আজকে ফেসবুক ভাষ্কর্যময়।আচ্ছা,এই ভাষ্কর্য(সুপ্রীম কোর্টের) এটার পরিকল্পনা,অনুমোদন আর অর্থায়ন করেছিলো কে?আর ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তই কে দিলো?নিশ্চয় এগুলোর একটা লিখিত ডকুমেন্ট থাকার কথা। না,এমনিতেই জানার কৌতুহল হলো।পৃথিবীর বহুদেশে ভাষ্কর্য নির্মিত হয়,সেগুলোর একটা সিগ্নিফিকেন্ট কারন থাকে।অর্থাত ভাষ্কর্যের মধ্যে দিয়েই মানুষ এটা তৈরীর ইতিহাসটা জেনে যান।ইউরোপ আর রাশিয়া তো ভাষ্কর্যেরই দেশ।
আজ একটা নারী ভাষ্কর্যের কথা মনে পড়লো।এটাই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নারী ভাষ্কর্যকর্ম।এর নাম “দ্য মাদারল্যান্ড কলিং”।এটা আছে আজকের রাশিয়ার ভলগোগ্রাদের(সাবেক স্টালিনগ্রাদ)মামায়েভ কুরগান নামক টিলার উপর।প্লিংথ লেভেল থেকে এর উচ্চতা ৮৫ মিটার।এই নারীমূর্তির উত্তরীয়টা পর্যন্ত কংক্রীটে অনেকটা ঝুলানো হয়েছে ,যেনো সেটা বাতাসে উড়ছে।এটিও গ্রীক ভাষ্কর্য অনুসারে নির্মিত।যেটার থীম উইংগড ভিক্টোরী অভ সামোথ্রেস দ্বারা প্রভাবিত।স্থপতি নিকোলাই নিকিতিন ও ইয়েভগেনী ভুশ্চেতিচ এটি নির্মান করেন ১৯৬৮ সালে।এই নারী মূর্তির মডেল হন ভ্যালেন্তিনা আইজোতভ।উনি এখনো বেচে আছেন।
বস্তুত নাজি জার্মানির সৈন্যরা যখন ১৯৪১ সালে নিপার নদী পেরিয়ে খারকভের দখল নেয়,রাশিয়া বিপদে পড়ে যায়।মস্কোতে নাজি জার্মানি প্রতিরক্ষা লাইন ভেদ করতে ব্যর্থ হয়ে যায়।পাল্টা আক্রমনে জার্মানি মস্কোতে হেরে যায়।তাই হিটলারের সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে স্টালিনের নামের শহর স্টালিনগ্রাদের উপর।তার লক্ষ্য হলো,দক্ষিনের এই শহরের দখল নিয়ে গিয়ে জার্মান বাহিনী যেনো আপসেরন পেনিনসুলার আজারবাইজানের বাকুতে গিয়ে হাজির হয়।সেটাই সোভিয়েত রাশিয়ার প্রধানতম তৈল আর জ্বালানীর আধার।তাহলেই রাশিয়া দমে যাবে,জ্বালানীর অভাবে।যখন এরই মধ্যে খারকভের পতনের ফলে ইউক্রেন আর দনবাসের কয়লা অঞ্চল নাজিদের হাতে চলে গেছে।ফলে স্টালিনগ্রাদে নাজি জার্মানীর ফিল্ড মার্শাল পাউল্যুসের ৬ষ্ট আর্মি এসে উপস্থিত হলে রাশিয়া দক্ষিনে বিচ্ছিন্ন হবার আশঙ্কায় পৌছে যায়।ফলে ঘোরতর যুদ্ধ বেধে যায়।স্টালিনগ্রাদের সমস্ত শহর নাজিদের হাতে এসে যায়,কেবল মামায়েভ টিলা,সার্জেন্ট পাভলভ ভবন আর কর্নেল জাভলোতিনির হাউস বাদে।মামায়েভ টিলায় সোভিয়েত লালফৌজ অগনিত সৈন্য হারাবার পরও দখল ছাড়েনি।বিজয়ের আগ পর্যন্ত এর দখল রুশ ফৌজ ধরে রাখে।
এখানেই সেই নারীমূর্তির ভাষ্কর্য বানানো হয়। ২০০ ধাপ সিড়ি ভেঙ্গে এই মুর্তির কাছে যেতে হয়।কারন বরাবর ২০০ দিন স্টালিনগ্রাদ নাজি জার্মানীর সাথে লড়েছিলো।নারীমূর্তির হাতে তলোয়ারটা ঠিক যেদিকে ধরা নাজি জার্মানীর সৈন্যরা সেদিক দিয়েই তাদের শহরে এসেছিলো,আর আরেক হাত দিয়ে নিজের সৈন্যদের আহবান করার জন্য হাতটা যেদিকে ফেরানো সেখান দিয়েই ভল্গা নদী পার হয়ে সোভিয়েত যোদ্ধার এসেছিলো।এই ভাষ্কর্যের পাদদেশেই এই যুদ্ধের বীর মার্শাল ভাসিলি চুইকভকে সমাহিত করে সন্মান জানান সোভিয়েত জনগন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন