শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

কুমারী মাটির ঘুম ভাংলো।- মিখাইল শোলোকভ।

শ্চুকার যৌথখামারের ঘোড়া বিভাগের দায়িত্ব পেলো।ইয়াকভ লুকিচ তার এ দায়িত্ব প্রাপ্তিতে খুশী নন।জন্মের গপ্পিস শ্চুকার অবশ্য এতে খুবই খুশী ,সে জানালো ,এটা তার জন্য কিছু না,কারন ইয়াকভের মাথায় যতো চুল তারও অধিক ঘোড়া সে একজনমে পার করেছে।এতে করে বাকি সকলের মনে পড়ে গেলো শ্চুকার জীবনে মাত্র দুইবার ঘোড়ার কারবারী করেছে।প্রথমবারের টা একটা নিকৃষ্টমানের ঘোড়া , কিন্তু ২য়বারের ঘোড়ার কথা কেউ জীবনেও ভুলতে পারবে না।
শ্চুকার এই ঘোড়াটা কিনেছিলো জিপসিদের কাছ থেকে।যে জিপসি এটা বিক্রি করেছিলো সে জানিয়েছিলো ,এই মাদি ঘোড়া হতে পারে মাদি,কিন্তু দৌড়ালে দুনিয়া কেপে যায়।তুমি এটা পুরো দুনিয়া ঘুরেও কোথাও পাবে না।শ্চুকার জানালো, কিন্তু এটা তো দেখি রোম উসকো খুসকো ওলা,দাত প্রায় নেই বললেই চলে, আর খুরগুলোও ভাঙ্গা।
জিপসি জানালো,দেখো শ্চুকার ওর দাত দিয়ে তোমার কি সমস্যা বলো তো, বরং দাত না থাকলেই তো খাবে কম।বলতে গেলে এটা একেবারেই বাচ্চা(জিপসি ৪০ বছর একে চালিয়েছে), কি এক অজানা অসুখে যে এটার দাতগুলো পড়ে গেলো!আর একটা চোখ যদি নস্ট হয়েই থাকে তাতে কিইবা আসে যায়।তাছাড়া নস্ট বলাটা ঠিক না, এই একটা চোখে কি সাদা পর্দা হয়ে ফুলে উঠেছে।আর খুরের কথা বলছো,ও ঠিক নতুনের মতো করে ঠিক হয়ে যাবে।হ্যা ,হতে পারে চোখের দেখায় ওকে রুপসী বলা চলে না।তার দরকারটাই বা কি, তুমি তো ওকে নিয়ে বিছানায় শুতে যাচ্ছো না, নাকি যাচ্ছো?
-কুমারী মাটির ঘুম ভাংলো( মিখাইল শোলোকভ)।

লাইগেশন।

বাংলাদেশে এনজিওদের একটা অদ্ভুত জন্ম-নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম আছে |এখানে পুরুষটিকে লাইগেশন করে খাসি করে দেয়া হয়, আর এরপর তাকে একসেট নতুন লুংগি গামছা সহ একটি পাঠা(যেটার খাসি করার কথা ছিলো) ও ছাগি উপহার দেয়া হয়| ফেরার পথেই পাঠা এমন সব পারফরমেন্স দেখাতে থাকে,তাতে লাইগেশন করা ব্যক্তি ভাবনায় পড়ে যায় যে, সেকি কাজটা ভালো করলো?

মুল্যবোধের অভাব!

কোপায়ে দিলো কে? আর মুল্যবোধের অভাব হয়ে গেলো জনগনের।
গ্রামের চেয়ারম্যানের পোলায় এক গাভীরে একা পেয়ে করে দিলো।গাভীর মালিক কানতে কানতে বিচার চাইতে এলো চেয়ারম্যানের বাড়িতে।সাথে হতভাগ্য গাভী ,গাভীর চোখেও জল ।চেয়ারম্যান সব শুনে ক্ষেপে উঠলো ,এসব আমার শত্রু-পক্ষের ষড়যন্ত্র। আমি খবর নিয়েছি, তোমার গাভীর চরিত্রের ঠিক নাই, ওর মুল্যবোধের অভাব।
এই যে এতোগুলা কথা বলতেছি, তারমধ্যেও তোমার গাভীর মধ্যে কোন লজ্জা-শরম, হায়া,ইল্লতের কোন চিহ্ন দেখা যায়তেছে না।দেখেন সবাই ,কি বেহায়ার মতো এখনো খড় চাবাইয়া যাইতেছে।

আমার পোলা।

আমার সাড়ে চার বছরের পোলার প্রশ্নের জিজ্ঞাসায় আমি মাঝে মাঝে চোখে আধার দেখি|শুধু কেনো ,কেনো আর কেনো|আজকে রেস্টুরেন্ট এর পাশ দিয়ে আসার সময় জিজ্ঞেস করে, বাবা এখানে কি হয়? আমি বললাম,এটা ভাতের দোকান(দোকান সে খুব ভালো চিনে)|সে বলে, ও আইচ্ছা, বাসায় ভাত ভালো না লাগলে এখানে এসে খায়,না বাবা( আমি তার এতো লম্বা কারন বর্ননায় হতভম্ব) |মানে আপনারা বুঝলেন তো,উনি যে কারনে দোকানে যায়,সেই কারনটাই খুজে পেলেন| 

সাইক্লোন কায়ান্ট,২০১৬।

চট্টগ্রাম থম মেরে গেছে,বিষণ্ণ, ছায়াময়।ভালোই লাগে এমন আবহাওয়া।এমন দিনে কখনো স্কুল করতাম না।সাইক্লোন কায়ান্ট এর প্রভাব এটা।ছোট থাকতেই এইসব সাইক্লোন,তুফান আমার বেজায় প্রিয় ছিলো।কারন স্কুল ফাকি দেয়া।একটা জিনিস পড়ে খুব মজা পেলাম।পাগল আমি একা ছিলাম না।আমার থেকেও অনেক বড় মাপের পাগল আর উচুদরের গবেষক ছিলেন সাইক্লোন শব্দটা যিনি আবিষ্কার করেছেন সেই ব্রিটিশ ভদ্রলোক হেনরি পিডিংটন।উনি ১৮২০-২২ সালের দিকে কলকাতায় আসেন শিপিং কোম্পানীর ইন্সপেক্টর এর কাজ নিয়ে।
জীবনের প্রথমদিকেই উনি ক্যারাবীয় অঞ্চলে ছিলেন।দেখেছেন সেখানের প্রলয়ঙ্কর সব হ্যারিকেন।তখনই উনি এই ঝড় তুফানের প্রেমে পড়েন।ঘন্টার পর ঘন্টা হ্যারিকেনের তান্ডবের ভেতর বসে উনি চিৎকার করে ম্যাডম্যাক্স ফুরির পাক্সের মতো "ওয়াট্টে বিউটিফুল ডে" বলে উঠতেন।সেখান থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর চাকুরী নিয়ে কলকাতা আগমন।এখানে এসেই উনি বংগোপসাগরের প্রবল সব ঘুর্নিঝড় দেখেন।উনি ১৮৩৩,১৮৩৭ ও ১৮৫২ সালের প্রলয়ঙ্করী ঝড়্গুলো দেখেন।উনিই প্রথম খেয়াল করেন এসব ঘুর্নিঝড়ের একটা শান্ত কেন্দ্র আছে,যাকে কেন্দ্র করে বাতাস প্রবলবেগে ঘুরে,উনি এটাও বুঝে যান উত্তর গোলার্ধে এই বায়ুর ঘুর্নি পাক ঘড়ির কাটার বিপরীতে ঘুরে আর দক্ষিন গোলার্ধে সেটা ঘড়ির কাটার অনুকুলে ঘুরে( আমার ভাই মুন্না একদিন আমাকে বলেছিল উত্তর গোলার্ধে বেসিনের পানি ঘড়ির কাটার বিপরীতে ঘুরে বেরোয়,আর অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিন গোলার্ধে তা ঘড়ির কাটার অনুকুলে ঘুরে বেরোয়,অল্প পানি না,বেশী পানির ক্ষেত্রে)।
তো ঘুর্নিঝড়ের শান্তকেন্দ্রটা দেখতে চোখের মতো দেখায় বলে গ্রীক একচোখো দৈত্য সাইক্লোপস থেকে পিডিংটন এর নাম সাইক্লোন দেন।আমাদের বংগোপসাগরের সব ঝড় সাইক্লোন। ক্যারাবীয় অঞ্চলে তা হ্যারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সেটাই টাইফুন (শব্দটা কিন্তু আরবি তুফান থেকেই বনিকদের সাথে সেখানে গেছে।
হেনরি পিডিংটন ছিলেন সুন্দরবনের একজন বড় মাপের প্রেমিক।তিনি বুঝেছিলেন সুন্দরবন আর তার ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সাগরের সব সাইক্লোন থেকে প্রাকৃতিকভাবে বাংলাকে বুক দিয়ে আগলে রাখে।তাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বড় লাট লর্ড ক্যানিং যখন কলকাতা নগরী থেকে অনেকটা দক্ষিণে ক্যানিং বন্দর মাতলা নদীর তীরে সুন্দরবন কেটে নির্মান করতে থাকেন,তিনি এর বিরোধিতা করেন।তিনি জানান, এভাবে বন কেটে পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলার কোন কারন নাই।এই বন্দর ১৫ বছরও টিকবে না ঝড়ের মুখে।লর্ড ক্যানিং তার নামের বন্দরে রেললাইন ও টেনে নিয়ে যান।কিন্তু ১৫ বছর নয়,মাত্র ৫ বছর পরই প্রবল সাইক্লোনে ক্যানিং বন্দর পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়।

১৪ লম্বর!

কি কথা থেকে কি কথা এসে যায়! চট্টগ্রাম এর লোকেরা লম্বর(নম্বর) ট্যাগিং এ অনেক আগে থেকেই অভ্যস্ত। প্রতারনার জন্য এখানে লম্বর ট্যাগিং লিংগ বা জেন্ডারভেদে হয়।যেমন: পুরুষের ক্ষেত্রে সেটার সম্মোধন,.... দানির ফোয়া,তর ছিটিং এর মারে বাপ ১৪ লম্বর ছিটিং, মহিলাদের ক্ষেত্রে দুই লম্বর মাইয়া ফোয়া।
চট্টগ্রামের সিএনজি ওলারা তাই ১৫ লাম্বার যাবি না? এটা শুনলে অবাক হয় না।১৫ লম্বর মানে নেভালের ওখানে, ৩নম্বর মানে এমপিবি গেইট নিউমোরিং।তেমনি চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ বিভাগের লোকেরা যখন জানে কেউ আছে ২১০ এ,তারা বুঝে সে রাউজান ২১০ মেগা তাপবিদ্যুৎ এ আছে।তেমনি সিক্সটি মেগাওয়াট কেউ আছে জানলে বুঝে ফেলে সে শিকলবাহা বিদ্যুতকেন্দ্রে আছে।
এই নাম্বারিং এ বিপত্তি ঘটে মাঝে মাঝে,বেজায় বিপত্তি। জিইসি মোড়ের পরেই আছে ষোলশহর ২ নম্বর রেলগেইট।সেখানে একবার বাসের হেল্পার সং ক্ষেপে মহিলা নামার সময় বলে ফেলেছিলো, ওস্তাদ বামে ফেলাস্টিক,২ নম্বর মাইয়া ফোয়া নামিবো।মহিলার মাইরও খাইছে, পাবলিকের চড়-থাপ্পড়।কানে ধরে ১০ বার বলতে হইছে, দুই নম্বর গেইট মহিলা নামবে,মহিলা নামবে।

ঘুর্নিঝড় নাডা,২০১৬।

নাডা দেখা যাচ্ছে ,চট্টগ্রাম কক্সবাজারের দিকেই আসতেছে।মনে করেছিলাম, মুস্তাফিজের কাটারের মতো সুইং করে এদিক ওদিক চলে যাবে।অনেকদিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম দ্য গ্রেট জ্যাক লন্ডনের,এই টর্ণেডো নিয়ে। গল্পটির নাম "দ্য হিদেন" ।
ঘুর্নিঝড় কেন্দ্রের(মানে চোখটার, যাকে শান্ত কেন্দ্র বলে) বাতাসের চাপ একেবারে কম থাকে, সেখানের ব্যারোমিটারের পারদ তরতর করে পড়ে যায়।এই শুনশান নীরবতায় যেকোন ক্যাপ্টেন এর স্নায়ু ঠিক থাকতে পারে না।যখন তিনি বুঝে যান যে,তিনি সাগরে একটা সাইক্লোনের শান্তকেন্দ্রে ঢুকে পড়েছেন।এরপরই আসবে সেই প্রলয়ঙ্করী তান্ডব।সেই আমলে তো আর অত্যাধুনিক নেভিগেশন ইকুয়েপমেন্ট ছিলো না।ক্যাপ্টেন এসে গল্পের নায়ক অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীকে ডেকে ব্যারোমিটারের রিডিং দেখান।তার কলজে চমকে উঠে।ব্যারোমিটার এ ১০ এর নীচে পারদ নেমে যাচ্ছে।নিশ্চিত কোন ভয়ঙ্কর ঝড় আসছে।
জাহাজটি পলেনেশিয়ার রারাতোঙ্গার থেকে ঠেসে মাল উঠিয়েছে,অনেকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে।পুরো জাহাজে মালামাল,মানুষ, মুরগী ,শুয়োর ঠাসাঠাসি।এরমধ্যে ট্রপিক্যাল রোদ ,এরই মধ্যে জাহাজে একজনের গুটি বসন্ত দেখা দিয়েছে।সেখান থেকে তা দ্রুত জাহাজে ছড়িয়ে পড়েছে।সবাই বুঝে গেছে রারাতোঙ্গা থেকে তাহিতি যাওয়ার আগেই বেশীর ভাগের আর দুনিয়া দেখা হবে না।তাই সবাই জাহাজের সেলারের মদ হতে শুরু করে যেসব মদের পিপে তাহিতি যাচ্ছিলো ,সব পিপে ভেঙ্গে আকন্ঠ গেলা শুরু করেছে।বাচার আশা থাকলে তো সবাই মদ গেলার লিমিট নিয়ে ভাবতো।সবাই বুঝে গেছে ,এই গুটি বসন্তের হাত থেকে রেহাই নাই।তাই নিজেদের মদে আকন্ঠ ডুবিয়ে নিচ্ছে,এমনকি মদে গোসল করে শরীর জীবানুমুক্ত করে নিচ্ছে।সবার ধারনা , শরীরের ভেতরের মদ ভেতরের জীবানু পুড়িয়ে ছাই করে দেবে আর বাইরের মদ বাইরের জীবানু ছাই করে দেবে।
তারপর একসময় টর্নেডো এলো।তার বর্ননা বেশী করে দেবো না।গল্পের নায়ক পাঠকদের এই টর্ণেডোর তান্ডব বোঝার জন্য অনুভব করতে বলেছেন, মনে করুন বাতাস নয়, কোটি কোটি টন মিহি বালু প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে।আর তার সম্পুর্ন ভরবেগ আপনি অনুভব করছেন।এটাই।

পার্টস অভ স্পিচ।

আমার পাশ দিয়ে এক লোক কানে ফোন নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সহিত বলে যাচ্ছে, কিয়ারে কুত্তার বাইচ্চা, হোন কিল্লাই দরস না।হইসা খরচ করি তোগো কামে তোগোরে হোন করি, আড়ে কি কোনো বুতে নি হোন মাইচ্ছে।
আমি ভাবলাম, একলাইনে "হোন "কথাটাই কতো না অর্থব্যঞ্জক ও তা ৎপর্যপুর্ন। ছোট থাকতে পড়া পার্টস অভ স্পিচ ভুলে গেছিলাম। নাউন, প্রোনাউন, ভার্ব,এডভার্ব, প্রি পজিশন সব ভুলে গেছি। কার কি কাজ ছিলো সব আস্তে আস্তে মনে করতেছি।শুধু শেষের অশরীরী কিছুর সাথে ইন্টারকোর্স বাদ দিয়ে।

শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পর্দন।

পাদ নিয়ে কিছু লেখা অনেকটা ট্যাবুর পর্যায়ে পড়ে দেখা যায়।কেউ কিছু এ সম্পর্কে প্রায় লেখেই না।সন্মানহানীর ভয়ে।অথচ স্তন্যপায়ী সহ আরো অনেক প্রানি নিয়মিতই পাদে।আমি হাঙ্গরকেও পাদ দিতে ন্যাট জিওতে দেখেছি।মানুষের মতো এমনকি গরু,ছাগল আর হাতিরাও পাদে। হাতিরা বনের যে গভীর ছায়াঘন স্থানে দুপুরের নিদ্রা বা সিয়েস্তায় থাকে ,তার কাছাকাছি গেলেও অনেকটা দূর থেকে তাদের পেটের গুড় গুড়ানী শব্দ বা পাদের আওয়াজ পাওয়া যায়। অনেক সময় তাদের বড়দের তীব্র পর্দনের শব্দে শিশু হাতিরা ভয়ে কেপে উঠে।
আর আমাদের মধ্যে শিশুরাই নির্মল আনন্দে এটা নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করে।কিন্তু কখনো আমি কোন সুন্দরীকে এটা নিয়ে স্পষ্ট কিছু লিখতে বা বলতে শুনি নাই।ব্যতিক্রম দেখলাম, সুন্দরী নার্গিস ফখরী।গতকাল দেখলাম সে একটা বিলাসবহুল জাকুজি বাথটাবে স্নানরত অবস্থায় থেকে একটা ছবি টুইট করেছে।স্টাটাসে লিখেছে, অসাধারন ফিলিংস ! আর যাদের জাকুজি নাই তারা গরম পানি বাথটাবে দিন আর পেদে পানিতে বুঁদ বুঁদ সৃস্টি করুন।আমি তার সাহস আর সেন্স অভ হিউমারের প্রশংসা করি।বললাম তো, এমন আমি কখনো শুনি ও দেখি নাই।
আমি ছোট থাকতে মনে করতাম, পরী আর সুন্দরীরা কখনো পাদাপাদি করেই না।এটা আমাদের গরীবদের একটা একচেটিয়া ছোটলোকি ব্যাপার।কিন্তু বড়বেলায় জানলাম, বিজ্ঞানীরা বলেন, ফ্রিকোয়েন্টলি পাদা একটা স্বাস্থ্যকর ব্যাপার।উন্নত বিশ্বে কেউ জনসমক্ষে এটা দিয়ে ফেললে এক্সকিউজ মি বলে ক্ষমা চান।কিন্তু এই খেলা এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে কেউ খেলে না।এখানে লুকিয়ে আলগোছে ছেড়ে দেয়া হয়।আর এক গ্রাম লোক এ ওকে সন্দেহের দৃস্টিতে দেখে।আর দাতা দূর থেকে নির্মল আনন্দ উপভোগ করে।
একবার অস্ট্রেলিয়ায় এক মহিলার ওপেন হার্ট সার্জারি হবে।কিন্তু সে মহিলা ছিলো তীব্র সুচিবায়ুগ্রস্থ।সে তার সার্জনদের অপারেশনের পুর্বে জিজ্ঞেস করে ,আমার এই অস্ত্রপ্রচার কতোটা সময় লাগতে পারে? ডাক্তাররা জানালো, ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।
মহিলাঃ আমাকে যে ছুরি-চাক্কু দিয়ে অপারেশন করবেন সেগুলো নিশ্চয় স্টেরিলাইজ করা?
ডাক্তারঃ অবশ্যই ।মুসলমানি করার স্কালপেল যেখানে স্টেরিলাইজ করা সেখানে ওপেন হার্ট এর অস্রপাতি কিভাবে না করা থাকবে।উন্নত দেশ বিধায় এ জাতীয় প্রশ্ন সহ্য করা হলো। বাংলাদেশ হলে আপনাকে এখনি কানে ধরে বের করে দেয়া হতো।
মহিলাঃ কিন্তু আসল প্রশ্ন এখনো আপনাকে আমি করি নাই।ছুরি-চাক্কু স্টেরিলাইজ এটা আমি মেনে নিলাম যে,সেগুলো সম্পুর্ন জীবানুমুক্ত।কিন্তু আপনারা পাঁচ পাঁচটা লোক এই পাঁচ ঘন্টা যে না পেদে থাকবেন তার গ্যারান্টি কি?(ডাক্তাররা স্তম্বিত,আক্রমন এদিক দিয়ে আসবে স্বপ্নেও ভাবেন নি) আপনারাই তো পাদাপাদি করে সেই জীবানুমুক্ত ছুরি-চাক্কু পুরোপুরি ইনফেকশাস করে আমাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন।
আর সার্জনদের এটা সহ্য হলো না।উনারা তাকে দ্রুত অবচেতন করলেন,কারন আর ১০ মিনিট এই মহিলা কথা বললে উনারা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবার উপক্রম করতে পারেন।পরে কিন্তু সার্জনরা চিন্তা করলেন ,আসলে কি পাদাপাদির ফলে জীবানু নির্গত হয়ে স্টেরিলাইজ করা ছুরি চাক্কু সংক্রামিত করতে পারে?গবেষনা করা হলো, তাতে দেখা গেলো পাদে নির্দোষ মিথেন গ্যাস নির্গত হয়।আর ততোধিক নির্দোষ দইয়ের ল্যাক্টিভ ব্যাকটেরিয়া বাতাসে বের হয়।এটা মোটেই ক্ষতিকর নয়।কেবল ওই মিথেন গ্যাসের সংস্পর্শে কেউ ম্যাচ আর গ্যাসলাইট না জ্বালালেই হলো।
আরেকটি নির্দোষ কৌতুক বলে শেষ করছি, একবার আফ্রিকান এক প্রেসিডেন্ট ইংল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলো।তো রানী এলিজাভেথ যাদের বেশী সন্মান দেন ,তাদের বিশাল শায়ার ঘোড়ার জুড়ী গাড়ীতে ঐতিহ্য মোতাবেক তিনি নিজে অতিথীকে নিয়ে বাকিং হাম প্যালেসে প্রবেশ করেন।অতিথী নিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর একটা শায়ার ঘোড়া সশব্দে পেদে দেয়।রানীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়।তিনি ক্ষমা চেয়ে এক্সকিউজ মি বলেন।আর আফ্রিকান প্রেসিডেন্টও অভব্য নন।তিনিও অক্সফোর্ডে উচ্চশিক্ষিত।তিনি সহাস্যে জানালেন,এতে ক্ষমা চাওয়ার কিছুই নেই হার রয়াল হাইনেস।আমিও প্রায়ই দিই। মানুষ মাত্রেওই এটা দেয়,কেবল এঞ্জেলরা বাদে।

হস্তীপুরাণ।

গতকালকে মারা যাওয়া হাতি বংগ বাহাদুর একটি একোয়া(একলা) মাকনা হাতি,অর্থাত দাতবিহীন পুরুষ হাতি।হাতিদের সমাজে মাকনা হাতিরা বেয়াদপ বলে গন্য হয়।তারা হলো সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত যুবক হাতি।মনে অনেক খিদা,চোখে অনেক তৃষ্ণা ,কিন্তু সর্দার হাতির হারেমের দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতেও পারে না।সর্দার ফুসে উঠে ইঙ্গিত দেয়- তোর বনে বাদাড়ে ঘুরার টাইম এসে গেছে,কোনদিন যে ধরে লাথিয়ে বিদায় করবো।তাই দলের মুল পালের গোদা দান্তাল হাতিটা মাকনাদের খুব চোখে চোখে রাখে।কেউ বিশ্বাস করবে না ,হাতিদের মধ্যে পরকিয়া আছে এবং হাতিরাই মানুষের মতো একমাত্র প্রানী যাদের নানী,দাদি ও খালা আছে ।এই মাকনারাই রাতে লুকিয়ে এসে মাদিদের মধ্যে থেকে রাত পার করে যায়।সর্দার হাতি টের পেয়ে পেয়েও পায় না।তবে হারেমের মাদীদের শাসায় ,আমি সব দেখি ,আমি কলাপাতা চাবাই না। যেইদিন ধরবো ঐদিন কারো রেহাই নাই।
মাকনারা তলে তলে ফুসতে থাকে।প্রায়ই ইচ্ছে করে ঘাউরামি করে বেড়ায়।সর্দার বুঝে কিন্তু ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষায় থাকে মাকনাটাকে ঢিঢ করার জন্য।তারপর একদিন মাকনা চ্যালেঞ্জ দেয় যে, আপনারটা মেশিন আর আমারটা বুঝি ঝাড়ূ।নিজে শান্তি করে মুখে পীরের ভাব এগুলা চলবে না।আমারও লাগবে।এই চরম বেয়াদবির জন্যই অবশেষে দুটোতে লড়াই বেধে যায়।এ লড়াই বাচার লড়াই,এ লড়াইয়ে জিততে হবে।যেমন প্রানীর সাইজ তেমন তার লড়াই, প্রায় মাইলখানেক বন লন্ড ভন্ড হয়ে যায়।থেমে থেমে কখনো কখনো সপ্তাহ গড়িয়ে যায়।তারপর একদিন প্রায় ক্ষেত্রেই অনভিজ্ঞ মাকনা অভিজ্ঞ সর্দারের কাছে হেরে যায়।শেষের দিন রক্তাক্ত মাকনা লেজ তুলে আল্লাহর দুনিয়ায় বিচার নাই বলে দৌড়ে ভাগে।সর্দার মাইলখানেক তাকে লৌড়ে এলাকা ছাড়া করে।তারপর তার হারেমের কাছে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসে।সে আসতেই হারেমের মাদীরা একে অন্যকে বলে বেড়ায় –বলছিলাম না ,উনার সাথে বেয়াদপি ধর্মেও সইবে না।
সাধারনত এরকম আহত মাকনা হাতিই লোকালয়ের জন্য বেজায় বিপদজনক।সর্দারের সাথে রাগ দেখাতে না পেরে এ রাগ মানুষসহ অন্যান্য প্রানীর উপর বর্তায়।তাই এরা প্রায় বনে ঝোপে ঝাড়ে লুকিয়ে থাকে,মানুষ কাছাকাছি এলেই চার্জ করে।এর মধ্যে দলে ফিরে যাবার জন্য হালকা চেষ্টা চালায়,কিন্তু সর্দার দেখা মাত্র আক্রমন বজায় রাখে। আর অন্যান্য হাতিরাও এবার আর সাইড দেয় না।এটাই তাকে আরো ক্ষেপিয়ে তুলে।সে বনে বাদাড়ে তার অভিযোগের চিহ্ন রেখে চলতে থাকে।আর এভাবেই সে আরো কিছু তার মতো দল থেকে বহিস্কৃত মাকনা হাতিকে খুজে পায়।তারা সবাই খোদার বিচারের অনিয়ম নিয়ে একমত হয়।এ ধরনের দুষ্ট মাকনা হাতির দলকে মালজুড়িয়া বলে।এরা সাক্ষাত খুনী।একটার থেকে আরেকটার মাথা থেকে শয়তানী বুদ্ধি বেশী থাকে।এরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালায় ,যা খায় নষ্ট করে তার থেকে বেশী।আর যদি দলবেধে মালজুড়িয়া হয়ে ঘুড়ে না বেড়ায়,তাহলে তার দশা হয় আমাদের বংগবাহাদুরের মতো।একা একা দূঃখী প্রানীটার মতো ঘুরে বেড়ায়।দলের সাথে থাকলে সাধারনত এমন বৃষ্টি-বন্যা থেকে তারা আগাম সতর্ক থাকতে পারে।দলের মাদী হাতিরাই অভিজ্ঞতায় এসব থেকে তাদের বাচিয়ে রাখে।আসামে মাহুতরা এদের বলে রানীঢুই ।
বংগবাহাদুর সম্ভবত এমন একা অবস্থা থেকেই বিপদে পড়ে ভেসে এসেছে। দলের সাথে থাকলে আরো দুই একটা হাতিও রৌমারি দিয়ে ভেসে আসতো।এ অবস্থায় তাকে মাসাধিককাল বন্যার পানিতে অপর্যাপ্ত খাদ্য নিয়ে কাটাতে হয়েছে।বনের হাতির বনে কোন খাদ্যের অভাব নাই।ফলে বংগবাহাদুর ক্রমশ দূর্বল হতে থাকে।আর দূঃখের ব্যাপার ,সে অনেকটা দক্ষিনে চলে আসে প্রায় বগুড়া গাইবান্ধার চরের কাছাকাছি ।তার আসামের জঙ্গলে যাওয়া আরো দুরহ হয়ে পড়ে।তবে একোয়া মাকনা হাতির লোকালয়ে প্রানহানী করার অনেক উদাহরন থাকলেও সেই হিসেবে বংগবাহাদুর কিন্তু যথেষ্ট ভদ্র ছিলো।তার খুনিয়া হয়ে যাবার কোন খবর এই একমাসে কেউ পায়নি।
এ ধরনের একোয়া মাকনা হাতিকে বনে ফেরত পাঠাতে হলে খুবই অভিজ্ঞ লোকের দরকার হয়।ভারতের মতো দেশেও দলমা পাহাড়ের হাতি মেদিনীপুরে নেমে এলে বা জলপাইগুড়ির হাতি লোকালয়ে নেমে এলে তাকে বনে ফেরত পাঠানো কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।আমি জানি না, আমাদের বনবিভাগের লোকেরা তাকে ঠিক কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করে। প্রথমদিন তাকে চেতনানাশক দেয়ার পর সে গিয়ে পুকুরে পরে ,এটা মারাত্বক ভুল হয়েছে।তারপরই দুইদিনের ভেতর আবার অজ্ঞান করাতে সে দুর্বল শরীরে স্ট্রোক করে ফেলে। মালয়শিয়া বা ভারতে অভিজ্ঞ ট্রাঙ্কুইলাইজার গানাররা হাতির শরীরের ওজন অনুপাতে চেতনানাশক ইমমোবিলন(হাতির ক্ষেত্রে ইটরফিন ইঞ্জেক্সন ব্যবহার করে,এটা মরফিন থেকেও শক্তিশালী)ব্যবহার করে।এবং ঔষোধ কাজ করার সাথে সাথে তারা হাতির অজ্ঞান দেহকে ঘন্টায় ঘন্টায় পানি ঢেলে ঠান্ডা রাখে যাতে হার্টবিট বেশী হয়ে না যায়।সাথে স্যালাইন রাখে।একিই সাথে এই অজ্ঞান অবস্থার প্রতিষেধক রেভিভন (এক্ষেত্রে ডিপ্রেনরফিন ইঞ্জেকসন রাখে) প্রস্তুত রাখে।এটা হাতির কানের পাতার মোটা শিরায় দেয়া হয়।অনেক ক্ষেত্রে রম্পান (কেটামিন জাইলাজাইন) ব্যবহার হয়।এটা জ্ঞান পুরোপুরি নাশ করে না কিন্তু হাতির পেশী অসাড় করে রাখে ।ফলে এসময় রম্পানের শিকার হাতিকে পালা পোষা দুইটা হাতির মাঝখানে রেখে আসামীর মতো কাংখিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।সে কোন জোরাজুরি চালানোর অবস্থায় তখন থাকে না।বংগবাহাদুরের শাররীক দূর্বলতা তাকে এই পরপর দুইবার চেতনানাশকের ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে পারেনি।

চীন ও সোশাল মিডিয়া।

আজকের এই সোশাল মিডিয়ার প্রবল জোয়ারের সময়ও চীন পশ্চিমা সোশাল মিডিয়া ও গুগল থেকে নিজেদের সচেতনে দূরে রেখেছে।চীন কিভাবে তার একটা বিশাল জনগনকে এই বৈষ্ণিক জোয়ার থেকে দূরে রাখতে পারলো?তারা কি এর বিকল্প কিছু তাদের নাগরিকদের দিয়েছে? যারা পৃথিবীর স্মার্টফোন ইউজারদের মধ্যে একটা সবচেয়ে অগ্রগামী অংশ ,সংখ্যাগরিষ্টও বটে।
উত্তর হলো, হ্যা। তারা চমৎকার বিকল্প বের করেছে।যা চাইনিজ ভাষায় তাদের জন্য বিকল্প একটা পৃথিবী তৈরী করে নিয়েছে।সেটা যথেষ্টই অসাধারন! এবং সবরকম ইন্টারনেটভিত্তিক আদান-প্রদান,চ্যাট-মেসেজিং আর স্বয়ংসম্পুর্ন সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে সমৃদ্ধ।
চীনে গুগল সার্চ সহ গুগলের অনেক সার্ভিস বন্ধ।তাই তাদের আছে বাইদু সার্চ ইঞ্জিন।চাইনিজ বা ম্যান্ডারিন ভাষায় সবচেয়ে প্রভাবশালী সার্চ ইঞ্জিন।বাইদু অপারেটিং সফটওয়্যারও আছে।
গুগলের অত্যান্ত জনপ্রিয় ইউটিউব এর বিকল্প আছে চীনে ইউকিও।বেশ জনপ্রিয়।আরো কয়েকটি আছে।যেমন সহু টিভি। আমি শুধু যেগুলো বেশী জনপ্রিয় সেগুলোর নাম বলছি।
হোয়াটস আপ এর বিকল্প আছে উইচ্যাট।
ইন্টারনেট দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুক ২০০৯ সালে জিনজিয়াং এর দাঙ্গা ভাইরাল করার অপরাধে চীন বন্ধ করে দিয়েছে।এর বিকল্প হিসেবে তারা চালায় রেন রেন নামে একটা সোশাল এপ্স।আরো আছে।জুকারবার্গ আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে ফেসবুক চীনে খুলে দেয়ার জন্য।ফেসবুকের যেই চরিত্র আর চীনের যে চরিত্র দুই দেখেই আপাত এটুকু বলা যায়, ফেসবুক চীনে সহসা খোলার কোন সম্ভাবনা নাই।
চীনে মাইক্রো ব্লগিং টুইটার নাই।তাদের আছে অত্যান্ত জনপ্রিয় সিনা উইবো।এটা বেজায় জনপ্রিয়।আরো আছে জুওসা আর দিগু।এগুলাও জনপ্রিয়।
নিয়ম অনুযায়ী চীনে তাই জি মেইলও নাই।তাদের আছে কিউ কিউ মেইল।
চাইনিজ টিভি আর মিউজিক এপ্স আছে, কিউ কিউ মিউজিক আর সিয়ামি ।
চাইনিজ শপিং এপ্স হিসেবে আলীবাবাকে আপনারা অলরেডি চেনেন।আরো আছে টাওবাও, জিং ডং,দিয়ান পিং।
আর এমনিতে ভিপিএন এর মতো প্রক্সি কিছু তো সবসময় আছে।যাতে তারা তাদের মনের খোরাক মিটাতে পারে।
উপরের কথাগুলো কেনো বললাম বুঝলেন তো, কারা পশ্চিমাদের সাহায্য ছাড়াও দিব্যি অনায়াসে চলতে পারবে এটা চাইনিজদের দেখলেই বোঝা যায়।এই গুগল,ফেসবুক সহ আরো অনেক জিনিস তারা এক্সেস করতে না দিয়েও আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক পরাশক্তি।পুরো বিশ্বের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ম্যানুফেকচারারও তারা।কেউ তাদের দাবিয়ে রাখতে পারছে না।তাই তাদের সাথে ব্যবসা করার লোভও ছাড়া সম্ভব না।কারো বা কোন গোঁয়ার গর্দভের উচিত না তাদের সর্বক্ষন শত্রু ভাবা।সেই যোগ্যতাও গর্দভগুলোর নাই।চীন তার শত্রুদের ইয়েতে আস্তে করে গজাল বা কীলকটা ভরে দেয়।অনেকদিন পর ফাঁটলটা একেবারে আগাপাশ চিরে পরিলক্ষিত হয়।

মোটরসাইকেল ও ঘোড়সওয়ার।

একটা সময়ে আমার মোটর সাইকেলের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিলো।কিন্তু সেটা এফোর্ড করার মতো সামর্থ ছিলো না।এখন যে সামর্থ একেবারে গা বেয়ে বেয়ে পড়ে তাও না,কিন্তু অদ্ভুত যে, আমার সে ইচ্ছাটা আর মোটেও নাই।কিভাবে যেনো ইচ্ছাটা নাই হয়ে গেছে।আমাদের চট্টগ্রামে মোটর সাইকেলকে আশ্চর্যজনকভাবে হোন্ডা বলা হয় প্রায়ওই ক্ষেত্রে।আক্ষরিক অর্থে বলা হয় হুন্ডা।সেটা যে ব্রান্ডেরই হোক না কেনো।সম্ভবত সত্তরের দশকে হোন্ডা সিডি আই এর ব্যাপক প্রচলন আর জনপ্রিয়তাই এর মুল কারন।এরপর ইয়ামাহা,সুজুকি এরাও জনপ্রিয়তা পেয়েছে, কিন্তু সবই চলতি মুখের লবজে হুন্ডা বলে ব্যাপক প্রচলিত।
তাই আমি বাকি লেখাটাতে মোটর সাইকেলকে হোন্ডা বলে অভিহিত করবো।আজকে দেখি কি ,দুইজন বয়স্ক লোক ৫০ সিসি হোন্ডাতে করে যাচ্ছে।সেই হোন্ডার ৫০ সিসি ,যা প্রায় অনেকটা প্লাস্টিকের গড়ন।রং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে লাল,অন্যান্য কালারের বেশ কম দেখা যায়।আমার ধারনা এটি তৈরীর পর কোটি কোটি পিস বিক্রি হয়েছে।তো, বয়স্ক চালক পুরোপুরি মোল্লা নাসিরুদ্দীন হোজ্জার মতো দেখতে।আমার হঠাত মনে এলো,কেনো এই মডেল কেবল আমি বয়স্কদেরই চালাতে দেখি।কেনো যুবকদের নয়?সাথে সাথেই সরল কারনটা বুঝতে পারলাম, আসলে সবকিছুর মুলে ফুয়েল কন্সাপশন ।কারন একটু বয়স্করা মিতব্যয়ী ,তারা ফুয়েল কন্সাপশন কমাতে চায়।আর তাদের এতো দ্রুত গতিও প্রয়োজন নেই।তাই তারা যে যার প্রয়োজন অনুযায়ী বাহন বেছে নিয়েছে।ম্যানুফেকচারার সেই অনুযায়ী পন্য তৈরী করেছে।
একটু আগের যুগের দিকে তাকালে বোঝা যায়,এই মোটর সাইকেল চালকের দলেরাই গত শতকের ঘোড়সওয়ারির দল।রুচি,সামর্থ,চালনাশক্তি সেই একই আছে,শুধু ট্রান্সপোর্টেশন পশু থেকে মোটরাইজড হয়েছে।গত শতকের তাগড়া শক্তিশালী যুবক সওয়ারীরা যেমন তাগড়া মদ্দা ঘোড়া বা স্টালিয়ন চালাতো ,কারন তারা এটা পছন্দ করতো।যদিও সেটা পালন করা ব্যয়বহুল ছিলো তাও।এই ধরনের সওয়ারীর ঘোড়ার খাই-খরচ বেশী,নিয়মিত দলাই মলাই করা লাগে।
এই ধরনের সওয়ারীরাই এখন বিভিন্ন রেসিং মোটর সাইকেল,পালসার,এফজেড ,রিগাল র‍্যাপ্টর ডেটোনা,রয়াল এনফিল্ড ,হার্লে ডেভিডসন চালায়।
আর গত শতকের যেসব সওয়ারীরা খরচের ভয়ে বা মিতব্যয়িতার জন্য ঘোড়ার বদলে গাধা,খচ্চর ব্যবহার করতো ,তারাই এ যুগে এসে ৫০ সিসি ,৮০-৯০ সিসি হোন্ডা ব্যবহার করে।কারন গাধা-খচ্চরের মতোই এগুলা সাশ্রয়ী।এই দলের লোকগুলাই হোজ্জার মতো মাঝবয়েসী।এজন্যই এরা ৫০ সিসির ভক্ত।
এবার তৃতীয় একশ্রেনীর সওয়ারীর ব্যাপারে বলি, এরা সেই যুগে বাহন হিসেবে মাদি ঘোড়াকে বেছে নিতো,বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের মাদি ঘোড়া বন্ধ্যা।এ ধরনের সওয়ারীরাই এ যুগে আমার হিসেবে ভেসপা চালায়।আমি জানি ,ভেসপাওলারা খুবই ক্ষুদ্ধ হবে এটা শুনে।কিন্তু আমার মনে হয়েছে।ভুলও হতে পারে।
মোটরাইজড যুগ শুরু হওয়ার আগে এই গত শতকের বিশের দশক পর্যন্ত ঘোড়া বা খচ্চর খুবই প্রচলিত বাহন ছিলো।যদিও মার্কিন মুল্লুকে ফোর্ড ও অন্যান্য মোটরসের ব্যাপক প্রচলন ক্রমে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ঘোড়া বা গাধা-খচ্চরকে কৃষিকাজের সহায়তার উপাদানে পরিনত করে ছাড়ে।তারপরও শুনে অবাক হবেন, এই ২০১৭ সালেও ঘোড়া ,গাধা,খচ্চর মধ্য এশিয়া উজবেকিস্তান,কিরগিজিস্তান ,কাজাকস্তান আর মঙ্গোলিয়ায় এখনো খুবই প্রচলিত বাহন।তারা এটায় চড়ে,এটাকে দিয়ে কৃষিকাজ করে আর জনপ্রিয় লাইভ স্টক হিসেবে এটাকে খেয়েও ফেলে।ঘোড়া তাদের খুবই প্রিয় একটি খাবার।
আমার স্ট্যাটাসের কোন আগা-মাথা নেই।সেই হোন্ডা দিয়ে শুরু আর ঘোড়া খাওয়া দিয়ে শেষ।

মুলা ও পর্দন।

মুলা মোটেও কোন হাস্যকর ,সস্তা সব্জী নয়।যদিও মুলা রান্না করা বা খাওয়া লোককে নিয়ে বংগদেশে ঠাট্টা-তামাশা করার একটা প্রচলন আছে।বিজ্ঞানীরা বলেন, মুলাতে আছে প্রচুর পরিমানে সালফার ,ম্যাগনেশিয়ামের খনিজ লবন।এই উচু মাত্রার সালফার থাকাতে মুলা খেলে প্রচুর পাদ আসে।এটাই ব্যক্তিকে হাস্যস্পদ করে তুলে।চায়নিজরা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী পরিমানে মুলা খাওয়া জাতি।মুলার স্যুপ থেকে শুরু করে কাঁচা-মুলা তাদের অতীব প্রিয় একটা সব্জী।এমনকি হর্স রেডিস নামক মুলা জাতীয় সব্জী থেকে যে পেস্ট বা সস বানানো হয় ,সেটাই হলো পৃথিবী-খ্যাত ওয়াসাবি ।এর ফ্লেভার ,সস ,পেস্ট সবই জনপ্রিয়।জাপানীরা ওয়াসাবির ভীষন ভক্ত বলে খ্যাত হলেও পৃথিবীর অন্যত্রও এটি এখন ভোজনরসিকদের প্রিয়।
তাই যে কথায় ছিলাম সেটাই আসি।বিজ্ঞানীরা বলেন, বেশী করে মুলো খান, এবং ফ্রিকোয়েন্টলি পাঁদুন।তারা বলেন,দৈনিক ২০-২৫ টা পাঁদ দেয়া কোন দোষের কিছু না।গড়পড়তায় একজন স্বাস্থ্যবান লোক তাই দিয়ে থাকে।সেটা আমি কিংবা ঐশ্বরিয়া,ক্যাটরিনা,ইয়াম্মি গৌতম সবাই, সবাই দিয়ে থাকে।এটা ভেবে আপনি হীনমন্যতা কাটাতে পারেন যে তারাও এটা করে।
এখন প্রশ্ন হলো, কেউ যদি দৈনিক ৩০ টার বেশী, ধরেন ২০০ টা দেয় তাতে কি হতে পারে? না, এই একটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা বলেন, ২০০টা দিলেও তাতে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না।আফটার অল এই পৃথিবীতে গত শতকে এশিয়া ও সাব সাহারান দেশগুলোতে প্রচুর মানুষ হাগতে হাগতে মারা গেছে কলেরায়,কানতে কানতে বা হাসতে হাসতে মারা যাওয়ার রেকর্ডও ইতিহাসে আছে।কিন্তু পাঁদতে পাঁদতে মারা যাওয়ার কোন রেকর্ড এ যাবত নেই।
বিজ্ঞানীরা গবেষনায় দেখেছেন,যেসব দম্পতি দাম্পত্যজীবনে নির্দ্বিধায় একে অপরের সামনে পাদ দিতে পারে এবং চরম নির্লিপ্ততায় তা সহ্য করতে পারেন, তারা অত্যান্ত সুখী দম্পতি।আর যেসব দম্পতি পাদের গন্ধের দোষ নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি করে ,তাদের মধ্যে ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদের সম্ভাবনা অত্যান্ত চরম মাত্রায় বিদ্যমান আছে।কারন বিজ্ঞানীরা গবেষনায় দেখেছেন, এই পাদের দোষ দিয়েই এই সংসার নামক দূর্গের দেয়ালে ফাটল শুরু হয়,এরপরই এ ওর চারিত্রিক আরো দোষ খুচিয়ে বের করে।সেটাই বিচ্ছেদের ঝুঁড়িওয়ালা বটগাছে পরিণত হয়।তাই সামান্য পাদের গন্ধ নিয়ে অনুযোগ করা ছোট-খাটো ব্যাপার নয়।
কোথা থেকে কোথায় চলে এলাম।শেষ কথা হলো, মুলা অত্যান্ত উপকারী একটা সব্জী।কোন হেলাফেলার জিনিস নয়।

ট্রাম্প ও রিফিউজি।

ট্র‍্যাম্পের বর্তমান পলিসি মানলে যীশু খ্রীষ্ট আমেরিকার ভিসা পাবে না।কারন উনি মধ্যপ্রাচ্যের লোক,উনি রিফিউজি, উনার মা মরিয়ম হিজাবী এবং খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী নন।

রানী পদ্মিনী ও পদ্মাবতী মহাকাব্য।

১৫৪০ খ্রীস্টাব্দে আওয়াধি(উত্তর ভারত,নেপালের তরাই,ভোজপুরী অঞ্চলের উর্দু) কবি মালিক মোহাম্মদ জইশী খিলজি বংশের সবচেয়ে সফল পরাক্রমশালী শাসক আলাউদ্দীন খিলজি ও চিতোর দুর্গের রানী পদ্মিনীকে নিয়ে একটা ম্যাগনাম ওপাস প্রেমকাহিনী "পদ্মাবতী" রচনা করেন।এতোদিন পর্যন্ত এটা নিয়ে কোন ঝামেলা হয় নাই।
কিন্তু ২০১৭ সালে এসে সঞ্জয় লীলা বানশালী এটা নিয়ে মুভি বানানোর সময় ঝামেলা শুরু হলো।বলতে গেলে ,এটার শুটিং চলাকালে রাজস্থানে ,রাজপুত কর্নী সেনা নামে একদল লোক সঞ্জয়কে ধরে কান বরাবর বন চটকনা দেন এবং দাড়ি ধরেও নাড়ানাড়ি হয়।আগেই বলে নিই, রানী পদ্মিনী ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে পুজিত হন।সেটা তার জওহর ব্রত পালন করার জন্য,তিনি আত্মাহুতি দেন আগুনে।১৩০৩ খ্রীঃ এ তার স্বামী রাজা রাওয়াল রতন সিং মেবারের নিয়ন্ত্রন আলাউদ্দীন খিলজীর হাতে হারালে চিতোর দূর্গ অবরোধের মুখে পড়ে এবং পতন ঘটে।ইতিহাস বলে তখন রানী পদ্মিনী আরো রানীদের নিয়ে আগুনে আত্মাহুতি দেন।
কিন্তু আরো একসুত্রে ইতিহাস বলে, আলাউদ্দীন খিলজি পদ্মিনীর রুপে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েন।এজন্যই তিনি চিতোর দূর্গ অবরোধ করেন।আওয়াধি কবি জইশি এ পর্ব নিয়েই পদ্মাবত কাব্য লেখেন।
রাজপুত কর্নী সেনারা এখানেই প্রবল বিরোধিতা করেন।তাদের কথা হলো, খিলজির সাথে আদৌ কোন প্রেম পদ্মিনীর হয়নি।
বস্তুত সমকালীন ইতিহাসে আলাউদ্দীন খিলজি অত্যান্ত সফল শাসক ছিলেন।তার বাবা ফিরোজ খিলজির হাতে এই বংশের সুচনা।তিনি ৮৪ বছরের মামলুক ও বলবন বংশের পতন ঘটিয়ে তার সাম্রাজ্যের সুচনা করেন।যে মামলুক বংশের শুরু হয় কুতুব উদ্দীন আইবেকের হাতে আর শেষ হয় খিলজির বাবা ফিরোজ খিলজির হাতে বলবন বংশের শেষ সুলতান মুইজ উদ্দীন কায়কোবাদের নিহত হওয়ার মধ্যে দিয়ে।আলাউদ্দীন খিলজি ২০ বছর পরাক্রমশালি শাসকের ভূমিকা পালন করেন।তার সাম্রাজ্য কাবুল থেকে আমাদের যমুনার পশ্চিম পাড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো।শুধু দক্ষিন ভারত তার হাতের বাইরে ছিলো।আলাউদ্দীন জন্মেছিলেন, লখনৌবতী বাংলায়।
আর যে বিশেষ কারনে তিনি ইতিহাসে পরিচিত ছিলেন তা হলো, তার সেনাপতি মালিক কাফুরের প্রতি তার বিশেষ দূর্বলতা।তিনি সমকামী ছিলেন।মালিক কাফুর প্রথম জীবনে গুজরাটের হিন্দু পরিবারের সন্তান ছিলেন।তার নাম ছিলো মানিক।সে একজন দক্ষ কুস্তিগীরও ছিলেন।আলাউদ্দীনের চোখে পড়ার পর সে ক্রমে ক্রমে সেনাপতির পদে আসীন হন।সম্রাটের তার প্রতি দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে সে প্রবল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেন।তার উপাধি হয় মালিক নায়েব কাফুর।বলা হয় , ১৩১৬ সালে সম্রাটের মৃত্যু হলে মালিক এর নামে অভিযোগ উঠে ,তা ত্বরাম্বিত করার।ক্ষমতা হাতে নিয়েই সে আলাউদ্দীন খিলজির দুই পুত্র খিজির খা আর সাদি খাকে অন্ধ করে দেন।একজন দূর্বল রাজপুত্রকে শাসক বানান।কিন্তু আলাউদ্দীন খিলজির ৩য় পুত্র কুতুব উদ্দীন মুবারক খিলজি তার হাত থেকে বাচতে পারেন।সেই মালিক কাফুরকে হত্যা করে আবার ক্ষমতায় আসীন হন।
রাজপুত কর্নী সেনার অভিযোগ হলো, এমন যে আলাউদ্দীন খিলজি যার সাথে মালিক কাফুরের দোস্তানা ছিলো,এটা নিয়ে যদি করন জহর কোন মুভি বানাতো তা মেনে নেওয়া যেতো।কারন করন জহর ও রংধনু পার্টি।কিন্তু না , এর বদলে পদ্মিনীর সাথে জড়িয়ে যে কাহিনী তা কিভাবে মেনে নেয়া সম্ভব?

সুন্নতে খৎনা।

আমাদের যুগে ৮৮-৮৯ সালের দিকে পোলাপাইনের মুসলমানী করানোর সিজনই ছিলো এই মাঘের শেষ আর ফাল্গুনের শুরুতে।কারন এসময়টায় পড়ার চাপও নাই,স্কুলেরও বালাই নাই।কিন্তু এসময়টায় যেকোন নরমাল কাটাছেড়াই যেখানে শুকাতে টাইম লাগতো,সেখানে এতোবড় এক মেজর অপারেশন শুকিয়ে থিতু হতে বেজায় ঝামেলা হতো।দুইভাবে কাজটা সারা হতো।হয় বিহারী হাজেম এসে কাজটা সারতো ,না হয় মেডিকেলের চিকিৎসক এর মাধ্যমে করা হতো।আমার বন্ধু রাজেশ আমি আর ওর ছোট ভাইয়ের মুসলমানী করা হয়েছিলো রাজেশেরই মামার হাতে মেডিকেলে।
সেই সিজনে প্রথম মুসলমানীর ধাক্কাটা এসে পড়েছিলো মগু সুমন আর মোরতুজার উপর।হাজেম এসে একিই দিন তাদের শহীদ করে যান।সুমনের মুসলমানী দেখার সুযোগ আমার হয়েছিলো।তাকে কয়েকজন শক্তিশালী লোক পায়ের রানের কুচকির ভেতর দিয়ে হাত দুখানা বের করে বিশেষ কায়দায় ধরে রাখে,যার ফলে তার পক্ষে কেবল হাতের আঙ্গুলগুলো টাইপ করার মতো করে বের হয়ে আসিলো।সে যতোক্ষন পেরেছিলো হাজেমকে আর তার নিকটাত্মীয়দের আবাচ্চো ভাষায় গালাগালি করতেছিলো।সাথে মাঝে মাঝে কান্নাকাটি।যখন বাশের ছিলা(এটা খুরের মতো ধার)দিয়ে কেটে দেয়া হলো সুমন একটা চিৎকার দিয়ে চুপ হয়ে গেলো।তার ঐ দুই হাতের আঙ্গুল এমনভাবে টাইপিং করার মতো কাপতেছিলো যেনো ভীষন জরুরী কোন সরকারী ডকুমেন্ট টাইপিং হচ্ছিলো।এরপর একটা কাপড় পুড়িয়ে ছাই করে সেটা কেটে দেয়া অংশে একটা কাপড় পেচিয়ে লাগিয়ে দেয়া হতো।সাম হাউ একধরনের এনালগ কটারিং ব্যবস্থা আর কি।
এর পরের সপ্তাহে আমাকে বলা হলো মুসলমানী করানোর জন্য।জানানো হলো যেহেতু মেডিকেলে করানো হবে,তাই লোকাল এনেস্থেটিক করা হবে।ব্যথা নাকি বলতে গেলে কিছুই না।আশেপাশের সবার হয়ে গেছে ,একমাত্র আমিই মুসলমান হই নাই।এই চাপ একদিকে, আরেকদিকে খোকন মামা বলছে ৫০০টাকা দিবে,আব্বাও বলছে ৫০০টাকা দিবে।এই ইহজাগতিক প্রলোভন একদিকে।এই পরকালের মুমীন মুসলমান হবার ডাক আর ইহকালের ইহজাগতিক ডাক এর যুগপৎ আহবানে আমি সাড়া না দিয়ে পারলাম না।সেকালের ৫০০টাকার নোট কোন ছেলেখেলার ব্যাপার ছিলো না।কি তার চমৎকার সাইজ আর কালার ছিলো।এখনের মতো ফকিরা ২০ টাকার নোটের মতো কালার না,যেটার জন্য বহু বয়স্ক বা অন্যমনস্ক লোক এখন মাঝে মাঝে ৫০০টাকার নোট ভুলে বিতরনের শিকার হয়ে যায়।
যাক, আমি রাজি হয়ে গেলাম।কাটাকুটি হয়ে যাবার পর বাসায় ফিরতেছি,এসময় গাড়িতে এনেস্থেসিয়ার ভাব কাটা শুরু হলো।আর সাথে সেকি জ্বলুনি!আমি কানতে কানতে জানতে চাইলাম মামার কাছে,উনি যে আমাকে টাকাটা দিবে বলছিলেন সেটা কি এখন দিবে কিনা?মামা বললো, বাসায় গিয়ে দিই?আমি কানতে কানতে জানালাম,বাসা পর্যন্ত আমি টিকমু না,আমি মরে যামু।ফলস্রুতিতে আব্বা আর মামা আমাকে নগদে তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করলেন।আমি কান্দি আর ৫০০টাকার নোট দুটোর দিকে দেখি, কান্দি আর নোট দুটো দুটোর দিকে দেখি।

ময়নামতি বিভাগ!

রানী ময়নামতির নাম থেকে ময়নামতি বিভাগ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।উনি কে?কার সাথে উনার লাইন ছিলো?উনার হাসবেন্ডের নাম কি?কেউ উনার রুপে গুনে মুগ্ধ হয়ে উনাকে জোর করে বিয়ে করার চেষ্টা করেছিলো কিনা? এসব কিছুই ইতিহাসে নাই।শুধু উনার নামে রানী ময়নামতির একটা প্রাসাদ আছে ওই এলাকায়।
এ থেকে ইতিহাসবিদেরা আন্দাজ করতে পারেন উনার ঢক-সুরত এতো মনোরম ছিলো না।ইতিহাসবিদেরা মাটি খুড়ে অত্র এলাকা চদরবদর করে ফেলেছেন।তাও একটা প্রেমকথার সুতাও খুজে পাননি।উলটো খুড়াখুড়ি চলাকালে ইতিহাসবিদরা চা নাস্তার বাকি ফেলে চলে যাবার চেস্টাকালে গ্রামবাসীদের সাথে রক্তক্ষয়ী লড়াই ঘটে।চারজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।তিনজনকে রানী ময়নামতির ভিটায় বেধে রাখা হয়েছে।

কাদের রংগ!

উনি কলাইয়ের রুটি খাওয়ার সময় এমপিসাব জানতে চাইছিলো, পদ্মাসেতুর টরেন্ট ডাউনলোড কতো পার্সেন্ট নামছে,এর আগে উনি একবার ৩৪% নামছে বলে জানিয়েছিলো।এমপিসাব আরো জিজ্ঞেস করে, উনি ভাল করে দেখেশুনে ডাউনলোড প্রেস করেছিলেন কিনা, কারন অনেক সময় ভুলে তামিল সাবটাইটেলওলা ফাইল নেমে যায়।
জ্ঞান ফেরার পর এমপিসাব দেখে গালে বারকোড এর চিহ্ন!

বাস স্টেশনে।

স্বামী-স্ত্রী রাত সাড়ে এগারোটায় রিকশা করে বাস স্টেশন এলেন।তারা ঢাকার বাস ধরবেন।রিক্সাওলাকে স্বামী ৪০টাকা ভাড়া দিলেন।হতবাক হয়ে রিক্সাওলা ভাবেন,দিনেও তো এর ভাড়া ৫০ টাকা হেসেখেলে আদায় হয়! সে বললো,স্যার এতোরাতে ভাড়া মারলাম,কিছু তো বাড়িয়ে দেয়া উচিত? স্বামী দাতমুখ খিচে জানালো, কুত্তার বাচ্চা তোকে কি ৫০০ টাকার নোট ইয়ে দিয়ে ভরে দেবো?রিক্সাওলা বেদনায় নীল হয়ে ভাবে, প্যান্ট-শার্ট পড়া লোক কেমনে এই ব্যবহার করে?
সে চলে যাবার উপক্রম করতেই স্ত্রীটি তাকে নরম গলায় ডাকে।তার হাতে ভ্যানটি ব্যাগ খুলে ২০ টাকা দেয়।তার চোখে ইষত লজ্জা আর ক্ষমাপ্রার্থনা।আর রিক্সাওলা প্রকৃত নাইট শিভালরী দেখিয়ে সালাম জানায়।
এক্ষেত্রে যদি আরোহী দুজনই পুরুষ হতো ,রিক্সাওলা ভাবতে ভাবতে প্যাডেল মারতো, দেখো মানুষে মানুষে কতো তফাৎ!
যেহেতু আরোহীদ্বয় স্বামী-স্ত্রী ছিলো ,রিক্সাওলা ভাবতে ভাবতে প্যাডেল মারছিলো যে, দেখো একই খাটে শুয়ে দুজনের মধ্যে কতো তফাৎ!

শেয়ার বাজার।

বঙ্গদেশের শেয়ার বাজারের প্রতি আর যুবসমাজের বিনিয়োগের প্রতি সালমান এফ রহমান আর আওয়ামি লিগের একটা সাতরঙ্গা ভালোবাসা সবসময় পরিলক্ষিত হয়।শেয়ার বাজার লুটার শয়তানী বুদ্ধির ডিমগুলা শয়তান প্রথমে পাড়ে সালমানের মাথায়,যখন ডিমটার অবস্থা এবাউট টু ফাটো ফাটো, তখনই সে এই বাকি কিছু ডিম, লুটা পরবর্তীতে সামাল দিবে যারা তাদের মাথায় চালান করে দেয়।এরা ভাগিদার ও পরবর্তী বেসামাল অবস্থা সামাল দেয়।লুটার টাইমিং দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন,কতো হিসেব করে এরা মাথায় বাড়িটা দিছে।
এই লুটা আওয়ামী লিগ করে ক্ষমতায় এসে একেবারে গরম গরম টাইমে।কখনো পরবর্তী আরেকটা নির্বাচন আসন্ন এমন টাইমে না।যেমনঃ ১৯৯৬ ও ২০১০ সাল,খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন।নির্বাচন আসার আগে এসব করে তারা ঝামেলা পোহাতে চায় না।মানে তখনকার সময়ে আর কি!এখন তো আর এসবের বালাই নাই।ভারতমাতা তাদের এসব থেকে রক্ষা করেছে।গরম গরম টাইমে লুটার মজা হলো, বেশকিছু প্রতারিত নাগরিক ইত্যবসরে আত্মহত্যা করে নিজেরাও বাচে,ডাকাতকেও নিশ্চিন্ত করে যায়।বাকিরা কয়দিন হাওকাও করে,তারপর মহান আল্লাহ পাকের দরবারে হাসরের ময়দানে খেলাপি ঋন আদায় হবে এই আশায় রনে ভংগ দেয়।আরো যারা বাকি আছে,তারা ব্যাপারটা চেপে যায় কারন বিয়েশাদির বাজারে এটা তাদের ক্ষতিগ্রস্থ করার বাস্তব কারন বলে পরিগনিত হয়।আগে পাড়া-প্রতিবেশীর কান-কথা, বরের পুরুষত্যহীনতার গুজব, চরিত্র-দূর্বলতার গুজব এসব বিয়ে ভাঙ্গানিতে ব্যবহার হতো।৯৬ আর ২০১০ সালের পর শেয়ার বাজারে ধরা খাইছে হবু বর এটাও বিয়ে ভাঙ্গানির অন্যতম অনুষঙ্গ বলে পরিগনিত হয়।
কনের বাপদের দোষ দেয়া যায় না।দুই দুইবার পাটের মতো সাদা দাড়িওলা একলোক আংতা জাল দিয়ে খেপ পাতলো আর জুয়ান বয়সী পোলাপাইন গিয়ে ধরা দিলো এটা বরদের জন্য অমার্জনীয় অপরাধ বলে গন্য করা হয়।এর সাথে আর কে জড়িত কারা জড়িত এসব জেনে কনের বাপের লাভ নাই।
৯৬ সালের শেয়ার বাজারের কথা মনে এলো।আজকে অনেকে বিশ্বাস যাবে না, সেবার শেয়ার বাজারে শেয়ারের পেপার খোলাবাজারে বা কাব মার্কেটে রাস্তায় বিক্রি হতো জামা-কাপড়ের মতো।সবাই রাস্তায় ডাকাডাকি হাকাহাকি করে এসব বিক্রি করতো।ফলে প্রচুর জাল শেয়ার বাজারে নামে।আর নামে প্রতারকের দল।পাবলিক খালি কাগজ কিনতো শেয়ারের নগদ টাকা দিয়ে।যারা যারা এ ব্যবসায় নেমেছিলো পড়াশোনা,অন্যান্য ব্যবসা বাদ দিয়ে ,তারা দুপুরে এমনকি রাতেও প্রায় সময় ঘরে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলো।ঘরের খাওয়া দাওয়া মুখে রুচছিলো না।দুইবেলায়ই বিরানী চালু হয়ে গিয়েছিলো।দুইবেলা বিরানী খাওয়া যে মৃত্যুর নিশানা তা আর কারো খেয়ালে আসছিলো না।কিন্তু মৃত্যু ধীর ধীর পায়ে করে শুরু করে একেবারে হঠ করে এসে আঘাত করে।শেয়ার বাজার ধসে যায়।সবার হাতে শেয়ারের কাগজ কিন্তু ক্রেতা আর নাই।দরবেশের রুপ ধরে এরা শেয়ার বাজারে সবার আগে ঢুকে আর কাম সেরে সবার আগেই মেভেলেভি দরবেশের মতো নৃত্য করে বেড়িয়ে যায়।পিছনে রেখে যায় বালাদুল আমিনদের।
আর বঙ্গদেশের লোকেরা তারা আর কি করে!এই জাত বীরের জাত,যেখানে সব একসাথে ঝাপিয়ে পড়ে ,হয় তা একেবারে স্বাধীন হয়ে পড়ে,নয়তো শেয়ার বাজারের মতো পুড়ে তামা তামা আংরা হয়ে পড়ে।

সাবমেরিন ক্রয়।

প্রথমে কিন্তু চায়না নেপালরেই বলছিলো,দুইটা সাবমেরিন আছে, নিবি?
মামার মতো করে দিয়ে দিবো।
নেপাল জিজ্ঞেস করছিলো,এগুলার র‍্যাম কতো জিবি?সেল্ফি ক্যামেরা কতো মেগার?
চায়না আবাচ্য গালাগালি করে ফেরত আসছিলো।কাস্টমার কেমনে এরকম স্টিমার হয়।
তারপরেই বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাব।এই ব-দ্বীপের কাস্টমার কোনদিন কারো কাছ থেকে কিছু কিনে ঠকে নাই।

বিসমার্ক।

বুনো খুনিয়া হাতি(রৌগ এলিফেন্ট) বা মানুষখেকো বাঘ যখন খুব বেশী নরহত্যা করে ফেলে তখন সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের বিভাগীয় প্রধান বা বিভাগীয় কমিশনার উক্ত চিহ্নিত প্রানীটিকে মৃত্যুদন্ড দেন।সেক্ষেত্রে পেশাদার শিকারীদের প্রতি পরিষ্কার সনাক্তকরন চিহ্ন দিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয় তারা যেনো পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে প্রানীটিকে হত্যা করে।কেননা ভুল করে অন্য হাতি বা বাঘ যাতে মারা না যায়।তেমনি রণতরীকেও যুদ্ধে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।যাদের পাঠানো হয় তাদের জানিয়ে দেয়া হয় কর্তব্য পালন না করে তারা যেনো ফিরে না আসেন।
ব্রিটিস রয়্যাল নেভির এইচ এম এস হুড আর প্রিন্স অভ ওয়েলস টিমের মধ্যে মেসি আর রোনাল্ডোর মতো পারফরমেন্সের অধিকারী ছিলো।তারা ১৯৪১ সালের শুরুতে ডেনমার্ক প্রনালী,ডগার্স ব্যাংক ইত্যাদি রক্ষা করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছিলো।বিসমার্ক তার সহযোগিদের নিয়ে এইচ এম এস হুডকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয় আর গুরুতর ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রিন্স অভ ওয়েলস কোনমতে ইংল্যান্ড ফেরে ।কিন্তু তার সক্ষমতা নষ্ট হয়ে পড়ে।চার্চিলকে মধ্যরাতে এই দূঃসংবাদ জানানো হয়।চার্চিল এই দুই ব্যাটলশীপের পরিনতি শুনে ক্ষোভে,শোকে বিহবল হয়ে পড়েন।রাত্রেই এডমিরাল্টি বিসমার্কের ব্যাপারে বসে।চার্চিল শুধু আদেশটিতে একটি কথাই লিখে “ সিংক দ্য বিসমার্ক”।একডজন ডেস্ট্রয়ার আর ক্রুজার বেরিয়ে পড়ে বিসমার্কের খোজে।দুই সপ্তাহ পর ২৭ মে,১৯৪১ এ উত্তর আটলান্টিকে এরা বিসমার্ককে পেয়ে যায়।আক্ষরিক অর্থেই বিসমার্ক বাঘে-মহিষের মতো লড়ে।ব্রিটিস রয়াল নেভির এই ফুটবল টিমকে বিসমার্ক একাই তছনছ করে দেয়,নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে।কিন্তু কাছাকাছি এসে যায় রয়াল নেভির এইচ এম এস আর্ক রয়াল নামক এয়ারক্রাফট কেরিয়ার শীপ।এটার সবগুলো বোম্বার্ডিয়ার ফাইটার প্লেনগুলো বিসমার্কের উপর একযোগে আক্রমন করাতে বিসমার্ক আর টিকতে পারলো না। ২৭ মে ,১৯৪১ সাল ,বিসমার্কের অধিনায়ক তার রণতরীকে নিজেই ডুবিয়ে দেন।কারন এটা আর এমনিতেও হামবুর্গ ফিরতে পারবে না।কমিশন পাওয়ার মাত্র ৯ মাস পর বিসমার্কের সলীল সমাধি ঘটে।
জার্মান জনগন বিসমার্ককে হারিয়ে সেই শোক পান যেই শোক পেয়েছিলো ট্রয় নগরী হেক্টরকে হারিয়ে।

মন্টিভিভিও হারবার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত জার্মানদের অহংকার ব্যাটলশীপ বিসমার্কের গতি ছিলো ৩০ নটিক্যাল মাইল।আর আমাদের গর্বের সাবমেরিনগুলোর গতি ২০১৭ সাল এর সাথে মিল রেখে ১৭ নটিক্যাল মাইল(পত্রিকায় যা জেনেছি সে অনুযায়ী)।যাক,ব্যাপার না। ১৯৪০ সালের এপ্রিল থেকে ব্রিটিস রয়াল নেভির সাথে জার্মান নেভি ক্রিগসমেরিনের লড়াই শুরু হয়।মুলত মহাসাগরগুলোর দখলের লড়াই।ক্রিগসমেরিন এর লক্ষ্য ছিলো,কলোনিয়েল শীপ গুলোর সাথে ব্রিটিসদের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া।
এই দুই বাহিনীর প্রথম লড়াই বাধে উরুগুয়ের কাছে রিভারপ্লেটের যুদ্ধে।যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় জার্মান ব্যাটলশিপ এডমিরাল গ্রাফ স্পী দক্ষিন আটলান্টিকে ছিলো।ফলে চার্চিল এইচ এম এস এক্সিটার,এজাক্স আর একিলিস এই এইচ ক্লাস ব্যাটলশীপগুলোকে নির্দেশ দেয় গ্রাফ স্পীকে ধরার জন্য।ব্রিটিসরা সাগর পরিবেষ্টিত দ্বীপ রাস্ট্র,তাই স্মরনাতীত কাল থেকে তারা তাদের নৌবাহিনির জন্য তার সক্ষমতার জন্য গর্বিত।কিন্তু তারা যদি কাউকে সমীহ করতো সেটা আমেরিকা নয়।সেটা হলো ক্রিগসমেরিন।ব্রিটিসরা শেয়ানা জাতি।দক্ষিন আটলান্টিকের ফকল্যান্ড দ্বীপের ব্রিটিস ফ্লোটিলার ক্যাপ্টেন আন্দাজ করে ফেললো গ্রাফ স্পী একা লড়ে তাদের সাথে সুবিধা করতে পারবে না।সে কোনমতেই তাদের সাথে লড়ার পর আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে জার্মানীর হামবুর্গ গিয়ে উঠতে পারবে না।তাই তাদের সাথে লড়াইয়ের পর সে উরুগুয়ের মতো নিরপেক্ষ কোন দেশের বন্দরে গিয়ে উঠতে পারে।অতএব উরুগুয়ের কাছাকাছি গ্রাফ স্পীকে পাওয়া যেতে পারে।গ্রাফ স্পীর ক্যাপ্টেন হান্স ল্যাংডর্ফ চিন্তা করেছিলো,রয়্যাল মেরিনের সাথে দেখা হওয়ার পর যেভাবেই হোক গিয়ে মন্টিভিডিও হারবারে ঢুকতে পারলে আর ব্রিটিসরা নিরপেক্ষ উরুগুয়ের জলসীমা লংঘন করতে পারবে না।মন্টিভিডিও হারবারের কাছে লা প্লাটা নদীর মোহনায় গ্রাফ স্পী তার সক্ষমতাকে কিংবদন্তীর পর্যায়ে নিয়ে যায়।সে নিজে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ার আগে এইচ এম এস এক্সিটারকে সম্পুর্ন ধ্বংস করে দেয়।আর তার সাথে এইচ এম এস এজাক্স আর একিলিসকে দীর্ঘমেয়াদি অচল করে দেয়।
ভীষন আহত ক্যাপ্টেন আর গ্রাফ স্পী মন্টিভিডিও হারবারের কাছে আসে।আহত বাকি সৈনিকদের উরুগুয়ের হাতে তুলে দেয়।আর কোন ক্যাপ্টেন তার জাহাজ শত্রুর হাতে জীবিত অবস্থায় তুলে দেয় না।তাই সবার অনুরোধ স্বত্তেও ক্যাপ্টেন গ্রাফ স্পীকে নিয়ে নিজে বিষ্ফোরন ঘটিয়ে জাহাজ ডুবিয়ে দেয়,নিজের জীবনও।

নার্ভিক,নরওয়ে।

সুইডেনের বফোর্স কামান কোম্পানীর নাম পাঠক শুনেছেন।রাজিব গান্ধী এই কোম্পানীর সাথে লেনদেন করতে গিয়ে ১৯৮৯ সালে বফোর্স কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়েছিলেন।সুইডেন ভলভো,এই বফোর্স কামান এইসব লোহালক্কড়ের কাজ ভালো জানে।কারন এসব কাচামাল এই বিশুদ্ধ ইস্পাত আকরিকের খনিগুলো তাদেরই দেশে।এসব আকরিক সহ কামানগুলো নরওয়ের নারভিক আর উত্তরের ট্রন্ডহেইম বন্দরগুলো দিয়ে ইংল্যান্ডে রপ্তানী হতো।তাই হিটলার এই দুই বন্দর ১৯৪০ এর এপ্রিলেই দখল নেন।
ব্রিটানিয়ার আঁতে ঘা লাগে।নিজেরাও খানা পাইতেছে না, আর নাজিরা সেগুলোর পুর্ন ব্যবহার করবে সেটা মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সহ্যের অতীত হয়ে পড়ে।জার্মান এডমিরাল বন্টে গভীরভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েন।তিনি জানেন, নরওয়ে নার্ভিকের জন্য না লড়ে আপোস করতে পারবে কিন্তু ব্রাইটনরা আসবেই।নার্ভিকের জন্য জান লড়ে দেবে।
এপ্রিলের ভোর স্ক্যান্ডেনিভিয়ান দেশগুলোর জন্য প্রবল তুষার ঝড়ে সজ্জিত।এমন এক ভোরে সবাই যখন কম্বলের সুখের ঘুমে ব্রিটিস রয়াল নেভির অধিনায়ক বার্নাড লি তার রণতরী হটস্পার আর হসটাইল নিয়ে নার্ভিক কাপিয়ে ফেললেন।সাথে তার আরো কিছু ডেস্ট্রয়ার আর ক্রুজার।প্রবল ঝড়ের ভেতর ক্যাপ্টেন লি কিভাবে এইটা করলো এসব কিছু বন্টে আগে ভাগ্যিস কিছুটা সন্দেহ করাতে পুরা মারা পড়ে নাই।তিনি ব্রিটিস আইলসের লোকদের জানেন বলে একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন নাই।সেদিনের তান্ডবে জার্মানরা প্রায় ধ্বংস আর অকেজো হয়ে পড়েন।পাল্টা স্ট্রাইকও একেবারে খারাপ না। হটস্পার পুরোপুরি অকেজো,হসটাইলও।আর নার্ভিকের মুল্য দিলেন দুই অধিনায়কই।দুজনেই নিহত হয়েছেন।লি ভিকটোরিয়া ক্রস পেলেন আর বন্টে ক্রিগসমেরিনের সর্বোচ্চ সন্মান।

ব্রেক্সিট ও থেরেসা মে।

ওয়েস্টমিনিস্টার গনতন্ত্রের সৌন্দর্য আর উৎকর্ষতা এখানেই যে,ক্যাবিনেট প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী জনগনের টলটলায়মান ভোলাটাইল মানসিক রাজনৈতিক অবস্থা তার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্পষ্টতই অনুভব করেন।এটা আমাদের জঙ্গুলে আইনের দেশ নয়।ক্যামেরন তাই ব্রেক্সিটে হেরে নৈতিকভাবে আর আকড়ে থাকার অধিকার অনুভব করেন না।থেরেসা মে তার মেয়াদ পার করার সম্পুর্ন সুযোগ থাকা স্বত্বেও নিজের কাধে আসে এমন সব ভুল গায়জোয়ারি সিদ্ধান্ত নিতে সাহস পান না।
স্পষ্টতই ব্রিটেন কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিবে বৈষ্ণিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য।এটা থেরেসা নিজে তার ক্যাবিনেটের গায়ের জোরে নিতে আগ্রহী নন।তিনি জনগনের ভোট চান।হয়তো বা থেরেসা ত্রিশের দশকে নেভিল চেম্বারলেনের রাষ্ট্রনীতি ,পররাষ্ট্রনীতির করাল পরিনতি আর তার পরবর্তী দূর্যোগের ফলাফল সম্যক উপলদ্ধি করেছেন। চেম্বারলেন কি করেছিলেন,সেটা আমি পরের প্যারায় বলবো।থেরেসা কিছু ব্যাপারে পরিষ্কার ব্রাইটনদের মতামত চান ,এজন্যই ৮ জুনের মধ্যবর্তী নির্বাচন।সেগুলো আন্দাজ করা যায়, ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনের লক্ষ্য, ট্রাম্পের সাথে ব্রিটেনের একাত্নতা,ইউরোপের সাথে ব্রিটেনের সম্পর্ক,চীন ও তার মিত্রদের সাথে ব্রিটেনের সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত, চীনের বিপুল বিনিয়োগের হাতছানি ব্রিটেনকে ব্রেক্সিট এর ক্ষতিপুরন থেকে বিকল্প রিলিফ।
বহুদিন পর থেরেসাই ব্রিটেনের এমন এক প্রধানমন্ত্রী যে প্রথমদিন এসেই চীনের খুব প্রশংসা গেয়েছেন।আরেকটা কাজ করেছেন,পাকিস্তানের উচ্ছসিত প্রশংসা করা।এবং প্রথমদিনই।পাকিস্তান নাকি সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ব্রিটেনের গুরুত্বপুর্ন মিত্র।এগুলো বলার পরের সপ্তাহ হতে যদি কেউ ভারতীয় অভিবাসীদের উপকারে যায় না এমন সিদ্ধান্ত নিতে থাকে,তাহলে তা থেকে কি ফলাফল আসতে পারে।ট্রাম্প নির্বাচিত হবার পর থেরেসার সাথেই সবচেয়ে উষ্ণ সম্পর্ক হয়েছে।বাকি ইউরোপের সাথে সম্পর্ক অবনতি হয়েছে,যেমনঃ মার্কেল।আর বহু বছর পর ন্যাটো জোটকে শুনতে হয়েছে তোয়াজ নয়।বরং তাদের ফান্ডিং নাকি পর্যাপ্ত হচ্ছে না।এইসব।
এবার আসি ,চেম্বারলেনের ব্যাপারে।রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্ররা কিছু টপিকের সাথে পরিচিত ,উদাহরনঃ প্রফুমো কেলেঙ্কারী,ইরান-কন্ট্রা কেলেংকারী এমন।তেমনি একটি টপিক হলো ত্রিশের দশকে “চেম্বারলেনের তোষন-নীতি”।
জোসেফ চেম্বারলেনের সুযোগ্য উত্তরসুরী নেভিল চেম্বারলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হবার পর ত্রিশের দশকে হিটলারের নাজি উত্থানের পুরো সময়টায় নগ্ন তোষন-নীতির আশ্রয় নেয়।সোজা কথায় দালালীর।মানে হিটলারের যাবতীয় অপকর্ম চেকস্লোভাকিয়ার ,অস্ট্রিয়ার বিলুপ্তি থেকে শুরু করে পোলান্ডের শোচনীয় পরাজয় ও দখল সব সে অবলীলায় হজম করে।যেখানে পোলান্ড ও ফ্রান্সের সাথে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা চুক্তি আছে,বিপদের দিনে পরস্পরের পাশে দাড়াবার।রাষ্ট্র-বিজ্ঞানে একটা কথায় আছে যে, হিটলারকে যদি মিউনিক চুক্তির সময়ই আটকানো হতো ২য় বিশ্বযুদ্ধ আদৌ হতো না।কিন্তু এই পিট বুলিয়ে আচ্ছা, এবার মেরে আর কাউকে মারিস না কিন্তু ।এসব উষ্কানীমুলক সান্তনা আরো বিপদ ডেকে এনেছে।
পোলান্ডের অবলুপ্তির পরও চেম্বারলেন একিই রকম নীরব।এখনো নাকি সময় আসে নাই কিছু করার।এভাবে ফ্রান্সও শেষ পর্যন্ত জার্মান বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে পারলো না।অথচ চেম্বারলেন নীরব।যেই ফ্রান্সে তখন ব্রিটেনের ২লক্ষের বেশী সৈন্য নিয়ে গঠিত ব্রিটিস অভিযাত্রী বাহিনী আটকে আছে।তাদের কি হবে, ব্রিটেনের কি হবে এই চিন্তা ব্রিটিস জনগনকে দিনকে দিন উত্তাল করে দিচ্ছে।এমনি এক দিনে সংসদীয় সভায় যখন চেম্বারলেন নিজের বিগত দিনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দিচ্ছিলো, অথচ সবাই ফুসছিলো ।এমন সময় রাজনৈতিক লিও আমেরী(ইনি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত ও বার্মার সেক্রেটারী অভ স্টেট ছিলেন,এর জন্ম ভারতের গোরখপুরে) সবাইকে ডিঙ্গিয়ে সোজা চেম্বারলেনের সামনে এসে দাড়ান।যদিও নিয়ম অনুযায়ী তখন কথা বলবেন লেবার পার্টি প্রধান ক্লিমেন্ট এটলি।যিনি সেদিন আবার অনুপুস্থিত।তাই তার ডেপুটি কথা বলার আগেই আমেরি এসে চিৎকার করে চেম্বারলেনকে বলেন, আপনি থামুন ,আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।আপনি এখন “ইংল্যান্ডের হয়ে কথা বলুন” ।ইংল্যান্ড কি চায় তা বলুন।পুরো সংসদ উত্তাল হয়ে উঠে সবাই বলতে থাকে “ ইংল্যান্ডের হয়ে কথা বলুন”। ফলাফল সেই মুহুর্তেই চেম্বারলেন ক্যাবিনেটের পতন।যুদ্ধকালীন ক্যাবিনেটের দায়িত্ব পান উইন্সটন চার্চিল।আমেরি ১৬৪৯ সালের অলিভার ক্রমওয়েলের সেই অমোঘ উক্তি সংসদে দেনঃ you have sat too long here for any good you have been doing.Depart,i say,and let us have done with you.In the name of God, go!
চার্চিল পুরো জনগনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তটা অলরেডি জেনে গেছেন।ইংল্যান্ড যুদ্ধে যাবে।পোলান্ড আর ফ্রান্সের প্রতি দায়িত্ব সে বিনা দ্বিধায় পালন করবে।

নোয়াখালী বিভাগের শ্লোগান।

ফেসবুকে নোয়াখালী কে আলাদা দেশ বানানো নিয়ে নির্মম ট্রলিং চলছে।নোয়াখালী, লক্ষীপুর,ফেনীকে নিয়ে নাকি সেইদেশ গড়া হবে,প্রচ্ছন্নভাবে চাদপুরকেও ইশারায় ডাকা হচ্ছে।নাম হবে"ইউনাইটেড স্টেটস অভ নোয়াখালী "।মুদ্রা নাকি হবে টেয়া আর রাজধানী হেনী।
প্রত্যেক আন্দোলন একটা জয়ধ্বনি দিয়ে আগায়।যেমন: ভারত বন্দে মাতরম, পাকিস্তান লড়কে লেংগে পাকিস্তান, স্পেন থেকে ল্যাটিন আমেরিকা স্বাধীন হওয়ার সময় বলতো- পুয়ের্তো আউর মুয়ের্তো(এরকমই একটা কি জানি!),নোয়াখালীর লোকেরা কি বলবে আমি নিশ্চিত- "হোন মারাক"।

কাটাপ্পা বাহুবলী কো কিউ মারা?

কাটাপ্পা বাহুবলী কো কিউ মারা? আজ ইস সাওয়াল কা জোয়াব জরুর মিলা।কিউ কি আজ বাহুবলী ফিল্ম রিলিজ হুয়া।
বাহুবলী কো কোই নেহী মারা,ইভেন কাটাপ্পা ভি নেহি।ও তো খুদ ভি মর গেয়া বিজলি পর কে অঊর ঠ্যাডা পড় কে।বাহুবলী কাটাপ্পা কো পাস পানি মাংগা থা, ইন দ্য মিন টাইম বিজলি মিলা থা আসমান সে।
উ তো জাস্ট আংরা হো গ্যায়া!

আব্বা ও মোবাইল ফোন।

বন্ধুর মোবাইলের শো-রুমে বসে আছি সন্ধ্যায়।একজন ঘর্মাক্ত পরিশ্রান্ত মধ্যবয়সী লোক এসে ঢুকলো।মুখে পরিতৃপ্তির হাসি।জানালো,৬-৭ হাজারের মধ্যে কোন ভালো মোবাইল আছে কি?উনার ছেলে আজকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।উনি ছেলেকে বলেছিলেন,রেজাল্ট হলে একটি মোবাইল দেবেন।দোকান থেকেই ছেলেকে জানালেন,এইখানে আসো আমি আছি।
মধ্যবিত্ত বাবার চেহারা দেখলে বোঝা যায়,উনার প্রতিটা পয়সা গায়ের রক্ত ঘামে পরিনত করার মুল্য।ছেলেটা আসলো।আজকালকার ছেলেরা বাবার পরিশ্রমের মুল্য কিভাবে দেয় সেটা দেখার আগ্রহে বসে লক্ষ্য করতেছিলাম।
ছেলে আসলো,বাবা তাকে ৮-১২ হাজার রেঞ্জের অনেক সেট দেখালো।আর ছেলে কি করলো?
না ভাই, সে অতি বিবেচক একটা চমৎকার ছেলে।এতো মোবাইলের ভীড়ে সে ৩৬০০টাকা মুল্যের একটা সিম্পনি সেট নিলো।সে জানে তার বাবা কতো পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে।আমার চোখে দিয়ে পানি এসে গেছিলো,তার বাবার প্রতি ভালোবাসা দেখে।সত্যি বলছি ,এরাই একদিন এই দেশ বদলে দেবে।বাবা মায়ের ইচ্ছা পুরন করবে।
আমার আব্বার কথা মনে এসে গেছিলো।আব্বা সকালে অফিসে চলে যেতো।দুপুরে অফিসে প্রায় কিছুই খেতো না।সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরেই পুর্ন তৃপ্তির সাথে ভাত খেতো।দুপুরে খেলে যে অনেকগুলা টাকা খরচ হয়ে যেতো।আব্বাকে কোনদিন মুখে বলতে পারি নাই যে,উনাকে কতো ভালোবাসি,কতো ভালোবাসতাম।

ভাষ্কর্যঃ দ্য মাদারল্যান্ড কলিং।

আজকে ফেসবুক ভাষ্কর্যময়।আচ্ছা,এই ভাষ্কর্য(সুপ্রীম কোর্টের) এটার পরিকল্পনা,অনুমোদন আর অর্থায়ন করেছিলো কে?আর ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তই কে দিলো?নিশ্চয় এগুলোর একটা লিখিত ডকুমেন্ট থাকার কথা। না,এমনিতেই জানার কৌতুহল হলো।পৃথিবীর বহুদেশে ভাষ্কর্য নির্মিত হয়,সেগুলোর একটা সিগ্নিফিকেন্ট কারন থাকে।অর্থাত ভাষ্কর্যের মধ্যে দিয়েই মানুষ এটা তৈরীর ইতিহাসটা জেনে যান।ইউরোপ আর রাশিয়া তো ভাষ্কর্যেরই দেশ।
আজ একটা নারী ভাষ্কর্যের কথা মনে পড়লো।এটাই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নারী ভাষ্কর্যকর্ম।এর নাম “দ্য মাদারল্যান্ড কলিং”।এটা আছে আজকের রাশিয়ার ভলগোগ্রাদের(সাবেক স্টালিনগ্রাদ)মামায়েভ কুরগান নামক টিলার উপর।প্লিংথ লেভেল থেকে এর উচ্চতা ৮৫ মিটার।এই নারীমূর্তির উত্তরীয়টা পর্যন্ত কংক্রীটে অনেকটা ঝুলানো হয়েছে ,যেনো সেটা বাতাসে উড়ছে।এটিও গ্রীক ভাষ্কর্য অনুসারে নির্মিত।যেটার থীম উইংগড ভিক্টোরী অভ সামোথ্রেস দ্বারা প্রভাবিত।স্থপতি নিকোলাই নিকিতিন ও ইয়েভগেনী ভুশ্চেতিচ এটি নির্মান করেন ১৯৬৮ সালে।এই নারী মূর্তির মডেল হন ভ্যালেন্তিনা আইজোতভ।উনি এখনো বেচে আছেন।
বস্তুত নাজি জার্মানির সৈন্যরা যখন ১৯৪১ সালে নিপার নদী পেরিয়ে খারকভের দখল নেয়,রাশিয়া বিপদে পড়ে যায়।মস্কোতে নাজি জার্মানি প্রতিরক্ষা লাইন ভেদ করতে ব্যর্থ হয়ে যায়।পাল্টা আক্রমনে জার্মানি মস্কোতে হেরে যায়।তাই হিটলারের সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে স্টালিনের নামের শহর স্টালিনগ্রাদের উপর।তার লক্ষ্য হলো,দক্ষিনের এই শহরের দখল নিয়ে গিয়ে জার্মান বাহিনী যেনো আপসেরন পেনিনসুলার আজারবাইজানের বাকুতে গিয়ে হাজির হয়।সেটাই সোভিয়েত রাশিয়ার প্রধানতম তৈল আর জ্বালানীর আধার।তাহলেই রাশিয়া দমে যাবে,জ্বালানীর অভাবে।যখন এরই মধ্যে খারকভের পতনের ফলে ইউক্রেন আর দনবাসের কয়লা অঞ্চল নাজিদের হাতে চলে গেছে।ফলে স্টালিনগ্রাদে নাজি জার্মানীর ফিল্ড মার্শাল পাউল্যুসের ৬ষ্ট আর্মি এসে উপস্থিত হলে রাশিয়া দক্ষিনে বিচ্ছিন্ন হবার আশঙ্কায় পৌছে যায়।ফলে ঘোরতর যুদ্ধ বেধে যায়।স্টালিনগ্রাদের সমস্ত শহর নাজিদের হাতে এসে যায়,কেবল মামায়েভ টিলা,সার্জেন্ট পাভলভ ভবন আর কর্নেল জাভলোতিনির হাউস বাদে।মামায়েভ টিলায় সোভিয়েত লালফৌজ অগনিত সৈন্য হারাবার পরও দখল ছাড়েনি।বিজয়ের আগ পর্যন্ত এর দখল রুশ ফৌজ ধরে রাখে।
এখানেই সেই নারীমূর্তির ভাষ্কর্য বানানো হয়। ২০০ ধাপ সিড়ি ভেঙ্গে এই মুর্তির কাছে যেতে হয়।কারন বরাবর ২০০ দিন স্টালিনগ্রাদ নাজি জার্মানীর সাথে লড়েছিলো।নারীমূর্তির হাতে তলোয়ারটা ঠিক যেদিকে ধরা নাজি জার্মানীর সৈন্যরা সেদিক দিয়েই তাদের শহরে এসেছিলো,আর আরেক হাত দিয়ে নিজের সৈন্যদের আহবান করার জন্য হাতটা যেদিকে ফেরানো সেখান দিয়েই ভল্গা নদী পার হয়ে সোভিয়েত যোদ্ধার এসেছিলো।এই ভাষ্কর্যের পাদদেশেই এই যুদ্ধের বীর মার্শাল ভাসিলি চুইকভকে সমাহিত করে সন্মান জানান সোভিয়েত জনগন।

