রাজিব গান্ধীর আমলের কথা,তার পররাষ্ট্র নীতির কথা একটু মনে করতে পারলে দেখবেন অন্য অনেকের চেয়ে রাজিব অনেক অসাম্প্রদায়িক ছিলেন।মা ইন্ধিরা গান্ধীর মতোই।তাদের দুজনের সময়েওই মুসলমান আর শিখেরা অনেক ভাইটাল পোস্টে ছিলো।সোজা কথায় এখনকার কট্টর হিন্দুত্ববাদ অন্তত তাদের এজেন্ডা ছিলো না।রাজিব তার সময়ে তার প্রতিবেশীদের সাথে খুব একটা জটিল পরিস্থিতিতে শুধু শুধু জড়াতে আগ্রহী ছিলেন না।যার ফলে অন্য অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে শ্রীলংকার তামিল সমস্যার একটা অগ্রসরমান প্রক্রিয়া তিনি চালু করেন।১৯৮৭ সালে তিনি ,শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট জয়াবর্ধনে আর এলটিটিই নেতা প্রভাকরনের মধ্যে একটা ত্রিপক্ষীয় শান্তির চেস্টা চালান।কিন্তু প্রভাকরন প্রথমে রাজি বলে জানিয়েও বিট্রে করেন বরাবরের ন্যায়।
এলটিটিই এর বিরোধিতা করে রাজিবের জন্য সুইসাইড স্কোয়াড প্রস্তুত করে।আসলে ইন্ধিরার হত্যাকান্ডের পর ধারনা করা হতো কোন এক শিখ খালসাপন্থী কট্টর গ্রুপই গান্ধী পরিবারের জন্য আবার হুমকি হয়ে উঠতে পারে।কিন্তু এটা ধারনার অতীত ছিলো যে,দক্ষিনে কোন উগ্র তামিল গ্রুপের হাতে গান্ধী পরিবারের কারো জীবনহানী ঘটবে।অথচ তাই ঘটেছিলো।আর এটার পরিণাম ভুগতে হয় তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরনকে ২০০৯ সালে।শ্রীলংকা সে বছর প্রভাকরন আর এলটিটিইকে সম্পুর্ন নিশ্চিহ্ন করে দিলেও ভারতে সেসময়ের কংগ্রেস সরকার তাদের টিকিয়ে রাখতে তেমন জোরালো ভূমিকা নেয়নি।বা নিতে পারেনি।
২১ মে,১৯৯১ সাল।রাজিব সমগ্র অন্ধ্র ,হায়দ্রাবাদ আর বিশাখাপট্টনম এ নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে ক্লান্ত ,ঘর্মাক্ত শরীরে মাদ্রাজের শ্রীপেরাম্বুদুরেতে আসেন।সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী তার মায়ের আমলের অত্যান্ত বিশ্বস্ত নেত্রী মারগাথান চন্দ্রশেখর।সেবার তার জয় প্রায় নিশ্চিত।জনসভার স্থলে বিশাল স্টেজে মিজ চন্দ্রশেখর,জি কে মুপানার ও তার সাথে অন্যান্য নেতাকর্মীরা।এসময় আবেদন এলো রাজিবকে তামিল সংস্কৃতিতে অভ্যর্থনা জানানো হবে।তাকে কবিতা আবৃতিসহ জয়মাল্য পড়ানো হবে।রাজিব অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হলেন।কিন্তু তার নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত রক্ষীরা জানালেন, ঘটনাস্থলে অপ্রত্যাশিত ভীড় দেখা যাচ্ছে।কিন্তু রাজিব তার জন্য পাতা লাল গালিচা দিয়ে হেটে পুষ্পমাল্য দেয়ার জন্য অপেক্ষমাণ যুবতিদের দিকে আগালেন।কবিতা আবৃত্তি করছে সুইসাইড স্কোয়াডের কোকিলা ,আত্মঘাতি দলের ধানু নামে এক যুবতী বড় পুষ্পমাল্য নিয়ে রাজিবের অপেক্ষায় ছিলেন।তাকে সহায়তাকারী নলিনি সহ অন্যরা ।এসময়ই রাজিব স্মিত হেসে তার রক্ষী কনস্টেবল অনুসুয়ার দিকে তাকালেন।হ্যা, তার কাছে হঠাত করে কেনো যেনো পরিস্থিতিটা ভালো লাগছে না।অনুসুয়া ধানুদের এতো কাছে ভীড় করে দাড়াতে নিষেধ করলেন।তখনিই ধানু একেবারে রাজিবের পায়ে এসে প্রনাম করার ভংগি করেই আরডিএক্স ডেটোনেটর প্রেস করে দেন।রাজিব ,অনুসুয়া,ধানু ,ক্যামেরাম্যান সবাই মুহুর্তেই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।রাত তখন সাড়ে নয়টার কিছু বেশী।
সোনিয়া আজকে দশটা বাজার পরও ঘুমাতে পারছেন না।সে নিয়মিত তাড়াতাড়ি বিছানায় যায়।এদিকে আজকের কংগ্রেসী অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বারামের স্ত্রী নলিনীর কাছেই দিল্লীতে সবার আগে ফোন আসে যে, রাজিব আর নেই।তিনি রাজিবের এপিএস ভি কে জর্জ কে ব্যাপারটা জানান।এপিএস হতভম্ব, সে চিৎকার করে বার বার জানতে চায়, সঠিক খবর জানান দ্রুত ।তাকে জানানো হয়,এটাই অন্তিম সংবাদ।সোনিয়াকে তিনি যেনো জানানোর প্রস্তুতি নেন।
সোনিয়া টেলিফোনের শব্দ শুনে রাজিবের বৈঠকখানায় আসেন।হতভম্ব এপিএস জানান(সে কান্নারত), মাদ্রাজ থেকে ফোন আসছে ম্যাডাম।ওইখানে একটা বোমা বিষ্ফোরন ঘটেছে।সোনিয়া স্তব্দ হয়ে যান।শুধু এটুকুই সে বলে- রাজিব কি মারা গিয়েছে?
মা নিহত হওয়ার ৭ বছর পর রাজিব নিহত হন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন