চট্টগ্রাম থম মেরে গেছে,বিষণ্ণ, ছায়াময়।ভালোই লাগে এমন আবহাওয়া।এমন দিনে কখনো স্কুল করতাম না।সাইক্লোন কায়ান্ট এর প্রভাব এটা।ছোট থাকতেই এইসব সাইক্লোন,তুফান আমার বেজায় প্রিয় ছিলো।কারন স্কুল ফাকি দেয়া।একটা জিনিস পড়ে খুব মজা পেলাম।পাগল আমি একা ছিলাম না।আমার থেকেও অনেক বড় মাপের পাগল আর উচুদরের গবেষক ছিলেন সাইক্লোন শব্দটা যিনি আবিষ্কার করেছেন সেই ব্রিটিশ ভদ্রলোক হেনরি পিডিংটন।উনি ১৮২০-২২ সালের দিকে কলকাতায় আসেন শিপিং কোম্পানীর ইন্সপেক্টর এর কাজ নিয়ে।
জীবনের প্রথমদিকেই উনি ক্যারাবীয় অঞ্চলে ছিলেন।দেখেছেন সেখানের প্রলয়ঙ্কর সব হ্যারিকেন।তখনই উনি এই ঝড় তুফানের প্রেমে পড়েন।ঘন্টার পর ঘন্টা হ্যারিকেনের তান্ডবের ভেতর বসে উনি চিৎকার করে ম্যাডম্যাক্স ফুরির পাক্সের মতো "ওয়াট্টে বিউটিফুল ডে" বলে উঠতেন।সেখান থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর চাকুরী নিয়ে কলকাতা আগমন।এখানে এসেই উনি বংগোপসাগরের প্রবল সব ঘুর্নিঝড় দেখেন।উনি ১৮৩৩,১৮৩৭ ও ১৮৫২ সালের প্রলয়ঙ্করী ঝড়্গুলো দেখেন।উনিই প্রথম খেয়াল করেন এসব ঘুর্নিঝড়ের একটা শান্ত কেন্দ্র আছে,যাকে কেন্দ্র করে বাতাস প্রবলবেগে ঘুরে,উনি এটাও বুঝে যান উত্তর গোলার্ধে এই বায়ুর ঘুর্নি পাক ঘড়ির কাটার বিপরীতে ঘুরে আর দক্ষিন গোলার্ধে সেটা ঘড়ির কাটার অনুকুলে ঘুরে( আমার ভাই মুন্না একদিন আমাকে বলেছিল উত্তর গোলার্ধে বেসিনের পানি ঘড়ির কাটার বিপরীতে ঘুরে বেরোয়,আর অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিন গোলার্ধে তা ঘড়ির কাটার অনুকুলে ঘুরে বেরোয়,অল্প পানি না,বেশী পানির ক্ষেত্রে)।
তো ঘুর্নিঝড়ের শান্তকেন্দ্রটা দেখতে চোখের মতো দেখায় বলে গ্রীক একচোখো দৈত্য সাইক্লোপস থেকে পিডিংটন এর নাম সাইক্লোন দেন।আমাদের বংগোপসাগরের সব ঝড় সাইক্লোন। ক্যারাবীয় অঞ্চলে তা হ্যারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সেটাই টাইফুন (শব্দটা কিন্তু আরবি তুফান থেকেই বনিকদের সাথে সেখানে গেছে।
হেনরি পিডিংটন ছিলেন সুন্দরবনের একজন বড় মাপের প্রেমিক।তিনি বুঝেছিলেন সুন্দরবন আর তার ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সাগরের সব সাইক্লোন থেকে প্রাকৃতিকভাবে বাংলাকে বুক দিয়ে আগলে রাখে।তাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বড় লাট লর্ড ক্যানিং যখন কলকাতা নগরী থেকে অনেকটা দক্ষিণে ক্যানিং বন্দর মাতলা নদীর তীরে সুন্দরবন কেটে নির্মান করতে থাকেন,তিনি এর বিরোধিতা করেন।তিনি জানান, এভাবে বন কেটে পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলার কোন কারন নাই।এই বন্দর ১৫ বছরও টিকবে না ঝড়ের মুখে।লর্ড ক্যানিং তার নামের বন্দরে রেললাইন ও টেনে নিয়ে যান।কিন্তু ১৫ বছর নয়,মাত্র ৫ বছর পরই প্রবল সাইক্লোনে ক্যানিং বন্দর পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন