মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স বানানো হলো।এমনিতে সউদ বংশের কাহিনীর মধ্যে কোন বৈচিত্র নাই।তবে অনেকদিন পর কিন্তু এটা একটা ব্যতিক্রম হলো।বাপের পর পোলা বাদশাহ হবে এতে আশ্চর্যের কি আছে?তাই না।এখানেই ব্যতিক্রমটা।এর আগে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজই কেবল বড় ছেলে সউদকে বাদশাহর উত্তরাধিকার দিয়েছিলো।
আবদুল আজিজ ছেলেদের কোরান স্পর্শ করিয়ে শপথ করিয়েছিলেন যেনো তারা সিংহাসন নিয়ে অন্তর্দ্বন্দে সউদ বংশের হাত থেকে ক্ষমতা অন্য কাউকে না দিয়ে ফেলেন।অত্যাধিক স্নেহবশত তিনি কেবল নিজেই বড় ছেলে সউদকে সিংহাসন এর উত্তরাধিকার দিয়ে যান।কিন্তু সেটুকুই।এর পর সউদ বাদশাহীত্ব বর্তাবে আবদুল আজিজের সবচেয়ে যোগ্য ছেলের হাতে ,সেটা সব ভায়েরা মিলে ঠিক করবে।যেদিন আবদুল আজিজের সব পুত্র মারা যাবে কেবল এরপরই আজিজের নাতিদের আমল শুরু হবে।আর সৌদিরা বাচেও অনেকদিন।গাড়ির তলে না পড়লে তারা সহজে মরে না।
ভাবেন শুধু, যে আবদুল আজিজ ১৮৭৬ সালে জন্ম নিয়ে ১৯৫৪ সালে মারা যান ,এখনো তার ছেলেদের আমল শেষ হয়নি।বাদশাহ সালমান মারা গেলেই আর আজিজের কোন জীবিত পুত্র থাকবে না।এরপর নাতিদের যুগ।আবদুল আজিজ আর বেশীরভাগ বেদুইন আরবদের মতোই বীর্যবান এক পুরুষ ছিলেন।১৯০২ সালে আল রশিদ বংশকে সমুলে ধবংস করে সে হেজাজ আর নেজাদের দখল নেন। ১৯২৪ সালে ইংগ-মার্কিন সহযোগিতায় সৌদি আরবকে এক করেন ,১৯৩২ সাল থেকে সৌদি আরব পৃথিবীর বুকে নাম লেখায়।আবদুল আজিজ এই দখলিকৃত সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য অগনিত বেদুইন সর্দারের মেয়েদের বিবাহ করেন,যাতে এরাই তার রাজ্য টিকিয়ে রাখার বিশ্বস্থ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।আর আজিজের পেডরোলো মোটরটাও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলো।আরবদের এই গুনটা এমনিতেও জগতবিখ্যাত।আমার হিসেবে আবদুল আজিজের স্পার্মের প্রবাহ এতো জোরালো ছিলো যে, সে পেশাব কমই করতো ।তাই মরে যাওয়ার আগে সে এক বিশাল পরিবার রেখে যায়।
বড়ছেলে সউদের প্রতি আজিজের অত্যান্ত স্নেহ ছিলো।সে বাপের সাথে সেই রশীদ বংশের সাথে লড়াইয়ের পর থেকে ক্রিটিক্যাল সব কন্ডিসনে পাশে ছিলো।তদুপরি ১৯৩২ সালে মক্কায় আবদুল আজিজ নামাজ পড়ার সময় এক ইয়েমেনী আততায়ী তার উপর ছুরি নিয়ে প্রানঘাতী আক্রমন চালায় ।কিন্তু বড়পুত্র সউদ ঝাপিয়ে পড়ে বাপের প্রান বাচায় ও সেই আততায়ীকে হত্যা করে।কিন্তু নিজে গুরুতর জখম হন।তার বাচার কোন আশা থাকেনা।তাকে দ্রুত চার্টার প্লেনে বৈরুতে নিয়ে দীর্ঘদিন চিকিতসা করে সুস্থ করা হয়।বেশীর ভাগ সউদি বাপের কাছে বড়ছেলে বন্ধুর মতো।তারা পুত্রস্নেহে অজ্ঞান।
এই সউদই পিতার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্য পেলো কিন্তু বছর ৬ এর মধ্যে রাজ্যকে বিশ্বব্যাংক ,আইএমএফ এর কাছে ডিফল্টার বানিয়ে ফেললেন।তার অপচয়ের মাত্রা দেখে পুরো ফ্যামিলি তাকে আল্টিমেটাম দিলো।তাতে কাজ না হওয়ায় স্পেন আর লেবাননে তাকে নির্বাসন দেয়া হলো।নতুন বাদশাহ হলো আজিজের আরেক পুত্র ফয়সাল ,সৌদি আরবের সবচেয়ে সেরা শাসক।তার তুর্কী স্ত্রী ইফফাত তো সৌদি আরবের নারী শিক্ষার জন্য প্রতিকৃত হয়ে থাকবে।ফয়সাল ইফফাতকে এতো ভালোবাসতো যেটা সৌদি পুরুষদের জন্য বিরল।উনি ইফফাতের ভালোবাসায় আমৃত্যু ছিলেন।অন্যকোন নারীর দ্বারে তিনি যাননি।এর আগে এমন স্ত্রীর প্রতি দূর্বলতা আব্দুল আজিজেরও ছিলো,তিনি বাদশাহ ফাহদের মা হাসা সুদাইরির প্রতি অত্যান্ত প্রেমময় ছিলেন।আচ্ছা যাক সে কথা, ফয়সাল ১৯৭৫ সালে আপন ভাতিজার হাতে নিহত হন।এই ফয়সলের পুত্র যুবরাজ ফয়সাল দীর্ঘদিন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।বাবা মরার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে আজিজের আরেকপুত্র খালিদ বাদশাহ হন।এরপর বাদশাহ ফাহদ,এরপর আরেক পুত্র আবদুল্লাহ , এরপর আজকের সালমান।এ যাবত বাদশাহ নির্বাচিত হতো সউদ বংশের পারিবারিক মিটিং এ।সেখানে বাবা-ছেলে মুখ্য না, বংশে যে ছেলে সবচেয়ে যোগ্য সেই হবে বাদশাহ।সউদ বংশের এখনকার সদস্য সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশী।এরমধ্যে প্রিন্স হিসেবে ধরলেও ১৫০০ এর কম না।
এতোকিছু অগ্রাহ্য করে বাদশাহ সালমান নিজের পুত্র মোহাম্মদকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষনা করাটা তাই ব্যতিক্রম।আগের বাদশাহ ফাহদ আর আবদুল্লাহর ছেলেদের তাকে অনেকটাই তাই নিষ্ক্রিয় করতে হয়েছে।সবার থেকে বেশী করে নজর দিয়ে নিষ্ক্রিয় করতে হয়েছে সিংহাসনের অগ্রাধিকার দাবীদার নায়েফ বিন আবদুল আজিজের পুত্রকে।তাই এদের মধ্যে এবার গন্ডগোল বাধলে মোটেও অবাক হবো না।
বিশ্বের অন্যতম তেল উতপাদনকারী সংস্থা হলো, সৌদিয়া আরামকো লিমিটেড।এতে অর্ধেকের কাছাকাছি মালিকানা ইংগ-মার্কিনী ফার্মগুলো।তারাও সুযোগ পাবে এই অসন্তুষ্ট পরিবারের সদস্যদের সান্তনা ও মন্ত্রনা দেয়ার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন