শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

হস্তীপুরাণ।

গতকালকে মারা যাওয়া হাতি বংগ বাহাদুর একটি একোয়া(একলা) মাকনা হাতি,অর্থাত দাতবিহীন পুরুষ হাতি।হাতিদের সমাজে মাকনা হাতিরা বেয়াদপ বলে গন্য হয়।তারা হলো সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত যুবক হাতি।মনে অনেক খিদা,চোখে অনেক তৃষ্ণা ,কিন্তু সর্দার হাতির হারেমের দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতেও পারে না।সর্দার ফুসে উঠে ইঙ্গিত দেয়- তোর বনে বাদাড়ে ঘুরার টাইম এসে গেছে,কোনদিন যে ধরে লাথিয়ে বিদায় করবো।তাই দলের মুল পালের গোদা দান্তাল হাতিটা মাকনাদের খুব চোখে চোখে রাখে।কেউ বিশ্বাস করবে না ,হাতিদের মধ্যে পরকিয়া আছে এবং হাতিরাই মানুষের মতো একমাত্র প্রানী যাদের নানী,দাদি ও খালা আছে ।এই মাকনারাই রাতে লুকিয়ে এসে মাদিদের মধ্যে থেকে রাত পার করে যায়।সর্দার হাতি টের পেয়ে পেয়েও পায় না।তবে হারেমের মাদীদের শাসায় ,আমি সব দেখি ,আমি কলাপাতা চাবাই না। যেইদিন ধরবো ঐদিন কারো রেহাই নাই।
মাকনারা তলে তলে ফুসতে থাকে।প্রায়ই ইচ্ছে করে ঘাউরামি করে বেড়ায়।সর্দার বুঝে কিন্তু ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষায় থাকে মাকনাটাকে ঢিঢ করার জন্য।তারপর একদিন মাকনা চ্যালেঞ্জ দেয় যে, আপনারটা মেশিন আর আমারটা বুঝি ঝাড়ূ।নিজে শান্তি করে মুখে পীরের ভাব এগুলা চলবে না।আমারও লাগবে।এই চরম বেয়াদবির জন্যই অবশেষে দুটোতে লড়াই বেধে যায়।এ লড়াই বাচার লড়াই,এ লড়াইয়ে জিততে হবে।যেমন প্রানীর সাইজ তেমন তার লড়াই, প্রায় মাইলখানেক বন লন্ড ভন্ড হয়ে যায়।থেমে থেমে কখনো কখনো সপ্তাহ গড়িয়ে যায়।তারপর একদিন প্রায় ক্ষেত্রেই অনভিজ্ঞ মাকনা অভিজ্ঞ সর্দারের কাছে হেরে যায়।শেষের দিন রক্তাক্ত মাকনা লেজ তুলে আল্লাহর দুনিয়ায় বিচার নাই বলে দৌড়ে ভাগে।সর্দার মাইলখানেক তাকে লৌড়ে এলাকা ছাড়া করে।তারপর তার হারেমের কাছে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসে।সে আসতেই হারেমের মাদীরা একে অন্যকে বলে বেড়ায় –বলছিলাম না ,উনার সাথে বেয়াদপি ধর্মেও সইবে না।
সাধারনত এরকম আহত মাকনা হাতিই লোকালয়ের জন্য বেজায় বিপদজনক।সর্দারের সাথে রাগ দেখাতে না পেরে এ রাগ মানুষসহ অন্যান্য প্রানীর উপর বর্তায়।তাই এরা প্রায় বনে ঝোপে ঝাড়ে লুকিয়ে থাকে,মানুষ কাছাকাছি এলেই চার্জ করে।এর মধ্যে দলে ফিরে যাবার জন্য হালকা চেষ্টা চালায়,কিন্তু সর্দার দেখা মাত্র আক্রমন বজায় রাখে। আর অন্যান্য হাতিরাও এবার আর সাইড দেয় না।এটাই তাকে আরো ক্ষেপিয়ে তুলে।সে বনে বাদাড়ে তার অভিযোগের চিহ্ন রেখে চলতে থাকে।আর এভাবেই সে আরো কিছু তার মতো দল থেকে বহিস্কৃত মাকনা হাতিকে খুজে পায়।তারা সবাই খোদার বিচারের অনিয়ম নিয়ে একমত হয়।এ ধরনের দুষ্ট মাকনা হাতির দলকে মালজুড়িয়া বলে।এরা সাক্ষাত খুনী।একটার থেকে আরেকটার মাথা থেকে শয়তানী বুদ্ধি বেশী থাকে।এরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালায় ,যা খায় নষ্ট করে তার থেকে বেশী।আর যদি দলবেধে মালজুড়িয়া হয়ে ঘুড়ে না বেড়ায়,তাহলে তার দশা হয় আমাদের বংগবাহাদুরের মতো।একা একা দূঃখী প্রানীটার মতো ঘুরে বেড়ায়।দলের সাথে থাকলে সাধারনত এমন বৃষ্টি-বন্যা থেকে তারা আগাম সতর্ক থাকতে পারে।দলের মাদী হাতিরাই অভিজ্ঞতায় এসব থেকে তাদের বাচিয়ে রাখে।আসামে মাহুতরা এদের বলে রানীঢুই ।
বংগবাহাদুর সম্ভবত এমন একা অবস্থা থেকেই বিপদে পড়ে ভেসে এসেছে। দলের সাথে থাকলে আরো দুই একটা হাতিও রৌমারি দিয়ে ভেসে আসতো।এ অবস্থায় তাকে মাসাধিককাল বন্যার পানিতে অপর্যাপ্ত খাদ্য নিয়ে কাটাতে হয়েছে।বনের হাতির বনে কোন খাদ্যের অভাব নাই।ফলে বংগবাহাদুর ক্রমশ দূর্বল হতে থাকে।আর দূঃখের ব্যাপার ,সে অনেকটা দক্ষিনে চলে আসে প্রায় বগুড়া গাইবান্ধার চরের কাছাকাছি ।তার আসামের জঙ্গলে যাওয়া আরো দুরহ হয়ে পড়ে।তবে একোয়া মাকনা হাতির লোকালয়ে প্রানহানী করার অনেক উদাহরন থাকলেও সেই হিসেবে বংগবাহাদুর কিন্তু যথেষ্ট ভদ্র ছিলো।তার খুনিয়া হয়ে যাবার কোন খবর এই একমাসে কেউ পায়নি।
এ ধরনের একোয়া মাকনা হাতিকে বনে ফেরত পাঠাতে হলে খুবই অভিজ্ঞ লোকের দরকার হয়।ভারতের মতো দেশেও দলমা পাহাড়ের হাতি মেদিনীপুরে নেমে এলে বা জলপাইগুড়ির হাতি লোকালয়ে নেমে এলে তাকে বনে ফেরত পাঠানো কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।আমি জানি না, আমাদের বনবিভাগের লোকেরা তাকে ঠিক কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করে। প্রথমদিন তাকে চেতনানাশক দেয়ার পর সে গিয়ে পুকুরে পরে ,এটা মারাত্বক ভুল হয়েছে।তারপরই দুইদিনের ভেতর আবার অজ্ঞান করাতে সে দুর্বল শরীরে স্ট্রোক করে ফেলে। মালয়শিয়া বা ভারতে অভিজ্ঞ ট্রাঙ্কুইলাইজার গানাররা হাতির শরীরের ওজন অনুপাতে চেতনানাশক ইমমোবিলন(হাতির ক্ষেত্রে ইটরফিন ইঞ্জেক্সন ব্যবহার করে,এটা মরফিন থেকেও শক্তিশালী)ব্যবহার করে।এবং ঔষোধ কাজ করার সাথে সাথে তারা হাতির অজ্ঞান দেহকে ঘন্টায় ঘন্টায় পানি ঢেলে ঠান্ডা রাখে যাতে হার্টবিট বেশী হয়ে না যায়।সাথে স্যালাইন রাখে।একিই সাথে এই অজ্ঞান অবস্থার প্রতিষেধক রেভিভন (এক্ষেত্রে ডিপ্রেনরফিন ইঞ্জেকসন রাখে) প্রস্তুত রাখে।এটা হাতির কানের পাতার মোটা শিরায় দেয়া হয়।অনেক ক্ষেত্রে রম্পান (কেটামিন জাইলাজাইন) ব্যবহার হয়।এটা জ্ঞান পুরোপুরি নাশ করে না কিন্তু হাতির পেশী অসাড় করে রাখে ।ফলে এসময় রম্পানের শিকার হাতিকে পালা পোষা দুইটা হাতির মাঝখানে রেখে আসামীর মতো কাংখিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।সে কোন জোরাজুরি চালানোর অবস্থায় তখন থাকে না।বংগবাহাদুরের শাররীক দূর্বলতা তাকে এই পরপর দুইবার চেতনানাশকের ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে পারেনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...