এসে বিশাল এক নৌবহর নিয়ে মগ-পর্তুগীজদের যৌথবাহিনীকে আক্রমন করে।নিজে আর পুত্র বুজুর্গ উমিদ খাঁ কে নিয়ে তিনি মগদের চরম শাস্তি দেন।তাদের একেবারে নাফ নদী পার করিয়ে দিয়ে আসেন।মগেরা আর কখনোই চট্টগ্রামের দখল নিতে পারে নাই।বাংলা ভাষায় শায়েস্তা করা বা শাস্তি দেয়া কথাটা কিন্তু এসেছে শায়েস্তা খানের নাম থেকে।তাহলে বুঝে দেখেন ,কি শাস্তি তিনি মগেদের দিয়েছিলেন।এই শায়েস্তা খানের মেয়ে পরীবিবির কবর ঢাকার লালবাগ কিল্লায়।এই শায়েস্তা খানের আমলেই চাল ডাল এর দাম কিংবদন্তীতুল্য ছিলো।
মগ ,বর্মীদের অত্যাচার ,চাল-ডালের দুর্মুল্যের বাজারে আজকে আমার শায়েস্তা খাঁ এর কথা মনে পড়তেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...