শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বিবাহের বাজার ও গরুর বাজার।

গতকালের আড্ডায় আমার এক বন্ধুর বন্ধু এসেছিলো।উনি এখনো বিয়ে করে উঠতে পারেননি।উনার মনমতো কিছু হয়ে উঠছিলো না।আমার বন্ধু বললো, হ্যা সে চেষ্টা করছে,কিন্তু মিলছে না।এদিকে তার চাকুরীজীবনের ৮-৯ বছর অতিক্রান্ত।বন্ধু আমাকে বলে, কিছু একটা বল।মিলাদের শেষে যেমন এ হুজুর সে হুজুরকে ঠেলে ,হুজুর মোনাজাতটা আপনি ধরেন তেমনি।
আমি কি আর বলবো, আমি বললাম ,ভাই আপনি কি আসলে বিয়ে করবেন? যদি না করেন, তাহলে আর করার চেষ্টা কইরেন না।এতে কোন দোষ নেই।আর যদি সত্যিই করতে আগ্রহী হোন, একটু ছাড় দিয়ে আগান,সেটা যেকোন কিছু,আপনিই সেটা জানেন।এতো চুজি হইয়েন না।মেয়েপক্ষেরও তো অনেক কিছু বিবেচনা করার আছে।এসব ক্ষেত্রে দুপক্ষের কিছু ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হওয়া সুন্নত(দেখছেন আমি কি ধার্মিক)।সে একটু মনোক্ষুন্ন হলো।
আমি তাকে উদাহরন দিলাম(এটা কোন ভদ্রগোছের উদাহরন নয়,যেখানে দাঁ লাগে না,সেখানে কুড়াল লাগিয়ে দেয়ার মতো ব্যাপার), দেখেন বিয়ের বাজারে আর কোরবানীর গরুর বাজারে একটা ব্যাপারে হুবহু মিল আছে।আপনি ভালো জব করেন (এখন থেকে সমান্তরাল করে পড়বেন- মানে আপনি কোরবানীর বাজারে ৮০-৮৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন,ভাবছেন একটা দেখনসই গরু মিলে যাবে), ভাবছেন আপনি আপনার মনের চাহিদা মতো একটা মেয়ে পেয়ে যাবেন।কিন্তু বাজারে নেমে দেখবেন,আপনার পছন্দের গরুগুলা আসলে ১লাখ ২০হাজারের কমে পাবেনই না।এদিকে গরু খুজতে খুজতে ( আপনারা পড়ুন ,বিয়ের মেয়ে খুজতে খুজতে) সন্ধ্যে পার করে রাত করে ফেললেন।টাইম পার করে কনে খোজা আর সন্ধ্যের পর গরু কেনা দুটোতেই হুজ্জতির কোন শেষ নেই।
অতএব বেশী দেরী কইরেন না।হয় বিয়ে করে ফেলুন ,নতুবা নয়।বন্ধুর বন্ধু রাগ করলো সম্ভবত।
এবার আমি তাকে একটা রিয়েল লাইফ অভিজ্ঞতা বললাম। ২০০২ সালে আব্বা হজে গিয়েছিলো ।সুতরাং কোরবানীর গরু কেনার জন্য আমি আর আমার ছোট ভাই বাজারে গেলাম।আজীবন আব্বার সাথে আমরা গরু কিনতে বাজারে যেতাম।আব্বা গরু চিনতো ভালো।আমার ছোট ভাইয়েরও এই গুনটা আছে।কিন্তু যেহেতু আব্বা নাই, তাই আমরা গেলাম।দুই ভাইয়ে সেই দুপুর থেকে গরু খোজা খোজলাম।কিন্তু কিছুতেই মেলাতে পারলাম না। রাত হয়ে গেল ।আমরা হয়ে পড়লাম অধৈর্য।অবশেষে একটা গরু পেলাম।ছোট ভাই নিষেধ করলো,সে বললো,আর একটু দেখি।আমি ঘাঊরামি করে কিনে ফেললাম।গরু মাঝারি সাইজ ,হৃষ্টপুষ্ট।ভুলে গেলাম কনে দেখতে হয় বিকেলের কনে দেখার স্বর্নালী আলোয় আর গরুও সেই টাইমে দেখা ফরজে আইন।কিন্তু ঐ যে নিয়তি কেনো বাধ্যতে!
বাজারের বাইরে আসতে আসতে গরুর সাইজ যেনো কিছুটা কমে গেলো।আর এখন তেমন হৃষ্টপুষ্টও লাগছে না।আল্লায় জানে আমার চোখে বাজারে কোন ঠ্যাডা পড়ছিলো।ছোট ভাই আমাকে পুরো রাস্তা সান্তনা দিয়ে আসছিলো।এদিকে আরেক ব্যাপার হয়েছে,গরু যেনো একটু কম হাটতেছে।সাথে করে মুখ দিয়ে ফেনা সহ একটু একটু করে লালাও পড়তেছে।আমার মরে যাওয়ার মতো অবস্থা।একটা পোলা গরু নিয়ে আসতেছে তার চোখে পানি আর পিছনে লালাওলা গরু।
বাসায় আসলাম।কেউ কিছু বলে নাই।দুলাভাই শুনে গরু দেখতে আসলো।আমাকে বললো,পাড়ার গরু পালে যে কাকা তাকে একটু দেখাতে ।শুনে আমার পিলে চমকে উঠলো।ডাক্তাররা যেমন রোগী দেখার পর বোর্ড বসাবার কথা বললে রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের খবর হয়ে যায় তেমনি।উনি আসলেন,এসেই বললেন,আরে ধুরু গরুর কিছু হয় নাই।এটা অনেক দূর থেকে জার্নি করে আসছে, এর জ্বরের মতো হয়ে গেছে।একে গরুর প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ গুলে জোর করে খাওয়ালো(এই ঘটনার পর আমিও জার্নি টার্নি করে আসলে প্যারাসিটামল খেতাম,কাজ করতো)।উনি বললেন,দুইদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।কোরবানীর আছে ৫ দিন।
সব ঠিক আছে ,কিন্তু গরু কিছুই খায় না।এমনকি গরুর যেনো খাওয়ার ইচ্ছা বা প্রেষনা জাগে ,এইজন্য আমি গরুর কাছাকাছি বসে ভাত খেতাম, তাকে দেখিয়েই চাবাতাম ।এতেও যদি তার ক্ষুধাবোধ জাগ্রত হয়।কিন্তু যেই কে সেই।আমি আল্লাহকে ডাকতাম, আল্লাহ কোনমতে কোরবানীর দিন সকাল পর্যন্ত যেনো সব ঠিক থাকে।ঠিক কোরবানীর আগের দিন গরু খানা-দানা শুরু করে।আমি আনন্দে চিৎকার করে সবাইকে জানাতে থাকি ,গরু খড় খাইতেছে, ভূষি খাইতেছে, এমনকি ভাতের মাড়ও একটু একটু করে স্যুপের মতো করে খাইতেছে।
গল্প বলা শেষ হলে দেখি, আমার বন্ধু মাটিতে গড়াইতেছে হাসতে হাসতে।আর বন্ধুর বন্ধুর মুখ ভার।বিয়ের কনে খোজা থেকে গরুর বাজার এ যাওয়া তার ভালো লাগে নাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...