শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ব্রেক্সিট ও থেরেসা মে।

ওয়েস্টমিনিস্টার গনতন্ত্রের সৌন্দর্য আর উৎকর্ষতা এখানেই যে,ক্যাবিনেট প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী জনগনের টলটলায়মান ভোলাটাইল মানসিক রাজনৈতিক অবস্থা তার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্পষ্টতই অনুভব করেন।এটা আমাদের জঙ্গুলে আইনের দেশ নয়।ক্যামেরন তাই ব্রেক্সিটে হেরে নৈতিকভাবে আর আকড়ে থাকার অধিকার অনুভব করেন না।থেরেসা মে তার মেয়াদ পার করার সম্পুর্ন সুযোগ থাকা স্বত্বেও নিজের কাধে আসে এমন সব ভুল গায়জোয়ারি সিদ্ধান্ত নিতে সাহস পান না।
স্পষ্টতই ব্রিটেন কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিবে বৈষ্ণিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য।এটা থেরেসা নিজে তার ক্যাবিনেটের গায়ের জোরে নিতে আগ্রহী নন।তিনি জনগনের ভোট চান।হয়তো বা থেরেসা ত্রিশের দশকে নেভিল চেম্বারলেনের রাষ্ট্রনীতি ,পররাষ্ট্রনীতির করাল পরিনতি আর তার পরবর্তী দূর্যোগের ফলাফল সম্যক উপলদ্ধি করেছেন। চেম্বারলেন কি করেছিলেন,সেটা আমি পরের প্যারায় বলবো।থেরেসা কিছু ব্যাপারে পরিষ্কার ব্রাইটনদের মতামত চান ,এজন্যই ৮ জুনের মধ্যবর্তী নির্বাচন।সেগুলো আন্দাজ করা যায়, ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনের লক্ষ্য, ট্রাম্পের সাথে ব্রিটেনের একাত্নতা,ইউরোপের সাথে ব্রিটেনের সম্পর্ক,চীন ও তার মিত্রদের সাথে ব্রিটেনের সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত, চীনের বিপুল বিনিয়োগের হাতছানি ব্রিটেনকে ব্রেক্সিট এর ক্ষতিপুরন থেকে বিকল্প রিলিফ।
বহুদিন পর থেরেসাই ব্রিটেনের এমন এক প্রধানমন্ত্রী যে প্রথমদিন এসেই চীনের খুব প্রশংসা গেয়েছেন।আরেকটা কাজ করেছেন,পাকিস্তানের উচ্ছসিত প্রশংসা করা।এবং প্রথমদিনই।পাকিস্তান নাকি সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ব্রিটেনের গুরুত্বপুর্ন মিত্র।এগুলো বলার পরের সপ্তাহ হতে যদি কেউ ভারতীয় অভিবাসীদের উপকারে যায় না এমন সিদ্ধান্ত নিতে থাকে,তাহলে তা থেকে কি ফলাফল আসতে পারে।ট্রাম্প নির্বাচিত হবার পর থেরেসার সাথেই সবচেয়ে উষ্ণ সম্পর্ক হয়েছে।বাকি ইউরোপের সাথে সম্পর্ক অবনতি হয়েছে,যেমনঃ মার্কেল।আর বহু বছর পর ন্যাটো জোটকে শুনতে হয়েছে তোয়াজ নয়।বরং তাদের ফান্ডিং নাকি পর্যাপ্ত হচ্ছে না।এইসব।
এবার আসি ,চেম্বারলেনের ব্যাপারে।রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্ররা কিছু টপিকের সাথে পরিচিত ,উদাহরনঃ প্রফুমো কেলেঙ্কারী,ইরান-কন্ট্রা কেলেংকারী এমন।তেমনি একটি টপিক হলো ত্রিশের দশকে “চেম্বারলেনের তোষন-নীতি”।
জোসেফ চেম্বারলেনের সুযোগ্য উত্তরসুরী নেভিল চেম্বারলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হবার পর ত্রিশের দশকে হিটলারের নাজি উত্থানের পুরো সময়টায় নগ্ন তোষন-নীতির আশ্রয় নেয়।সোজা কথায় দালালীর।মানে হিটলারের যাবতীয় অপকর্ম চেকস্লোভাকিয়ার ,অস্ট্রিয়ার বিলুপ্তি থেকে শুরু করে পোলান্ডের শোচনীয় পরাজয় ও দখল সব সে অবলীলায় হজম করে।যেখানে পোলান্ড ও ফ্রান্সের সাথে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা চুক্তি আছে,বিপদের দিনে পরস্পরের পাশে দাড়াবার।রাষ্ট্র-বিজ্ঞানে একটা কথায় আছে যে, হিটলারকে যদি মিউনিক চুক্তির সময়ই আটকানো হতো ২য় বিশ্বযুদ্ধ আদৌ হতো না।কিন্তু এই পিট বুলিয়ে আচ্ছা, এবার মেরে আর কাউকে মারিস না কিন্তু ।এসব উষ্কানীমুলক সান্তনা আরো বিপদ ডেকে এনেছে।
পোলান্ডের অবলুপ্তির পরও চেম্বারলেন একিই রকম নীরব।এখনো নাকি সময় আসে নাই কিছু করার।এভাবে ফ্রান্সও শেষ পর্যন্ত জার্মান বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে পারলো না।অথচ চেম্বারলেন নীরব।যেই ফ্রান্সে তখন ব্রিটেনের ২লক্ষের বেশী সৈন্য নিয়ে গঠিত ব্রিটিস অভিযাত্রী বাহিনী আটকে আছে।তাদের কি হবে, ব্রিটেনের কি হবে এই চিন্তা ব্রিটিস জনগনকে দিনকে দিন উত্তাল করে দিচ্ছে।এমনি এক দিনে সংসদীয় সভায় যখন চেম্বারলেন নিজের বিগত দিনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দিচ্ছিলো, অথচ সবাই ফুসছিলো ।এমন সময় রাজনৈতিক লিও আমেরী(ইনি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত ও বার্মার সেক্রেটারী অভ স্টেট ছিলেন,এর জন্ম ভারতের গোরখপুরে) সবাইকে ডিঙ্গিয়ে সোজা চেম্বারলেনের সামনে এসে দাড়ান।যদিও নিয়ম অনুযায়ী তখন কথা বলবেন লেবার পার্টি প্রধান ক্লিমেন্ট এটলি।যিনি সেদিন আবার অনুপুস্থিত।তাই তার ডেপুটি কথা বলার আগেই আমেরি এসে চিৎকার করে চেম্বারলেনকে বলেন, আপনি থামুন ,আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।আপনি এখন “ইংল্যান্ডের হয়ে কথা বলুন” ।ইংল্যান্ড কি চায় তা বলুন।পুরো সংসদ উত্তাল হয়ে উঠে সবাই বলতে থাকে “ ইংল্যান্ডের হয়ে কথা বলুন”। ফলাফল সেই মুহুর্তেই চেম্বারলেন ক্যাবিনেটের পতন।যুদ্ধকালীন ক্যাবিনেটের দায়িত্ব পান উইন্সটন চার্চিল।আমেরি ১৬৪৯ সালের অলিভার ক্রমওয়েলের সেই অমোঘ উক্তি সংসদে দেনঃ you have sat too long here for any good you have been doing.Depart,i say,and let us have done with you.In the name of God, go!
চার্চিল পুরো জনগনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তটা অলরেডি জেনে গেছেন।ইংল্যান্ড যুদ্ধে যাবে।পোলান্ড আর ফ্রান্সের প্রতি দায়িত্ব সে বিনা দ্বিধায় পালন করবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...