শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মর্সিয়া,২০১৭।

তাজা মৃত্যুর শোকে বিলাপ বা ইংরেজীতে যাকে লামেন্ট বলে সেটা করা আমাদের উপমহাদেশের এই অঞ্চলসহ আশেপাশের আরো কয়টি এলাকায় প্রচলিত একটা প্রথার মতো এবং এখনো এর প্রচলন আছে।এটা প্রধানত মহিলারাই করেন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে।আমি দেখেছি ,মাঝবয়েসী মহিলারার থেকেই এই বিলাপের শুরুটা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে হয়।এবং শুরু হয়ে যাওয়ার পর বয়স্ক মহিলারাও এর মধ্যে কিছু স্মৃতিচারন করে এতে গতি আনেন।তারপরই আবার নতুন গতিতে বিলাপ শুরু হয়ে মাটিতে গড়াগড়ির পরিস্থিতি তৈরী হয়।
মাতম বা বুক চাপড়ে ,ছুরি চাক্কু দিয়ে শিয়াদের মতো করে মর্সিয়া করা আমাদের এ অঞ্চলের প্রচলিত প্রথা নয়।গতকাল আওয়ামীলিগের নেতাকর্মীরা যেভাবে কালোকোট পড়ে হায় হায় করেছে ,এটা এই ভূ-খন্ডে অত্যান্ত অভিনব একটা রিচুয়াল।আমার পরিচিত জনেরা গতকাল বেদম কৌতুক অনুভব করেছে। ২০ টা ইত্যাদি ম্যাগাজিনও এই আনন্দ দিতে পারে না।
যেই কথা বলছিলাম, আমাদের বাংলাদেশে এই বিলাপটাই প্রচলিত।এতে যারা অংশ নেয় তারা সবাই নিকটাত্মীয়।তাই তাদের অংশগ্রহন স্বাভাবিক তাগিদ।কিন্তু ভারতের রাজস্থানে এক উপজাতীয় সম্প্রদায় আছে, যাদের মধ্যে বিলাপ করা আস্ত এক দলই আছে ,যারা টাকার বিনিময়ে কেউ মারা গেলে বিলাপ করার জন্য ভাড়ায় অংশগ্রহন করে।আমাদের দেশে বিয়ে-শাদীতে ব্যান্ড-পার্টির মতোই।এই বিলাপের মহিলার দল একজন শক্তপোক্ত সুঠামদেহীর বয়স্ক মহিলার নিয়ন্ত্রনে থাকে।কারন সেইরকম মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে উচ্চস্বরে বিলাপ করার সাথে সাথে পুরো দলকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য স্বাস্থ্যের দরকার আছে।উনিই টাকাটা বুঝে পান এবং বয়স পারফরমেন্স অনুযায়ী দলের অন্যান্যদের মধ্যে টাকা বন্টন করেন।
দলে নবাগতদের কমই নেয়া হয়।কারন বয়স্ক দলনেত্রীর এই মৃতের বাড়ীতে যেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বিলাপের সাথে উঠানের মাটি নিয়ে ফেলা নবাগতের পক্ষে হুট করে ধরে ফেলা সম্ভব নয়।আর অনেক পেশার মতোই এই জিনিসটা সময় ,বয়স আর অভিজ্ঞতায় আসে।দেখেন নাই, কাল হাজি ইকবাল যেভাবে হায় মুজিব হায় মুজিব করেছে, এটা সেখানের ইয়ংদের পক্ষে করা সম্ভব হয় নাই।এটা আসবে আরো সময় গেলে।প্রাথমিক লজ্জাবোধ কেটে যাওয়ার পর।
একিই সাথে বিলাপ দলের নেত্রী খেয়াল করে ,উনি যেভাবে সুর করে বিলাপ করার সাথে সাথে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে ব্যাপারটায় একটা হৃদয়বিদারক ভাব আনেন,তা আর কে কে করতেছে।কারন তাদের খেপ শেষ করে যাওয়ার পর সে টাকা পে করবে যার যার সেদিনের পারফর্মেন্স অনুযায়ী।উনি খেয়াল করেছেন,নবাগত কেউ কেউ উনার একটিভিটিজে হাসি দিয়ে ফেলেছে, কিংবা সেখানে গিয়ে কোন যুবকের সাথে বিলাপের সময় চলাকালেই চোখাচোখি করেছে।উনি সব খেয়াল করেছেন।অবশ্য উনি সেখানেই তাদের চিমটি বা থাপ্পড় মেরে বলেছেন ইশারায় , এই হারামজাদি আজ প্রগ্রামের পর বুঝাবো তোকে।এভাবে বিলাপ কর, হ্যা হ্যা গড়াগড়ি দে।মুখের হাসিভাব লুকা।কবে শিখবি রে মাগির ঝি মাগি! নাগরের লগে টাংকিবাজি বন্ধ কর।ভালো করে শিখে রাখ আমার থেকে।আর কবে শিখবি! আমি মরলে শিখবি!
এমনি সব অদ্ভুত দল আছে।মান্টোর গল্পে বা শীর্ষেন্দুর গল্পে এমন সব ঝগড়াঝাটিতে ভাড়ায় যাওয়া মহিলার দলের কথাও পড়েছি।এরা যেই পরিবারের পক্ষ নিয়ে ঝগড়ায় অংশ নিতে যায় তাদের থেকে যাদের উপর আক্রমন চালানো হবে তাদের সম্পর্কে যতো কুৎসা বদনাম আছে তা জেনে যায়।আর পেশাগত প্রয়োজনীয়তায় নিজেরাও কিছু দূর্নাম সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।সাথে করে সংগ্রহ করতে থাকে ছেড়া জুতা, ভাংগা ঝাড়ু, নোংরা কাপড় সহ বিভিন্ন জিনিস।আবাচ্চ্য গালাগালির সময় এসব প্রতিপক্ষের দিকে ছুড়ে মেরে তাদের টেম্পার ও আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরানো হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...