ভাষ্কর্য ।

ভাষ্কর্য নিয়ে আরো একটি বকবাজি করি,পরে ভুলে যাবো।আজকে যখন প্রসঙ্গটা এসেছে বলেই ফেলি।একমাত্র আমাদের দেশেই প্রগাঢ় ভক্তি থেকে ভাষ্কর্য নির্মিত হয়।যার ফলে দেখা যায়, ভাষ্কর্যের মুল শরীর থেকে তর্জনিসমেত হাত গানিতিক ব্যাখ্যার অতীত বড় হয়।যেনো এর মাধ্যমে ভাষ্কর্য শিল্পীই বলতে চায়, চোপ! দেখার আছে দেখ!কথা কম।
আমাদের চট্টগ্রামে তিনটা বাঘের ভাষ্কর্য আছে টাইগার পাসে।লালখান বাজারের দিকে যেতে রাস্তার দুই পাশে যে দুইটা বাঘের ভাষ্কর্য আছে সেগুলো সত্যিই চমতকার।কিন্তু টাইগার পাস মোড়ের অতিকায় বাঘের ভাষ্কর্যে এসে শিল্পী আবেগে সেই অতিকায় বাঘের অন্ডকোষও অতিকায় করে বানিয়েছেন।বাস্তবে বাঘের অণ্ডকোষ বৃষএর মতো ঝুলায়মান হয় না।যদি হতো এই বাজারের থলে নিয়ে সুন্দরবনের বাঘের আর হরিন ধরতে হতো না।
আমরা অনেক সময় টিভিতে বা পত্রিকায় ঘোড়ার পিঠে বীরের মূর্তি দেখি।সেগুলোও কিন্তু একটা নিয়ম মেনে তৈরী করা হয়।যদি দেখেন ,যে ঘোড়ার পিঠে বীর বসে আছে,সে ঘোড়ার সামনের দুই পা উপরে তোলা অবস্থায় থাকে তাহলে বুঝে নেবেন এই বীর যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন।
আর যদি দেখেন বীরের ঘোড়ার তিন পা মাটিতে কিন্তু সামনের এক পা উঠানো আছে,তাহলে বুঝে নেবেন সে যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয়েছেন,এরপর নিজের সৈন্যদের মাঝে এসে নিহত হয়েছেন।
আর যদি দেখেন বীর এর ঘোড়া চার পা ভিত্তিমুলে নিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় বীরকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন,তাহলে বুঝে নেবেন বীর ঘরে তার স্ত্রীর কোলে ডালিম বা আনারের রস খেয়ে স্বাভাবিকভাবে বিদায় নিতে পেরেছেন।যেমনঃচেঙ্গিস খান এর মূর্তি।
আবার ট্রাফালগারের যুদ্ধে এডমিরাল হোরেসিও নেলসন সামনাসামনি অংশ নিয়ে কামানের আঘাতে হাতের মুষ্ঠি হারান।এই বিপুল রক্তপাত নিয়েও তিনি অবিশ্রাম যুদ্ধ লড়ে যান,নির্দেশনা দিয়ে যান।এভাবেই সৈনিকদের মাঝে তিনি প্রান হারান।জয় আসে ,কিন্তু ততক্ষনে নেলসন নেই।ইংল্যান্ড তার ভাষ্কর্য করে ট্রাফালগার স্কোয়ারে।তার মুর্তির সবকিছু তারা অবিকল করে,কিন্তু ইংরেজ জানে মুষ্ঠি ছাড়া নেলসন কি করে নেপোলিয়নকে ধবংস করে দেয়।তাই তারা নেলসনের মূর্তির মুষ্ঠি সন্মান করে দেননি।এটি সন্মান,অংগহানীর চিহ্ন নয়।

মহেশ চন্দ্র শর্মা।

ভারতের রাজস্থান হাইকোর্টের বিচারপতি মহেশ চন্দ্র শর্মা বলেছেন,ময়ুর ব্রহ্মাচারী পাখি।এরা যৌন সংসর্গ করে না,ময়ুরী ময়ুরের চোখের জল পান করে গর্ভবতী হয়।কি মারাত্বক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার!
এই রকম লোকের হাতে ইন্ডিয়ান পেনাল কোড!
আমি দিব্যচোখে ভাবতেছি আর দেখতাছি, পুরুষ ময়ুরটা আ: আ: কইরা কানতেছে,আর তার চোখের জল পান কইরা আইসা ময়ুরী জানাইতাছে তুমি বাবা হইতাছো।আমার পেটে তোমার ডিমডিমাডিম ডিমডিমাডিম ডিম।হাট্টিমাটিম টিম।

ঠ্যাডা।

আজকে চট্টগ্রামে ভয়ানক ঠ্যাডা পড়া দেখে মনে পড়লো ওইদিন একজায়গায় পড়লাম,বিশ্বের সর্বোচ্চ ঠ্যাডা পড়া ৩টা দেশের মধ্যে ২য় বাংলাদেশ।গতবছরই ২দিনে ঠ্যাডা পড়ে ৫৫-৫৬জন মারা গেছিলো।
আমাদের দেশে ঠ্যাডা পড়ে মরলে ভিকটিমের পরিবার নতুন নাম পায়।ধরেন, তার নাম হয়ে যায় ঠ্যাডা মফিজ ওরফে ঠ্যাডা মফিইজ্জা।এদিকে গায়ে ঠ্যাডা পড়াতে ঠ্যাডা মফিজেরও মরোনোত্তর শান্তি বিঘ্নিত হয়।কারন আমাদের দেশে একদল লোক আছে যারা ভাবে,ঠ্যাডা পড়া ব্যক্তির কংকালে ম্যাগনেট এসে যায়।অতএব পাহাড়া দিয়েও এই কংকাল রাখা যায় না।এই ম্যাগনেট ওলা কংকাল চোরের দল আর সীমানা পিলার চুরি করার দল কাকতালীয় ভাবে একিই দল।
চট্টগ্রামে এক সাবেক এমপির বাপ এই ঠ্যাডা পড়ে নিহত হন।এমপি হওয়ার আগ পর্যন্ত উনাদেরকে এলাকার মানুষ ঠ্যাডা অমুকের পোয়া বলেই চিনতো।নাম বলতে পারবো না ভাই।মানহানি মামলা গায়ে ঠ্যাডা পড়ার থেকেও খারাপ।

আম্রপালী।

আজকে আম কিনছিলাম,আমওলার সততা আর ব্যবহার মনে দাগ কেটে গেছে।তাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম,ভাই আম ঠিক আছে তো? সে একটা বিবাগী লোকের মতো জবাব দিছে(যেনো আমার কাছে আমগুলা বেচার পরই ও জগত সংসার ত্যাগ করে চিরবিদায় নিবে), স্যার এই আম অমায়িক মিষ্টি। আমার ও হাসরের ময়দানে জবাব দিতে হবে যদি আপনার মতো রোজাদার(আমার চোখে দিয়ে পানি বের হয়ে গেছিলো) দের ঠকাই।
ঘরে এসে খেয়ে দেখি আসলেই আমগুলা অমায়িক মিষ্টি।দুনিয়ায় সৎ লোক এখনো আছে।

লবজ।

এই যে আজকে আমাকে আমওলা বললো যে,তার আমগুলা অমায়িক মিষ্টি।এটা শোনার পর আমার মনে পড়লো অনেকের এজাতীয় কিছু গুনবাচক শব্দ বা বিশেষন ভালো লেগে যায় ।পরে তারা এটির গন-ব্যবহার চালিয়ে যায়।
আমার বন্ধু হারুনের প্রিয় শব্দ হলো "কোনঠাসা"।সে যেকোন পরিস্থিতিতে এটির ব্যবহার করে।উজ্জলের প্রিয় শব্দ ছিলো"একাকার"।বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট একাকার এই জাতীয় কথা বলার পরও কোন সুন্দরী দেখলে সে বলতো, বোজজস মাইয়াডারে দেইক্যা মনডা একাকার অইয়া গেছে।
ছোট ভাই বায়েজিদ যেকোন অবস্থায় বলতো "আদ্যপ্রান্ত"।এবং অনেক অনেক বার এই কথাটা ইউজ করতো।মামুন এর প্রিয় ছিলো পুংখানোপুংখু।নান্টু বলতো ,এতো মনোরম না।কোন কিছু সুন্দর না হলে।
আমাদের এক দাদার দিয়াশলাই শব্দটা খুব ভালো লেগে গেছিলো।আমাদের গ্রামে এটাকে প্রচলিত ভাষায় ভান্ডি বলা হতো।এভাবেই চলছিলো।কিন্তু ঐ দাদার দিয়াশলাই কথাটা ভালো লেগে গেছিলো।উনি দাদিকে একদিন শিক্ষিত মনোভাব বোঝানোর জন্য বলে ফেলছিলো, দিয়াশোলাইটা একটু দাও তো? দাদি অবাক হয়ে বলে ,জিনিসটা কি?দাদা বলে ,আরে মুরুক্ষ মেয়েলোক এইটা আর কি দিয়াশোলাই।আর দাদী ক্ষেপে গিয়ে বলে, এহ! কি আমার জ্ঞানের জাহাজটা।ভান্ডি ভান্ডি বলতে বলতে মরনের টাইম আইস্যা পড়ছে,এখন উনি দিয়াশোলাই শিখাইতে আসছে।

সউদ বংশ ও ক্রাউন প্রিন্স সালমান।

মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স বানানো হলো।এমনিতে সউদ বংশের কাহিনীর মধ্যে কোন বৈচিত্র নাই।তবে অনেকদিন পর কিন্তু এটা একটা ব্যতিক্রম হলো।বাপের পর পোলা বাদশাহ হবে এতে আশ্চর্যের কি আছে?তাই না।এখানেই ব্যতিক্রমটা।এর আগে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজই কেবল বড় ছেলে সউদকে বাদশাহর উত্তরাধিকার দিয়েছিলো।
আবদুল আজিজ ছেলেদের কোরান স্পর্শ করিয়ে শপথ করিয়েছিলেন যেনো তারা সিংহাসন নিয়ে অন্তর্দ্বন্দে সউদ বংশের হাত থেকে ক্ষমতা অন্য কাউকে না দিয়ে ফেলেন।অত্যাধিক স্নেহবশত তিনি কেবল নিজেই বড় ছেলে সউদকে সিংহাসন এর উত্তরাধিকার দিয়ে যান।কিন্তু সেটুকুই।এর পর সউদ বাদশাহীত্ব বর্তাবে আবদুল আজিজের সবচেয়ে যোগ্য ছেলের হাতে ,সেটা সব ভায়েরা মিলে ঠিক করবে।যেদিন আবদুল আজিজের সব পুত্র মারা যাবে কেবল এরপরই আজিজের নাতিদের আমল শুরু হবে।আর সৌদিরা বাচেও অনেকদিন।গাড়ির তলে না পড়লে তারা সহজে মরে না।
ভাবেন শুধু, যে আবদুল আজিজ ১৮৭৬ সালে জন্ম নিয়ে ১৯৫৪ সালে মারা যান ,এখনো তার ছেলেদের আমল শেষ হয়নি।বাদশাহ সালমান মারা গেলেই আর আজিজের কোন জীবিত পুত্র থাকবে না।এরপর নাতিদের যুগ।আবদুল আজিজ আর বেশীরভাগ বেদুইন আরবদের মতোই বীর্যবান এক পুরুষ ছিলেন।১৯০২ সালে আল রশিদ বংশকে সমুলে ধবংস করে সে হেজাজ আর নেজাদের দখল নেন। ১৯২৪ সালে ইংগ-মার্কিন সহযোগিতায় সৌদি আরবকে এক করেন ,১৯৩২ সাল থেকে সৌদি আরব পৃথিবীর বুকে নাম লেখায়।আবদুল আজিজ এই দখলিকৃত সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য অগনিত বেদুইন সর্দারের মেয়েদের বিবাহ করেন,যাতে এরাই তার রাজ্য টিকিয়ে রাখার বিশ্বস্থ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।আর আজিজের পেডরোলো মোটরটাও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলো।আরবদের এই গুনটা এমনিতেও জগতবিখ্যাত।আমার হিসেবে আবদুল আজিজের স্পার্মের প্রবাহ এতো জোরালো ছিলো যে, সে পেশাব কমই করতো ।তাই মরে যাওয়ার আগে সে এক বিশাল পরিবার রেখে যায়।
বড়ছেলে সউদের প্রতি আজিজের অত্যান্ত স্নেহ ছিলো।সে বাপের সাথে সেই রশীদ বংশের সাথে লড়াইয়ের পর থেকে ক্রিটিক্যাল সব কন্ডিসনে পাশে ছিলো।তদুপরি ১৯৩২ সালে মক্কায় আবদুল আজিজ নামাজ পড়ার সময় এক ইয়েমেনী আততায়ী তার উপর ছুরি নিয়ে প্রানঘাতী আক্রমন চালায় ।কিন্তু বড়পুত্র সউদ ঝাপিয়ে পড়ে বাপের প্রান বাচায় ও সেই আততায়ীকে হত্যা করে।কিন্তু নিজে গুরুতর জখম হন।তার বাচার কোন আশা থাকেনা।তাকে দ্রুত চার্টার প্লেনে বৈরুতে নিয়ে দীর্ঘদিন চিকিতসা করে সুস্থ করা হয়।বেশীর ভাগ সউদি বাপের কাছে বড়ছেলে বন্ধুর মতো।তারা পুত্রস্নেহে অজ্ঞান।
এই সউদই পিতার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্য পেলো কিন্তু বছর ৬ এর মধ্যে রাজ্যকে বিশ্বব্যাংক ,আইএমএফ এর কাছে ডিফল্টার বানিয়ে ফেললেন।তার অপচয়ের মাত্রা দেখে পুরো ফ্যামিলি তাকে আল্টিমেটাম দিলো।তাতে কাজ না হওয়ায় স্পেন আর লেবাননে তাকে নির্বাসন দেয়া হলো।নতুন বাদশাহ হলো আজিজের আরেক পুত্র ফয়সাল ,সৌদি আরবের সবচেয়ে সেরা শাসক।তার তুর্কী স্ত্রী ইফফাত তো সৌদি আরবের নারী শিক্ষার জন্য প্রতিকৃত হয়ে থাকবে।ফয়সাল ইফফাতকে এতো ভালোবাসতো যেটা সৌদি পুরুষদের জন্য বিরল।উনি ইফফাতের ভালোবাসায় আমৃত্যু ছিলেন।অন্যকোন নারীর দ্বারে তিনি যাননি।এর আগে এমন স্ত্রীর প্রতি দূর্বলতা আব্দুল আজিজেরও ছিলো,তিনি বাদশাহ ফাহদের মা হাসা সুদাইরির প্রতি অত্যান্ত প্রেমময় ছিলেন।আচ্ছা যাক সে কথা, ফয়সাল ১৯৭৫ সালে আপন ভাতিজার হাতে নিহত হন।এই ফয়সলের পুত্র যুবরাজ ফয়সাল দীর্ঘদিন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।বাবা মরার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে আজিজের আরেকপুত্র খালিদ বাদশাহ হন।এরপর বাদশাহ ফাহদ,এরপর আরেক পুত্র আবদুল্লাহ , এরপর আজকের সালমান।এ যাবত বাদশাহ নির্বাচিত হতো সউদ বংশের পারিবারিক মিটিং এ।সেখানে বাবা-ছেলে মুখ্য না, বংশে যে ছেলে সবচেয়ে যোগ্য সেই হবে বাদশাহ।সউদ বংশের এখনকার সদস্য সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশী।এরমধ্যে প্রিন্স হিসেবে ধরলেও ১৫০০ এর কম না।
এতোকিছু অগ্রাহ্য করে বাদশাহ সালমান নিজের পুত্র মোহাম্মদকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষনা করাটা তাই ব্যতিক্রম।আগের বাদশাহ ফাহদ আর আবদুল্লাহর ছেলেদের তাকে অনেকটাই তাই নিষ্ক্রিয় করতে হয়েছে।সবার থেকে বেশী করে নজর দিয়ে নিষ্ক্রিয় করতে হয়েছে সিংহাসনের অগ্রাধিকার দাবীদার নায়েফ বিন আবদুল আজিজের পুত্রকে।তাই এদের মধ্যে এবার গন্ডগোল বাধলে মোটেও অবাক হবো না।
বিশ্বের অন্যতম তেল উতপাদনকারী সংস্থা হলো, সৌদিয়া আরামকো লিমিটেড।এতে অর্ধেকের কাছাকাছি মালিকানা ইংগ-মার্কিনী ফার্মগুলো।তারাও সুযোগ পাবে এই অসন্তুষ্ট পরিবারের সদস্যদের সান্তনা ও মন্ত্রনা দেয়ার।

বিবাহের বাজার ও গরুর বাজার।

গতকালের আড্ডায় আমার এক বন্ধুর বন্ধু এসেছিলো।উনি এখনো বিয়ে করে উঠতে পারেননি।উনার মনমতো কিছু হয়ে উঠছিলো না।আমার বন্ধু বললো, হ্যা সে চেষ্টা করছে,কিন্তু মিলছে না।এদিকে তার চাকুরীজীবনের ৮-৯ বছর অতিক্রান্ত।বন্ধু আমাকে বলে, কিছু একটা বল।মিলাদের শেষে যেমন এ হুজুর সে হুজুরকে ঠেলে ,হুজুর মোনাজাতটা আপনি ধরেন তেমনি।
আমি কি আর বলবো, আমি বললাম ,ভাই আপনি কি আসলে বিয়ে করবেন? যদি না করেন, তাহলে আর করার চেষ্টা কইরেন না।এতে কোন দোষ নেই।আর যদি সত্যিই করতে আগ্রহী হোন, একটু ছাড় দিয়ে আগান,সেটা যেকোন কিছু,আপনিই সেটা জানেন।এতো চুজি হইয়েন না।মেয়েপক্ষেরও তো অনেক কিছু বিবেচনা করার আছে।এসব ক্ষেত্রে দুপক্ষের কিছু ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হওয়া সুন্নত(দেখছেন আমি কি ধার্মিক)।সে একটু মনোক্ষুন্ন হলো।
আমি তাকে উদাহরন দিলাম(এটা কোন ভদ্রগোছের উদাহরন নয়,যেখানে দাঁ লাগে না,সেখানে কুড়াল লাগিয়ে দেয়ার মতো ব্যাপার), দেখেন বিয়ের বাজারে আর কোরবানীর গরুর বাজারে একটা ব্যাপারে হুবহু মিল আছে।আপনি ভালো জব করেন (এখন থেকে সমান্তরাল করে পড়বেন- মানে আপনি কোরবানীর বাজারে ৮০-৮৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন,ভাবছেন একটা দেখনসই গরু মিলে যাবে), ভাবছেন আপনি আপনার মনের চাহিদা মতো একটা মেয়ে পেয়ে যাবেন।কিন্তু বাজারে নেমে দেখবেন,আপনার পছন্দের গরুগুলা আসলে ১লাখ ২০হাজারের কমে পাবেনই না।এদিকে গরু খুজতে খুজতে ( আপনারা পড়ুন ,বিয়ের মেয়ে খুজতে খুজতে) সন্ধ্যে পার করে রাত করে ফেললেন।টাইম পার করে কনে খোজা আর সন্ধ্যের পর গরু কেনা দুটোতেই হুজ্জতির কোন শেষ নেই।
অতএব বেশী দেরী কইরেন না।হয় বিয়ে করে ফেলুন ,নতুবা নয়।বন্ধুর বন্ধু রাগ করলো সম্ভবত।
এবার আমি তাকে একটা রিয়েল লাইফ অভিজ্ঞতা বললাম। ২০০২ সালে আব্বা হজে গিয়েছিলো ।সুতরাং কোরবানীর গরু কেনার জন্য আমি আর আমার ছোট ভাই বাজারে গেলাম।আজীবন আব্বার সাথে আমরা গরু কিনতে বাজারে যেতাম।আব্বা গরু চিনতো ভালো।আমার ছোট ভাইয়েরও এই গুনটা আছে।কিন্তু যেহেতু আব্বা নাই, তাই আমরা গেলাম।দুই ভাইয়ে সেই দুপুর থেকে গরু খোজা খোজলাম।কিন্তু কিছুতেই মেলাতে পারলাম না। রাত হয়ে গেল ।আমরা হয়ে পড়লাম অধৈর্য।অবশেষে একটা গরু পেলাম।ছোট ভাই নিষেধ করলো,সে বললো,আর একটু দেখি।আমি ঘাঊরামি করে কিনে ফেললাম।গরু মাঝারি সাইজ ,হৃষ্টপুষ্ট।ভুলে গেলাম কনে দেখতে হয় বিকেলের কনে দেখার স্বর্নালী আলোয় আর গরুও সেই টাইমে দেখা ফরজে আইন।কিন্তু ঐ যে নিয়তি কেনো বাধ্যতে!
বাজারের বাইরে আসতে আসতে গরুর সাইজ যেনো কিছুটা কমে গেলো।আর এখন তেমন হৃষ্টপুষ্টও লাগছে না।আল্লায় জানে আমার চোখে বাজারে কোন ঠ্যাডা পড়ছিলো।ছোট ভাই আমাকে পুরো রাস্তা সান্তনা দিয়ে আসছিলো।এদিকে আরেক ব্যাপার হয়েছে,গরু যেনো একটু কম হাটতেছে।সাথে করে মুখ দিয়ে ফেনা সহ একটু একটু করে লালাও পড়তেছে।আমার মরে যাওয়ার মতো অবস্থা।একটা পোলা গরু নিয়ে আসতেছে তার চোখে পানি আর পিছনে লালাওলা গরু।
বাসায় আসলাম।কেউ কিছু বলে নাই।দুলাভাই শুনে গরু দেখতে আসলো।আমাকে বললো,পাড়ার গরু পালে যে কাকা তাকে একটু দেখাতে ।শুনে আমার পিলে চমকে উঠলো।ডাক্তাররা যেমন রোগী দেখার পর বোর্ড বসাবার কথা বললে রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের খবর হয়ে যায় তেমনি।উনি আসলেন,এসেই বললেন,আরে ধুরু গরুর কিছু হয় নাই।এটা অনেক দূর থেকে জার্নি করে আসছে, এর জ্বরের মতো হয়ে গেছে।একে গরুর প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ গুলে জোর করে খাওয়ালো(এই ঘটনার পর আমিও জার্নি টার্নি করে আসলে প্যারাসিটামল খেতাম,কাজ করতো)।উনি বললেন,দুইদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।কোরবানীর আছে ৫ দিন।
সব ঠিক আছে ,কিন্তু গরু কিছুই খায় না।এমনকি গরুর যেনো খাওয়ার ইচ্ছা বা প্রেষনা জাগে ,এইজন্য আমি গরুর কাছাকাছি বসে ভাত খেতাম, তাকে দেখিয়েই চাবাতাম ।এতেও যদি তার ক্ষুধাবোধ জাগ্রত হয়।কিন্তু যেই কে সেই।আমি আল্লাহকে ডাকতাম, আল্লাহ কোনমতে কোরবানীর দিন সকাল পর্যন্ত যেনো সব ঠিক থাকে।ঠিক কোরবানীর আগের দিন গরু খানা-দানা শুরু করে।আমি আনন্দে চিৎকার করে সবাইকে জানাতে থাকি ,গরু খড় খাইতেছে, ভূষি খাইতেছে, এমনকি ভাতের মাড়ও একটু একটু করে স্যুপের মতো করে খাইতেছে।
গল্প বলা শেষ হলে দেখি, আমার বন্ধু মাটিতে গড়াইতেছে হাসতে হাসতে।আর বন্ধুর বন্ধুর মুখ ভার।বিয়ের কনে খোজা থেকে গরুর বাজার এ যাওয়া তার ভালো লাগে নাই।

আমার কাকা এরশাদ।

মুখ গহ্বরের কোষ আর পায়ুপথের ভিতরের কোষ দুটোই এপিথেলিয়েল কোষ(আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে)।যদিও গঠনগত বিশ্লেষনের জন্য দুই জায়গার কাজের পার্থক্য আছে।একটিতে দাঁত থাকায় তা দেখতে একরকম আর আরেকটিতে না থাকায় তা দেখতে আরেকরকম।একটিতে ভোকাল কর্ড আছে,আরেকটিতে না থাকলেও আছে।কোন কোন মানুষের মধ্যে স্রস্টার অপার মহিমায় দুটার তফাৎ ধরা যায় না,এমন লোক পোন্দে-মুখে কথা বলে।এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই,এরশাদ লোক তত খারাপ না।এই মৃত্যু জনপদে সেই কিছুটা আনন্দ দেয়।

সাবজেক্ট ও প্রেডিকেট।

বিশ্বজিৎ মামলার রায়,ছাত্রলীগ, জাফর স্যারকে নিয়ে আমার কোন ব্যক্তব্য নাই।লক্ষীপুরনিবাসী একরাম ভাই বলেন, যেই সাবজেক্টের পেটিকোট (প্রেডিকেট) নাই সেটা নিয়া মাতামাতির কিছু নাই।

মর্সিয়া,২০১৭।

তাজা মৃত্যুর শোকে বিলাপ বা ইংরেজীতে যাকে লামেন্ট বলে সেটা করা আমাদের উপমহাদেশের এই অঞ্চলসহ আশেপাশের আরো কয়টি এলাকায় প্রচলিত একটা প্রথার মতো এবং এখনো এর প্রচলন আছে।এটা প্রধানত মহিলারাই করেন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে।আমি দেখেছি ,মাঝবয়েসী মহিলারার থেকেই এই বিলাপের শুরুটা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে হয়।এবং শুরু হয়ে যাওয়ার পর বয়স্ক মহিলারাও এর মধ্যে কিছু স্মৃতিচারন করে এতে গতি আনেন।তারপরই আবার নতুন গতিতে বিলাপ শুরু হয়ে মাটিতে গড়াগড়ির পরিস্থিতি তৈরী হয়।
মাতম বা বুক চাপড়ে ,ছুরি চাক্কু দিয়ে শিয়াদের মতো করে মর্সিয়া করা আমাদের এ অঞ্চলের প্রচলিত প্রথা নয়।গতকাল আওয়ামীলিগের নেতাকর্মীরা যেভাবে কালোকোট পড়ে হায় হায় করেছে ,এটা এই ভূ-খন্ডে অত্যান্ত অভিনব একটা রিচুয়াল।আমার পরিচিত জনেরা গতকাল বেদম কৌতুক অনুভব করেছে। ২০ টা ইত্যাদি ম্যাগাজিনও এই আনন্দ দিতে পারে না।
যেই কথা বলছিলাম, আমাদের বাংলাদেশে এই বিলাপটাই প্রচলিত।এতে যারা অংশ নেয় তারা সবাই নিকটাত্মীয়।তাই তাদের অংশগ্রহন স্বাভাবিক তাগিদ।কিন্তু ভারতের রাজস্থানে এক উপজাতীয় সম্প্রদায় আছে, যাদের মধ্যে বিলাপ করা আস্ত এক দলই আছে ,যারা টাকার বিনিময়ে কেউ মারা গেলে বিলাপ করার জন্য ভাড়ায় অংশগ্রহন করে।আমাদের দেশে বিয়ে-শাদীতে ব্যান্ড-পার্টির মতোই।এই বিলাপের মহিলার দল একজন শক্তপোক্ত সুঠামদেহীর বয়স্ক মহিলার নিয়ন্ত্রনে থাকে।কারন সেইরকম মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে উচ্চস্বরে বিলাপ করার সাথে সাথে পুরো দলকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য স্বাস্থ্যের দরকার আছে।উনিই টাকাটা বুঝে পান এবং বয়স পারফরমেন্স অনুযায়ী দলের অন্যান্যদের মধ্যে টাকা বন্টন করেন।
দলে নবাগতদের কমই নেয়া হয়।কারন বয়স্ক দলনেত্রীর এই মৃতের বাড়ীতে যেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বিলাপের সাথে উঠানের মাটি নিয়ে ফেলা নবাগতের পক্ষে হুট করে ধরে ফেলা সম্ভব নয়।আর অনেক পেশার মতোই এই জিনিসটা সময় ,বয়স আর অভিজ্ঞতায় আসে।দেখেন নাই, কাল হাজি ইকবাল যেভাবে হায় মুজিব হায় মুজিব করেছে, এটা সেখানের ইয়ংদের পক্ষে করা সম্ভব হয় নাই।এটা আসবে আরো সময় গেলে।প্রাথমিক লজ্জাবোধ কেটে যাওয়ার পর।
একিই সাথে বিলাপ দলের নেত্রী খেয়াল করে ,উনি যেভাবে সুর করে বিলাপ করার সাথে সাথে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে ব্যাপারটায় একটা হৃদয়বিদারক ভাব আনেন,তা আর কে কে করতেছে।কারন তাদের খেপ শেষ করে যাওয়ার পর সে টাকা পে করবে যার যার সেদিনের পারফর্মেন্স অনুযায়ী।উনি খেয়াল করেছেন,নবাগত কেউ কেউ উনার একটিভিটিজে হাসি দিয়ে ফেলেছে, কিংবা সেখানে গিয়ে কোন যুবকের সাথে বিলাপের সময় চলাকালেই চোখাচোখি করেছে।উনি সব খেয়াল করেছেন।অবশ্য উনি সেখানেই তাদের চিমটি বা থাপ্পড় মেরে বলেছেন ইশারায় , এই হারামজাদি আজ প্রগ্রামের পর বুঝাবো তোকে।এভাবে বিলাপ কর, হ্যা হ্যা গড়াগড়ি দে।মুখের হাসিভাব লুকা।কবে শিখবি রে মাগির ঝি মাগি! নাগরের লগে টাংকিবাজি বন্ধ কর।ভালো করে শিখে রাখ আমার থেকে।আর কবে শিখবি! আমি মরলে শিখবি!
এমনি সব অদ্ভুত দল আছে।মান্টোর গল্পে বা শীর্ষেন্দুর গল্পে এমন সব ঝগড়াঝাটিতে ভাড়ায় যাওয়া মহিলার দলের কথাও পড়েছি।এরা যেই পরিবারের পক্ষ নিয়ে ঝগড়ায় অংশ নিতে যায় তাদের থেকে যাদের উপর আক্রমন চালানো হবে তাদের সম্পর্কে যতো কুৎসা বদনাম আছে তা জেনে যায়।আর পেশাগত প্রয়োজনীয়তায় নিজেরাও কিছু দূর্নাম সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।সাথে করে সংগ্রহ করতে থাকে ছেড়া জুতা, ভাংগা ঝাড়ু, নোংরা কাপড় সহ বিভিন্ন জিনিস।আবাচ্চ্য গালাগালির সময় এসব প্রতিপক্ষের দিকে ছুড়ে মেরে তাদের টেম্পার ও আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরানো হয়।

রাজিব গান্ধী শ্রীপেরাম্বুদুরেতে।

রাজিব গান্ধীর আমলের কথা,তার পররাষ্ট্র নীতির কথা একটু মনে করতে পারলে দেখবেন অন্য অনেকের চেয়ে রাজিব অনেক অসাম্প্রদায়িক ছিলেন।মা ইন্ধিরা গান্ধীর মতোই।তাদের দুজনের সময়েওই মুসলমান আর শিখেরা অনেক ভাইটাল পোস্টে ছিলো।সোজা কথায় এখনকার কট্টর হিন্দুত্ববাদ অন্তত তাদের এজেন্ডা ছিলো না।রাজিব তার সময়ে তার প্রতিবেশীদের সাথে খুব একটা জটিল পরিস্থিতিতে শুধু শুধু জড়াতে আগ্রহী ছিলেন না।যার ফলে অন্য অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে শ্রীলংকার তামিল সমস্যার একটা অগ্রসরমান প্রক্রিয়া তিনি চালু করেন।১৯৮৭ সালে তিনি ,শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট জয়াবর্ধনে আর এলটিটিই নেতা প্রভাকরনের মধ্যে একটা ত্রিপক্ষীয় শান্তির চেস্টা চালান।কিন্তু প্রভাকরন প্রথমে রাজি বলে জানিয়েও বিট্রে করেন বরাবরের ন্যায়।
এলটিটিই এর বিরোধিতা করে রাজিবের জন্য সুইসাইড স্কোয়াড প্রস্তুত করে।আসলে ইন্ধিরার হত্যাকান্ডের পর ধারনা করা হতো কোন এক শিখ খালসাপন্থী কট্টর গ্রুপই গান্ধী পরিবারের জন্য আবার হুমকি হয়ে উঠতে পারে।কিন্তু এটা ধারনার অতীত ছিলো যে,দক্ষিনে কোন উগ্র তামিল গ্রুপের হাতে গান্ধী পরিবারের কারো জীবনহানী ঘটবে।অথচ তাই ঘটেছিলো।আর এটার পরিণাম ভুগতে হয় তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরনকে ২০০৯ সালে।শ্রীলংকা সে বছর প্রভাকরন আর এলটিটিইকে সম্পুর্ন নিশ্চিহ্ন করে দিলেও ভারতে সেসময়ের কংগ্রেস সরকার তাদের টিকিয়ে রাখতে তেমন জোরালো ভূমিকা নেয়নি।বা নিতে পারেনি।
২১ মে,১৯৯১ সাল।রাজিব সমগ্র অন্ধ্র ,হায়দ্রাবাদ আর বিশাখাপট্টনম এ নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে ক্লান্ত ,ঘর্মাক্ত শরীরে মাদ্রাজের শ্রীপেরাম্বুদুরেতে আসেন।সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী তার মায়ের আমলের অত্যান্ত বিশ্বস্ত নেত্রী মারগাথান চন্দ্রশেখর।সেবার তার জয় প্রায় নিশ্চিত।জনসভার স্থলে বিশাল স্টেজে মিজ চন্দ্রশেখর,জি কে মুপানার ও তার সাথে অন্যান্য নেতাকর্মীরা।এসময় আবেদন এলো রাজিবকে তামিল সংস্কৃতিতে অভ্যর্থনা জানানো হবে।তাকে কবিতা আবৃতিসহ জয়মাল্য পড়ানো হবে।রাজিব অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হলেন।কিন্তু তার নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত রক্ষীরা জানালেন, ঘটনাস্থলে অপ্রত্যাশিত ভীড় দেখা যাচ্ছে।কিন্তু রাজিব তার জন্য পাতা লাল গালিচা দিয়ে হেটে পুষ্পমাল্য দেয়ার জন্য অপেক্ষমাণ যুবতিদের দিকে আগালেন।কবিতা আবৃত্তি করছে  সুইসাইড স্কোয়াডের কোকিলা ,আত্মঘাতি দলের ধানু নামে এক যুবতী বড় পুষ্পমাল্য নিয়ে রাজিবের অপেক্ষায় ছিলেন।তাকে সহায়তাকারী নলিনি সহ অন্যরা ।এসময়ই রাজিব স্মিত হেসে তার রক্ষী কনস্টেবল অনুসুয়ার দিকে তাকালেন।হ্যা, তার কাছে হঠাত করে কেনো যেনো পরিস্থিতিটা ভালো লাগছে না।অনুসুয়া ধানুদের এতো কাছে ভীড় করে দাড়াতে নিষেধ করলেন।তখনিই ধানু একেবারে রাজিবের পায়ে এসে প্রনাম করার ভংগি করেই আরডিএক্স ডেটোনেটর প্রেস করে দেন।রাজিব ,অনুসুয়া,ধানু ,ক্যামেরাম্যান সবাই মুহুর্তেই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।রাত তখন সাড়ে নয়টার কিছু বেশী।
সোনিয়া আজকে দশটা বাজার পরও ঘুমাতে পারছেন না।সে নিয়মিত তাড়াতাড়ি বিছানায় যায়।এদিকে আজকের কংগ্রেসী অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বারামের স্ত্রী নলিনীর কাছেই দিল্লীতে সবার আগে ফোন আসে যে, রাজিব আর নেই।তিনি রাজিবের এপিএস ভি কে জর্জ কে ব্যাপারটা জানান।এপিএস হতভম্ব, সে চিৎকার করে বার বার জানতে চায়, সঠিক খবর জানান দ্রুত ।তাকে জানানো হয়,এটাই অন্তিম সংবাদ।সোনিয়াকে তিনি যেনো জানানোর প্রস্তুতি নেন।
সোনিয়া টেলিফোনের শব্দ শুনে রাজিবের বৈঠকখানায় আসেন।হতভম্ব এপিএস জানান(সে কান্নারত), মাদ্রাজ থেকে ফোন আসছে ম্যাডাম।ওইখানে একটা বোমা বিষ্ফোরন ঘটেছে।সোনিয়া স্তব্দ হয়ে যান।শুধু এটুকুই সে বলে- রাজিব কি মারা গিয়েছে?
মা নিহত হওয়ার ৭ বছর পর রাজিব নিহত হন।

প্রস্তরযুগ ও ফেসবুক।

প্রস্তরযুগে ফেসবুক না থাকাতে মানুষ স্ট্যাটাসগুলো গুহার দেয়ালে দিতো।সেখান থেকেই তখনকার মানুষের মধ্যে কিছু লোক যে বৃষ্টি-বাদলার দিনে গুহায় বসে কয়দিন আগের জীবজন্তুর শিকারের দৃশ্য দেয়ালে আকতো,তা বোঝা যায়।গবেষনায় দেখা গেছে এরাই ফেসবুকের আদিম ব্যবহারকারী।তখন স্টাটাসে লাইক পড়তো ক্লিকে না, সবাই স্টাটাসের ছবি দেখে হাতের অস্ত্র বা পাথর উচিয়ে ছাতাপড়া দাঁত দেখিয়ে উল্লাস করতো। আর ডিসলাইক বাটন ফেসবুকে এখন না থাকলেও তখন তা বিপদজনক ভাবে ছিলো। আঁকা ছবিতে নিজেদের কেউ বাদ পড়েছে বুঝতে পারলেই ফের ছাতাপড়া দাঁত খিচিয়ে এ ওর মাথা ফাটিয়ে দিতো।স্টোনবুক খুব কঠিন ব্যাপার ছিলো।

বর্মী সুন্দরী ও বশর কাকা।

সত্তর আশির দশকে আমাদের প্রবাসীরা দুবাই আবুধাবী(চট্টগ্রামের অনেকে আবুদুবাই বলতো) তথা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আর কিছু না আনুক ,একটা টুইন ওয়ান আনতোই।একটু সম্পন্ন প্রবাসীরা আনতো ভিসিয়ার আর রঙ্গীন টিভি।তেমনি ব্রিটিশ আমলে আমাদের এই অঞ্চলের লোকেরা প্রবাসে তথা রেঙ্গুন গেলে প্রায় অবধারিতভাবে একটা বার্মাইয়া বৌ আনতো।কারন তখন টুইন ওয়ান,ভিসিয়ার ,টিভি এগুলা ছিলো না।এবং আমার ধারনা ,মধ্যযুগে এই জিনিসগুলা পর্যাপ্ত থাকলে তখনকার লোকেরা কিংবা আকবর বাদশাও এতোবড় হারেম মেইন্টেইন করতো না।
আমাদের এলাকার প্রবীন বশর কাকা যৌবনে রেঙ্গুন গিয়েছিলেন।উনি রেঙ্গুন সুন্দরীদের রিভিউ এখনো দিতে কম দেন না।উনার মতে ওদের সেবার তুলনায় তুলনীয় কিছু এই দুনিয়ায় নেই।উনি উনার স্ত্রীর সেবা যে ওদের তুলনায় কতো নিন্মমানের তা বলে উঠে শেষ করতে পারেন না।কথায় কথায় তর্ক করা, ঝাড়ু হাতে নিয়ে ফেলা এগুলা রেঙ্গুনের ওরা কোনদিন করে নাই।উনার আপসোস দেখে দুনিয়ার উপর যে কারো বিরাগ এসে যাবে।উনি বলেন,একবার উনার জ্বর হয়েছিলো প্রানঘাতী।দুই রেঙ্গুন সুন্দরী উনাকে যেই আদর যত্ন স্নেহে বাচিয়ে তুলেছিলেন,তার বর্ননা শুনলে বেহেস্তের বিবরনীও অনাকর্ষনীয় মনে হবে।
উনি সবশেষে রেঙ্গুন সুন্দরীদের সেবাকে দুই লাইনের কবিতা দিয়ে প্রকাশ করেছেন।রেঙ্গুন সুন্দরীদের সেবা নাকি যেই ক্লাসের তা হলো-
"ছাইয়া পিডা মধু দি" ( মানে চট্টগ্রামের ছাইয়া পিঠা মধু দিয়ে খেলে যেমন স্বর্গীয় স্বাদ তেমন)
আর চাচীর তথা বাঙ্গালী রমনীর সেবাকে কবিতার ভাষায় বলেছেন-
"পান্তা ভাত কদু দি " (মানে পান্তা ভাত কদু দিয়ে খেলে যেমন বিস্বাদ তেমন)
তাহলে কবিতাটা দাড়ালো-
ছাইয়া পিডা মধু দি,
পান্তা ভাত কদু দি।

বৃষ্টিতে একদিন।

আজকে চট্টগ্রাম আক্ষরিক অর্থেই ডুবে গেছে।এ পর্যন্ত এটা এই সিজনের রেকর্ড বৃষ্টিপাত। সারা নগরী বিভিন্নদিকে জলমগ্ন হয়ে কোলাপ্স হয়ে গেছে।রাস্তায় যান-বাহনের অপ্রতুলতা সমস্যাকে আরো প্রবলেম করে ফেলছে।আমি ঘন্টাখানেক দাড়িয়েও কিছু ম্যানেজ করতে পারি নাই।শেষে দেখি চট্টগ্রাম বিশ্ব-বিদ্যালয়ের এক সম্পুর্ন খালি বাস যাচ্ছে।আমি লাফ মেরে উঠে পড়ি।হেল্পারসহ ড্রাইভার হৈহৈ করে উঠে, আমি এটাতে কেন উঠছি জানতে চায়।
আমি বলছি, দেখেন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ব-বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিছিলাম, কিন্তু টিকি নাই।এখন কি নেমে যাবো?দুজনেই সহাস্যে জানালো, না থাকেন, জিইসি পর্যন্ত যেতে পারবেন।

মগ ,বর্মী ও শায়েস্তা খাঁ

মধ্যযুগ থেকেই মগ আর বর্মীদের প্রতি বাংগালীর একধরনের ভীতি কাজ করতো।এরা পর্তুগীজ হার্মাদদের সাথে মিলে সমগ্র বাংলার দক্ষিন উপকুলে প্রচন্ড তান্ডব চালিয়েছে।হাটবারে বা কোন বিবাহ উতসব বা কোন অন্য উতসবের দিন এরা সারং(মগদের ব্যবহৃত একপ্রকার নৌযান) নিয়ে আলগোছে গ্রামে ভিড়ে যেতো।তারপর শিশু,মহিলা,যুবক এদের পাইকারী হারে নিয়ে যেতো।বৃদ্ধরা দাস হিসেবে মুল্যহীন বিধায় রেহাই পেতো।এরপর এদের বন্দী করে চট্টগ্রামের পটিয়ার এখনের কেইপিজেড যেখানে সেই দেয়াং পাহাড়ের দূর্গে নিয়ে আসতো,তাদের ভাষায় ডিয়াঙ্গা।সেখান থেকে বেচে যাওয়া বন্দীদের শ্রীলংকা,এডেন সহ আফ্রিকার মোম্বাসা বা জাঞ্জিবারের দাস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হতো।
এভাবে মগেরা আজকের মতোই প্রচন্ড হিংস্রতা দেখাতো যাতে কেউ তাদের দেশের দিকে হাত না বাড়ায় তার জন্য।অনেকটা প্রিএম্পটিভ এটাক।তারাও বাঙ্গালীকে ভয় পেতো।দাস ব্যবসাও হলো,ডর দেখানোও হলো।এভাবে তারা নিজেরা তাদের সীমানা বিপদমুক্ত রেখেছিলো।কিন্তু ব্রিটিসরা বার্মা জয় করার পর আমাদের এই অঞ্চলের লোক জীবিকার টানে বার্মা যাওয়া শুরু করে।আগে মগেরা যেই ভয়ে বহিরাগতদের আসা বন্ধ রেখেছিলো,ব্রিটিসদের শাসনের সুবাদে উপমহাদেশের লোক সেখানে যেয়ে ভীড় করে।মগ আর বর্মীরা উপমহাদেশের লোকদের আরেকটি কারনে চরম ঘৃনা করতো,সেটা এই উপমহাদেশের লোকদের উচ্চ ফলনশীল জন্মহার আর হাতে টাকা।বর্মী মহিলারা এই আকর্ষন এড়াতে পারতো না।কি এক অদ্ভুত কারনে, মগ বা বর্মী পুরুষেরা মহিলাদের থেকে বেশ অলস।তার পরে যেটুকু সময় কাজ করে তার বেশীর ভাগ সময় আবার মদ বা অন্যান্য মাদকে আছন্ন থাকতো ।ফলে তাদের জন্মহার কম ছিলো।বাংগালীর সাথে থেকে মগ বা বর্মী মহিলারাও অনেক হেলদি একটা যৌনসম্পর্ক বজায় রাখা শিখেছিলো।বাংগালী তাদের বর্মী মহিলাদের গালে মাটি মেখে রাখা, পান খেয়ে দাত চেদেরভেদের করে রাখা এগুলা থেকে দূরে রেখেছিলো।এভাবে বাংগালীর পেন্ড্রাইভের সফল ব্যবহার,যেখানে সেখানে সফটওয়ার বিতরন এগুলা বরং মগ বা বর্মীদের থেকে তাদের শ্রেষ্টতায় এগিয়ে রেখেছিলো। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার আগপর্যন্ত এটা নিয়ে ঝামেলা হয় নাই।এরপর এই ঝামেলা শুরু।
ইতিহাসে দেখা যায় ,একবারই উপমহাদেশের লোকেরা মগ বা রাখাইনের দস্যুদের সেরকম চিকিতসা দিয়েছিলো।সেটাই শেষ।১৬৬৪ সালে শিবাজি দক্ষিনাত্য সহ কয়েকটি জায়গায় মোঘলদের হারিয়ে দেন।সেবছরের জানুয়ারীতেই শিবাজি মুঘলদের প্রধান বন্দর সুরাট একসপ্তাহ ধরে লুট করে।ফলে সম্রাট আওরংজেব দক্ষিনাত্যের সুবাদার শায়েস্তা খাঁ কে বরখাস্ত করেন এবং শাস্তি স্বরুপ তাকে বাংলার সুবাদার করে পাঠান।শায়েস্তা খাঁ ছিলেন সম্রাটের আপন মামা, মমতাজ মহলের ভাই।মামা বাংলা যাবার আগে ভাগ্নের সাথে একবার দেখা করে যাবার অনুমতি চান।এতে ভাগ্নে আরো ক্ষিপ্ত হয়।জানানো হয়, মামা যেনো তার বাহিনী নিয়ে আগ্রার অনেক দক্ষিন দিয়ে অতিক্রম করেন।দেখা করার প্রয়োজন নাই।শায়েস্তা খাঁ বিশেষ অপমানিত হন।অপমানের পুরো ঝাল মিটান চট্টগ্রামে এসে বিশাল এক নৌবহর নিয়ে মগ-পর্তুগীজদের যৌথবাহিনীকে আক্রমন করে।নিজে আর পুত্র বুজুর্গ উমিদ খাঁ কে নিয়ে তিনি মগদের চরম শাস্তি দেন।তাদের একেবারে নাফ নদী পার করিয়ে দিয়ে আসেন।মগেরা আর কখনোই চট্টগ্রামের দখল নিতে পারে নাই।বাংলা ভাষায় শায়েস্তা করা বা শাস্তি দেয়া কথাটা কিন্তু এসেছে শায়েস্তা খানের নাম থেকে।তাহলে বুঝে দেখেন ,কি শাস্তি তিনি মগেদের দিয়েছিলেন।এই শায়েস্তা খানের মেয়ে পরীবিবির কবর ঢাকার লালবাগ কিল্লায়।এই শায়েস্তা খানের আমলেই চাল ডাল এর দাম কিংবদন্তীতুল্য ছিলো।
মগ ,বর্মীদের অত্যাচার ,চাল-ডালের দুর্মুল্যের বাজারে আজকে আমার শায়েস্তা খাঁ এর কথা মনে পড়তেছে।

প্লেজারিজম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ইউনিভার্সিটি অভ শিকাগো প্রেস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষকের পিএইচডির গবেষণা সন্দর্ভকে প্লেগিয়ারিজম বা কূম্ভীলকবৃত্তি বা রচনাচুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়েছে।তারা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে,পত্রিকায় তা জানলাম।
এই ৫ জনের একজন সাংবাদিক সামিয়া রহমান।আমি এদের কাউকে দোষ দিই না।এটাই হওয়ার কথা ছিলো।যে দেশে বাটপারি,ইতরামি,নির্লজ্জতা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত বলে গন্য হয় ,সেখানে কে কষ্ট করে পড়ে গবেষনা করবে।সেইদেশে এইভাবেই এ ওর লেখা মেরে দেবে, ডক্টরেট পাওয়ার জন্য হেন কোন কাজ নেই করবে।একটু স্মরনে আনুন,এখানে মেডিকেল ভর্তির মতো গুরুতর ব্যাপারের প্রশ্ন আউট হয়।এই একটিই উদাহরন দিলাম।
এরা ঢাকা ভার্সিটিকে ওমরগনি এমইএস কলেজ বা পাহাড়তলী কলেজ বানিয়ে ফেলেছে।ব্যাপারটা এখানে খুলে না বললে ক্লিয়ার হবে না।চট্টগ্রামে মেধাবী ,মাঝারি মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীরা মোটামুটি চট্টগ্রাম কলেজ,মোহাসিন কলেজ ,সিটি কলেজ ,কমার্স কলেজ,মহিলা কলেজ এগুলোতেই টিকে যায়।আর বাকি বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীকে এই এমইএস কলেজ ,পাহাড়তলী কলেজ নিয়ে নিতো।ঐখানে সেই ৯০ এর দশকে পোলাপাইনের পরীক্ষার সময় খোদ অভিভাবক, শিক্ষক সবাই পরীক্ষায় অংশ নিতো ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে।অভিভাবকেরা বা ছাত্র-ছাত্রীর ভাই-বোনেরা ,প্রেমিক-প্রেমিকারা দোতালা তিনতলার পরীক্ষার হল পাইপ দিয়ে বেয়ে উঠে জানালা দিয়ে নকল সাপ্লাই দিতো।
সেই আমলে এটাকে নীতি-নৈতিকতার হ্যাম্পার হচ্ছে বলে আদৌ মনে করা হতো না।বরং পরিবারের অভিভাবকেরা সবাই মিলে কেমন একটা পাশ দিলাম রে আব্বু-মামনি ,এমনটাই ভেবে গর্বিত হতেন।
খুব একটা আনন্দের সময় ছিলো।সবাই মিলে একটা ইংরেজী অংকের মাস্টার ভাড়া করে নিয়ে যেতো।পরীক্ষার হলে প্রশ্ন বিলি করার দুই মিনিটের মাথায় প্রশ্ন ভাড়াটে মাস্টারের হাতে এসে যেতো।সে সমাধান দিয়ে দেবার সাথে সাথে রিলে রেসের মতো অভিভাবক ,ভাই-বোন,প্রেমিক-প্রেমিকারা দৌড়ে পাইপ বেয়ে ,অস্থায়ী মই বেয়ে এই জীয়নকাটি পরীক্ষার্থীর হাতে দিয়ে আসতো।সে তখন ভাবতেছিলো,সবার বাপ-ভাই কি তাড়াতাড়ি এসে সমাধান দিয়ে গেছে আর আমাদের বালাদুল আমীনগুলা এখনো আসে নাই।
সবচেয়ে ভয়াবহ পরীক্ষার কেন্দ্রগুলা ছিলো রাউজান,পটিয়া রাহাত আলী স্কুল,কুমিল্লার চিওড়া স্কুল।অভিভাবকেরা এসব স্কুলের প্রতি ভীষন দূর্বল ছিলেন।ঐখানে মেজিস্ট্রেট বেধে রাখা হতো।এসব ব্যাপারে ওইখানের ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সবাই একমত ছিলো।এতো কষ্টের পরীক্ষা একজন উটকো লোক এসে বরবাদ করে দিতে পারে না।
তাও মাঝে মাঝে মেজিস্ট্রেট রোকন উদ দ্দৌলার মতো কিছু মানুষ তখনো ছিলো।এরকম এক মেজিস্ট্রেট একবার রাউজানে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকে এমন অরাজক পরিস্থিতি দেখে সমানে এক্সপেল করা শুরু করলেন।অল্পক্ষনের ভেতর শিক্ষক,ছাত্র-ছাত্রী আর অভিভাবকেরা সম্পুর্ন একমত হয়ে গেলেন যে ফুলের বাগানে এ কোন বান্দর এসে উপস্থিত।সবাই মিলে মেজিস্ট্রেটকে দৌড় লাগালেন।তা প্রায় হাজার খানেক সচেতন নৈতিকতায় টইটম্বুর করা জনগন।মেজিস্ট্রেট এর দেহরক্ষী পুলিশ প্রথমেই ভাগলো।মেজিস্ট্রেট অনেকক্ষন জান-জীবন নিয়ে দৌড়ালেন।শেষে না পেরে আল্লাহ-তায়ালার কাছে জীবন ভিক্ষা চাইলেন।তার দোয়া কবুল হলো। হঠাত তার নিকটেই একটা মসজিদ যেনো মাটি ফুড়ে দৃশ্যমান হলো।তিনি দৌড়ে গিয়ে দ্রুত নিয়ত করে ফরজ নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন।উন্মুক্ত ধর্মপ্রান জনগন আর যাই করুক একজন মুসল্লীকে তো ধরে পিটাতে পারে না।তাহলে পরকালে কি জবাব দেবে?
এভাবে ফরজ এর পর সুন্নত ,সুন্নতের পর অবিরাম নফল নামাজ মেজিস্ট্রেট সাহেব পড়ে গেলেন।যতোক্ষন না জেলা পুলিশের রিজার্ভ বাহিনী গিয়ে তাকে উদ্ধার করলেন। ততক্ষনে ছেলে-মেয়েরা ভালোভাবে পরীক্ষা সমাপ্ত করলো।সচেতন নৈতিকতা সম্পন্ন অভিভাবকদেরও আর কোন রাগ ততক্ষনে নাই।অভিভাবকেরাও বুঝলেন, মানুষ মাত্রই ভুল করে,কুল্লু নাফসি জায়াকাতুল মউত বা ম্যান ইজ মরটাল।

সম্রাট আকবর ও মুসলমানী প্রসঙ্গ।

ইতিহাসের এইদিনে এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে ১৪ ফেব্রুয়ারী,১৫৫৬ খ্রীঃ সম্রাট আকবর ১৪ বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হন। ভ্যালেন্টাইন ডে তে সম্র...